×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বিজেপির ভূস্বর্গ জয়ে বাধা গুপকার জোট

    রজত রায় | 29-12-2020

    ভূস্বর্গের রাজনীতিতে একদা যুযুধান দুই শিবির এখন জোটবদ্ধ। গুপকর জোটের অন্যতম তিন কুশীলব ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতি।

    দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাঁর বিজেপি দল এতদিনে সত্যিকারের বিপদে পড়েছে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লিকে ঘিরে চাষিদের ধর্না আন্দোলন দুর্বল হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই বরং তাতে মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দূরপ্রান্তের রাজ্য থেকে কৃষকরা দলে দলে এসে যোগ দিচ্ছেন, আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে দিচ্ছেন গোড়ায় এই আন্দোলনকে বিদেশি (খলিস্তানি পাকিস্তানি) মদতপুষ্ট বলে প্রচার করলেও তা যে ভিত্তিহীন প্রচার, তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়ে সেই আন্দোলনরত চাষিদের সঙ্গেই বারবার আলোচনায় বসতে বাধ্য হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার 2014 সালে প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পরে এতদিন কখনওই এত বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েনি মোদীর সরকার      

     

    গোটা দেশের নজর যখন মোদী কী করে এই কৃষক আন্দোলনের মোকাবিলা করেন, তার প্রতি আবদ্ধ, তখন আর একটি ঘটনা মোটামুটি চুপিসারেই ঘটে গেল, যার সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে সেটা হল জম্মু কাশ্মীরের জেলা উন্নয়ন পর্ষদ (District Development Council বা DDC) নির্বাচন গতবছর (2019 সালের 5 আগস্ট) মোদীর সরকার কাশ্মীরের জন্য নির্দিষ্ট ভারতীয় সংবিধান থেকে আর্টিকল 370 রদ করে দিয়ে ওই রাজ্যকে ভেঙে লাদাখকে আলাদা এবং সবকটিকেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়ার পরে এই প্রথম কাশ্মীরে স্থানীয় স্তরে ভোট হল তার আগে দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের শেখ আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতির মতো অনেক পরিচিত জননেতাকেই কারারুদ্ধ করে রাখা হয় সেখানকার মানুষের বাক্-স্বাধীনতা হরণ করা হয় নির্বাচনের সময়েও বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরই প্রচারে যেতে বাধা দেওয়া হয় যদিও বিজেপি নেতারা পুলিশ পাহারা নিয়ে যথেচ্ছ প্রচার করেন তা সত্ত্বেও ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, বিরোধী দলগুলি বেশ ভাল ফল করেছে এই বিষয়টি একটু খতিয়ে দেখার দাবি করে

     

    মনে রাখতে হবে, এই DDC রাজ্য বিধানসভার মতো কোনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয় বিজেপির দাবি ছিল, কাশ্মীরের মানুষ এখন শুধুই উন্নয়নে আগ্রহী তাঁরা ন্যাশনাল কনফারেন্স বা পিডিপি- মতো দলেরভারত বিরোধীরাজনীতিতে আগ্রহী নন তাই, রাজ্যের বিকাশের কথাকে সামনে রেখেই DDC- নির্বাচন করা কিন্তু, ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে সাতটি দলের জোট, যা কিনা বিজেপির কথায় ‘গুপকার গ্যাং’ নামে পরিচিত, তারা নির্বাচনে লড়ে কংগ্রেস, সিপিএম-সহ অন্যকিছু দল তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়ে গুপকার জোট’ বা ‘গুপকার গ্যাং’ কথাটি এসেছে শ্রীনগরে ফারুক আবদুল্লার বাসভবন যে রাস্তায় অবস্থিত, তার নাম থেকে কাশ্মীরের সংবিধান প্রদত্ত বিশেষ অধিকার মোদী সরকার হরণ করার ঠিক আগে 2019 সালের 4 আগস্ট আবদুল্লার বাসভবনে এক বৈঠকে বসে বিভিন্ন দলের নেতারা ঠিক করেন যে, কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার,স্বাতন্ত্র্য স্বাধিকার বজায় রাখতে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়বেন তারপর বহুদিন কারাবাসের পরে বেরিয়ে এসে নেতারা আবার আলোচনা শুরু করেন এবং 2020 সালের 22 আগস্ট কাশ্মীরের সাতটি দল একযোগে সেই সুরেই ঘোষণাপত্র জারি করে পরে সেই মর্মেই তারা জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়ে

     

    অর্থাৎ, বিজেপি জম্মু কাশ্মীরের এই স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনকে রাজনীতিমুক্ত উন্নয়নকেন্দ্রিক বলে দেখাতে চাইলেও গুপকার জোট সেভাবে দেখেনি তারা এটাকে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাশ্মীর নীতির বিরোধিতার একটা সুযোগ হিসাবেই দেখতে চেয়েছিল তাই, প্রশাসনের তরফে প্রচুর বাধাদান সত্ত্বেও ভোটপর্ব থেকে পালিয়ে যায়নি নির্বাচনের ফল বেরোলে দেখা গেল, শুধু কাশ্মীর উপত্যকাতেই নয়, বিজেপির শক্তিশালী দুর্গ জম্মুতেও এই তথাকথিত বিদেশি মদতপুষ্ট গুপকার গ্যাং ভালই ফল করেছে আগেই বলেছি, এই DDC-র কোনও সাংবিধানিক বৈধতা নেই লোকসভা, বিধানসভা পঞ্চায়েতের ভোটের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার নিরিখে এক একটা নির্বাচনী কেন্দ্র গঠিত হয়, অর্থাৎ, জনপ্রতিনিধিরা মোটামুটি ভাবে জনসংখ্যার সমানুপাতে নির্বাচিত হন তা এখানে মানা হয়নি এখানে জম্মু কাশ্মীরকে 10টা করে মোট 20টি DDC-তে ভাগ করা হয়েছে প্রতিটি DDC-তে 14 জন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে ক্ষেত্রে জনসংখ্যার সমানুপাতে কিছু করা হচ্ছে না যেমন, শ্রীনগর জেলার জনসংখ্যা 12 লক্ষের বেশি, কিশতওয়ার জেলার জনসংখ্যা 2.5 লক্ষঅথচ, দুই জেলা থেকেই 14 জন করে প্রতিনিধি থাকবে তাছাড়া, এই নির্বাচিত DDC কি অদূর ভবিষ্যতে নির্বাচিত বিধানসভার (যখন গঠিত হবে, এখন রাষ্ট্রপতির শাসন) সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে না?

     

    এবার ফলের কথায় আসা যাক 20টি DDC-র মোট 280টি প্রতিনিধির মধ্যে 278টির ফল ঘোষিত তার মধ্যে বিজেপি একক দল হিসাবে পেয়েছে সবচেয়ে বেশি আসন, মোট 75টি ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স পেয়েছে 67টি, মেহবুবা মুফতির পিডিপি 27টি, কংগ্রেস 26টি, সিপিএম 5টি, নির্দল 50টি ইত্যাদি মোটকথা, গুপকার জোট মিলিত ভাবে বিজেপির থেকে অনেক বেশি আসন পেয়েছে, মোট 110টি এবং ইতিমধ্যেই কাশ্মীর উপত্যকার 10টির মধ্যে 9টি DDC দখল করেছে বিজেপি জম্মুতে পেয়েছে 5টি DDCযেহেতু 50 জন নির্দল প্রতিনিধি জয়ী হয়েছেন, তাই বাকি 6টি DDC বোর্ড গঠনে তাদের ভূমিকা গুরুত্ব পাবে সেজন্য এখনই রাষ্ট্রপতির শাসনে থাকা জম্মু কাশ্মীরে রাজ্যপালের অঙ্গুলিহেলনে নির্দল কয়েকজন গুপকার প্রতিনিধির উপর পুলিশ-প্রশাসন চাপ বাড়াচ্ছে তাদের আনুগত্য আদায় করতে

     

    ফলপ্রকাশের পরে অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতারা দিল্লিতে বসে কাশ্মীরের মানুষকে মোদীর নীতি সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কিন্তু যেটা চাপা থাকছে না, তা হল, এই গুপকার জোটের জয় আদতে মোদী, অমিত শাহ, বিজেপির কাশ্মীর-নীতির প্রতি একটি সজোরে চপেটাঘাত দিল্লিতে কৃষকদের আন্দোলন ইতিমধ্যেই মোদী-অমিত শাহদের কোণঠাসা করে দিয়েছে তারমধ্যে কাশ্মীরে স্থানীয় প্রশাসনে ভোটের ফলে সরকারের কাশ্মীর-নীতিই কড়া প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে বুঝিয়ে দিল, বিজেপি সরকারকেও রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব


    রজত রায় - এর অন্যান্য লেখা


    চাষি তার ইচ্ছা মতো উৎপন্ন পণ্যের বিপণনের অধিকার পাবে কি? মনে হয় না।

    বলশেভিক বিপ্লবের পর ধর্মের পীড়নের ইতিহাসের চাকা ঘুরে গিয়ে এখন ধর্মকে ব্যবহার করেই রুশজাতীয়তাবাদউস্ক

    “নিরন্ন, কর্মহীন” বইটি আমাদের চারপাশের এই সব বিপন্ন মানুষদের চিনিয়ে দিয়ে আমাদের সামনেই আয়না ধরেছে

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাৎসি বাহিনীর ইহুদি গণহত্যা শুরু হয়েছিল ইউক্রেনের এই বাবি ইয়ারেই!

    স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী গুপকার জোটের সাফল্য বিজেপির কাশ্মীর নীতির প্রতি অনাস্থা।

    CAA-এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন আর পাঁচটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মত নয়। এই লড়াই সংবিধান বাঁচানোর লড়াই

    বিজেপির ভূস্বর্গ জয়ে বাধা গুপকার জোট-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested