এসে গেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন বাজেট। তাতে অনেক ভাল ভাল কথা আছে । বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগ করমুক্ত হবে। আ-হা-হা! আসুক, আসুক। জব চার্ণকের দল আসলে ‘জব’ও আসবে।
একশ’টি নতুন এয়ারপোর্ট হবে। খুব ভাল। আমাদের ছত্তিশগড়ে সবেধন নীলমণি একটাই এয়ারপোর্ট — স্বামী বিবেকানন্দ। আশা করি গোটা দু’তিন আমাদের ভাগেও পড়বে, ধরুন বাবা রামদেব এয়ারপোর্ট বা শ্রীশ্রী এয়ারপোর্ট। সরকারের ভাঁড়ে মা-ভবানী। পিপিপি বা পাবলিক-পেরাইভেট করলে এঁদের ট্রাস্ট থেকে নিশ্চয়ই পয়সা আসবে।
কিন্তু এতগুলো এয়ারপোর্টে প্লেন নামাবে কারা?
জেট বন্ধ হলো। মাছরাঙা এরোপ্লেনের বিজয় মালিয়া দেশ ছেড়ে লন্ডনে সুন্দরীদের বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াল, এয়ার ইন্ডিয়া কয়েক বছর ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে গাইছে ‘আমায় কে নিবি গো কিনে’। কিন্তু কেউ নিচ্ছে না। হবু গ্রাহকেরা একের পর এক মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে।
তাতে কী ? ভাল খবর আছে। স্টার্ট আপ বা আমাদের ছানাপোনারা ‘জব সীকার’ না হয়ে ‘জব গিভার’ হলে, অর্থাৎ চাকরি খোঁজা ছেড়ে ব্যবসা শুরু করলে ওদের কয়েকবছর ট্যাক্সো দিতে হবে না। খুব ভালো কথা। আশা করছি সরকারকে না দিলেও ছেলেটা আমাদের মত বুড়োবুড়িকে মাসোহারা দেবে। বাপ-মা’র প্রতি একটা কর্তব্য আছে না! আমার ঠাকুমার ভাষায় ‘গুদাম ভাড়া’ দিতে অইব না? দশমাস দশ দিনের? ভুললে ধম্মে সইবে? ক্ষুদিরামও ভোলেননি।
সিগ্রেটে শুল্ক বেড়েছে — বেশ হয়েছে, ছেলেটা শুধরে যাবে। অ্যালকোহলে বাড়েনি — হুঁ হুঁ, সরকার বাহাদুর আমার কথা ভোলেননি; আমি যে ভোট দিয়েছিলে-এ-এ-ম!
কিন্তু এ কি? লাইফ ইন্সিওরেন্স করপোরেশন বেচে দেবে সরকার? ক্যান? এইডা তো প্রফিটে চলত্যাছে। গত দুই বছরে প্রিমিয়াম কলেকশন হইছে প্রায় ৩৮১৮ কোটি লক্ষ টাকা। বৃদ্ধির হার পেরাইভেট বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। আমি যে শেয়ার কিনি নি, মিউচুয়াল ফান্ড কিনি নি। শুধু গোটাকয়েক পলিসি করেছি। তাতে বোনাস পাই, হটাৎ করে পটল তুললে গিন্নি ও ছানাটি পথে বসবে না। আমি হটাৎ ডি এল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকের ভিক্ষুক হয়ে যাই — আমার অন্ধের নড়িটি কেড়ে নিও না বাবা!
গিন্নি মুখঝামটা দিয়ে ওঠেন।
-কেন ? ছেলেটার পড়ার জন্যে আমার মকরমুখো বালা জোড়া আর নেকলেস বেচে দাও নি? ওগুলো নকল ছিলো নাকি? আমার বাপের বাড়ির জিনিস, চোদ্দ ক্যারেট! সরকার বাহাদুর বুঝে সুঝেই করেছে। এই সরকারের বিত্তমন্ত্রীরা সব জে এন ইউয়ের, সেটা খেয়াল আছে? জেটলি হোন বা সীতারমণ। তোমরা তো জে এন ইউ বলতে ওই কানহাইয়াকেই বোঝ।
--না না, তা কেন? তবে লোকসানে চলা কোন পাবলিক সেক্টর ইউনিটকে না বেচে এই এলাইসি? গতবার একেই বলল – তুমি অনেক লাভ করেছ, এবার ডুবতে বসা ইনভেস্টমেন্ট লীজ এন্ড ফিনান্সিয়াল সিকিউরিটিজকে ৪০০০ কোটি টাকা দাও। আইডিবিআই ব্যাংক ডুবছে, ওকেও দাও। তুমি হলে সরকারের সংযুক্ত পরিবারের বড় ছেলে। তুমি যদি অক্ষম ছোট ভাইদের না দেখ! আরে রিলায়েন্সের কিছু কোম্পানিকেও দেখ, ইয়েস ব্যাংককে দাও। এক্ষণে পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালন করিয়া তুমি শহীদ হও।
--বাজে বোকো না। সবটা বেচছে নাতো, একটুখানি। যেমন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় তুমি আমাদের ৬০ বাই ৪০ এর কৈখালির প্লটটার আদ্দেক বেচে দাওনি? এত ঘাবড়াবার কী হয়েছে?
-- আরে দেশের অর্থনীতির নাড়ির গতি স্লো হচ্ছে, আগামী বছর আরও বেচবে। এই দেখ না মনরেগা’র বরাদ্দ ১৩% কমল, জব এন্ড স্কিল ডেভেলপমেন্টে কমল ৭% আর বাণিজ্য ও শিল্পের বরাদ্দ কমল ৪.৮%। এতে চাকরি বাড়বে না ইকনমি উঠে দাঁড়াবে? আর চাষিদের...
--ব্যস, ব্যস। তুমি চাষি নও, রাজনীতিওলা নও। তোমাকে গোটা দেশের অর্থনীতি নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। রিটায়ার হয়েছ, দেখো অর্থমন্ত্রী তোমার জন্যে কত কি করছেন। তোমার জমা টাকা এবার ব্যাংক ডুবলেও পাঁচ লাখ অব্দি পাবেই পাবে। সিনিয়র সিটিজেন এবং দিব্যাংগের জন্যে বরাদ্দ ৯০০০ কোটি টাকা।
-- তাই নাকি? তা আমি কত পাব? টাকাটা কি সোজা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আসবে? সেই ১৫ লাখ তো আজও এলো না। হাপিত্যেশ করে বসে আছি।
--অমন হ্যাংলামো করে না। সবুরে মেওয়া ফলে। মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ডেও ট্যাক্স লাগবে না।
--ধেত্তেরি! আমার ওসব কিছুই নেই। আমার মত ছাপোষা বাঙালী মধ্যবিত্তের একটাই মাথাব্যথা। ট্যাক্সো কত দিতে হবে? ৫ লাখ অব্দি কোন ট্যাক্স নেই, সেতো আগের বছরের মতন। কিন্তু ৭০ রকম ‘ছুট’ বাতিল আর দু’রকম নিয়ম, নতুন নিয়মে কম দিতে হবে? অংক যে কী কঠিন!
-- কি যে বল! এ তো জলের মত সোজা। নাও, বুঝিয়ে দিচ্ছি।
তুমি পেনশনের টাকা এলে প্রতিমাসে বটার তেলেভাজার দোকানে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাটলেট খাও; অস্বীকার কোর না। সেটা এখন ২৫ টাকা প্লেটের বদলে ২০ টাকা হবে। অবশ্যি মাস্টার্ড সস, পেঁয়াজ ও শসা কুচি বাদ যাবে। চাইলে সস ও পেঁয়াজ দিয়ে খেতে পার, তবে আগের মত ২৫ টাকা দিয়ে। বুঝেছ?
--জলের মত। তুমি ইকনমিক্সের কিস্যু না জেনে এত ভাল করে বোঝালে কেমন করে?
--আরে অর্থমন্ত্রী যে নারী, ঠিক আমার মত; তবে পেঁয়াজ খান না, এই আর কি।
একদা বিজেপি-ই এই কৃষি সংস্কারের প্রবল বিরোধী ছিল।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষে থেকে।
নিজেকে চিনতে পেরেছি, আমি কাল্লু। কিসসা শোনা যার নেশা
দুটি শ্লোকে নারী দেবী, বাকি দুই শতে লাঠির বাড়ি
কৃষি উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার চাই।
রাষ্ট্রীয় বিচার নীতি: শত নির্দোষ জেলে পচে পচুক, একজন অপরাধীও যেন বাইরে না থাকে!