×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • রেশন: সাধু প্রস্তাব, রূপায়ণই চ্যালেঞ্জ

    রজত রায় | 02-04-2020

    প্রতীকী ছবি

    করোনা মহামারীর মুখে দাঁড়িয়ে দেশ জুড়ে মন্বন্তর ঠেকাতে কদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকার দেশের 80 কোটি মানুষকে আগামী তিন মাসের জন্য 10 কিলো চাল বা গম এবং এক কিলো ডাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। 130 কোটি জনসংখ্যার দেশে 80 কোটি মানুষ, অর্থাৎ তিন ভাগের দুই ভাগ দেশবাসীকেই বিনা পয়সায় খাদ্য জোগানোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। সরকারি হিসাবে এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে 40,000 কোটি টাকা। তবে খাদ্য ও নগদ বন্টন মিলিয়ে ধরলে খরচ 61,000 কোটি টাকা হবে। ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া-র (এফ সি আই) গুদামে চাল ও গম মিলিয়ে এখন  মোট 5 কোটি 80 লক্ষ টন মজুত রয়েছে। তার উপর রবি শস্য উঠে গেছে। এই বছর দেশে রবিতে গমের ফলন খুব ভাল, গতবারের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি, মোট 10 কোটি 90 লক্ষ টন। গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্য মিলিয়ে রবি মরসুমে সারা দেশে মোট উৎপাদন দাঁড়াবে 15 কোটি 27 লক্ষ টন। ফলে, 80 কোটি দেশবাসীকে তিন মাসের রেশন বিনা পয়সায় দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। 


    অসুবিধা আছে অন্যত্র, এবং খুবই বড় আকারের সমস্যা সেটা। লজিস্টিক প্রবলেম – খাদ্যশস্য গুদাম থেকে নিয়ে খুধার্ত মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার সমস্যা। দেশ জুড়ে এই লকডাউনের মধ্যে 80 কোটি উপভোক্তার কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল-গম-ডাল কীভাবে পৌঁছে দেওয়া যাবে, তার কোনও সহজ সমাধান এখনও দেখা যাচ্ছে না। এমন নয় যে সরকারের কাছেও এর কোনও চটজলদি সমাধান রয়েছে। তাই সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের মুখে এ নিয়ে নানান পরস্পরবিরোধী কথা শোনা যাচ্ছে। 

     

    আরও পড়ুন: নিধিরাম সর্দারদের দিয়ে লড়াই হয় না



    অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমান পরিস্থিতি নজিরবিহীন। একটি মারাত্মক রোগের ভাইরাস অতিসক্রিয় হয়ে বিশ্বের 180টি  দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আক্রমণ করছে, যার জেরে ইতিমধ্যেই প্রায় 50,000 মানুষ গোটা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যতদিন না ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়, ততদিন লকডাউন, আইসোলেশন ইত্যাদিই সমাধান। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই বলছেন, এই লকডাউনের সময় বাড়ি থেকে বেরনো চলবে না। আবার সরকার থেকেই 80 কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা করার সঙ্গেই বলা হচ্ছে গ্রাহকরা তিন মাসের মধ্যে দু’দফায় রেশন দোকন থেকে বরাদ্দ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারবেন। সরকারের এই ঘোষণা একাধিক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। 130 কোটি মানুষকে বাড়িতে স্বেচ্ছায় তিন সপ্তাহ বন্দী থাকতে বলার পরে 80 কোটি মানুষকে রেশন সংগ্রহ করতে বেরোতে বলা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশে কোথাও বলা নেই যে কাউকে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে না, সরকার পুসিশ বা বিশেষ কর্মীবাহিনী দিয়ে বাড়ি রেশন পৌঁছে দেবে।


    মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের যে রেশন বন্টনের ব্যবস্থা বা নেটওয়ার্ক ছিল, তা নয়া-উদারনৈতিক অর্থনীতির কবলে পড়ে অনেকাংশে দুর্বল ও কোথাও কোথাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অথচ, সরকার জানে যে রেশন ব্যবস্থার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছাড়া 80 কোটি দেশবাসীর কাছে দ্রুত খাদ্যশস্য পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব। কদিন আগেই ঝাড়খন্ড সরকার চেষ্টা করেছিল লক ডাউনের মধ্যে আটকে থাকা অনেকের বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছনোর জন্য একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপ-এর সাহায্য নিতে। তাতে দেখা গেল, বোকারো, ধানবাদ, রাঁচি ও জামশেদপুরের মতো শহরাঞ্চলের বাইরে তাদের নেটওয়ার্ক নেই। কারণটা সহজবোধ্য। গরিব আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খন্ডে গরিব মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে রেশন দোকানের বিকল্প এখনও নেই। 

     

    আরও পড়ুন: লকডাউন তো হল, কিন্তু প্রবীণদের কী হবে?


    কিন্ত এমন তো নয় যে সরকার লক ডাউন তুলে নেওয়ার পরেই খাদশস্য বিলি করার কথা ভেবে এ সব বলছে। কারণ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে তড়িঘড়ি এই খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন, সেখানে তো লক ডাউনের কারণে অসংগঠিত শিল্পে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কাজ ও রোজগার হারানোর কথা উঠে এসেছিল। যে হেতু এদের কেনার ক্ষমতা নেই, তাই সরকার আগামী তিন মাস নিখরচায় খোরাকি দেওয়ার কথা বলছে। তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে সরকার 80 কোটিকে এই লক ডাউনের মধ্যেই অন্তত একবার (তিন মাসের মধ্যে মোট দুটি সুযোগের মধ্যে) রেশন দোকানে গিয়ে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে নিতে বলছে। যদি পাঁচ জন পিছু একটি পরিবার ধরে নিই, তা হলে সরকার অন্তত 16 কোটি মানুষকে লক ডাউনের মধ্যে রেশন দোকানে যেতে বলছে। অথচ, দেশে রেশন দোকানের সংখ্যা মোট 5 লক্ষের কিছু বেশি (2011 সালের হিসাব)। এতদিনে সেই সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও রেশনের দোকানে অভুক্ত মানুষের দীর্ঘ লাইন এড়ানোর উপায় কী ? আর লক ডাউনের মধ্যে যদি 16 কোটি মানুষ একবার বেরিয়ে রেশন দোকানে লাইনে দাঁড়ায় তা হলে তা সামাল দেওয়া যাবে তো ? সবাই এক সঙ্গে বেরোবে না ধরে নিয়েই বলছি, তাতেও রোগ সংক্রমণের বিপদ বাড়বে না তো ? অন্যদিকে মনে রাখতে হবে, খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা অটুট রাখতে না পারলে ফুড রায়ট বা খাবারের সন্ধানে লুঠতরাজ, দাঙ্গা এড়ানো কঠিন হতে পারে। এতদিন অপরিকল্পিতভাবে করোনা মোকাবিলায় নানা চেষ্টা করার জন্য ইতিমধ্যেই অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। যে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক কাজ ও রোজগার হারিয়ে মরিয়া নিজের নিজের রাজ্যে ফেরার জন্য পায়ে হেঁটেই মাইলের পর মাইল রওয়ানা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন পথকষ্টে প্রাণ হারিয়েছে। তাই এবার রেশনের বন্টনের ব্যবস্থাটা অন্তত একটু পরিকল্পিতভাবে হোক। সবাই দেখুক, আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখি, একই ভুল বার বার করি না। 
     


    রজত রায় - এর অন্যান্য লেখা


    গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কি বং বং-এর মতো রাজনৈতিক গড় রক্ষা করতে পারবেন?

    করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখিয়ে দিল শুধু বাগাড়ম্বর দিয়ে জগৎসভায় আসন মেলে না।

    নতুন নাগরিকত্ব আইন, এন আর সি এবং এন পি আর এর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আজ যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা এক কথায়

    ইতিহাস বলে কোনও একটি ভাষাকে চাপিয়ে দিয়ে দেশে ঐক্যপ্রতিষ্ঠা করা যায়নি।

    অর্ধ শতাব্দীরও আগে দেশের শত্রু বলে নিন্দিত হয়েও ক্ষুধার্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল বামেরা

    সল্টলেক, লেকটাউন প্রভৃতি উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এলাকা বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত। ছেলে মেয়েরা বিদেশে

    রেশন: সাধু প্রস্তাব, রূপায়ণই চ্যালেঞ্জ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested