রবি করজোড়ে গাইতে গাইতে ঢুকলেন: আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি...
পদ্মফুল (সহাস্যে): চিনি তোমায় চিনি নবীন পান্থ...
এত সুখ কী কপালে সইবে গো! জোড়াফুলে সেদিন জুটেছিল জোরদার অপমান। টিকিটই দিল না রবিকে!
সে কি আশি পেরিয়ে গেছে? এহে রবিমাস্টার তো এখন দাদু! কী বললেন? 89! নাহ, সিঙ্গুরের টিকিটটা তাহলে আর দেওয়া গেল না। ছেলেটা তো আগেই সটকেছে। বাপও একটু করে খাক না। এবার জোড়াফুলের টিকিট পাচ্ছেন বেচাবাবু আর তাঁর স্ত্রী। বেচাই তো খেটেছেন আসল! রবিমাস্টার তো টুকটাক পাশে এসে বসতেন, নেহাত বিধায়ক বলেই এতদিন...
ছি: ছি: বয়স হয়েছে বলে মাস্টারকে এত বড় অপমান? একবার জানানোর প্রয়োজনটুকুও বোধ করল না! এমন নেমকহারাম দলের সঙ্গে আর একটা মুহূর্তও নয়। সেই যে মুখ কালো করে রবিমাস্টার বেরিয়ে গেলেন টিকিট না পেয়ে, একেবারে থামলেন গিয়ে পাদপদ্মে।
এখন কেমন সুন্দর মানিয়েছে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু আর সিঙ্গুরে আমি! আহা, তা-ই ভাবছিলেন খোশ মেজাজে। খুব তো বলেছিল, এই বয়সে বিজেপি টিকিট দেয় না, যাচ্ছ যাও! কিন্তু আমায় দিল তো? কেমন দিলদরিয়া এতেই তার প্রমাণ হয়।
ভাবতে ভাবতে পরিতৃপ্তির আমেজে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মাস্টারের চোখটা একটু লেগে এসেছিল। হঠাৎই এক কৌতুকময় শোরগোলে ছিটকে উঠে বসলেন রবিবাবু। মনে হল তাঁকে নিয়েই আবার কিছু একটা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে জানলেন বামেরা নতুন আরেকটি বোমা নাকি বাজারে ছেড়েছে! ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ছাপিয়ে সবার কাছে এখন পৌঁছে গিয়েছে সেই অমোঘ বাক্য, ‘ক্লাস এইটের ইতিহাস বইটার এবার কী হবে?’
মাস্টার অত মিম-টিম বুঝতেন না, কিন্তু ভোটের প্রচারমাধ্যম এবার যেহেতু বেশিটাই সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর, তাই একটু আধটু এসব ঘাঁটতেই হচ্ছে আর কী। হোয়াটসঅ্যাপ খুলেই পেয়ে গেলেন মাথা ঘোরানো সেই ছবি, যেখানে লেখা রয়েছে ‘ক্লাস এইটের ইতিহাস বইতে লেখা রয়েছে সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সেই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিজেপিতে যোগ দিয়ে বললেন সিঙ্গুর থেকে শিল্প তাড়িয়েছেন মমতা। তিনি শিল্প ফিরিয়ে আনবেন। রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিজেপির প্রার্থী হলেন। সেই বিজেপি কাল মিছিল করে বলল সিঙ্গুর থেকে শিল্প তাড়ানোর কারিগর রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও।' বোঝো কান্ড! এসব কী ধরনের ছ্যবলামি? কিন্তু এরপরই গভীর উদ্বেগের ছলে বামেদের সংযোজিত প্রশ্ন ‘ক্লাস এইটের ইতিহাস বইটার এবার কী হবে?’
আরে তাই তো! মাস্টার এইবার মনে করতে পারলেন, 2017 সালে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইতে ধুমধাম সহ সংযোজিত হয়েছিল সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের অধ্যায়। জমিরক্ষা ও কৃষক সংগঠনের নেতা হিসেবে বাচ্চারা তো তাঁর নামই পড়ছে। এখন সেই জমিতে শিল্প চাই, শিল্প আনা হবে করে বিজেপির সঙ্গে গলা মিলিয়ে ফেলে আর কি পিছিয়ে আসা যায়! কিন্তু ‘মাস্টার’ বলে কথা, একটা তো নীতিবোধ থাকবেই। কে বলে উল্টোসুর? তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন: আরে আহাম্মকের দল! বলেছি কৃষকরা যদি স্বেচ্ছায় জমি দিতে চায়, তবেই সেখানে শিল্প হবে।
চিড়িয়াখানায় খাঁচার ভিতরের চেয়ে বাইরে বেশি আমোদ।
পড়ুয়াদের মনের অতলে কী চলছে, তা জানতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারি স্কুলগুলি।
অধার্মিক হওয়ার অনেক জ্বালা, ধার্মিকের দায় শুধু নিঃশর্ত আনুগত্যেই।
সিঙ্গুরে মাস্টারমশাই সত্যিই তো ইতিহাস যে তালগোল পাকিয়ে দিলেন একেবারে।
ফেসবুক বা সোশাল মিডিয়ায় অনেক পুরুষের কাছে নারী মানেই সহজে সস্তায় পণ্য।