×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • জাতীয় শিক্ষানীতি 3 : সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী

    4thPillars ব্যুরো | 05-08-2020

    নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে (NEP 2020) কতটা উপকৃত হবে পড়ুয়ারা? বিশ্বের শিক্ষা মানচিত্রে কি উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে পারবে ভারত? জনপরিসরে এই সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো নিয়ে www.4thPillars.com ধারাবাহিক আলোচনা করছে। বুধবার আলোচনার তৃতীয় দিনে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। তিনি  শিক্ষানীতিতে উল্লিখিত প্রস্তাবগুলিকে যেমন সাধুবাদ জানিয়েছেন, তেমনই এই নীতির মধ্যে কিছু আশঙ্কা এবং অবাস্তবতার দিকও তুলে ধরেছেন।

     

     

     

    1) নতুন শিক্ষানীতি নীতিগত ভাবে আকর্ষণীয়। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েই যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে যেসব পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য আসছে, তাদের কাছে এই নীতির সুফল কতটা পৌঁছে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।

     

    2) স্নাতকের মাঝপথে কেউ কোর্স ছেড়ে বেরিয়ে গেলে তাঁকে শংসাপত্র দেওয়া হবে। এই স্বাধীনতাটা খুব ভাল। কিন্তু  আগে স্নাতক স্তরের পর কোনও পড়ুয়া সরকারি বা বেসরকারি কোনও চাকরির জন্য উপযুক্ত হতে পারত। এখন কত বছরের কোর্স করলে স্নাতক বলে ধরা হবে?

     

    3) আমাদের মাথায় রাখতে হবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান সমান নয়। প্রেসিডেন্সি বা মিরান্ডা হাউসের মতো কলেজ যেমন এই দেশে আছে, অনেক প্রান্তিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আছে। নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে তারা কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে?

     

    4) নতুন নীতিতে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত হিসাবে 10 জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব এটাই যে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 40 বা 50 জন পড়ুয়ার জন্য একজন মাত্র শিক্ষক রয়েছেন।

     

    5) সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে বহুদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতেও যেসব তরুণ শিক্ষকদের অল্প পারিশ্রমিকে নিয়োগ করা হচ্ছে, তাঁদের যোগ্যতা তুলনায় কম।

     

    6) আমাদের মুশকিল হল আমরা ভাল নীতি তৈরি করি। কিন্তু তার বাস্তবায়নে ফাঁক রয়ে যায়।

     

    7) শিক্ষা যে জ্ঞানার্জনের মাধ্যম, সেই ধারণাটা ক্রমশ খাটো হচ্ছে। ক্লাসে পড়ুয়ারা শুধু তথ্য সংগ্রহ করতে আসে না। তথ্য সংগ্রহ করার এখন অনেক মাধ্যম রয়েছে। কিন্তু পড়ুয়াদের মধ্যে কগনিটিভ স্কিল কিংবা বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতা গড়ে তোলা যাচ্ছে না। স্কুল স্তর থেকেই এই বিষয়ে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে।

     

    8) সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের পাঠ ছাত্রদের কীভাবে দেওয়া যাবে? বেশিরভাগ ছাত্র ডিগ্রি পাওয়ার জন্যই পড়তে আসে। উচ্চশিক্ষার স্তরে এসেও তাদের অনেকেই প্রাইভেট টিউশন নির্ভর। চাকরি পাওয়ার লক্ষ্যে তারা বিজ্ঞান, বাণিজ্য শাখার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। আর একান্তই কিছু না হলে কলা শাখায় আসছে। নতুন নীতিতে ছবি আঁকা, গানবাজনার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এরপর সেটা কতটা সম্ভব?

     

    9) নবম-দশম শ্রেণিতে 79.3 শতাংশ পড়ুয়াকে স্কুলমুখী করা সম্ভব হয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে এই সংখ্যাটাই কমে হয়েছে 56 শতাংশ মতো। নয়া নীতিতে 100 শতাংশ পড়ুয়াকেই স্কুলমুখী করার কথা বলা হচ্ছে। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেটা রূপায়ণ করা কতটা সম্ভব?

     

    10) প্রত্যেকের এক ধরনের প্রবণতা বা সামর্থ্য থাকে না। একটা শিক্ষিত পরিবারে বড় হওয়া পড়ুয়া যে রকম বই কিংবা প্রযুক্তিগত সহায়তা পাচ্ছে, প্রান্তিকস্তরের কোনও ছাত্র সেটা পাচ্ছে না। একটা অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে। নিশ্চয়ই এর মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু সেটা বাস্তবতা নয়।

     

    11) দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পর ইউজিসির তরফে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কোনও পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থ মঞ্জুর করা হয়নি।

     

    12) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু উৎকর্ষ কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও কোনও বরাদ্দ পায়নি। বেসরকারি বেশ কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো যথেষ্ট ভাল। কিন্তু তাদের গুণগত মান কেমন, তা যাচাই করা দরকার।

     

    13) বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ছাত্র না থাকলে কোর্সটাই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানে কিন্তু এটা হয়না। নয়া নীতিতে সরকারি এবং বেসরকারি— উভয় প্রতিষ্ঠানকেই একই নিয়মে বাঁধার কথা বলা হচ্ছে। সেটা কি আদৌ সম্ভব?

     

    14) স্বশাসনের অধিকার দেওয়া কলেজগুলি কি তাদের মান বজায় রাখতে পারবে? স্বশাসনকে তারা স্বাধীনতার লাইসেন্স হিসাবে ব্যবহার করবে কিনা, সেই সংশয়ও রয়ে যায়।

     

    15) একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাধিকার কতটা আছে? অর্থনৈতিক ভাবে তো নেই। প্রশাসনিক ভাবে কতটা আছে? নয়া নীতিতে একটাই কেন্দ্রীভূত সিলেবাস তৈরির কথা বলা হচ্ছে। 4 বছরের অনার্স করলে মাত্র 1 বছরের স্নাতকোত্তর পাঠক্রম। এমফিল নেই। সরাসরি পিএইচডি করার ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে প্রতিষ্ঠানের আর স্বাধিকার রইল কোথায়?

     

    16) উচ্চতর কর্তৃপক্ষের তরফে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে নিতে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আশঙ্কা সরকার তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে।

     

    17) নয়া নীতির মধ্যে বহুক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধিতা আছে। শিল্পকলা, গানবাজনার উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমাজ কাঠামোর মধ্যেই এই ধরনের সুকুমার বৃত্তির কোনও মূল্য নেই। পড়ুয়াকে চাকরিমুখী পাঠ দিতে আগ্রহী অভিভাবকরা কতটা চাইবেন যে তাঁদের সন্তান শিল্পী বা গায়ক হোক?

     

    18) শিক্ষার বানিজ্যিকরণ যাতে না হয়, নীতিতে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটা যে হবে না, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

     

    19) অনলাইন ও দূরশিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে হয়তো বহু স্কুলছুটকে পড়াশোনার মধ্যে নিয়ে আসা যাবে। কিন্তু এ দেশে এখনও কতজন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান? এই ডিজিটাল-বিভাজনকে অস্বীকার করে এই নীতির রূপায়ণ সম্ভব নয়।

     

    20) দূরশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ুয়াকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা নীতিতে নেই। বরং নিয়ন্ত্রণ করার একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

     

    21) শিক্ষাদানে মাতৃভাষার উপর জোর দেওয়ার প্রস্তাব সাধু। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় পড়ার উপযোগী ক'টা বই বাংলা ভাষায় আছে? আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম গবেষক বা শিক্ষকদের কিছু পাঠ্যপুস্তক বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করা হোক, তাঁদের ভাতার বা বেতনের শর্ত হিসেবে। বলা হল, ভাল প্রস্তাব, কিন্তু কার্যকর করা হল না।

     


    4thPillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    বাংলায় বিভিন্ন প্রান্তে আমপানের তাণ্ডবের টুকরো কিছু অংশ www.4thpillars.com এ।

    আজ দশম পর্বে কবি অনুব্রতা গুপ্ত-র মুখেই শুনুন তাঁর গৃহবন্দি জীবনের কথা।

    কেউ বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করলেই কি তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে?

    কেন্দ্রীয় সরকারের একটার পর একটা সিদ্ধান্তে সাংবিধানিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

    5 বছরের পুরনো নারদ মামলা নিয়ে হঠাৎ সক্রিয় সিবিআই। দুর্নীতি নিয়ে এই রাজনীতির পিছনে আসল খেলাটা কী?

    মিডিয়ায় ঠিক ভুল যুক্তির বিচারে হোক, সংখ্যার জোরে নয়! শুধু ঝড়ের নামে নয়, সর্বর্ত্রই!

    জাতীয় শিক্ষানীতি 3 : সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested