জনযুদ্ধে সোমনাথ হোর (Somenath Hore): পঞ্চাশ পাতার একটি পিডিএফ ফাইল; লেখক মাননীয় শুভেন্দু দাশগুপ্ত, অর্থনীতিবিদ, আরও গুরুত্বপূর্ণ সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রকলা এবং বিশেষ করে কার্টুনের দুনিয়ায় যাঁর অনায়াস বিচরণ। এই ফাইলটি নেট-দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, এই বছরটা মানবদরদী চিত্রকর ও ভাস্কর সোমনাথ হোরের জন্মশতবার্ষিকী। দেশের বামপন্থী দলগুলি তাঁকে ভুলে গেছে। এটাই তো তাদের পরম্পরা; যতক্ষণ অবধি তুমি আমার সদস্য, ততক্ষণ সব ঠিক আছে। যেই সদস্যপদ ছাড়লে, তুমি যত বড় প্রতিভাশালীই হও, তুমি হয়ে গেলে রেনিগেড, প্রতিক্রিয়াশীল। অনেক উদাহরণ আছে, তাঁদের নাম তুলে এই লেখা ভারাক্রান্ত করার কোনও প্রয়োজন নেই। আধুনিক প্রজন্মের বামপন্থী কর্মীরা অনেকেই জানেন না যে 1943-র মন্বন্তরের সময় প্রবাদপ্রতিম শিল্পী (Artist) তাঁর তুলির সাবলীল টানে কীভাবে বাংলার মানুষের চরম দুর্দশা, মুমূর্ষু অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আবার তিন বছর বাদে তাঁরই যুগান্তকারী স্কেচ, কার্টুন, চিত্রকলা কীভাবে মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
প্রচ্ছদে তেভাগা আন্দোলনের এক কৃষক কমিউনিস্ট (Communist Party Of India) পার্টির কাগজ ‘স্বাধীনতা’ পড়ছেন। ‘কালি ও কলম’ পত্রিকায় সোমনাথের এই ছবিটি 1946-এর 20 ডিসেম্বর ছাপা হয়েছিল। তাঁর বয়স তখন 25। তাঁর জন্ম চট্টগ্রামে, 1921 সালে। বাড়িতে রাজনৈতিক পরিবেশ, মা গোপন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, বোন ক্যুরিয়ারের কাজ করেন। অল্প বয়স থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। হাতের লেখা সুন্দর, তাই পোস্টার লেখায় তাঁর খুব চাহিদা। শিল্পের থেকে তখন প্রচারেই বেশি গুরুত্ব। তাঁর হাতে লেখা পোস্টার বিভিন্ন জায়গায় সেঁটে দেওয়া হয়। তাঁর শিক্ষাগুরু আর এক দিকপাল শিল্পী চিত্তপ্রসাদ। চট্টগ্রামের গ্রামে গঞ্জে সোমনাথ চিত্তপ্রসাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন এবং খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাঁর থেকে শেখার চেষ্টা করতেন। চিত্তপ্রসাদ প্রচুর স্কেচ করতেন এবং ফিরে এসে লন্ঠনের আলোয় চাইনিজ ইঙ্ক আর তুলি দিয়ে তা ভরিয়ে তুলতেন। একবার মাসখানেকের জন্য শিল্পী কক্সবাজারের দিকে চলে গেলেন, ফিরে এলেন গাদা কাগজ নিয়ে। দীনদরিদ্র বুভুক্ষু মানুষদের সেই সব স্কেচ দেখে সোমনাথ অভিভুত হয়ে পড়েছিলেন, তাঁর চেতনা আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠেছিল। অগ্রজ শিল্পী তাঁকে উৎসাহিত করেন ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকায় ছবি পাঠানোর জন্য। সেই শুরু; জুলাই, 1944 থেকে মার্চ, 1948 অবধি ধারাবাহিক ভাবে পত্রিকায় ছবি ও কার্টুন এঁকেছেন।
1945 সালে তিনি কলকাতা চলে যান। পার্টির নির্দেশে আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে আন্দোলন করেন, ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। চিত্রকলায় হাত পাকানোর সঙ্গে সঙ্গে দলীয় কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকা প্রচার করেন, পাঠচক্র গড়ে তোলেন, পত্রিকা থেকে সংগ্রামী কৃষকদের পার্টির নির্দেশ পড়ে শোনান। এই সময় জনযুদ্ধে একটি লেখা প্রকাশিত হয়, যেটির একটি অংশের শিরোনাম ‘পত্রিকার রাজনীতি’। সেখানে আওয়াজ তোলা হয়, “পত্রিকাকে হতে হবে আক্রমণের ধারালো তলোয়ার...যা সবলে পথ কেটে জনতার মধ্যে পৌঁছবে।” শিল্পী নিজে ডাক দেন, “একেকটি ছবিই একেকজন প্রচারক...।” 1948-র শুরুতে অন্যান্য নেতৃবর্গর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পাওয়ার পরও অনেক দিন আত্মগোপন করেছিলেন। এই পুরো সময়টা জুড়ে অজস্র ছবি ও লিনোকাট সৃষ্টি করেছেন। 1951 সালে কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পার্টিকে কাস্তে ও ধানের শিষ প্রতীক দেওয়া হয়। নেতাদের নির্দেশে সোমনাথ সেই প্রতীক নির্মাণ করেন। 1956 সালে তিনি পার্টি সদস্যপদ ত্যাগ করেন। দল ছাড়লেও আমৃত্যু সমাজতন্ত্রের আদর্শ সম্পর্কে তাঁর আস্থা ছিল অটুট।
এরপরে শ্রী দাশগুপ্ত শিল্পীর বিভিন্ন কার্টুন ও ছবি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরাও কয়েকটি নমুনার দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারি। 1945-এর একটি কার্টুনে বাংলার শাসক কেসি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেকার বৈষম্য প্রকট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মনে রাখতে হবে তখনও বাংলায় প্রবল খাদ্যের অভাব। নগ্ন দেহে দরিদ্র মানুষ ফুটপাতে ফল কিনে খাচ্ছে, আর কার্টুনের সামনের দিকে দেখা যাচ্ছে কেসি গ্র্যান্ড হোটেলে উপাদেয় খাদ্য ভোজনে মগ্ন। সে বিস্মিত, ওরা কেন গ্র্যান্ড হোটেলে খায় না। 1945 -এরই আর একটি কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, এক নারী তাঁর সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করছে, কেসি তাঁকে দূরের একটি জাহাজ দেখাচ্ছে; অর্থাৎ, অন্য দেশ থেকে খাবার আসছে, সবুর করো। 6 ডিসেম্বর, 1945-র একটি ছবিতে শ্রমিক আন্দোলন। ছবির পশ্চাৎ দিকে দেখা যাচ্ছে শ্রমিকরা ছাঁটাই হচ্ছে, সম্মুখে কারখানার গেটের সামনে পতাকা, ব্যানার নিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আর একটি ছবিতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী জনতার আন্দোলন, হাতুড়ি হাতে হিন্দু শ্রমিক এবং কাস্তে হাতে মুসলমান চাষী একসঙ্গে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর একটি ছবি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব নিদর্শন- হিন্দু মুসলমানের দেওয়া জল আঁজলা করে পান করছে, মসজিদের চাতালে উঠে বক্তব্য রাখছে।
এই বইটি প্রকাশ করেছে উদ্ভাস। বইটির পিডিএফ ফাইল যথেচ্ছ ভাবে শেয়ার করার অনুমতি আছে, কিন্তু বিক্রি করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ। শ্রী দাশগুপ্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছেন। তিনি আমাদের সবাইকে, আমরা যারা নিজেদের বামপন্থী বলতে গর্ব বোধ করি তাঁদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এই বছরটা মহান শিল্পী সোমনাথ হোরের জন্মশতবার্ষিকী।
দেশের গরিব মানুষের খাবার নেই, দুর্বলের অবস্থা আরও খারাপ, সেই খবর প্রকাশেও বাধা
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার তিনি দাবি করেন, তিনি জানতেনই না কাকে হত্যা করছেন
উত্তরপ্রদেশ সরকার অর্ডিনান্স জারি করছে, আদালতের একেক সময়ে একেক কথা
প্রচার মাধ্যম পাল্টালেও পুরনো দিনের ভোটচিত্র ও রাজনীতির স্লোগানের সঙ্গে আজকের অনেকই মিল।
কোনও কিছুই আর গোপন নয় আমাদের জীবনের।
প্রশাসক প্যাটেলকে দিয়ে মুসলিম প্রধান লক্ষদ্বীপের স্বাতন্ত্র্য ধ্বংস করতে চায় বিজেপি।