শিরোনামটা কি ভুল দেওয়া হল? এটি পড়ে মনে হতে পারে দুজন কবি কোনও একদিন উপস্থিত হলেন এক বিচারপতির দরবারে। না ঘটনাটা ঠিক তা নয়, আসলে সংবাদে প্রকাশ, একালের এক ব্যতিক্রমী বিচারকের বিদায়সভায় তাঁর সম্মানে সুরে ও আবৃত্তিতে শোনানো হয়েছে দুই কবির দুটি কবিতা, ‘একলা চলো রে‘ এবং ‘ম্যায় অকেলা হি চলা থা জানিব মঞ্জিল মগর...’। যদি বলি এভাবেই কবিতার সঙ্গে সঙ্গে দুই কবিও মিলে গেলেন কিছু অসমসাহসিক কাজের সঙ্গে, উপস্থিত রইলেন সাহসী মানুষদের মনোবৃত্তে, তাহলে কি খুব ভুল বলা হবে!
একটি কবিতা, ‘ম্যায় অকেলা হি চলা থা জানিব মঞ্জিল মগর / লোগ সাথ আতে গয়ে অওর কারওয়াঁ বনতা গয়া –একাই চলেছিলাম গন্তব্যের দিকে, লোক জড়ো হল ক্রমে, যাত্রিদল হল প্রস্তুত; এবং অন্যটি আমাদের মাঝে মাঝেই মনে পড়ে যাওয়া অনুভব,’ পরাণ খুলে ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে’।
রবীন্দ্রনাথ এবং মজরুহ সুলতানপুরী, রচনাকাল এবং ভাষার দিক থেকে পৃথক, এক হয়ে গেলেন একা চলবার দুঃসাহসে। এমন নয় যে উর্দুভাষী কবিরা রবীন্দ্রনাথকে চিনতেন না, তাঁর ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য‘ কবিতার উর্দু তর্জমা ‘জহাঁ জহন পর খওফ নহী তারী হ্যায়‘ হয়ে ফিরতো তাঁদের মুখে মুখে। তবু একালের এক বিচারপতির সভায় পূর্বকালের কবিরা মিলে গেলেন, এ আজও বড় সৌভাগ্যের। সেই মহামান্য বিচারকেরও এ এক বড় প্রাপ্তি, রাজ্যসভার একটি টিকিটের মূল্য এর কাছে আর কতটুকু!
কবিরা তো আদতে প্রেমের কথাই বলেন, রোমান্টিক প্রেম উদ্ভাসিত হয়ে ক্রমে মানবপ্রেমকে স্পর্শ করে তাঁদের পংক্তি। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসি, তুমি অবসরমত বাসিয়ো,’ আর মজরুহ লিখছেন, ‘হমে তো হো গয়া হ্যায় পেয়ার তুমহে হো না হো‘ দু ক্ষেত্রেই একতরফা একনিষ্ঠ প্রেম। মানবতার কাব্যে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন / সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে / সবার পিছে, সবার নীচে, সবহারাদের মাঝে‘। এবং মজরুহ লিখছেন, ‘তেরে সমুন্দর মে কেয়া কমী থী কে আদমী কো রুলা রহা হ্যায় / যো খুদ হি গম সে বুঝা বুঝা হ্যায় তেরা ফির উসমে কামাল কেয়া হ্যায়!’ সমুদ্রে প্রয়োজন কি আরও অশ্রুবিন্দুর, যে মানুষ নিজেই দুঃখী তাকে নতুন করে দুঃখ দেওয়ায় বাহাদুরী কোথায়!
একজন নিশ্চিত ‘মানুষের নারায়ণে‘, অন্যজন জানাচ্ছেন তীব্র অভিযোগ মানুষের দুর্দশার কারণে। কিন্তু দুজনেই সাব অল্টার্নদের অল্টারর্নেটিভ, বিকল্প দেখাতে উন্মুখ, তাঁদের সার্বিক শূন্যতাকে পুঁজি করতে নয়।
রবীন্দ্রনাথের সমস্ত সৃষ্টি মিলেই গোটা একটা জীবনদর্শন, তিনি তুলনাতীত। তিনি এতটাই চিরকালীন, যে এক নারীর জবানিতে লিখেছেন, ’চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল একথা বলিতে চাও বোলো / এই ক্ষণটুকু হোক সেই চিরকাল – তার পরে যদি তুমি ভোল / মনে করাব না আমি শপথ তোমার‘ (দায়মোচন)। এর চেয়ে সম্ভ্রমসূচক উক্তি সব দেশে সব কালে একজন নারীর পক্ষে আর কী হতে পারে!
আর মজরুহ সুলতানপুরী, নিজস্ব কাব্যচর্চার পাশাপাশি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে তাঁর লিরিকে মুগ্ধ করেছেন, তাঁর সৃজনসঙ্গী ছিলেন নৌশাদ থেকে থেকে শুরু করে শচীন দেববর্মন, শংকর জয়কিষণ, ও পি নাইয়ার, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, কল্যাণজি-আনন্দজি, রাহুল দেববর্মন এমনকি হালের যতীন ললিতও।
তিনি লিখেছেন, ’অ্যায় অহল এ জাহাঁ তুমকো নফরত কী হ্যায় বিমারী / ভড়কা করো শোলো কো, ফেকা করো চিঙ্গারী / হম পেয়ার কী শবনম সে হর আগ বুঝা দেঙ্গে‘। ঘৃণায় বিশ্বাসী মানুষেরা যতই আগুন লাগাক, আমরা প্রেমের শিশিরবিন্দু দিয়ে সব আগুন নিভিয়ে দেব।
আগামী প্রজন্ম যদি ভালবাসতে শেখে, তাহলেই অনেক মহামারী এড়ান যাবে।
আজও বাস্তব গালিবের সাধের দিল্লীর বিশেষ বিশেষ মহল্লার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা।
অমৃতসরের এম এ ও (মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল) কলেজের এক লাজুক মুখচোরা অধ্যাপক ছিলেন আপনি ফয়েজ।
দুর্গা বুকের ছাতি প্রদর্শনকারী বলদর্পী এই ছলনায়কের নাম দিয়েছেন নরাসুর আমোদী। বা সংক্ষেপে নদো।
বশিষ্ঠ রামের হাতে মিষ্টি (প্রসাদ?) দিলেন দারাকে দেওয়ার জন্য
বহুকাল রয়েছি এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে/ বিচ্ছেদরজনী যদি রাখি গণনাতে
আমাদের ছোটবেলায় জন্মদিনে বই দেওয়ার প্রথা ছিল