×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • গালাগালই তো ক্ষমতার ভাষা, বাচ্চারা তাই শিখছে

    সুদীপ্ত সেনগুপ্ত | 10-03-2020

    প্রতীকী ছবি

    বসন্তোৎসবের মধ্যেই মালদহের বার্লো হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির চারজন ছাত্রীর একটি ভিডিও নিয়ে বঙ্গীয় সমাজ খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছে। স্কুলের ইউনিফর্ম পরা ছাত্রীরা একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্যারডি করে গাইছিল। তার কথাগুলো  হল, যেতে যেতে পথে বাঁ_ (পুরুষাঙ্গ) চো _ (যৌন সঙ্গম) রাতে চু_ছিলাম (সঙ্গম করেছিলাম) এক জায়গাতে, দেখে নিয়েছিল পাশের বা়ড়ির কাকু কী জানি কী বা_ (যৌন কেশ) চো_বে (আক্ষরিক অর্থে সঙ্গম করবে, ব্যঞ্জনার্থে ঝামেলা করবে)। এর পর গানের মুখরার মতো বারবার ঘুরে ঘুরে আসছে চু_ছিলাম (সঙ্গম করেছিলাম) এক জায়গাতে’, সঙ্গে আগে পিছে কিছু বাজার চলতি খিস্তি যা পথেঘাটে বাঙালি আকছার ব্যবহার করে।

     

    এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আনতে নিশ্চয়ই ওই ছাত্রীরা চায়নি। স্কুলের শিক্ষিকা বা বাড়িতে বাবা-মা ভিডিওটি দেখলে তার পরিণতি কী হবে, তা বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই এগারো ক্লাসে পড়া মেয়েদের আছেএকেবারেই নিজেদের মধ্যে দেখার জন্য বানানো ভিডিওটি কেউ প্রথম শেয়ার করে দেয় এমন কারও সঙ্গে যে আসলে অতটা নিজের নয়। তাতেই যত বিপত্তি। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসা নিশ্চয়ই আপত্তিকর।

     

    কিন্তু ভিডিওটি বানানোর মধ্যে সত্যিই কি আপত্তিকর কিছু আছে? বাঙালি সমাজ সতেরো বছর বয়সি মেয়েদের মুখে উত্তম পুরুষে সঙ্গম করেছিলাম শুনে রে রে করে উঠল। অথচ এই ধরনের ভাষা এবং শব্দ কি ক্ষমতার সঙ্গে সমার্থক নয়? আমরা কি পথে ঘাটে দেখি না যে যত বেশিবার পুরুষাঙ্গ বোধক ওই শব্দটি এবং সঙ্গমের ওই প্রাকৃত প্রতিশব্দটি ব্যবহার করে সে তত বেশি ক্ষমতাবান? দু’জন বাসের কন্ডারক্টর যখন ঝগড়া করেন, পুলিশকর্মী যখন আইন ভাঙার অভিযোগে গরীব মানুষকে ধরেন, এমনকী ফুটবল কোচ যখন কিশোর প্লেয়ারদের নির্দেশ দেন তখন কি ওই শব্দগুলো আমরা শুনি না? সেই রকম অজস্র ভিডিও কি সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ্যে ঘুরছে না? ওই শব্দগুলো যে বলতে পারেন সে ক্ষমতার অধিকারী, আর যে চুপ করে শোনে সে তুলনায় কম ক্ষমতাবান এটাই কি সমাজের প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়? তাই যদি হয় তাহলে পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা শহরের সতের বছর বয়সের চারজন কিশোরী নিজেদের ক্ষমতাবান বলে ভাবতে এবং সেটাকে রেকর্ড করতে যদি একটা ভিডিও বানিয়েই থাকে তাতে এমন কী অন্যায় হল?

     

    পুরুষাঙ্গ, যৌন সঙ্গম করা, যোনি ইত্যাদির যে অশ্লীল পরিশব্দগুলি অশ্রোতব্য বলে ভদ্র বাংলায় আমরা এড়িয়ে চলি, মুখের কথায় সেগুলির ব্যবহারই কিন্তু ক্ষমতার সমীকরণ ঠিক করে। এমনকী সাধারণভাবে নারী যখন কম ক্ষমতাবান বলে সমাজে গণ্য হন তখন ওই শব্দগুলির ব্যবহার তাঁকে এক হিসেবে পুরুষের সমান, অতএব ক্ষমতাবান করে তোলে এমনটাও তো আমরা দেখেছি। একটি প্রাকৃত বাংলা প্রবাদ হল কৃষ্ণ করলে লীলা, অন্যে করলে বিলামালদহের কিশোরী যে কথা বলে পরে বিস্তর কান্নাকাটি করে সমাজের কাছে ক্ষমা চাইল, সেই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেই রাজনীতিতে কেউ সফল হলে তখন আর প্রশ্ন ওঠে না। ওই কিশোরীদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার আগে সমাজ নিজেকে প্রশ্ন করুক কেন যৌন সম্পর্কসূচক শব্দের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার দর্প ঘোষণা করতে হয়?


    সুদীপ্ত সেনগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    আবহাওয়ার উন্নতি সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর অযৌক্তিক ঘোষণার মান রাখতে চাপ দিয়ে সমস্ত স্কুল বন্ধ করল

    তৃণমূলের কর্মী সমর্থক বলে তোলাবাজি করা গুণ্ডারা এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ নেতা সৌগত রায়কে চেনে না!

    বাংলায় ভোটের ফলের কারণ বুঝতে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ হিন্দুত্ববাদীরা পড়ে দেখতে পারেন।

    স্বঘোষিত ইন্টেলেকচুয়াল এবং অ্যাকাডেমিশিয়ানদের থেকে সাবধান থাকাই শ্রেয়!

    অবশেষে নিষ্পত্তি অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি মামলার। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মিলল সমাধান সূত্র।

    গালাগালই তো ক্ষমতার ভাষা, বাচ্চারা তাই শিখছে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested