সারা বিশ্বের জন্য যা ছিল অবারিত দ্বার, তার চৌহদ্দি দু' মানুষ সমান উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এখন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের প্রধানতম কাজ। প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও চলছে স্বেচ্ছাচারী শাসন, যা রবীন্দ্র-ভাবনার পরিপন্থী৷ কেন এই হাল? এই নিয়েই www.4thpillars.com গত 19 অক্টোবর (সোমবার) একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। এই আলোচনায় সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ এবং শিক্ষিকা, বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী বিদিশা ঘোষ।
1) শান্তিনিকেতন মানে যে মুক্ত অঙ্গন, সাঁওতাল পল্লীর ছবি চোখে ভেসে উঠত, তা এখন মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে 4টে সাঁওতাল পল্লী আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন সাঁওতালদের সামাজিক মানোন্নয়ন হোক, তারাও এখানে এসে পড়াশোনা করুক। কিন্তু এখন যে পাঁচিল নির্মাণ হচ্ছে, তাতে তাদের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। কমিউনিটি রিলেশনশিপ বিশ্বভারতীর শিক্ষার একটা জরুরি দিক। পাঁচিল তোলা নিয়ে উপাচার্য এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তা রবীন্দ্র ভাবাদর্শেরও বিরোধী। তাছাড়া বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, আশ্রমিক কারও সঙ্গেই এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি।
2) পাঁচিল তোলার সমর্থনে উপাচার্যের দাবি, শান্তিনিকেতনের মেলার মাঠে নাকি যৌন কার্যকলাপ চলে। এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ কি ওনার কাছে আছে? উপাচার্যের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সেটা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।
3) হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়েও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। বিশ্বভারতীর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য কীভাবে তারই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করবেন? তদন্তকারীদের সঙ্গে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সখ্য আছে বলেই জানা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তদন্তের নামে প্রহসন চলছে বলতে হয়।
4) উপাচার্য বারংবার হাইকোর্টের নির্দেশিকাকে অমান্য করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলা অধ্যাপক, কর্মচারীদের বেতন আটকে দিচ্ছেন। বিশ্বভারতীর সংস্কারের নামে প্রাক্তনীদের কাছে টাকা চাইছেন। হাইকোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে উপাচার্যকে এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।
5) বিশ্বভারতীর পুরনো উপাচার্যরা ছাত্রী ছাত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাঁদের ভাল মন্দের খোঁজ রাখতেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে প্রাক্তনীদের প্রায় কোনও যোগাযোগই নেই। তিনি তো বুঝিয়েই দিয়েছেন যে, বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য নিয়ে তিনি আদৌ ভাবিত নন।
6) বিশ্বভারতীর প্রশাসনে বর্তমানে যে কটা গণতান্ত্রিক ফোরাম আছে— যেখানে ভাবনা আদান প্রদান হয়— সেগুলোকে উপাচার্য নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। এটা কিন্তু একটা অশনি সংকেত।
7) বিশ্বভারতী মনে করতেই পারে তার বেদখল হয়ে যাওয়া জমি ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু তার তো একটা আইন সম্মত পথ রয়েছে। সংসদীয় আইনে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর জমির মালিকানা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত। সেই জমি ফেরাতে উপাচার্যের এই অতি সক্রিয়তা কেন?
8) 2005 সালের একটা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, শান্তিনিকেতনে এই ধরনের কোনও নির্মাণ হতে পারে না। কিন্তু সেই রায়ের অবমাননা করেই পাঁচিল নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
9) উপাচার্যের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, উনি বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিশ্বভারতী পরিচালনার তুলনায় তাঁর নিজস্ব আদর্শের গুণগান গাইতেই তিনি বেশি উদগ্রীব। কোনও উপাচার্যকে এমন রাজনৈতিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়নি।
10) পাঁচিল বানানোর সম্ভাব্য দু'টো দিক হতে পারে। এক, নিরাপত্তা। দুই, জমি চিহ্নিত করা। কিন্তু জমি চিহ্নিত করার জন্য এত উঁচু পাঁচিল তোলার কী প্রয়োজন ছিল? আলোচনা করে অন্য উপায়ও তো বের করা যেতে পারত।
11) উত্তরায়ণের চারপাশে যে কাঁটাতারের বেড়া আছে সেটা বাঞ্ছনীয়। কারণ সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং দুষ্প্রাপ্য ছবি আছে। কিন্তু শুধুই বিশ্বভারতীর জমির সীমা নির্ধারণ করার জন্য পাঁচিল বসানো তো অনর্থক। ইঁট-পাথরের পাঁচিল না তুলেও বিকল্প কোনও উপায়েও তো এটা করা যেতে পারত।
12) শান্তিনিকেতনের গর্বের উপাসনাগৃহ এখন উপাচার্যের ভাষায় 'মন্দির'। সেই মন্দিরে তিনি সকলের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এখন উপাসনাগৃহের পরিবেশও অক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে উপাচার্য তাঁর ঘনিষ্ঠদের নিয়ে ছাতিমতলায় বাতি জ্বালাতে যাচ্ছেন, বিশ্বভারতীর ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।
নেতাদের কিনে খেতে হয় না বলে এই নিয়ে কেউ ভাববে না?
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে প্রকাশ্যে খুন কৃষ্ণাঙ্গ। ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নেমে এসেছে গোটা দেশ।
লকডাউন-এর এই নতুন অধ্যায়ে ‘অবরোধের ডায়েরি’ লিখলেন যশোধরা রায়চৌধুরী
ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট, মানুষ বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এই হিন্দি আগ্রাসন একমাত্র নিজের ভাষার প্রতি কতটা দরদ, ভালবাসা আছে, তা দিয়েই আটকানো সম্ভব।
যা সংখ্যাগুরু তাই ঠিক, বাকিটা ভুল, এমনটা যে নয় তা ক্যাডবেরি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।