×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • চিড়িয়াখানায় আজব সব চিড়িয়া

    তিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায় | 15-03-2021

    1962 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিখ্যাত 'জ়ু' চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য।

    সম্প্রতি আলিপুর চিড়িয়াখানা গিয়ে বুঝলুম লকডাউনে জীবজগৎ বেড়েছে গুণিতক হারে। যদিও শেয়ালের খাঁচা খালি, অজগর গায়েব। নিশাচরদের ঘর বন্ধ। তবু মনুষ্য প্রজাতির স্পেসিমেন সংখ্যায় কম নেই। তাদের অবাধ বিচরণ এবং কোলাহলে মুখরিত চতুর্দিক। মাস্কের বালাই নেই।  বিপুল উৎসাহে প্রাতঃরাশ পর্ব চলছে সামনের সবুজ ঘাসজমিতে। ভাল্লুকের পায়চারি দেখার চেয়ে সেদিকেই চোখ যায় বেশি। রাশি রাশি পরোটা, মাংস কিংবা লুচি আলুরদম আত্মসাৎ করতে ব্যস্ত এই বিশেষ জীবকূল দূরদূরান্ত থেকে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছে কেন সেইকথাই ভাবছিলাম। সঙ্গে বিশেষ খাবারদাবার আনা হয়নি বলে একটু চিনচিনে কষ্টও বুঝি বা হচ্ছিল উদরের এক কোণে। ভাবলাম সিংহ আর শিম্পাঞ্জি দেখে এসে একেবারে সেই নেপালি স্টলটায় গিয়ে গতবারের মতো বাটার কর্ন কিনে খাব

    কিন্তু জনতার গোলকধাঁধায় সেদিন কিছুই খুঁজে না পেয়ে বারবার একই জায়গায় ফিরে আসতে লাগলাম। এমন চিড়িয়াখানা যাকে বলে বাপের জন্মে দেখিনি। এদিকে খিদেয় নাড়িভুঁড়ি পাক খাচ্ছিল। খুঁজে পেলাম সেই পছন্দের স্টল অবশেষে, কিন্তু নেপালি মেয়েরা কেউ নেই। এক শীতল দৃষ্টির দীর্ঘাঙ্গী ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে বললেন না গো, এবছর তো কর্ন রাখছি না। খালি মোমো আর ইনস্ট্যান্ট নুডলস আছে।' ব্যাজার মুখে বললুম, ‘দিন এক প্লেট মোমোই।' আর সেই হল কাল!



    একটা সাদা কৌটোয় ভরা চারটে আমশির মত ঠান্ডা মোমোর দাম নাকি 60 টাকা! সঙ্গে স্যুপ টুপ কিছু নেই। গজগজ করতে করতে দাম তো মিটিয়েছি ততক্ষণে, কিন্তু কৌটো খোলার পর আর কী মেজাজ ঠিক থাকে! খাওয়া মাথায় উঠল। সোজা আবার হাঁটা দিলাম স্টলে। বলাবাহুল্য তাঁর মতো হিমশীতল দৃষ্টির ঢাল আমার ছিল না। চোখে আগুনের আভাসই বোধহয় স্পষ্ট ছিল, সেইদিকে লক্ষ্য করে ভদ্রমহিলা স্থিরভাবে যা বললেন, তার মূল বক্তব্য হল: এ বছর করোনার সতর্কতা হেতু প্যাকেজড ফুড বিক্রি নিষিদ্ধ। স্যুপ নিয়ে শোরগোল করার কিছু নেই। এসবই সিকিউরিটির করা নিয়ম। ভারী আশ্চর্য হয়ে বললুম, কই সেই সিকিউরিটি? কে সে? মহিলা আর পাত্তা দিলেন না, অন্য খদ্দেরকে জলের বোতল ইত্যাদি মিষ্টি হেসে এগিয়ে দিতে লাগলেন। এদিকে আমার পারদ চড়ছে, গেলুম সিকিউরিটির কাছে। উত্তেজিত স্বরে জানতে চাইলুম এরকম শুকনো মোমো স্যুপ ছাড়া খাওয়ার নিয়ম করেছেন ষাট টাকায়? ওই দোকানের মালকিন বললেন।' তাঁরা বাস্তবিক আমতা আমতা করতে লাগলেন এবং বললেন কই না, এমন কিছু তো জানি না, খালি সিল করা খাবার বেচতে বলেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।' এ বিষয়ে তাঁদের কিছুই বলার নেই। আবার দোকানে ফিরলুম, আমায় তখন ভূতে পেয়েছে। আমায় দেখে ভদ্রমহিলা তড়িঘড়ি মাস্ক পড়লেন। যদি কামড়ে দিই? কিন্তু সেসব কিছুই হল না। আমি যথাসম্ভব শান্ত স্বরে বললুম সিকিউরিটি বলতে বোধহয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরাও আপনার মোমোর মাহাত্ম্যের কিছুই জানেন না। কিন্তু এখন কথা হল গিয়ে, আমি তো এরকম বাসি মোমো খাই না। ষাট টাকার মূল্য এখনও রয়েছে এ শহরে। রইল আপনার মোমো, আমার টাকা ফেরত দিন।' আমার অন্যায় উপদ্রবের পর ভদ্রমহিলা এবার সরব হলেন তোমার কোয়ালিফিকেশন কী? জানো আমি ইকোনোমিক্সে এমএ! আগে চেয়ারপার্সন ছিলাম।' আর জিজ্ঞেস করার সাহস হল না কেমন চেয়ার, কিন্তু এই প্রথম নতিস্বীকার করে পিছু হটলুম। দেশের যা অবস্থা তাতে অর্থনীতি নিয়ে পড়ে এখন বাসি মোমো ছাড়া আর কীই বা গচানোর থাকে?

     

    সামনের ঘাস জমিতে বসে পরম তৃপ্তিতে যাঁরা লুচি তরকারিতে নিবিষ্ট, তাঁদের প্রতি এবার সম্ভ্রমে গলা বুজে এল


    তিয়াস বন্দ্যোপাধ্যায় - এর অন্যান্য লেখা


    সিঙ্গুরে মাস্টারমশাই সত্যিই তো ইতিহাস যে তালগোল পাকিয়ে দিলেন একেবারে।

    ফেসবুক বা সোশাল মিডিয়ায় অনেক পুরুষের কাছে নারী মানেই সহজে সস্তায় পণ্য।

    অধার্মিক হওয়ার অনেক জ্বালা, ধার্মিকের দায় শুধু নিঃশর্ত আনুগত্যেই।

    চিড়িয়াখানায় খাঁচার ভিতরের চেয়ে বাইরে বেশি আমোদ।

    পড়ুয়াদের মনের অতলে কী চলছে, তা জানতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারি স্কুলগুলি।

    চিড়িয়াখানায় আজব সব চিড়িয়া-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested