×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • প্রভু জগন্নাথ সকলকেই ক্ষমা করে দেবেন

    সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 23-06-2020

    জয় জগন্নাথ!

     

    করোনার কারণে সারা দেশে সমস্ত বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ। পুরীর রথযাত্রার কী হবে? জনস্বার্থ মামলার সুবাদে নিষ্পত্তির দায় বর্তাল দেশের শীর্ষ আদালতের উপর। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বে তিন সদ্যের বেঞ্চ 18 জুন রায় ঘোষণা করল: বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এই বছর রথযাত্রা বন্ধ। বিচারপতি বোবদের ভাষায়, এই বছর রথযাত্রা হলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না।

     

    জনস্বার্থে আদালতের ওই রায়ে স্পষ্টতই সকলের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। অতএব তাঁরা ময়দানে নামলেন এবার। মাত্র চার দিনের মাথায় ওই প্রধান বিচারপতি বোবদের নেতৃত্বে একই বেঞ্চ কিছু শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রার অনুমতি দিয়ে দিল। ওড়িশা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারও চার দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান পুরো 180 ডিগ্রি ঘুরিয়ে ফেলল: রথযাত্রার ব্যবস্থা করা অসম্ভবথেকে সম্ভব হয়ে গেল। মাঝখানে নরেন্দ্র মোদী, পুরীর শঙ্করাচার্য, গজপতি মহারাজ প্রমুখ কয়েকজন সামান্য রক্তমাংসের মানুষের কিছু ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকার কথা মোদীর সহকর্মী আরও একজন সামান্য রক্তমাংসের মানুষ অমিত শাহ সগৌরবে ঘোষণাও করে দিয়েছেন।

     

    সবই প্রভু জগন্নাথের লীলা!

     

    জয় জগন্নাথ!

     

    ঈশ্বরের ইচ্ছা নিয়ে কিছু বলার স্পর্ধা আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের মতোই নশ্বর দেহের অধিকারী মানুষের ইচ্ছা-কর্ম-সিদ্ধি নিয়ে তো অনেক কিছুই বলার আছে!

     

    পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের তীব্র ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত। সুপ্রিম কোর্টের রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশে সেই ভাবাবেগে আঘাত লেগেছিল ঠিকই। কিন্তু রায় মানব না, এমন কথা কেউ বলেননি। ওড়িশা বা দেশের অন্য কোথাও প্রবল জন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, এমনও নয়। ধর্মীয় বিধি অনুসারে একবার রথযাত্রা বন্ধ রাখলে 12 বছর বন্ধ রাখতে হবে এবং গত 284 বছরে কখনও তা বন্ধ রাখতে হয়নি, এটাও ঠিককিন্তু এটা কোনও সদ্য জানতে পারা তথ্য নয়; 18 জুন সুপ্রিম কোর্টের রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশের আগেও এটা জানা ছিল; আদালতে সওয়াল জবাবের সময় এ প্রসঙ্গ উঠেও ছিল। সব জেনে বুঝেই করোনা সংক্রমণ রুখতে অন্য সব বড় ধর্মীয় জমায়েতের মতোই রথযাত্রাও বন্ধ রাখাই ছিল শীর্ষ আদালতের সুচিন্তিত মতামত।

     

    বিপরীত একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হল, কোর্টের নির্দেশ কোনওভাবে ঘুরিয়ে দিয়ে যদি রথযাত্রা চালু রাখা যায় এবং সেই কর্মের পিছনে কোনও ভক্তের অবদান প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে রথ দেখা এবং রাজনীতির কলা বেচা দুটোই একাধারে হতে পারে। সেটা কোনওরকম রাখঢাক না করেই প্রকাশ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রথযাত্রা বন্ধের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করেছিলেন বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র। অমিত শাহ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেই পিটিশনের বিষয়ে তিনি গজপতি মহারাজ এবং পুরীর শঙ্করাচার্যর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরই কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রার অনুমতির পক্ষে সওয়াল করেন। এই ধরনের ধর্মীয় ভাবাবেগ যেখানে জড়িত সেখানে ওড়িশা সরকারও তার পক্ষেই মত দেয়। কোটি কোটি মানুষের ভাবাবেগ রক্ষার জন্য তারা যে নরেন্দ্র মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে, সেটা উল্লেখ করতে ভোলেননি শাহ। মামলাটি ছিল রথযাত্রা সংক্রান্ত। সুতরাং ইদ-উল-ফিতর বা অন্য বিভিন্ন ধর্মীয় জমায়েত নিয়ে অন্য কোটি কোটি মানুষের ভাবাবেগ ইত্যাদি প্রশ্ন এখানে অবান্তর।

     

    অতএব কার্ফুর মধ্যে হলেও, সীমিত সংখ্যক এবং শুধু কোভিড-নেগেটিভ সেবায়েত টানা হলেও পুরীর রথযাত্রা হচ্ছে। সশরীরে মানুষ হাজির থাকতে না পারলেও টিভিতে যাতে তারা ভাল করে পুরোটাই দেখতে পায়, সে ব্যবস্থা করার নির্দেশও সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে। সুতরাং ধর্মীয় পরম্পরা রক্ষার আধ্যাত্মিক তৃপ্তির পাশাপাশি অমিত শাহ অ্যান্ড কোম্পানির রাজনৈতিক অভীষ্ট পূরণেরও পথ পরিষ্কার।

     

    18 জুন ছিল, রথযাত্রা হলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না

     

    22 জুন শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রার নির্দেশে প্রভু জগন্নাথের তো অখুশি হওয়ার কোনও কারণ দেখা যাচ্ছে না।

     

    প্রভু জগন্নাথ নিশ্চয়ই নিজ গুণে সকলকেই ক্ষমা করে দেবেন।

     

    জয় জগন্নাথ!

     

     


    সুদীপ্ত সেনগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    ইলিশ মাছকে এখানে প্রথমে ধর্ষণ করা হল তাতে আদা রসুন দিয়ে এবং হলুদ না দিয়ে...

    ব্যক্তি রোগীকে যোদ্ধায় পর্যবসিত করা মানে ভাবনা বা আইডিয়ার স্তরে একটা সর্বনাশের বীজ বপন করা।

    যে কোনও স্থাপত্য বা এমনকি নান্দনিক নির্মাণকে কতটা দূর থেকে দেখতে হবে তার একটা আন্দাজ শিল্পীর থাকে

    রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে বিরোধীদের যশবন্ত সিনহা কোনও প্রার্থীই নন

    আগে সমাজ নিজেকে প্রশ্ন করুক কেন যৌন সম্পর্কসূচক শব্দের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার দর্প ঘোষণা করতে হয়?

    প্রভু জগন্নাথ সকলকেই ক্ষমা করে দেবেন-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested