×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বাড়িতে বই বলতে ব্যাঙ্কের পাসবুক

    বিতান ঘোষ | 15-08-2021

    নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের একটি ছবি।

    মধ্যরাত্রি পেরোনোর পর অসংখ্য লেখায় স্বাধীনতার কত ভিন্ন ভিন্ন অর্থ জানা গেল। সুবীরের বাবা বলেছিল সুদিন আসবেই। তারপর একদিন পুলিশ তাকে গড়ের মাঠে ছেড়ে দিয়ে বলল, "যা, স্বাধীনতা খুঁজে নিয়ে আয়।' সুবীর জানে ওর বাবা কাঁধের ঝোলা ব্যাগটায় একদিন স্বাধীনতা নিয়ে ফিরে আসবেই। পাড়ার মলিনা পিসি মহিলা সংরক্ষণ বিলের নামই শোনেনি, জানা তো দূরের কথা। শান্ত, নির্বিবাদী মলিনা পিসি রোজ ট্রেনে করে পাশের শহরে কাজে যায়। কয়েকদিন সহ্য করার পর একদিন একটা অবাঞ্ছিত হাতকে সজোরে মচকে দিয়ে বলেছে, ‘পুরুষ কামরা বলে কিছু হয় না, এটা সাধারণ কামরা, এখানে আমিও উঠতে পারি।' এই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ, অধিকারবোধ, প্রত্যাশা আর সবকিছুর মধ্যে এক অদ্ভুত সমন্বয়ই তো এই দেশটাকে 75টা বছর হাঁটিয়ে আনল।

     

     

    এই ক্ষণ আত্মরতির নয়, আত্মানুসন্ধানের। ইঁট, কাঠ, পাথরের ফলকে কী লেখা হল, আর কী হল না, তাতে খুব বেশি কিছু যায় আসে না। তবু অধিকার বোধটা প্রখর হওয়া জরুরি। কেননা ঘা'টা সেখানেই আগে পড়ে তাই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে এটাও একটা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হয়ে যায়। বিট্টুর দাদুর সরকারি চাকরিটা বাবা পেয়েছিলেন, বিট্টুর জন্যও ওর বাবা অনেক চেষ্টাচরিত্র করেছিলেন, কিন্তু বিলগ্নীকরণে ও কর্মীছাঁটাইয়ের আবহে নতুন কর্মী নিয়োগের কোনও ভাবনাই সংস্থার নেই। বিট্টু রাত জেগে পড়ে আর বলে রিজার্ভেশন তুলে দেওয়া উচিত। আম্বেদকর কলোনির রাজু হেসে বলে, ‘তোমার ঘরে সঞ্চয়িতা আছে, কম্পিটিটিভ সার্ভিসের প্রস্তুতির জন্য কতশত বই আছে। আমরা জন্মসূত্রে মেথর, বর্ষায় বাবার ডিউটি আওয়ার্স বাড়ে। লকডাউনে মাস্টারের মাইনে দেওয়া হয়নি বলে পড়তে আসতে বারণ করেছে। আমার ঘরে এখন বই বলতে এক ওই ব্যাঙ্কের পাসবুক। পড়াশোনায় ইতি টেনে এখন বাজারে বসছি।' মহামারীর মধ্যেও সমতার অধিকার অসাম্যের ঘূর্ণিপাকে ঘুরে চলে। তবু তো অনন্ত জাগে। শত বিচ্যুতির অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে করতে এগিয়ে চলে ভারতবর্ষের রথচক্র। 

     

     

    ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ডোমিনিয়ন স্টেটাস হয়ে থেকে আজকের স্বাধীন, সার্বভৌম ভারতবর্ষ পদে পদে বিপদ এসেছে। বিদেশের বহু পণ্ডিত ঠোঁট উলটে বলেছেন, এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র টেকার নয়। তাদের কথাকে ফুৎকারে উড়িয়ে ভারতবর্ষ বহাল তবিয়তে থেকেছে। তাই মাঝেমধ্যে ঈশান কোণে কালো মেঘ দেখে সবাই হাল ছেড়ে দিলেও, আমার এই দেশটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে।

     

    আরও পড়ুন: নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়াই মেয়েদের স্বাধীনতা

     

    নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে বিভীষণ যেভাবে ইন্দ্রজিৎকে হত্যা করলেন, তার মধ্যে কি কোনও ন্যায়নীতি ছিল? মধুসূদন প্রশ্ন তুললেন। স্ত্রীকে পরিত্যাগ করা রামচন্দ্র, বিনোদিনীকে কাশীবাসী করা রবীন্দ্রনাথ প্রশ্নের মুখে পড়লেন। ক্ষমতা, চিরন্তনীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলার এই অভ্যাস আমাদের এতদূর নিয়ে এসেছে। আমরা আইন দিয়ে আর প্রাচীনত্বের দোহাই দিয়ে বাঁধতে চাইনি সবকিছু, মানুষের নৈতিকতা আর শুভবুদ্ধির ওপর অটল বিশ্বাস রেখেছি। কখনও ঠকেছি, তার চেয়েও বেশি সফল হয়েছি। এরপরেও তোমরা মনে করো, এই দেশে কেউ প্রশ্ন করার অভ্যাস অনুশীলন করলে দেশের সার্বভৌমত্ব ভেঙে পড়বে?

     

     

    যতদিন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে বিসমিল্লাহ সানাই বাজাবেন, পাড়ার কালীপুজোয় নজরুল ‘কালো মেয়ের পায়ের তলায়’ গাইবেন,  যতদিন ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জ ‘হাম দেখেঙ্গে’ বলে আমাদের কন্ঠে শক্তি জোগাবেন, ততদিন এই ভারতবর্ষ এভাবেই বহাল তবিয়তে রয়ে যাবে। ভারতের বহুত্ব, বৈচিত্র্যই প্রণোদিত করবে আমাদের এক হয়ে এগিয়ে যেতে।


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    ‘সব খেলার সেরা’ আছে কিনা জানা নেই, তবে ফুটবলটাই আর বাঙালির নেই!

    দেশের ইতিহাসে এক প্রহেলিকাময় চরিত্র হয়েই রয়ে যাবেন পিভি।

    অহোম জাতীয়তাবাদে ভর করে আজ হিমন্তরা উচ্চপদে, আর কত মানুষ অসমের অ-সম রাজনীতির বলি হবে?

    বারমুডা পরা খারাপ কিছু নয়, তবে সেটা মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।

    কথার খেলাপ করেছি আমিও, সেই লজ্জায় মাস্কে মুখ ঢাকি।

    আপাতত রণে ভঙ্গ দিলেও সুনার বঙ্গালের কারিগরদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    বাড়িতে বই বলতে ব্যাঙ্কের পাসবুক-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested