×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কৃষক বনাম সরকার

    4thpillars ব্যুরো | 01-12-2020

    সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় সাংবাদিক রজত রায় ও গৌতম লাহিড়ী।

    কৃষি সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন আইনগুলি বাতিলের দাবিতে রাজপথে দেশের অন্নদাতারা। অবরুদ্ধ রাজধানী। আইন প্রণয়নের সময়ে সংসদে জনপ্রতিনিধিদের কথা শোনেনি সরকার। এবার কি সরাসরি জনতার কথা শুনতে হবে? www.4thpillars.com গত 30 নভেম্বর (সোমবার) এই নিয়েই একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। এই আলোচনায় সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক রজত রায় ও গৌতম লাহিড়ী।

    1) নয়া কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকদের মধ্যে বড়, মাঝারি এবং ছোট— সবরকম কৃষকরাই আছেন। এটা ঠিক যে অবস্থাপন্ন বড় কৃষকরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তবে ছোট কৃষকরাও এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।

    2) নয়া কৃষি আইনে খোলা বাজারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এতকাল বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছেন কারা? বড় কৃষকরা যাও বা কৃষি বাজার বা মান্ডিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, ছোট চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বাজার অবধি পৌঁছতে পারেন না। আর পৌঁছতে পারলেও মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা তাদের বাধ্য করে স্বল্প মূল্যে উৎপাদিত ফসল তাদের হাতে তুলে দিতে। ফলে গরিব চাষী গরিবই রয়ে যায়।

    3) পাঞ্জাবের বড় জোতের মালিক, অবস্থাপন্ন কৃষকরা আশঙ্কা করছেন যে বাজারের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আর বজায় থাকবে না। কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাদের সেই নিয়ন্ত্রণে ভাগ বসাবে। এই অসম প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারবেন না বুঝেই তারা আজ রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে ছোট চাষিরা নিজেদের জমিটুকু বাঁচাতে আন্দোলন করছেন। একই আন্দোলনে অনেকগুলি স্বার্থ কাজ করছে।

    4) নয়া কৃষি আইনে ন্যায্য সহায়ক মূল্য নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। একদিকে বলা হচ্ছে কৃষিপণ্যের দাম বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, অন্যদিকে বলা হচ্ছে কৃষকরা সহায়ক মূল্য পাবেন। সরকারের এটা একটা স্ববিরোধী অবস্থান। তাছাড়া এর আগেও তো নির্দিষ্ট কোনও বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হবে— কৃষকদের এমন কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। মুক্ত বাজার নিয়ে প্রচারটা আদতে মিথ্যা একটা প্রচার।

    5) সরকার কৃষিক্ষেত্র থেকে সম্পূর্ণ ভাবে হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে। সরকারের কর্তব্য বাজার কারা চালাচ্ছে, কীভাবে চালাচ্ছে তার নজরদারি করা, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া। নয়া কৃষি আইনে তেমন কিছু বলা হচ্ছে না। দেশ-বিদেশের পুঁজিপতি কর্পোরেট সংস্থাগুলি কৃষি বাজারে বিনিয়োগ করতে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের মুনাফা ব্যতীত কৃষি এবং কৃষকের উন্নতিতে তাদের কোনও মনোযোগ থাকবে না।

    6) বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিশেষ সুযোগ সুবিধা পেলে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটা নষ্ট হবে। দেশের টেলিকম শিল্পেও আমরা এমন নজির দেখছি। কর্পোরেট সংস্থাগুলি এতটাই প্রভাবশালী যে কৃষকরা আইনি পথে তাদের মোকাবিলা করতে পারবে না। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানানোর সংস্থান থাকলেও, সেই আধিকারিক সরকার ঘনিষ্ঠ কোনও শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে মনে হয় না।

    7) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লেও, লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা। ফসল কৃষিজমি থেকে বাজারজাত হওয়া পর্যন্ত মধ্যস্বত্বভোগীদের এর থেকে দূরে রাখতে হবে। তাহলেই একমাত্র কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

    8) সরকারের শীর্ষমহল আর্থিক নীতি নিয়ে কোনও সুস্পষ্ট দিশা দেখাতে ব্যর্থ। যতক্ষণ না তারা এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও অবস্থান নিচ্ছেন, ততক্ষণ কৃষকদের এই অভাব অভিযোগের নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

    9) সরকার ক্রমশ 'কৃষকবন্ধু' সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে দুর্বল করছে। ছোট গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিকে বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ব্যাঙ্ক খোলার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। ফলে কৃষকরা বীজ, সার কেনার জন্য সহজ সুদে ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলে মহাজনদের দাপট বাড়ছে। দেশের কোনও কোনও স্থানে মহাজনি ঋণে সুদের পরিমাণ প্রায় 400 গুণ!

    10) কৃষিক্ষেত্রে ইনপুট বাবদ খরচ কত, অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট ফসল উৎপাদনে কৃষকের ঠিক কত খরচ হয়, সেটা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনও তথ্য সরকারের কাছে নেই। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ ছিল এই ইনপুটের অন্তত দেড় গুণ দাম কৃষকের প্রাপ্য। কিন্তু মহাজনি সুদের শৃঙ্ক্ষলে আবদ্ধ দেশের অধিকাংশ কৃষক। সেখানে উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা মুশকিল। তাই আজও স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা যায়নি।

    11) সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে দেশের একপ্রান্তের কৃষক, অন্য যে কোনও প্রান্তে গিয়ে ফসল বেচতে পারবেন। কিন্তু কোনও স্থানে ফসলের প্রয়োজনীয়তা কতটা, সেখানে ফসলের কেমন দাম যাচ্ছে, সে সমস্ত তথ্য কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে আছে, সাধারণ কৃষকের কাছে নেই। তাই কৃষকদের এই কর্পোরেট সংস্থাগুলিরই মুখাপেক্ষী থাকতে হবে।

    12) দেশের প্রচারমাধ্যম চলমান কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে উদাসীন। অন্যদিকে তারা সরকারের নয়া কৃষি আইন কত ভাল, সেই গুণকীর্তনে ব্যস্ত। আসলে অধিকাংশ প্রচারমাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহী কর্পোরেট সংস্থাগুলির মালিকানা রয়েছে। স্বভাবতই, নিজেদের স্বার্থে তারা এই কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। উল্টে এই আইনের সপক্ষে প্রচার করে, তারা নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইছে।


    4thpillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    মানুষের জীবনদায়ী টিকা কি শেষ পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হবে?

    করোনা পরিস্থিতি যখন সবচেয়ে ভয়াবহ, তখনই হাত গুটিয়ে নিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

    প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে বলি হচ্ছে না তো জাতীয় স্বার্থ?

    মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সরকারের, বেঁচে গেল সাধারণ মানুষ‌।

    খাঁচার তোতাপাখি সিবিআই কি মালিকের হুকুম মানতে গিয়ে আইন ভাঙছে?

    জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনার প্রথম দিনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী

    কৃষক বনাম সরকার-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested