প্রধানমন্ত্রী তিন সপ্তাহের জন্য দেশ জুড়ে লক ডাউন ঘোষণা করার পরেই পরিবারের এক বর্ষীয়ান সদস্যাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল বাকি সবাই। তিনি একজন সর্বক্ষণের সহায়িকা সঙ্গে নিয়ে একাই সল্ট লেকে নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। কিন্ত অশীতিপর এই ভদ্রমহিলার বয়স জনিত কারণে নিত্যদিনই নানা ওষুধ খেতে হয়। লক ডাউনের মধ্যে কিছু বাড়াবাড়ি হলে তখন একার পক্ষে সামলানো অসম্ভব। অগত্যা, পরদিন ভোর হতেই তড়িঘড়ি গাড়ি এনে তাঁকে তাঁর সহায়িকা সমেত মেয়ের বাড়িতে স্থানাস্তরিত করা গেল। আর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া, তাঁরও বয়স আশি উত্তীর্ণ, একাই থাকেন লেক টাউনে। তিন সপ্তাহের লক ডাউন তাঁকে একাই সামলাতে হবে। এমনকি কাছেই তাঁর বোন ও ভগ্নীপতি থাকলেও ফোনে কথা বলা ছাড়া দেখা সাক্ষাতের জো নেই। আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু, টালিগঞ্জের বাসিন্দা এবং সিনিয়র সিটিজেন, একাই থাকেন। একজন মহিলা রান্না করা খাবার পাঠাতেন, লক ডাউনের জেরে সব বন্ধ। বলছিলেন, এত আচমকা ঘোষণা হল যে দোকানে গিয়ে খুব কিছু কিনে আনতে পারেননি। এখন বেরোলেই পুলিশের ঝামেলা, তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
কলকাতার সল্টলেক, লেকটাউন প্রভৃতি উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এলাকা বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত। ছেলে মেয়েরা অনেকেই উচ্চশিক্ষার্থে ভিন রাজ্য বা বিদেশে পাড়ি দেয়, তারপরে চাকরির মায়ার বাঁধনে সেখানেই আটকে পড়ে। বছরে এক বা দু’বার বাড়ি ফেরা হলেও সারা বছর বৃদ্ধ মা-বাবাকে সর্বক্ষণের সহায়ক সহায়িকা নির্ভর জীবনই কাটাতে হয়। লক ডাউন এদের অনেকেরই জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। এমনই এক পরিবারের সত্তর ছুঁই ছুঁই স্ত্রী এবং সত্তরোর্ধ স্বামী, দুজনেই নানা রোগে জর্জরিত, সল্ট লেকের আবাসনে একজন সর্বক্ষণের সহায়িকার উপর নির্ভর করে রয়েছেন। তাঁদের ছেলে প্যারিসে কর্মরত, এখন সেখানে লক ডাউনের মধ্যে রয়েছে। এমন অসংখ্য কৃতী প্রবাসী সন্তানদের বৃদ্ধ বাবা-মা এখন শহর ও আধা শহরে নিঃসহায় অবস্থায় লক ডাউনের মুখে পড়েছেন। এমনই আর একটি জায়গা শান্তিনিকেতন, যেখানে বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একা বা দু’জনে থাকেন। এমনই একজন সিনিয়র সিটিজেন মহিলার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের মতো লোকবলহীন মানুষদের পাশে স্থানীয় সমাজ এসে দাঁড়িয়েছে। একটি নতুন সংস্থা খাবারওয়ালা — বোলপুর ঘোষণা করেছে “এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি মুদিখানা ও সবজি ডেলিভারি করা হবে।“ হেল্পলাইন নাম্বার দিয়ে তাদের বক্তব্য, “করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ সেল্ফ-কোয়রান্টাইনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। তবে আমরা হাতে হাতে ডেলিভারি নয় নীতি কঠোরভাবে মেনে চলছি।“ আর একটি সংগঠন বোলপুরেরই একটি ক্যারাটে গ্রুপ জানিয়েছে, তারা করোনা জনিত লক ডাউন পরিস্থিতিতে প্রবীণদের জন্য বিশেষ পরিষেবা শুরু করেছে। তারাও হেল্পলাইন নাম্বার দিয়ে জানিয়েছে, “যে সমস্ত প্রবীণ নাগরিক বাড়িতে একা থাকেন, যাদের সাহায্য করার মতো কেউ নেই, তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এবং অত্যাবশক জিনিস আমরা ওনাদের বাড়িতে পৌঁছে দেব, যাতে ওনাদের বাইরে বেরোতে না হয়।“ তবে এই দু’টি ব্যবস্থাই বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকার জন্য। গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলি রাস্তায় নেমেছে। বীরভূম জেলায় সি পি এমের তরফে এলাকা ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন হেল্পলাইন দিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। জেলার সি পি এম নেতা গৌতম ঘোষ জানান, প্রধানত আদিবাসী গ্রামগুলি থেকেই সাহায্য চেয়ে এবং নানা খোঁজখবর করতে ফোন আসছে। তূণমূল কংগ্রেসও রাস্তায় নেমেছে। সরকারের রেশনের সঙ্গে পঞ্চায়েত থেকে বাড়ি বাড়ি পাঁচ কিলো করে আলু দেওয়া হচ্ছে। বি জে পি আপাতত চুপচাপ জল মাপছে।
আরও পড়ুন |
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য অমিল, দ্রুত ব্যবস্থার প্রয়োজন |
নিধিরাম সর্দারদের দিয়ে লড়াই হয় না |
করোনা: কেন্দ্র-রাজ্য বোঝাপড়া নেই |
প্রবীণ নাগরিকদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে কলকাতা পুলিশ এবং দ্য বেঙ্গল অ্যান্ড ডিগনিটি ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘প্রণাম’ নামে একটি সংস্থা গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয়। এই সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে গোটা দেশে মোট ৮১, ০০, ০০০ জন প্রবীণ নাগরিক রয়েছেন, যাঁদের অন্তত ৩০ শতাংশ একা থাকেন। এবং এঁদের অনেকেরই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা সমস্যা রয়েছে। কলকাতার প্রবীণ নাগরিকরা ‘প্রণাম’য়ে নাম নথিভুক্ত করলে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁদের সাহায্য করে থাকেন। এবার করোনা জনিত লক ডাউন শুরু হলে কলকাতার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, নাম নথিভুক্ত না থাকলেও প্রবীণ নাগরিকরা যোগাযোগ করলে তাঁদের সাহায্য করা হবে। দমদম এলাকায় মাইকে ঘোষণা করতে শোনা গিয়েছে, কেউ বাজার করতে না পারলে হেল্পলাইনে যোগাযোগ করলে সাহায্য মিলবে। মালদহের স্কুলশিক্ষক ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে এরকম একটি হেল্পলাইন খুলেছেন স্থানীয় মানুষের সাহায্যের জন্য। এ ভাবেই সঙ্কটের সময় প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষও এগিয়ে আসছেন প্রবীণ, অশক্ত ও বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের সাহায্য করতে। এই ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মধ্যে এটা অবশ্যই একটা আশার আলো।
তবে, একটা ধন্দ তবুও যাচ্ছে না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বার বার আশ্বাস দিচ্ছে, অত্যাবশকীয় সব জিনিসের দোকান খোলা থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার বার টিভির পর্দায় বলতে দেখা যাচ্ছে, ওষুধের দোকান, সবজি, দুধ ইত্যাদির দোকান খোলা থাকছে। তা হলে মানুষ এ সব জিনিস কিনতে রাস্তায় নামলেই পুলিশ লাঠি নিয়ে তেড়ে যাচ্ছে কেন? কেনই বা ঘর থেকে বেরোলে গ্রেফতার ও জরিমানার কথা বলা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, এই লক ডাউনকে কারফিউ হিসাবে দেখতে হবে। অর্থাৎ, বাড়ি থেকে বেরনো চলবে না। তা হলে প্রয়োজনে ওষুধ, চাল ডাল সবজি কিনতে দোকানে যাওয়ার কী হবে? নেতা মন্ত্রীরা টিভিতে মুখ দেখিয়ে সময় নষ্ট না করে এই বিষয়টির একটা সমাধান সূত্র খুঁজলে পারেন।
খেলার মাঠের বাইরে রাজনীতিতে তিনি পশ্চিমী আধিপত্যবাদের বিরোধের মূর্ত প্রতীক
নতুন নাগরিকত্ব আইন, এন আর সি এবং এন পি আর এর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আজ যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা এক কথায়
বাম কংগ্রেস আইএসএফ মোর্চার সমাবেশে মানুষের রাজনৈতিক দাবি শোনা গেল না।
ইতিহাসের পুরনো ক্ষত বাঙালি ভদ্রলোকদের বিজেপি-প্রেমী করে তুলেছে।
চাষি তার ইচ্ছা মতো উৎপন্ন পণ্যের বিপণনের অধিকার পাবে কি? মনে হয় না।
ইতিহাস বলে কোনও একটি ভাষাকে চাপিয়ে দিয়ে দেশে ঐক্যপ্রতিষ্ঠা করা যায়নি।