রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হয়েও রাজ্যপাল ভুলে যাচ্ছেন নির্বাচনী গণতন্ত্রে মুখ্যমন্ত্রীই শেষ কথা। আবার প্রকাশ্যে দলবদল করার পরেও কোনও বিধায়ককে বিরোধী সাজিয়ে পরিষদীয় কমিটির প্রধানের পদ দেওয়ার চেষ্টা। সংসদীয় গণতন্ত্রের কফিনে সর্বত্র সবাই পেরেক পুঁতছেন। এই বিষয়ে গত 30 জুন (বুধবার) www.4thpillarwethepeople.com একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। সুদীপ্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে আলোচনায় সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী এবং আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
1) দেশ এক নিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। সংসদে বিভিন্নরকম আইন প্রণয়ন করে স্বাধীন চিন্তা, মুক্ত কন্ঠকে রোধ করা হচ্ছে। নতুন শ্রম আইনের খসড়া এবং নিয়মবিধি বেশ দুর্বোধ্য। রাজ্যে এবং কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীরাই এই বিষয়ে জানেন না।
2) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল যা করছেন, তাতে গণতন্ত্র এবং রাজ্যপাল পদের গরিমা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সর্বদা তিনি প্রচারমাধ্যমে আসতে চাইছেন। রেওয়াজ ভেঙে রাজভবনের পোর্টিকোতে বিজেপির বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এসব রাজ্যপালের পক্ষে শোভনীয় নয়।
3) রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালকেও পদাসীন হয়ে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিতে হয়। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনকে প্রকাশ্যে আনতে পারেন না৷ অথচ ধনখড় প্রতিনিয়ত ট্যুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সমস্ত বার্তালাপ তুলে ধরছেন।
4) পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান পদ বিরোধী দলের বিধায়কদের দেওয়াই দস্তুর। ঠিক যেমন আইনসভায় ডেপুটি স্পিকারের পদটা বিরোধী দলের কাউকে দেওয়া হয়। কিন্তু এই সাংবিধানিক রীতিগুলো ক্রমশ ভঙ্গ হচ্ছে। আইনপ্রণেতারাই অবিরাম আইন ভাঙছেন। তাহলে তাঁরা কী করে অন্যদের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করবেন?
5) দলত্যাগ বিরোধী আইনে সংশোধন আনার প্রয়োজন রয়েছে। দলত্যাগের জন্য কারও বিধায়ক বা সাংসদ পদ খারিজের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার। স্পিকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারালয় মন্তব্য করতে বা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু স্পিকাররা অধিকাংশ সময়েই রাজনৈতিক কারণে এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি অনন্তকালের জন্য ফেলে রাখেন। সারা দেশে এখন কয়েক হাজার দলত্যাগের ঘটনা স্পিকারদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
6) কোনও রাজ্য সরকারের স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে রাজ্যপাল সেই সরকারকে তাঁর নির্দেশ মতো চলতে বাধ্য করতে পারেন না। এই নিয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রায় আছে। বাংলার রাজ্যপাল সেটা মানেন। আর রাজনৈতিক ভাবে তাঁকে রুখতে শাসক তৃণমূল অন্যান্য অনেক বিজেপি বিরোধী দলের মতোই অসাংবিধানিক পথের আশ্রয় নিচ্ছে।
7) সাংবিধানিক ভাবে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের প্রধান কর্ণধার। তাঁর নামেই যাবতীয় সরকারি কাজ পরিচালিত হয়৷ অথচ এই রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, নিজের সরকারেরই প্রধান বিরোধী হয়ে বসে আছেন।
8) সংশোধিত দলত্যাগ বিরোধী আইনে স্পষ্ট উল্লেখ করা উচিত যে, কোনও দলের জনপ্রতিনিধি অন্য দলের সংস্রবে থাকলে স্পিকার অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবেন এবং নির্বাচন কমিশনকে বলে জনপ্রতিনিধির আসনে নতুন করে ভোটের আয়োজন করাবেন। কমবেশি সব দলই দলত্যাগের সুবিধা ভোগ করে। তাই সবারই এমন বলিষ্ঠ আইন আনতে অনীহা রয়েছে।
9) তবে আশার কথা এই যে, বর্তমান অবস্থা চিরকাল থাকবে না। পরিবর্তন একমাত্র সত্য। সিস্টেমটা এরকম সবসময় থাকবে না।
ঘোষিত লক্ষ্য পরিকাঠামোর জন্য অর্থের সংস্থান। অতীতের অভিজ্ঞতা কী বলে?
উলঙ্গ রাজাকে সাহস করে কে বলবে যে তার পরনে কাপড় নেই।
আজ না হোক কাল একদিন স্কুল খুলবেই। তখন কার কী করণীয়? কোনও পরিকল্পনা আছে কি?
কৃষি আইন প্রণয়ন কিংবা প্রত্যাহার, সংসদে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন বোধই করল না শাসক দল বিজেপি।
সুদীপ্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে আলোচনায় রঞ্জন রায়, অনিকেত চট্টোপাধ্যায় ও শুভনীল চৌধুরী।
মমতা-মোদীর জেদাজেদিতে কতটা ক্ষতি বাংলার মানুষের?