সুপ্রিম কোর্টও বলছে বাবরি মসজিদ ভাঙা একটা গুরুতর অপরাধ। অপরাধ হল অথচ অপরাধীর শাস্তি হবে না? এ কেমন আইন, কেমন বিচার? এই পরিস্থিতিতে বিচার ব্যবস্থার উপর আদৌ কি ভরসা রাখতে পারবে সাধারণ মানুষ? এই নিয়েই www.4thpillars.com 2 অক্টোবর (শুক্রবার) একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এবং অরুণাংশু চক্রবর্তী।
1) কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় সিদ্ধান্তই তো এদেশে মেনে নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে বাবরি মসজিদ মামলার রায় হয়ে গেল। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ রাজ্যসভার সাংসদও হয়ে গেলেন।
2) এতকাল রামচন্দ্রকে মানুষ পুরাণের একটা চরিত্র বলেই জানত। তুলসীদাস প্রথম এই পৌরাণিক চরিত্রের উপর দেবত্ব আরোপ করেন। কিন্তু তিনিও কখনও বলেননি বাবরি মসজিদের তলায় রামমন্দির ছিল।
3) বিচারপতি জোসেফ বলেছিলেন উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসের সরকার ভাঙা সাংবিধানিকভাবে ভুল হয়েছে। তারপরই সরকারের তরফে তার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে পদোন্নতির ফাইল আটকে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় কে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলবে? বাবরি ধ্বংস মামলায় রায় দেওয়া বিচারপতি তো সামান্য জেলা স্তরের বিচারক মাত্র।
4) সিবিআই হয়তো তাদের মতো করে এই মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছিল। এখানে বিচারকের ভূমিকাটাও পর্যালোচনা করা উচিত। সিবিআই এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলেও, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তখন অভিযুক্তদের কতজন বেঁচে থাকবেন সন্দেহ।
5) সুপ্রিম কোর্টের আগের পর্যবেক্ষণ ছিল, বাবরি মসজিদ ভাঙা অন্যায় ছিল। তারপরও যদি এমন রায় দেওয়া হয়, সেটা বিচারব্যবস্থার মুখে চুনকালি লেপে দেওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।
6) লিবেরহান কমিশনের কাছে উমা ভারতীর অকপট স্বীকারোক্তি ছিল যে, তাঁরাই মসজিদটি ভেঙেছেন। তারপরেও কীভাবে এই অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হতে পারেন? সর্বসমক্ষে আডবানী, জোশীরা সেদিন উত্তপ্ত বক্তৃতা দিয়ে বাকিদের প্ররোচিত করেছিলেন।
7) এ ব্যাপারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও-ও তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাঁর কাছে খবর ছিল মন্দির ভাঙার চেষ্টা হতে পারে। তা সত্ত্বেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। চেষ্টা করলে করসেবকদের আটকানো যেত।
8) যে বিতর্কিত জমি সরকারের মালিকানাধীন ছিল, সেটা কীভাবে রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হল? সেখানে রামমন্দির ছিল, এমন কোনও পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ ছাড়াই রায় দিয়ে দেওয়া হল। এটা বিচারব্যবস্থার প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।
9) বিচারপতিদের একটা বড় অংশ নিজেদের স্বার্থে শাসককে তোষামোদ করে চলতে চাইছেন। তাঁদের এইসব সিদ্ধান্তে সামগ্রিক বিচারব্যবস্থা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। "আইন একটি গাধা' — প্রাচীন প্রবাদটাকে সত্যি করছে বিচারপতিদের সাম্প্রতিক রায়গুলি।
10) রায়ের প্রতিলিপিতে বিচারপতিদের মতামত এবং স্বাক্ষর থাকাই দস্তুর। সেখানে কারও মত অন্যদের সঙ্গে না মিললে, তারও উল্লেখ থাকে। কিন্তু এখন তো সে সবকিছুই তুলে দেওয়া হচ্ছে। চন্দ্রচূড়ের মতো নির্ভীক বিচারপতিও বাবরি মসজিদ মামলায় বাকিদের মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে স্বাক্ষর করেছেন। নরিম্যানের মতো কিছু বিচারপতি আছেন ঠিকই।
11) সিবিআই কীভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সেটা দেখা তো কোর্টের দায়িত্ব। এত বছর ধরে তদন্ত প্রক্রিয়ায় কী কী উঠে এল, আর কী কী এল না, না এলে কেন এল না, এগুলো তো কোর্টকেই দেখতে হবে। আসলে শাসক যদি অপরাধ করে, তাহলে সাত খুন মাফ। এটা বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে।
12) বিচারব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের ভরসা উঠে যাচ্ছে। সরকার বিভিন্ন আইন এনে নিরপরাধ মানুষকে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অথচ মানুষটা যে নিরপরাধ, এটা প্রমাণ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টও বিভিন্ন বিষয়ে অনেক দেরিতে সক্রিয় হচ্ছে। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে এতদিন গৃহবন্দি করে রাখার পর শীর্ষ আদালত তাঁকে বন্দি রাখার কারণ জানতে চেয়েছে।
13) ফারুক আবদুল্লা যেমন বলেছেন, কাশ্মীরিরা যেভাবে মনে করেন তাঁরা বাকি ভারতের ক্রীতদাস, তেমনই আমরাও এই বিচারব্যবস্থার ক্রীতদাস হয়ে যাচ্ছি। বিচারব্যবস্থা বলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে কিছু থাকবে না। এর মধ্যেও অল্প কয়েকজন ভাল কাজ করছেন। কিন্তু বিচারবিভাগের সঙ্গে যুক্ত সবাই জানেন, কর্মজীবনে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হলে কেন্দ্রের শাসক দলের কথায় চলতে হবে।
মানুষ অতীত ভুলে গেছে এই ভরসায় অসত্য আখ্যান রচনা করছেন মোদী।
ধর্মীয় আচার ও সামাজিক উৎসবকে ছাড়িয়ে বাঙালির দুর্গাপূজা কি প্রধানত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে?
কবিতা তার জ্যান্ত লাশ, কার?
বাঙালির যে নবজাগরণ সমৃদ্ধ মানসিকতা, তার অন্যতম উদাহরণ ছিলেন সৌমিত্রবাবু নিজে।
প্রত্যেকের নয় মাসের খাবার সরকারের গুদামে মজুদ। তবু কেন পেটে ভাত নেই ভারতবাসীর? জবাব চাই, খাবার চাই।
অনেকেই মনে করেন মানব সভ্যতার প্রথম সাহিত্য: গিল্গামেশ-কাব্য