রাষ্ট্রদ্রোহ বা ইংরেজিতে সিডিশন কাকে বলে তা আজকাল বোঝা মুশকিল। কার্টুন আঁকা, প্রবন্ধ লেখা, কবিতা বা জনসভায় বক্তৃতা দেওয়া, কোনটা যে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে যাবে কেউ বলতে পারে না। কারও আঁতে ঘা লাগলেই সে থানায় একটা কমপ্লেইন ঠুকে দেবে যে অমুক দ্বারা কৃত তমুক কার্যটি আমাদের দেশপ্রেমকে আহত করছে, বা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, বা আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রনেতা অথবা সংবিধানের মর্যাদা হানি করেছে। এতে দেশের অখণ্ডতা বা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে। অতএব, এই কৃত্যটি রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়বাচী। অতঃপর শুরু হবে এক দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া, যার ফলে দীর্ঘ কারাবাস অনিবার্য। আদালতে বিচারের পরে কী হবে সে কাহিনী অবশ্য আলাদা।
ওই রকম অভিযোগ দায়ের হওয়া মাত্র কোনও থানার কোনও ইন্সপেক্টর এটা নিয়ে হয় ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের (IPC) 124(A) ধারায় অথবা আন-ল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্টের (UAPA) কোনও ধারায় (অথবা একসঙ্গে দু’টোতেই) ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (FIR) রেজিস্টার করে দেবে। তারপর সে এই অভিযোগের ভিত্তিতে যে কোনও নাগরিককে বন্দি করতে পারে এবং তার ঘর বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি করতে পারে। এমনকি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় 30 দিন পর্যন্ত আটকে রাখতে পারে এবং চার্জশিট না দিয়ে বিনা বিচারে জেলে 180 দিন পর্যন্ত রেখে দিতে পারে।
এমনকী খবর করলেও দেশদ্রোহ
গত বছরের 7 মে তারিখে একটি গুজরাতি নিউজ পোর্টাল ‘ফেস অফ নেশন’-এর সম্পাদক ধবল প্যাটেল লেখেন যে গুজরাতে সম্ভবত বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বদলে যাবে। ব্যাস, সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানীর গুজরাত সরকার তাঁকে সিডিশন চার্জে জেলে পুরে দিল। সাংবাদিক প্যাটেলকে জামিন পেতে 14 দিন জেল হাজতে কাটাতে হল। লেখাটি সাইট থেকে তৎক্ষণাৎ সরিয়েও দিতে হল। শেষে উনি নভেম্বর নাগাদ ‘নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা’ করায় আদালত তাঁকে ভবিষ্যতে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র দেখেটেখে লেখার কড়া নির্দেশ দিয়ে এফআইআরটি খারিজ করল। উনি ছাড়া পেয়ে জার্মানি চলে গেলেন। শেষমেষ ওনার খবরটি সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। বিজয় রূপানীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হল ওই ‘সিডিশন’ মার্কা এফআইআর দায়ের করেছিল আমেদাবাদের একজন সাব-ইন্সপেক্টর তাঁর বিরুদ্ধে 124(A) ধারা প্রযুক্ত হয়েছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধি (সিডিশন) এবং অন্য দু’টো, যেমন কোভিডের সময় মিথ্যে গুজব ছড়ানো। [1]
উনি ইউরোপে বসে ওই পোর্টালে এখনও লিখছেন। বলছেন, ‘আমি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জেনে সত্যি কথা লিখেছিলাম। কিন্তু ক্ষমা না চাইলে আজও আমায় জেলে পচতে হত।'
এতদিন সিডিশন অ্যাক্ট বা 124(A) ধারাই যথেষ্ট আতঙ্কের কারণ ছিল, এখন গোদের উপর বিষফোড়ার মতো জুটেছে ইউএপিএ 1967 এবং তার 2019-এর সংশোধন। একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব তার দোসর!
আপনি বলতেই পারেন যে ভারতের ফৌজদারি আইন ব্রিটিশ আদলে তৈরি, যাতে বলা হয় ক) যতক্ষণ অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ সবাইকে নিরপরাধ ধরে নিতে হবে। খ) অভিযোগের প্রমাণ জোটানোর এবং আদালতে পেশ করার দায়িত্ব অভিযোগকর্তার, অভিযুক্তের নয়। গ) এর পেছনেরদর্শনটি হল প্রমাণ না করতে পারলে শত অপরাধী ছাড়া পায় তো পাক, কিন্তু একজন নির্দোষও যেন শাস্তি না পায়।
এখনকার নীতি হল শত নির্দোষ জেলে যায় তো যাক, একজন অপরাধীও যেন বাইরে না থাকে!
আগে জানা ছিল যে কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা শুরু করতে সরকারের অনুমতি লাগে, রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে এফআইআর করতে অন্তত ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিস বা সমতুল পদমর্যাদার নির্দেশ লাগে? কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে?
সেদিন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি জাস্টিস রমন্না বলেছেন “Why does section 124(A) continue in statute book even after 75 years of Independence?”[2]
কিন্তু যেটা বলেননি তা হল, আজকাল ওই ঔপনিবেশিক আইন মানে ভারতীয় দণ্ডবিধির (IPC) ধারা 124(A)-র সঙ্গে স্বাধীন ভারতে তৈরি আরও একটা আইন, আন-ল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট, 1967 (ইউএপিএ) একসঙ্গে প্রয়োগ করা হচ্ছে নির্বিচারে ।
সরকারের নীতির সমালোচনা করার অপরাধে ওই দুই আইনে গ্রেফতার হয়েছেন সাংবাদিক (সিদ্দিক কাপ্পন) [3], আইনজীবী (সুরেন্দ্র গ্যাডলিং), দলিত বুদ্ধিজীবী (আনন্দ তেলতুম্বে), সামাজিক ও মানবাধিকার কার্যকর্তা (সুধা ভারদ্বাজ, রোনা উইলসন), ছাত্র, শিক্ষক প্রমুখ। তাঁদের বয়েস 23 হোক বা 83, তাঁরা পঙ্গু হোন (দিল্লির অধ্যাপক হানিবাবু) বা বৃদ্ধ, অসুস্থ (ভারভারা রাও এবং ফাদার স্ট্যান স্বামী) [4], কিংবা গর্ভবতী হোন (সফুরা জারগর) [5] নিস্তার কিছুতেই নেই। অভিযোগ হতে পারে রাষ্ট্রদ্রোহ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র (ভীমা কোরেগাঁও, এলগার পরিষদ মামলা), প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে নিজেদের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা (রামচন্দ্র গুহ, আদুর গোপালকৃষ্ণন, শ্যাম বেনেগাল, অপর্ণা সেন, শুভা মুদগল ও আরও 44 জন) [6], খলিস্তানি উগ্রবাদীদের সঙ্গে যোগসাজস (টুলকিট কান্ডে 22 বছরের পরিবেশকর্মী দিশা রবি) [7], শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও দাঙ্গায় প্ররোচনা দেওয়া বা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টা (দেবাঙ্গনা কলিতা, আসিফ ইকবাল তনহা) অথবা আফগানিস্তানে তালিবানের কাবুল দখল এবং মার্কিন সৈন্যের আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার খবরে উল্লাস প্রকাশ (আসামে 14 জন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে গ্রেফতার)। [8]
সিডিশন অ্যাক্ট ও আন-ল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ) কেন এতদিন ধরে এই আইন বহাল রয়েছে?
ভারতের সিডিশন অ্যাক্টের জননী ব্রিটিশ কমন ল অফ সিডিশন বা করোনার্স অ্যান্ড জাস্টিস অ্যাক্টের 73 নং ধারা গত 2009 সালে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের জন্য বাতিল হয়ে যায়। তখন আইন মন্ত্রী ক্লেয়ার ওয়ার্ড বলেন, ‘এই আইনগুলো সেই সব বিগত দিনের অবশেষ, যখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আজকের মতো অধিকার বলে ধরা হত না। আজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের কষ্টিপাথর মনে করা হয় এবং সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য ব্যক্তির রাষ্ট্রকে সমালোচনা করার অধিকার হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।' [9]
ভারতে সিডিশন অ্যাক্ট বা আইপিসি 124(A) বলে যে, এর ব্যবহার শুধু খুব ‘জরুরি অবস্থা’য় করা হবে। কিন্তু ভারত-চিন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে 1963 সালের 16তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ 1967 সালে পাশ করে আন-ল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট, 1967, সংক্ষেপে ইউএপিএ, যাতে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর কিছু ‘যুক্তিযুক্ত’ নিয়ন্ত্রণ রাখার কথা বলা হয়েছে।
এই নতুন আইনে বে-আইনি কাজকম্মের সংজ্ঞা কী?
কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মৌখিক বা লিখিত শব্দের দ্বারা অথবা ইশারা বা চিত্রের মাধ্যমে ক) ভারতের কোনও অংশকে বিচ্ছিন্ন করা বা আলাদা করার প্রচেষ্টা করে বা অমন কোনও দাবিকে সমর্থন করে বা অন্যদের অনুরূপ কাজের জন্যে উস্কানি দেয়, খ) ভারতের সার্বভৌমত্ব বা অখণ্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, নিষেধ করে অথবা বিঘ্ন ঘটায়, গ) ভারতের প্রতি অবহেলা বা তাচ্ছিল্য করে অথবা এমন কাজ করার জন্য উস্কানি দেয়, তখন এই কাজগুলো ‘বে-আইনি কাজকর্মে’র আওতায় আসবে।
স্পষ্টত, এই আইনের পরিধি 124(A) ধারার তুলনায় অনেক বিস্তৃত। ইউএপিএ-র 13 নম্বর ধারা অনুযায়ী যে এই আইনভঙ্গের অপরাধ করবে বা করার জন্য প্রচার, সহায়তা, পরামর্শ বা উস্কানি দেবে, তার শাস্তি হিসাবে সাত বছরের কারাবাস অথবা অর্থদণ্ড অথবা একসঙ্গে দু’টোই হবে।
কথা হল, যখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্পেশাল ক্যাটেগরির অপরাধ ঠেকাতে ইউপিএ-র মতো কড়া আইন রয়েছে, তখন পেনাল কোডের ধারা 124(A)-র মতো পুরনো হেজে যাওয়া ঔপনিবেশিক আইনকে টিকিয়ে রাখার কোনও যুক্তি আছে কি? বিশেষ করে ইউএপিএ যখন ‘বে-আইনি কাজকর্মে’র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তাতে কোনও রাজনৈতিক প্রশ্ন বা ইস্যু’র পক্ষে কথা বলা বা নিষ্ক্রিয় সমর্থনকেও দণ্ডনীয় অপরাধ করে তুলেছে?
স্বাধীনতার 75 বছর পরে আজ আমাদের গণতন্ত্রের ভিত এত নড়বড়ে হয়নি যে দু’টো বিরুদ্ধ সমালোচনা বা বর্তমান সরকার পরিবর্তনের দাবি উঠলেই তাতে ফাটল ধরবে।
উপরের প্রেক্ষিতেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডি রাজা 2011 সালে সংসদে একটি প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করে বলেছিলেন- 2011 সালে রাজ্যসভায় কমিউনিস্ট নেতা ডি রাজা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘স্বাধীন দেশের সরকার নিজেদের নাগরিকের বিরুদ্ধে ইংরেজ জমানার সিডিশন অ্যাক্টের প্রয়োগ কেন করবে?’
উত্তরে তৎকানীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এক মজবুত রাষ্ট্র দরকার। ল’ কমিশনের 42তম রিপোর্ট (1971) এই আইন রাখার পক্ষে, যদিও পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে এই ধারার প্রয়োগ কমে আসছে, এবং ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে।' [10]
এরপর 2014 সালে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এল। তার চার বছর পরে 30 অগাস্ট, 2018 তারিখে ভারতের 21তম ল’ কমিশন 124(A) ধারার ব্যাপারে জনসাধারণের মতামত চেয়ে একটি কনসাল্টেশন পেপার প্রকাশ করল।
ল’ কমিশনের রিপোর্ট: সমালোচনা সহ্য করা রাষ্ট্রের কর্তব্য
কমিশনের মতে, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মতপ্রকাশের অবাধ অধিকারের দায়িত্বহীন প্রয়োগ হলেই তাকে সিডিশন বা রাষ্ট্রদ্রোহ ঠাওরে নেওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্র যদি একটু সমালোচনা সহ্য করতে না পারে তাহলে স্বাধীনতার আগের ভারত আর স্বাধীনতার পরের ভারতের মধ্যে ফারাক কী থাকল? নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও ঐক্যের রক্ষা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার জন্য সিডিশন আইন প্রয়োগ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা উচিত হবে না। কারণ, মতভেদ ব্যক্ত করার এবং সমালোচনার অধিকার হল একটি সজীব ও প্রাণময় গণতন্ত্রের আবশ্যিক শর্ত।
কমিশন প্রশ্ন তুলল, পরাধীন ভারতের জনতাকে দমনের জন্য ব্যবহৃত 124(A) ধারাকে স্বাধীন ভারতে জারি রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত?
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কমিশনের কার্যকাল 2018 সালের আগস্ট মাসেই সমাপ্ত হয়। আমরা 22তম ল’ কমিশনের প্রতীক্ষায়।
ইতিমধ্যে সিডিশনঅ্যাক্ট ও ইউএপিএ-র অধীনে কেস লাফিয়ে লাফিয়ে তা বাড়ছে।
ভারত সরকারের ন্যাশনাল ক্রাইম রিসার্চ ব্যুরোর (NCRB) 2019 সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য দেখাচ্ছে যে 2014 থেকে 2019—এই পাঁচ বছরে দেশে সিডিশনঅ্যাক্টের কেস 165 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইউএপিএ আইনে 33 শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। [11]
2015 সাল থেকে 2019 অবধি সিডিশনের মামলা করা হয়েছে 191টি, তাতে বিচার শেষ হয়েছে 43টিতে আর শাস্তি হয়েছে মাত্র 4টিতে। 2015 সালের যে 4টি কেসে মামলা শেষ হয়েছে তাতে একজনকেও আদালত শাস্তি দেয়নি। অর্থাৎ রাজনৈতিক কারণে যাকে তাকে ধরে সিডিশনের চার্জ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। [12]
সাল 2016 2019 বৃদ্ধি (%) |
সিডিশন 35 93 165 |
ইউএপিএ 922 1226 33 |
2019 অবধি রাষ্ট্রদ্রোহের আইনে শাস্তি?
• সিডিশনের মামলা থেকে পুলিশ 9 শতাংশকে অব্যাহতি দিয়েছে। কারণ হয় মামলা চালানোর মতো প্রমাণ নেই বা অভিযুক্তকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
• ইউএপিএ মামলার 11 শতাংশ একই কারণে বন্ধ করতে হয়েছে।
• চার্জশিট দেওয়া হয়েছে সিডিশনের 17 শতাংশ মামলা এবং ইউএপিএর অধীন 9 শতাংশ মামলায়।
• 2019 সালে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে সিডিশনের 3.3 শতাংশ মামলায় এবং ইউএপিএ-র অধীন 29.2 শতাংশ মামলায়।
মানছি, ভারতে আইন চলে ঢিমেতালে, তবু ওই 2019 সালেই ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বা আইপিসির অধীনে সাজার সংখ্যা মোট মামলার 50.4 শতাংশ, অথচ সিডিশন বা আইপিসি 124(A)-র মাত্র 3.3 শতাংশ? অর্থাৎ মামলা করা হয়েছে যেমন তেমন করে, খেয়ালখুশি মতো। রাজনৈতিক হোমরাচোমরাদের ইশারায়।
সিডিশন আইন ও তার চ্যালেঞ্জ এবং ইউএপিএ-র প্রবর্তন:
সিডিশন অ্যাক্ট বা পেনাল কোডের ধারা 124(A) 1860 -এর কিছু কিছু পরিবর্তন 1937, 1948, 1951 ও 1955 সালে হয়েছে। কিন্তু তারপর আর কোনও সংশোধন হয়নি।
পঞ্চাশের দশকে কয়েকটি আদালত 124(A) ধারাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয়। যেমন তারাসিং গোপীচান্দ বনাম রাষ্ট্র মামলায় (1950) পাঞ্জাব হাইকোর্ট বলেছিল যে, এই ধারা সংবিধানে আর্টিকল 19-এ প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, অতএব একে বাতিল করা হোক। [13]
সুপ্রিম কোর্ট রমেশ থাপার বনাম মাদ্রাজ রাজ্য ও ব্রিজভূষণ বনাম দিল্লি রাজ্য মামলার রায়ে বলা হয়, 124(A) ধারা অসাংবিধানিক কারণ আর্টিকল 13 (যা পরে 19 হয়), তাতে ‘সিডিশন’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। [14]
এসব রায় তৎকালীন সংসদের পছন্দ হয়নি। তাই ভারতে সংবিধানের প্রথম সংশোধন হল আর্টিকল 19(2)-কে আরও বদলে রাষ্ট্রকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের উপর দরকার মতো ‘যুক্তিসঙ্গত’ লাগাম পরাবার অধিকার দিয়ে। [15]
যদিও সংসদে বিতর্কের সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন 124(A) ধারায় বর্ণিত সিডিশনের অপরাধ highly objectionable and obnoxious. উনি এটাও বলেছিলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ধারাটির থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া উচিত। [16]
কিন্তু এতসব ভাল ভাল কথা বলেও নেহেরু সরকার 124(A) ধারা বা সিডিশন অ্যাক্ট খারিজের চেষ্টা করেনি।
জাতীয় সঙ্কটের সময়ে একটি মামলার রায়!
কেদার নাথ সিং বনাম বিহার রাজ্য মামলা [17] আজও রয়ে গিয়েছে সিডিশন চার্জের কষ্টিপাথর হিসেবে। অথচ, এই মামলার প্রেক্ষাপটটি কিন্তু সব সময়ে স্মরণ করা হয় না। মামলার রায় দিন করা হয়েছিল একটি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, জাতীয় বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে।
বিহারের মুঙ্গের জেলার বারাউনিতে 1953 সালের মে মাসের 26 তারিখে ফরওয়ার্ড কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কেদারনাথ সিং এক জনসভায় বলেন যে, তাঁরা নিজেরা ভোটে বিশ্বাস করেন না। সিআইডির কুত্তা ও গদিতে বসা কংগ্রেসি গুন্ডাদেরএকইভাবে নিকেশ করতে হবে।
ট্রায়াল কোর্ট এবং পাটনা হাইকোর্ট এই বক্তৃতাকে 124(A) ধারা অনুযায়ী ‘সিডিশাস’ বা রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করে এবং কেদারনাথের এক বছর সশ্রম কারাদন্ডের রায় বহাল থাকে।
তারপর সাংবিধানিকতার প্রশ্নে আপিলের ফয়সালা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এক সাংবিধানিক বেঞ্চ। তারা রায় দেয়- সরকারের সমালোচনা, যত কঠোরই হোক, যদি জনতাকে হিংসার জন্য প্ররোচিত না করে এবং ‘পাবলিক অর্ডার’ বিঘ্নিত না করে, তবে তা রাষ্ট্রদ্রোহ হবে না। এভাবে দেখলে 124(A) ধারার ‘অপব্যবহার’ হবে না এবং সেটা বাকস্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের হিতের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে। তাই ধারাটি অসাংবিধানিক নয় এবং মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে আর্টিকল 19(2)এ বলা আবশ্যকতা অনুযায়ী সরকারের যুক্তিপূর্ণ হস্তক্ষেপের অধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
জানুয়ারি 1962-তে চিন-ভারত যুদ্ধের সময় জারি এই রায় আজও সিডিশন অ্যাক্টের বিরুদ্ধে শেষ কথা। একে বদলাতে হলে সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানি দরকার। 1963-তে সংবিধানের 16তম সংশোধনে মৌলিক অধিকারের আর্টিকল 19-এর ধারা 2, 3 এবং 4 কিছুটা বদলে যায়। যার ফলে সরকার ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডত্ব রক্ষার জন্য মতপ্রকাশের অবাধ অধিকারকে নিয়ন্ত্রিত করার জন্যে আরও ক্ষমতা হাতে পায়। [18]
এই অধিকারের উপর ভিত্তি করেই ভারত সরকার বিভিন্ন সময়ে ভারত রক্ষা আইন, মিসা, টাডা এবং ইউএপিএ আইন পাশ করিয়েছে।
কিন্তু সিডিশন প্রশ্নে কেদারনাথ মামলার রায়ের ভিত্তিতে অ্যাসিড টেস্টে ঠিক হল— দেখতে হবে যে কোনও বক্তৃতা বা কাজ জনগণকে হিংসার জন্যে খোলাখুলি উস্কানি দিয়েছে বা বাস্তবে প্ররোচিত করেছে কিনা।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট একইভাবে অন্ধ্রে কিছু বোমা বিস্ফোরণের পর দেশি পিস্তল সমেত গ্রেফতার হওয়া বিলাল আহমেদ কাল্লুকেও মুক্তি দেয়। এবং ট্রায়াল কোর্টও পুলিশকে ভর্ৎসনা করে বলে, 153(A) 124(A) এবং 505(2) ধারার প্রয়োগ হচ্ছে অত্যন্ত দায়সারা ভাবে, যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই। আশা করা যায় যে যত গভীর অপরাধ, তত সাবধানে খুঁটিয়ে সিডিশনের ধারার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ নাগরিকের স্বাধীনতা নিয়ে ছেলেখেলা করা উচিত নয়। [19]
ভাবা হয়েছিল যে নিম্ন আদালত ও থানাগুলো সুপ্রিম কোর্টের এই গাইডলাইন মেনে চলবে। কিন্তু তা হয়নি। শাসক দলের যে কেউ কারও নামে নালিশ করলেই যে কোনও থানায় কোনও মানবাধিকার কার্যকর্তা, সাংবাদিক বা সরকারের সমালোচনা করা নাগরিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হচ্ছে এবং নিম্ন আদালত সমন জারি করছে।
ইউএপিএ ও 2019-এর সংশোধন
Unlawful Activities Prevention Act, 1967 বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনটি হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে, 8 আগস্ট 2019-এ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে।
আগে এই আইনে শুধু কোনও সংগঠনকে ‘টেররিস্ট বা সন্ত্রাসবাদী’ বলে দেগে দেওয়া যেত। এখন এই আইনের চ্যাপ্টার 6-এ উল্লিখিত ধারা 35 ও 36 অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদীর সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত করে একজন ব্যক্তিকেও ‘টেররিস্ট’ বলে ঘোষণা করা যায়। এবং 25নম্বর ধারা অনুযায়ী ডায়রেক্টর জেনারেল, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ) কথিত সন্ত্রাসবাদীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাতে পারে। 43 নম্বর ধারা অনুযায়ী ইন্সপেক্টর পদের একজন পুলিশ অফিসারও এই আইনের অন্তর্গত এফআইআর বানিয়ে কথিত অফিসারের তদন্ত করতে পারে।
তাই শ্যাম বেনেগাল, আদুর গোপালকৃষ্ণন, মনিরত্নম, অপর্ণা সেন, রামচন্দ্রগুহদের বিরুদ্ধে এই আইনে এফআইআর করেছিলেন বিহারের মজঃফরপুরের একটি থানার ইন্সপেক্টর। কিন্তু এভাবে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে এফআইআর করার ভিত্তিটি ঠিক কী ছিল? সেটা হল জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ক্রমশ বেড়ে চলা গণপিটুনির ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে হস্তক্ষেপের জন্যে অনুরোধ করা হয়। [20]
আবার যে রিভিউ কমিটি মামলাগুলোর সমীক্ষা করে কাউকে সন্ত্রাসবাদী তকমা থেকে মুক্ত করতে পারে সেটিও শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাদের নিয়ে গঠিত হবে। অর্থাৎ জুডিশিয়াল রিভিউ হবে না।
ইউএপিএ আইনের আসলউদ্দেশ্য ভয় দেখিয়ে সমালোচনার মুখ বন্ধ করা
1. এই আইনের বিরুদ্ধে প্রধান আপত্তি হল কোনও ব্যক্তিকে কেবল সন্দেহের বশে বিনা বিচারে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে তাকে 180 দিন পর্যন্ত বন্দি করে রাখার অবাধ অধিকার। এই সংশোধন আমাদের ফৌজদারি মামলার মূল নীতি- ‘কোনও অভিযুক্ত যতক্ষণ দোষী প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ নিরপরাধ’- নীতির পরিপন্থী।
2. ইউপিএ আইনে সন্দেহের বশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে কাউকে পুলিশ হেফাজতে 14 দিনের জায়গায় 30 দিন পর্যন্ত আটকে রাখা যায়।
3. এই আইনের ধারা 45 ডি (5) অনুযায়ী জামিন পাওয়া খুব কঠিন, ব্যতিক্রম বললেই হয়। আইনে বাকি যাই বলা হোক, পাবলিক প্রসিকিউটরের বক্তব্য না শুনে অভিযুক্ত কাউকেই জামিনে বা ব্যক্তিগত মুচলেকায় ছাড়া হবে না। আর পুলিশের কেস ডায়েরি দেখে যদি আদালতের এক নজরে (প্রাইমা ফেসি) মনে হয় যে, অভিযোগে কিছু সত্যি আছে, তাহলেও জামিন হবে না।“
4. এটি একই সঙ্গে International Covenant on Civil and Political Rights, 1967-এর উল্লঙ্ঘন করছে, কারণ আন্তর্জাতিক স্তরে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত ‘নিরপরাধ’ ধরে নেওয়ার নীতিকে সার্বজনীন মানবাধিকার বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
5. আবার কাউকে বিনা প্রমাণে বিনা বিচারে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করলে ধারাটি ব্যক্তিকে দমন করার কাজে আসবে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় নয়। কারণ ওই আইনে কাউকে সন্ত্রাসবাদী বলে দেগেদিলেই তাকে কোন শাস্তি দেওয়া যায় না, শুধু বিনা বিচারে লম্বা সময় আটকে রাখা যায়।
6. কাউকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলার জন্য কোনও বস্তুনিষ্ঠ (Objective), নিরপেক্ষ মাপদণ্ড এই আইনে নির্ধারিত করা হয়নি। এর ফলে সরকার কাউকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ ট্যাগ লাগানোর ‘অসীমিত ক্ষমতা’ পেয়ে গেছে।
7. দুটো উদাহরণ- এক, ছত্তিশগড়ে মানবাধিকার কর্মী, বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং চিকিৎসক বিনায়ক সেনকে রায়পুর জেলে মাওবাদী নেতা নারায়ণ সান্যালের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে 2010 সালে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া এবং হাইকোর্টের জামিন দিতে অস্বীকার করা। শেষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে 2011 সালের এপ্রিল মাসে জামিন পাওয়া। [21]
8. সরকারের সমালোচনা করার অপরাধে প্রবীণ সাংবাদিক বিনোদ দুয়াকে দিল্লি এবং হিমাচল প্রদেশে কোভিডের মধ্যেও হাজির হতে বলা।
9. এটি পরোক্ষভাবে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারকে হনন করছে। যেমন নাগরিকের অসম্মতির অধিকারকে এর মাধ্যমে খণ্ডিত করা হচ্ছে। এটি স্পষ্টত সাম্যের অধিকারের (আর্টিকল 14) এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের (আর্টিকল 19) পরিপন্থী। এছাড়া ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করার আগে পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেওয়া হয় না এই আইনে। [22]
10. সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার আর্টিকল 21-এ ‘জীবনের অধিকার’ নামের মৌলিক অধিকারের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। বিচারের আগেই কাউকে ‘টেররিস্ট’ বলে দেগে দিয়ে সামাজিক পরিবেশে তার সম্মানটুকু ছিনিয়ে নেওয়া আদৌ আইনের স্বীকৃত পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খায় না।
11. যাইহোক, এই আইনে তড়িঘড়ি করে সাজানো মামলায় খুব কম ক্ষেত্রেই সাজা হচ্ছে দেখে খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। বর্তমান ভারতে যেভাবে সিডিশন চার্জে এলোপাথাড়ি গ্রেপ্তার করে কয়েক বছর বিনা বিচারে জেলে থাকার পর ছাড়া পাওয়ার আগে অভিযুক্তদের 24 ঘন্টা ধরে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়। তারা পাড়াপড়শির মাঝে এবং চাকরিস্থলে তাদের মর্যাদা ও সম্মানের স্থানটুকু খুইয়ে বসে। সেই ভোগান্তিটাই বড় সাজা। আসলে এই আইনের উদ্দেশ্য সমালোচনার মুখ ভয় দেখিয়ে বন্ধ করা।
ইউএপিএ আইনটি 2019-এর সংশোধনের পর দেশের সুরক্ষার অজুহাতে নাগরিকের ‘মতপ্রকাশের অধিকার’ (আর্টিকল 19) দমনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে
প্রথমত, এটি রাষ্ট্র বা সরকারের পক্ষে ‘অসুবিধে’ বা ‘অসন্তোষজনক’ কাজ এবং বিকল্প চিন্তাকেও অপরাধের এক্তিয়ারে এনে নাগরিক সমাজের চিন্তা ও প্রতিবাদের স্থানটুকু ক্রমাগত আরও সংকুচিত করে চলেছে।
দ্বিতীয়ত, এই আইন সহজেই শাসনতন্ত্রকে মৌলিক অধিকারের এক্তিয়ারকে পাশ কাটিয়ে যেতে সাহায্য করে। যেমন কাউকে চার্জশিট না দিয়ে 90 দিনের বদলে 180 দিন পর্যন্ত আটকে রাখা, যা আর্টিকল 21-এর রাইট টু লাইফের উল্লঙ্ঘন।
তৃতীয়ত, এই আইন সরকারকে স্পেশাল কোর্ট নিযুক্ত করে বন্ধ ঘরে গোপন সাক্ষীর মাধ্যমে মামলা চালানোর বিশেষ অনুমতি দেয়।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরিপ্রেক্ষিতে তার চার দিন পর 1992 সালের 10 ডিসেম্বর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার আরএসএস সংগঠনকে ইউএপিএ আইনের প্রয়োগ করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু তার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কার্যকর্তা ও সদস্যদের ধরপাকড় শুরু করেনি। যদিও বাজপেয়ী 1993 সালে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, সরকার সম্ভবত সমস্ত বিরোধীদের ‘বেআইনি’ বলে দেগে দেবে।
কিন্তু আজ যখন সিডিশন অ্যাক্ট ও ইউএপিএ-র যথেচ্ছ প্রয়োগের চোটে সুস্থ বিতর্ক ও নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্র আক্রান্ত, তখন এই সাংবিধানিক প্রশ্ন তোলা জরুরি যে, সংসদ কি সরকারকে যে কোনও পরিস্থিতিতে, মাত্র সন্দেহের বশে বিনা বিচারে কোনও নাগরিককে সন্ত্রাসবাদী বলার অধিকার দিতে পারে?
তবু শেষ পর্যন্ত আশাই জেগে থাকে
আশা জাগে যখন প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করার অপরাধে প্রবীণ সাংবাদিক বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে আনা সিডিশন চার্জ সুপ্রিম কোর্ট এককথায় খারিজ করে বলে, সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা আদৌ দেশদ্রোহিতা নয়, বরং গণতান্ত্রিক অধিকার। [24]
আবার দিল্লি দাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত থাকার মিথ্যে অভিযোগে ইউএপিএ আইনের একাধিক ধারায় অভিযুক্ত হয়ে একবছর ধরে জেলে বন্দি ‘পিঁজরা তোড়’ (খাঁচা ভাঙো) নারী অধিকার আন্দোলনের নাতাশানারওয়াল, দেবাঙ্গনা কলিতা এবং জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আসিফ ইকবাল তনহাদের মুক্তি দিয়ে যখন হাইকোর্ট বলে— প্রতিবাদের অধিকার বৈধ [25], তখন আশা জাগে বৈকি!
আর স্ট্যান স্বামী বলতেন যে, তিনি সম্ভবত জেলেই মারা যাবেন। তাই হল। কিন্তু তাঁর প্রতি প্রযুক্ত করা ইউএপিএ আইনের 45ডি(5) ধারা বা অন্তর্বর্তী জামিন না দেওয়ার নির্দেশটিকে ‘অসংবিধানিক’ বলে খারিজ করার পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, 12 সেপ্টেম্বর, 2021
2) The Hindu, July 17, 2021
3) ঐ, 7 অক্টোবর, 2020
4) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, 23 অগাস্ট, 2021
5) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, 23 অগাস্ট, 2021
6) দ্য প্রিন্ট ডট ইন, 4 মে, 2020
7) দি হিন্দু, 4 অক্টোবর, 2019
8) দি হিন্দু, 14 ফেব্রুয়ারি, 2021
9) দ্য হিন্দু, 21 অগাস্ট, 2021
10) ঐ, পৃ: 215
11) চিত্রাংশুল সিনহা, দ্য গ্রেট রিপ্রেশন, পৃ: 220
12) দ্য প্রিন্ট, 12 অক্টোবর, 2010
13) ডেকান হেরাল্ড, 10 জানুয়ারি, 2020
14) চিত্রাংশুল সিনহা, দ্য গ্রেট রিপ্রেসন, পৃ: 170
15) AIR 1950 SC 124 & 129
16) Constitution (First Amendment) Act, 1951
17) Extracted from Ram Nandan vs. State, AIR 1959, All 101
18) AIR 1962 SC 955
19) The Constitution 16th Amendment Act, 1963
20) চিত্রাংশুল সিনহা, দ্য গ্রেট রিপ্রেসন, পৃ: 186
21) দি হিন্দু, 4 অক্টোবর, 2019
22) ঐ, পৃ: 187
23) দ্য মিন্ট, 17 অগাস্ট, 2019 (সজল অবস্থীর সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করার প্রার্থনা করে জনস্বার্থ মামলা)
24) www.jurist.org 2nd June, 2020 and The Hindu, 21 August, 2019
25) SCC online, 7 June, 2021
26) ইন্ডিয়া টুডে, 15 জুন, 2021
সরকার আগে মন্দার কথা অস্বীকার করলেও লকডাউন তাকে চলতি বছরে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে!
আমরা দেখব যে সাভারকরের হিন্দুত্ব এবং আরএসএস-এর হিন্দুত্বের মধ্যে কী কী মিল এবং কোথায় অমিল।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষে থেকে।
ভালবাসার কাঙাল সেই মানুষটি যিনি জাতপাত-ভাষা-ধর্মের বা দেশকালের বিভেদ মানতেন না
মানুষ ক্রমাগত উদ্ভাবন করে চলেছে, এমনকী আদিমতম জীবিকায়ও ইনোভেশন।
সেরা ভোজনরসিক না বুঝলেও মাংসের হালাল ঝটকা বিচারে নেমেছে দিল্লি পুরসভা