×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হেরো মানুষদের কথা

    4thPillars ব্যুরো | 06-03-2020

    একরাম আলি

    এদুয়ার্দো গ্যালেয়ানোর লেখা ‘চিলড্রেন অফ দ্য ডে’জ: আ হিস্ট্রি অফ হিউম্যান সিভিলাইজেশন’ নি:সন্দেহে  যুগান্তকারী একটি বই। সেই বইটিই বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন সুমন গোস্বামী। নাম দিয়েছেন- ‘মানব সভ্যতার দিনপঞ্জি’। বইটি পড়লেন একরাম আলি

     

    হেরো মানুষদের কথা

    ক্রিস্টোফার কলম্বাস নামের এক ডাকাবুকো ইতালীয়— লুম্পেনই বলা যায়-- তিনটে জাহাজ নিয়ে ভেসে পড়ে আটলান্টিকে। স্পেনের রাজা-রানীর প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে ১৪৯২-এর ১২ অক্টোবর পৌছোয় ক্যানারি দ্বীপেকী করেছিল সে? নাকি একটা মহাদেশ ‘আবিষ্কার’। ফল? বেপরোয়া জীবন কাটিয়ে শেষে যৌনরোগ। মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে মৃত্যু।

    তত দিনে শুরু হয়ে গেছে যা হওয়ার। একটা বিশাল ভূখণ্ড তছনছ হওয়ার সেই শুরু। পাঁচশো বছর আগের কলম্বাসের বিষ কমতে কমতেও চুইয়ে পড়ছে আজও, প্রজন্মের পর প্রজন্মে।

    কে কমাচ্ছে? এর সহজ উত্তর— প্রকৃতি। আর, সেই প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে-ওঠা মানুষ। স্পেনের— পর্তুগালেরও— উতরোল আটলান্টিক পেরিয়ে-আসা ঝাঁক ঝাঁক দুর্বৃত্ত আর ভাগ্যান্বেষীদের এমন এক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্রমে শুষে নিয়েছে যে, মায়া আর ইনকা আর আজটেক সভ্যতার প্রাচীন প্রকৃতির ধ্বংসস্তূপের সমস্তটা মিশে গিয়ে জন্ম নিয়েছে নতুন এক জাতি— লাতিন আমেরিকান।

    দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের পর বহুমুখী সাম্রাজ্যবাদী শোষণে গোটা মহাদেশ ছারখার।

    কিন্তু মানুষের ইতিহাস তো শুধু ছাই দিয়ে গড়ে ওঠে না। ছাইয়ে থাকে নিভন্ত আগুন, স্ফুলিঙ্গ। সেই স্ফুলিঙ্গ থেকে জন্ম হল অবাধ্য ছেলেমেয়েদের, বিপ্লবীদের, আর তাঁদের কথা দুনিয়াকে বলার জন্যে তাঁদেরই ভিড় থেকে উঠে এলেন এক ঝাঁক লেখক, কবি আর ইতিহাস-প্রণেতা

    পৃথিবীর নতুন সাহিত্য, নতুন কবিতা, নতুন ইতিহাস। জং-ধরা ইয়োরোপীয় মননকে নিষ্প্রভ করে দিয়ে সারা দুনিয়ার হেরো মানুষদের নতুন এক আশার জন্ম হল, যাতে জটিলতাও বিস্তর।

    এসব কথা ফের নিয়ে এল স্পেনীয় ভাষায় লেখা ছোটোখাটো একটা বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘চিলড্রেন অফ দ্য ডে’জ : আ হিস্ট্রি অফ হিউম্যান সিভিলাইজেশন’লেখক? উরুগুয়ের এদুয়ার্দো গ্যালেয়ানো (১৯৪০-২০১৫) অনুবাদ করেছেন সুমন গোস্বামী ‘মানবসভ্যতার দিনপঞ্জি’টি ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর— ২৯ এপ্রিল ধরে মোট ৩৬৬ দিনের লেখককৃত বিবরণ ছোটো-ছোটো। কিন্তু কেন ফের লিখতে হল গ্যালেয়ানোকে? লিখতে হল নতুন এক ইতিহাস নির্মাণের তাড়নায়-- যে-ইতিহাস দুনিয়ার হেরো মানুষদের কথা বলতে চায়, যে-ইতিহাস চায় বহুমুখী পৃথিবীর কোরাস গাইতে।

    অনুবাদটি স্পেনীয় ভাষা থেকে নয়, ইংরেজি থেকে। কেমন সে-অনুবাদ? একদিনের ছোট্ট একটি এন্ট্রি:

     

    এপ্রিল ১২: অপরাধী নির্মাণ

    ৩৩ খ্রিস্টাব্দ। আজকের দিনে, বা একদিন আগে-পরেও হতে পারে – নাজারেথের যিশু ক্রশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন

    ‘মূর্তিপূজা, ষড়যন্ত্র আর জঘন্য সব কুসংস্কারে উসকানি দেওয়া’তে অভিযুক্ত হয়ে তিনি বিচারকদের চোখে দোষী সাব্যস্ত হন।

     

    এই ঘটনার বেশ কিছু পরে আমেরিকার ইন্ডিয়ান আর ইউরোপের বিধর্মীরাও একই দোষে অপরাধী সাব্যস্ত হয়। একেবারে একই অপরাধ। তবে এক্ষেত্রে শাস্তিদাতারা শাস্তি দিলেন

    নাজারেথের যিশুর নামে, তাঁর হয়ে। চাবুক, বধ্যভূমি, আগুনে পুড়িয়ে মারা।

     

    বইয়ের প্রচ্ছদঝকঝকে বাংলা। একা-একা, উত্তর বাংলার ছোট্ট এক শহরে বসে, এই কাণ্ডটি সুমন ঘটিয়েছেন। ছাপার ব্যবস্থা? করেছেন বন্ধুরা। গালভরা একটা প্রকাশনীর নাম দিয়ে-- বিয়ন্ড হরাইজন পাবলিকেশন। পুরো কাজটিই হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। কলকাতা বা সাহিত্যের জাঁদরেল কোনো প্রশাসকের শরণ না নিয়েই। এ যেন-বা এদুয়ার্দো গ্যালেয়ানোর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতেই।

    কে এই গ্যালেয়ানো? অনেকেই জানেন। বাকিরা জেনে যাবেন শিগগিরই। এমন সব গল্প লিখেছেন, আয়তনে খুবই ছোটো, যেগুলোর কোনো-কোনোটি এমন রূপকথা, পৃথিবীর কোনো ভাষাতেই যেমনটি ছিল না। লিখেছেন উপন্যাস, এমনকী কবিতাও। তবে তাঁর সর্বাধিক বিখ্যাত বই ‘ওপেন ভেইনস অফ লাতিন আমেরিকা’-- লাতিন আমেরিকার রক্তাক্ত ইতিহাস, যে-বইটি উগো শাভেস তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দিয়ে দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিলেন। সে-বই নিয়ে পরে কখনো বলা যাবে। কেননা, এই বাংলায় সেটিরও অনুবাদ হয়ে গেছে।

    কিন্তু কী হবে এসব অনুবাদ করে আর পড়ে?

    একটা ঘটনার কথা বলি। মশানজোড়। চল্লিশ বছর আগের। তখনও ঝাড়খণ্ড হয়নি। তখনও বিহার। পাহাড়ের শুড়িপথে তখনও জংলা গন্ধ। শুকনো ডাল ভেঙে লতাপাতা সরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দু-টো পাহাড়ের বেড় পেরিয়েছি-- সরু রাস্তার গায়ে, শুরু হল রাঙামাটি গ্রাম। সামনেই, দু-ধাপ নীচে, লতায় ঢাকা মাটির পাঁচিল। খোলা দরজা। খোলা উঠোন। মুখোমুখি দু-টো তকতকে বাড়ি। মাটির। সাঁওতালদের যেমন হয়। চারদিক শুনশান। মানুষের আবাসস্থলে কানদুটো মানুষের সাড়া পেতে চায়। নেই। এদিকওদিক ঘুরছি, আমাদেরই পায়ের শব্দ। ডানদিকে একটা ঘরের দরজা খোলা যে! মাথা নীচু করে উঁকি মারি— ভিতরে, আধো-অন্ধকারে কালো-কালো শরীর। গোল হয়ে খেতে বসেছিলআচমকা দুই দিকুর অনুপ্রবেশে থমকে তারা পাথর। সামনের পান্তা ভাতে ততক্ষণে নুনের সঙ্গে মিশে গিয়েছে আতঙ্ক— কারা ঢুকল!

    বহু বছরের এই আতঙ্ক তো আজও কাটল না! শুরু হয়েছিল কবে যেন, হাজার বছর আগে? তারপর চাবুক কখন যেন উচ্চবর্ণের হাত থেকে চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে। শেষ পেরেকগুলো পরপর মেরে গেছে ব্রিটিশরা আর খুলে দিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্যে বুলন্দ দরওয়াজা, যাদের তাঁবে খাটতে প্রথম দিন থেকেই আমরা উৎসাহী তাহলে? এসব অনুবাদের কী হবে? শেষে আরেকটা অংশ, বই থেকে:

    সেপ্টেম্বর ৩০: আন্তর্জাতিক অনুবাদ দিবস

    দক্ষিণ ভেরাক্রুজ থেকে এক ছোকরা বের হল ভাগ্যান্বেষণে।

    বহু বছর পর সে যখন ঘরে ফিরে এল, তার বাবা জানতে চাইলেন-- সে কী শিখে এল।

    ছেলে বলল, ‘‘আমি একজন অনুবাদক। আমি পাখিদের ভাষা শিখেছি।’’

    তক্ষুনি একটা পাখি ডেকে উঠল আর বাবা বললেন, ‘‘বল ওই পাখিটা কী বলছে। নইলে বুঝব তুই একটা আস্ত মিথ্যেবাদী।’’

    ছেলেটি কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। বারবার মিনতি করছিল যে এ কাজ না করাই ভালো। উত্তরটা শুনে বাবার ভালো লাগবে না। কিন্তু বাবা নাছোড়, ফলে বাধ্য হয়েই সে পাখির ডাকের অনুবাদ করল।

    শুনে বাবার মুখ বিবর্ণ। ছেলেকে তিনি তাড়িয়ে দিলেন বাড়ি থেকে।

     

    কিন্তু, আশা-নামের এক চিরনবীন হাওয়া যে দিনরাত্তির আমাদের মাথায় ঘুরে বেড়ায়! তাই, আশা করব-- এই অনুবাদের পরিণতি সেরকমটা হবে না।

     


    4thPillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই শাস্তি পেতে হচ্ছে। বিশেষ উদ্দেশ্য থেকেই ইউএপিএ আইনে বদল আনা হয়েছে।

    করোনা সম্পর্কে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি সোশাল মিডিয়ায়। এও এক মহামারীই বটে।

    বর্তমানে তিনি একজন পেশাদার লেখক, লেখালিখি নিয়েই থাকেন। তাঁর চারটি বই ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।

    ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসাকে সাম্প্রদায়িক রঙে রাঙিয়ে বাজার গরম করছে বিজেপি।

    কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করেছে যে নয়া কৃষি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিছু "ভুল" হয়েছে

    হেরো মানুষদের কথা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested