ছবিটার প্রথম দু’মিনিট স্ক্রিন অন্ধকার। কোনও শব্দ নেই। ক্যামেরা স্থির, স্তব্ধ। ধীরে ধীরে এক প্রৌঢ়ার অবয়ব ফুটে ওঠে, আবছা, গাছের পাতার ঝির ঝির আওয়াজ, প্রকৃতির সঙ্গে নারীর নিঃসঙ্গতা একাকার। আবার প্রায়ান্ধকার স্ক্রিন। কিছু কথাবার্তা। এস্টেটের কিনারে হাতি এসেছিল, খুব ঢেঁড়া পিটিয়েছে সবাই, হাতি ঘাবড়ে গিয়ে তেড়ে গেছে, হুড়োহুড়ি করে একজন আহত হয়েছে। গভীর গহন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলে দু’জন। আকাশছোঁয়া প্রাচীন মহীরুহে আবৃত নিকষ কালো পথ, কদাচিৎ সূর্যের রশ্মি ছিটকে পড়ে আলো দেখায়। পাহাড়ঘেরা নির্জন গ্রাম থেকে ব্যস্ত শহর। সন্ধ্যা নেমেছে। তমসাবৃত বিষণ্ণ শহরের রাজপথ দিয়ে অজস্র গাড়ির যাতায়াত, সেগুলির ফুটোফাটা হেডলাইট যেন জোনাকির আলোচ্ছটা। স্মৃতিমেদুর বয়স্কা নারী। স্বপ্নে ফিরে আসে তাঁর মৃত স্বামী। অরণ্যের নির্জনতায় তিনি বেসামাল, ইহলোকে ফিরে আসার জন্য আকুল, তাঁর স্ত্রীর এক বিশেষ রান্নার জন্য মন কেমন করে। সেটা কী কাল…তাঁর যুবতী মেয়েকে মা জিজ্ঞাসা করেন…
আরও পড়ুন: শর্ট ফিল্ম: Pinki Ki Shadi
পায়েল কাপাডিয়ার ‘দ্য লাস্ট ম্যাঙ্গো বিফোর দি মনসুন’ নামক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটা দেখে এই প্রতিবেদকের এরকমটাই মনে হয়েছে। অন্য কারও একেবারে ভিন্ন কিছু মনে হতে পারে, আবার কারও একেবারেই কিছু মনে না হতে পারে, বোর হয়ে উঠে চলে যেতে পারে। আসলে পায়েলের ছবিতে গল্প বলে কিছু নেই, কোনও বিশেষ চরিত্র নেই, নায়ক-নায়িকা নেই, ফিল্ম বলতে আমরা যা বুঝি, সিনেমা সম্পর্কে আমাদের সাবেকি যা ধারণা, তার কিছুই নেই। শুধু কতগুলো ইমেজ, ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু অনুভূতি, এই আছে এই নেই; অল্প আলো, অল্প সাউন্ড, অল্প কথা, নিঃশব্দ নিশ্চল একের পর এক ফ্রেম। ছবিতে উনি চিত্রকলা ব্যবহার করেন, ওঁর জানলা দরজা, অরণ্যের এক একটা শট যেন পটচিত্র; পুরোটা যেন একটা গীতিকাব্য।
সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ওঁর ছবি ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’ সেরা তথ্যচিত্রের (গোল্ডেন আই) পুরস্কার পেয়েছে। পায়েল এফটিআইআইয়ের ছাত্রী ছিলেন। 2015 সালে সংঘ-ঘনিষ্ঠ গজেন্দ্র চৌহানকে ইন্সটিউটের চেয়ারম্যান করার প্রতিবাদে চার মাস ক্লাস বয়কট করেছিলেন, যার ফলে তাঁর স্কলারশিপও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। 2017 সালে ওঁর 13 মিনিটের শর্ট ‘আফটারনুন ক্লাউডস’ কান উৎসবে নির্বাচিত হয়েছিল। এছাড়া অন্যান্য ছবিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে। ওনার পরবর্তী ছবি একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনী চিত্র ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’।
‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’ শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে, প্রেম, সম্পর্ক- মনে হয় যেন একটা গল্পের শুরু, কিন্তু সেটা মরীচিকা মাত্র শীঘ্রই সেটা তথ্যচিত্রর আকার ধারণ করে, সাংবাদিকতা সুলভ হয়ে পড়ে। দর্শক তো হতাশ হয়ে যাবে, একটা লাভ স্টোরি শুরু হচ্ছিল…সাক্ষাৎকারে তাঁকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়। শ্যুটিং করতে করতে বিষয়বস্তু গড়ে ওঠে, তিনি বলেন। একটা পয়েন্ট থেকে শুরু করে আর একটা পয়েন্টে আমরা সরে যাই, বন্ধুবান্ধবরাই অভিনয় করে। দর্শকও সেভাবেই গড়ে উঠবে, বিষয়ের সঙ্গে তাঁর চিন্তা পাল্টাবে, একটা পয়েন্টে স্থির হয়ে থাকবে না। আর আদপে ভালবাসার গল্প তো খুব বোরিং, তিনি হেসে ফেলেন।
বয়স্কা নারী এবং তরুণী তাঁর ছবিতে বারবার ফিরে আসে। ‘আফটারনুন ক্লাউডস’-এ তরুণী হয়তো একজন পরিচারিকা। টবে বিকশিত ফুল। উনি চাইতেন বছরভর ফুলগুলো যেন একইরকম ভাবে উজ্জ্বল থাকে। রাতে ঘুম ভেঙে দেখতাম বিছানায় নেই, জানলা দিয়ে এক মনে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। কাল রাতে দেখলাম গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন, আমাকে ডাকছেন। গেলাম, কিন্তু চিনতে পারলেন না। চলে যাওয়া স্বামীর স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত প্রৌঢ়া। সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো ছেলেটি হঠাৎ ফুরসুত পেয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে আসে। জাহাজের গল্প বলে, মেয়েটিকে আফ্রিকার পিকচার পোস্টকার্ড দেয়। জিরাফ, নীল আকাশ। মেয়েটার মুখের অভিব্যক্তি একই রকম - ম্লান। ধোঁয়ায় ভরে যায় চারিদিক; স্বপ্ন, কল্পনা, ফ্যান্টাসি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
তাঁর আগামী ছবি ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’-এর দৈর্ঘ্য 120 মিনিট। হয়তো এই ছবিটিতে আমরা প্রথম দু’টি বাস্তব রক্তমাংসের চরিত্রকে চিহ্নিত করতে পারব। সেখানে দুই নার্স, বয়স্কা এবং তরুণী, কাঙ্খিত মানুষটির টানে ছুটে বেড়ায়। আবারও ভালবাসা, সেটার অপূর্ণতা, অসম্ভবতা, বিচ্ছেদ, স্মৃতিকাতরতা ফিরে আসে। আদিম অরণ্য যেন প্রহেলিকা, নারীপুরুষকে চুম্বকের মতো জড়িয়ে ধরে।
যোগীর শাসনে উত্তরপ্রদেশে সরকার মসজিদ ভাঙছে,ত্রাসে সিঁটিয়ে সংখ্যালঘুরা ।
UAPA প্রয়োগ করে রাষ্ট্র যে বিচারের নামে যা খুশি করতে পারে, তার উদাহরণ ভারভারা রাও
উত্তরপ্রদেশে আইনের প্রয়োগ অখন নাগরিকের ধর্মের উপর নির্ভর করে।
সরকার বিরোধিতা করলে উইচ-হান্ট কিন্তু চলছেই
এই ধরণের অপরাধের তালিকায় উত্তর প্রদেশের নাম শীর্ষে (15.3 শতাংশ)।
নিজের ভাষায় ফিল্মের গল্প বলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরার শিরোপা পাওয়া পায়েল কাপাডিয়া।