ইন্দিরা গান্ধীর আমলে 1975 সালের জরুরি অবস্থা ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রথম বড় কলঙ্ক হলেও মাত্র দু'বছরের মধ্যেই গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেবার। এখনকার পরিস্থিতি কতটা তুলনীয় সেবারের সঙ্গে? এই বিষয়ে গত 25 জুন (শুক্রবার) www.4thpillarwethepeople.com একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় সাংবাদিক শিখা মুখার্জি, অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা শৈবাল মিত্র উপস্থিত ছিলেন।
1) বর্তমান সময় এবং 1975-এর জরুরি অবস্থার মধ্যে একটা স্পষ্ট ফারাক আছে। সেবার ঘোষিত জরুরি অবস্থা ছিল, যেখানে আইন করে সাসপেনশন অফ ফান্ডামেন্টাল রাইটস করা হয়েছিল। আর এখন অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে।
2) ইন্দিরা গান্ধী যখন হেরে যান তখন সমাজের বিভিন্ন স্তরে উল্লাসের জয়ধ্বনি উঠেছিল। অনেকেই শান্তির শ্বাস নিয়েছিল। এবং তার থেকেই প্রমাণ হয়েছিল, দেশের অধিকাংশ মানুষ সেই ব্যবস্থাকে ভাল ভাবে নেয়নি। কিন্তু বর্তমানে যে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে সেখানে অনেক মানুষের সায় আছে। সেটাই চিন্তার।
3) বিজেপির যাঁরা জরুরি অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল, তাঁরা কিন্তু বর্তমানে চালিকা শক্তিতে নেই। ক্ষমতায় নেই। আজকের বিজেপি একান্তই মোদীর বিজেপি।
4) ইন্দিরা জরুরি অবস্থা জারি করার অনেক পরে ভুল স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু আজকের শাসক নরমে-গরমে, দেশরক্ষার নামে জনজীবনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নামিয়ে আনছে। হয়তো কোনদিনই এই শাসক নিজেদের ভুল স্বীকার করবেন না।
5) আজকের শাসক বিগত কয়েকবছর ধরেই নানা জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করলেও, সেগুলোয় জনগণের একটা বড় অংশের বৈধতা আদায় করতে পেরেছে। তাই আদর্শগত ভিত্তি মজবুত না হলে, এই বিজেপিকে রোখা মুশকিল।
6) সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার যে নীতি ইন্দিরা নিয়েছিলেন, মোদীর শাসনাধীনেও সেই একই নীতি নেওয়া হয়েছে। সেদিনও যেমন সরকার অনুগত কিছু সংবাদমাধ্যম রাজরোষের ভয়ে নীরব ছিল, আজও তেমন অনেক সংবাদমাধ্যম সরকারের দাসানুদাসে পরিণত হয়েছে। তাদের নতুন নাম হয়েছে ‘গোদি মিডিয়া’।
7) বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের আদর্শের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা না গেলে এই লড়াইয়ে জেতা যাবে না। বাংলার নির্বাচনে মানুষ ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করে, একটা লুম্পেন শক্তিকে জয়ী করেছেন। কিন্তু এই লুম্পেনবাদই তো ক্রমে ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়। জনমোহিনী রাজনীতি দিয়ে বিজেপিকে রোখা সম্ভব নয়।
8) বাংলার নির্বাচনের ফলাফলের সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। সারা দেশে বিজেপিকে যে এত নরম ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে, তা তাদের এই বাংলার ভোটে ধাক্কা খাওয়ার জন্যই। মানুষ বিজেপিকে হারাতে শক্তিশালী একটা পক্ষকে বেছে নিয়েছে। আর তৃণমূলের জনমোহিনী নীতি কিন্তু বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে আগের তুলনায় যথেষ্ট উন্নত করেছে।
9) দিনের শেষে মানুষই শেষ কথা বলে। 1977 সালে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে অখ্যাত, অনামা রাজনারায়ণের জয় আসলে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রায়ের সার্বিক প্রতিফলন। সারা দেশেই বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বানে মানুষ সাড়া দিচ্ছেন। বিভিন্ন রাজ্যে শক্তিশালী দলগুলি এতে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। আপাতত বিজেপিকে হারানোই প্রাথমিক কৌশল। তারপর অন্য কিছু ভাবা যাবে।
ট্রেন চলছে চলুক, আনুষ্ঠানিকভাবে দায় নেব না, এটাই কি রাজ্য সরকারের গা বাঁচানো অবস্থান?
তৃণমূলের রাহুল গান্ধীর প্রতি অনাস্থা আর গোপন নয়। জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য কি স্বপ্নই রয়ে যাবে?
কারা যেন ভালবেসে আড়ি পেতে, সরকারের খুব সুবিধা করে দিয়েছে!
উত্তরপ্রদেশ সরকারের নতুন জনসংখ্যা নীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন কি উপেক্ষিত?
সব বিষয়েই ফেল করা সরকার শুধু প্রচারের নিনাদে প্রথম!
কংগ্রেসের দৈন্যদশা যত দীর্ঘ হবে, বিজেপির ততই সুখের সময়।