×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পার্থ সারথির পাশে নাগরিক সমাজ

    বিতান ঘোষ | 07-09-2020

    অধ্যাপক পার্থ সারথি রায়।

    গণতন্ত্রে ভিন্নস্বরের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলেও, বাস্তবে রাষ্ট্র কখনও ভিন্নস্বর কিংবা বিরুদ্ধমতের কদর করে না। উল্টে সেই কণ্ঠকে রোধ করার চেষ্টা করে। রাষ্ট্রের এই প্রতিহিংসাপরায়ণ মানসিকতার প্রতিফলনই দেখা গেল সাম্প্রতিক একটা ঘটনায়। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতা (IISER)-র অধ্যাপক, সমাজকর্মী পার্থ সারথি রায়কে সম্প্রতি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA) জেরার জন্য মুম্বইয়ে তলব করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি 2018 সালের 1 জানুয়ারি পুনের ভীমা কোরেগাঁও হিংসায় মদত জুগিয়েছিলেন। অধ্যাপক রায় অবশ্য বারবারই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগকে খণ্ডন করে জানিয়েছেন, তিনি ওই দিনে পুণে শহরে ছিলেনইনা। উল্টে তাঁর দাবি ছিল, সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত NIA-কে দিয়ে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।

     

    মারাঠা শক্তির বিরুদ্ধে দলিতদের যুদ্ধ জয়ের 200 বছর পূর্তিতে বিভিন্ন দলিত সংগঠন (মূলত আম্বেদকরপন্থীরা) বহুজন সমাজ পুণে শহর লাগোয়া কোরেগাঁও-এ একত্রিত হয়। এই সংগঠনগুলি "এলগার পরিষদ' নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে। কিন্তু 2018 সালের 1 জানুয়ারির এই জমায়েত থেকে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। প্রথমে পুণের পুলিশ এবং পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে NIA এই ঘটনার তদন্তে নামে। এই হিংসায় জড়িত সন্দেহে বিশিষ্ট সমাজকর্মী ছত্তিশগড়ের সুধা ভরদ্বাজ, হায়দ্রাবাদের ভারভারা রাও, গোয়ার আনন্দ তেলতুম্বে, দিল্লির গৌতম নওলাখাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া প্রত্যেকেই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসাবে সারা দেশে পরিচিত। এই ভীমা কোরেগাঁও তদন্ত শেষে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার চক্রান্তের তদন্তে পরিণত হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিপিআই (মাওবাদী)-এর মতো বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তাদের নয়া নামকরণই হয়ে যায় "শহুরে নক্সাল'! এই ভীমা কোরেগাঁও তদন্তেই এবার ডাক পড়েছে অধ্যাপক পার্থ সারথি রায়ের। আগামী 10 সেপ্টেম্বর সকাল 11টায় তাঁকে NIA-এর তদন্তকারীদের সামনে বসতে হবে— এই মর্মে ই-মেল পৌঁছেছে তাঁর কাছে।

     

    সমাজের প্রান্তিক মানুষদের অধিকার রক্ষায় পার্থ সারথি বরাবরই সরব। এর আগেও 2012 সালের 4 এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার যখন নোনাডাঙায় বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়, তখনও এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন পার্থ সারথি। কিন্তু রাজ্যের পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে তাঁকে 8 এপ্রিল গ্রেপ্তার করে। তিনি অবশ্য সে সময় বলেছিলেন, তাঁর কর্মক্ষেত্র IISER-এর ক্যাম্পাসে তিনি বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। অকুস্থলে তিনি ছিলেন না, তাই সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাঁর গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-র কাছে নোয়াম চমস্কি সহ বিশিষ্টজনেরা চিঠি লিখেছিলেন। গ্রেপ্তারির 10 দিন পর অধ্যাপক রায় জামিন পান। এবারও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ, হতাশা উগড়ে দিচ্ছেন বিশিষ্টজনেরা। প্রসঙ্গত, গত বছর অধ্যাপক রায়ের ইয়াহু মেল-এ ইয়াহু কর্তৃপক্ষের তরফে একটি মেল করে জানানো হয়েছিল, সরকারের তরফ থেকে তাঁর মেল অ্যাকাউন্টে নজরদারি করা হচ্ছে। তখনও এই নিয়ে এক দফা জলঘোলা হয়েছিল। তবে পার্থ সারথির ঘনিষ্ঠজনদের মতে, এই ঘটনাই প্রমাণ করে পার্থ সারথির যাবতীয় কাজকর্ম সরকার সন্দেহের চোখে দেখে।

     

    পার্থ সারথি কর্মজীবনেও অত্যন্ত সফল একজন শিক্ষাবিদ, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী— যাঁর লেখা নিবন্ধ দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। NIA-র জেরার বিষয়ে পার্থ সারথির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর তরফে রঞ্জিত শূর দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানালেন, মূলবাসী, দলিত শ্রেণীর মানুষদের উপর সরকারের দমনমূলক নীতির প্রতিবাদ করার জন্যই অধ্যাপক রায়কে ফাঁসানো হচ্ছে। NIA অনেকদিন ধরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। আগামী 10 সেপ্টেম্বর এর প্রতিবাদে কলকাতা শহরে এপিডিআর বিক্ষোভ কর্মসূচি নেবেন বলেও জানান তিনি।

     

    গত 6 সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণসংগঠন, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মীদের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে অধ্যাপক রায় কীভাবে দলিত, প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করেছেন তার উল্লেখ করে, বর্তমান করোনা মহামারীতেও তাঁর গবেষণা সংক্রমণ রোধে কতটা কার্যকরী হয়েছে, তার উল্লেখ করা হয়। নিপীড়িত, দরিদ্র জেলবন্দিদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। শেষে স্বাধীন এবং মুক্ত কণ্ঠস্বরকে বিচারের প্রহসনের মাধ্যমে থামিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো হয়। এই প্রতিবাদ পত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি, গণসংগঠন মিলিয়ে প্রায় 239 জন স্বাক্ষর করেন।


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    সমাজ নির্মিত ‘খুনি' হিসাবে একাকী রিয়াকে যে অসম লড়াইটা লড়তে হচ্ছে, সেই লড়াইয়ে সংহতি থাকবে।

    সহিষ্ণু আর সময়ানুবর্তী হওয়ার পাঠ যাদের দেওয়ার কথা, সেই শিক্ষকদের একাংশই এই দুইয়ের পাঠ ভুলেছেন।

    একের পর এক সিদ্ধান্তে আছড়ে পড়ছে বিতর্কের ঝড়, তবু ‘বিদ্যুৎ’-এর চমকে নীরব সমর্থন জোগাচ্ছেন অনেকে।

    বেঙ্গল প্যাক্টে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শাসনক্ষমতা দেওয়ার কথা বললেন চিত্তরঞ্জন।

    রাজনীতির বল্গাহীন লাটাই কাটাকুটি খেলে গেল, ভো-কাট্টা হল আমাদের ছেলেরা।

    গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সীমান্ত দ্বৈরথ কেন এমন রক্তক্ষয়ী মল্লযুদ্ধের চেহারা নিল, তার ময়নাতদন্তে..

    পার্থ সারথির পাশে নাগরিক সমাজ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested