ধর্মীয় আচার ও সামাজিক উৎসবকে ছাড়িয়ে বাঙালির দুর্গাপূজা কি প্রধানত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে? ভোটের জমি দখলের লড়াইয়ের ছায়া কি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পুজোর প্যান্ডেলেই? এই প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখেই www.4thpillars.com গত 21 অক্টোবর (বুধবার) একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। এই আলোচনায় সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক রজত রায়, সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক সৌমিত্র বসু।
1) সরকার এবং প্রশাসন যদি সঠিক ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে অনেকটাই ভিড় এবং প্রকাশ্য জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণেও রাশ টানা সম্ভব হবে। এতে 100 শতাংশ সংক্রমণ কমবে, এমনটা নয়। কিন্তু, অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।
2) যে কোনও প্রতিমাই শক্তির প্রতীক। অসহায় এক পরিযায়ী শ্রমিক মাকে শক্তির রূপ হিসাবে দেখানো হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক মানেই আমরা পুরুষ ভাবি। এখানে একজন নারী, একজন স্নেহশীলা মাকে দেখানো হয়েছে, যে সমস্ত দায়িত্ব সামলেও সন্তানকে রক্ষা করছে। এই শক্তির মধ্যে দুর্গা নেই, তা বলা যাবে না। বরং এটা একটা বড় বার্তা দিল যে, সাধারণ মানুষের মধ্যেই দেবীকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে যাদের সব থেকে বেশি উপেক্ষা করা হয়েছে, সেই প্রান্তিক মানুষরাই যে অন্যতম শক্তির উৎস তাও বোঝানো হয়েছে।
3) এই প্রতীক সমাজের কিছু অংশকে ধাক্কা দিয়েছে। কেননা সেই প্রতিমায় নারীর যে ভাবমূর্তি দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে হিন্দুত্ববাদীদের কাছে নারীর যে ভাবমূর্তি, তার মিল নেই।
4) এটা পরিস্কার যে, হিন্দু মৌলবাদীরা নতুন কোনও ভাবনাকে মেনে নিতে পারেন না। থিম পুজো বহুদিন ধরেই চলে আসছে, তাহলে এটায় আপত্তি কোথায়? প্রতিমাটি শিল্পসৃষ্টির দিক থেকেও যেমন সুন্দর, তেমনই ওই শিল্পটির মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি সরকারের যে অবহেলা, তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করা হয়েছে। আর শাসক সেটাকেই ভয় পাচ্ছে।
5) সামাজিক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের প্রশাসনের যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, তা তারা নেননি। পুজোর সঙ্গে বানিজ্যকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর এখন মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন বন্ধ হলে হলে অনেক স্বার্থান্বেষী মহলের অসুবিধা হবে।
6) বিশ্বব্যাপী সমস্ত উৎসব বন্ধ। তাহলে আমাদের দেশের মানুষগুলোকে উন্মাদনায় ভাসিয়ে তারপর হাসপাতালে পাঠানোর মানে হয় কি? ক্লাবগুলোকে অনুদান দেওয়ার বদলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করা উচিত ছিল, যেটা হয়নি।
7) আদালত পুজো বন্ধ করতে বলেনি। বলেছে ভিড় কমাতে। মণ্ডপে যদি লোক না প্রবেশ করতে না পারে, তাহলে রাস্তায় লোক কম বেরোবে। তাই এই সিদ্ধান্ত।
8) এটা উৎসবের সময় নয়। হাসপাতালে আর শয্যা নেই। উৎসব করলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই যারা উৎসবকে উৎসাহ দিচ্ছেন, তারা অনৈতিক কাজ করছেন।
9) ক্লাবগুলোর কাছে যে অনুদান পাঠানো হয়েছে, তা তো ঢাকি কিংবা কুমোরটুলির শিল্পীদের পাঠানো যেতে পারত। এতে পরবর্তী উৎসব না হওয়া অবধি তাদের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষিত রাখা যেত।
10) হাইকোর্ট বড় জোর রায় দিতে পারে, কিন্তু তার রূপায়ণের দায়িত্ব সরকার এবং প্রশাসনের। সচেতন নাগরিকদের মতো পুজো উদ্যোক্তাদেরও উচিত এই রায়কে পালন করা। দুর্ভাগ্যক্রমে সরকারের একাংশ ধর্মীয় উৎসব পালন করতে মদত দিচ্ছেন।
11) কেবল সংখ্যা দিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি সুবিচার করা যায় না। এটা ভোট নয়। যুক্তি, তর্ক, বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। মনোবিজ্ঞানে বলা হয়, আবেগের উপর বুদ্ধির নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। আবেগ এবং হুজুগের মধ্যে তফাৎ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তি মানুষকেও সচেতন ও সংযত হতে হবে।
এ বছর ভোটে ধর্মীয় বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গেই ভাষাভিত্তিক এবং লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনেরও সাক্ষী থাকছে বাংলা।
তুই তোকারি, সাপের ছোবলে প্রতিপক্ষ দেওয়ালে ছবি এটাই রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দর বাংলায় রাজনীতির ভাষা?
ক্যাওসের মধ্যে থেকে বুঝতে হবে, নগরজীবনের মধ্যে থেকে বুঝতে হবে।
পেশায় রাশিবৈজ্ঞানিক। যুক্ত আছেন আই.এস.আই ও আই.এ.এস.আর-এর সাথে।
এই 'জাতীয় স্বার্থ' বিষয়টা ঠিক কী? কোথায় বলা আছে? কে ঠিক করল? তা কি শুধুই শাসকের বন্দনা?
আজকের ভারতে চরম দক্ষিণপন্থী শাসনে যেন সেই ইউটোপিয়া বাস্তবায়িত হচ্ছে!