×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • অবরোধের ডায়েরি

    4thPillars ব্যুরো | 27-03-2020

    যশোধরা রায়চৌধুরী

    সমঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে বদলে গেছে আমাদের চারপাশ। অপরিচিত এক মুহূর্তের মুখোমুখি থমকে দাঁড়িয়েছে দ্রুতগামী পৃথিবী। লকডাউন-এর এই নতুন অধ্যায়ে ‘অবরোধের ডায়েরি’ লিখলেন যশোধরা রায়চৌধুরী  

     

    অবরোধের ডায়েরি

    পাখির ডাক অনেক দিন পর সে অর্থে শোনা গেল। শোনা হল আমাদের। যখন অবরোধ। প্রথম অবরোধ। রবিবার ২২ মার্চ। তখনও বুঝিনি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হচ্ছে দেশময় অবরোধের আর দুদিন পর থেকেই। তখনো জানিনি প্রতি রাজ্য আলাদা আলাদা করে অর্ডার আনছেন লকডাউনের, সেও এক গ্র্যান্ড প্ল্যানেরই অংশ।  

    অবরোধ মানুষের আনা, কিন্তু মানুষের যাবতকালের পাপ কর্মগুলোকে যেন শোধন করছে এই অবরোধ। এমনই এক সদর্থক চিন্তা উদ্ভুত হল আমাদের সেইদিন সকালে। যখন পিউ পিউ পাপিহার ডাকে ভরে উঠল চরাচর, যখন অসম্ভব আলোড়ন উঠল গাছে গাছে। ঘুঘুর ডাকে ভরে গেল দুপুর। 

    আমরা বললাম প্রকৃতির প্রতিশোধ। ফিরে আসছে প্রাকৃতিক জীবন। লও এ নগর। দাও ফিরে সেই গাছের তল, বনের ফল, ঝরনার জল। শুকনো কাব্যিকতা, না প্যারাডাইম শিফট?

     

    আরও পড়ুন

    গুল:  স্বপ্নময় চক্রবর্তী

     

    অবরোধ মানুষের আনা, কিন্তু মানুষের এ যাবতকালের পাপ কর্মগুলোকে যেন শোধন করছে এই অবরোধ। এমনই এক সদর্থক চিন্তা উদ্ভুত হল আমাদের সেইদিন সকালে। যখন পিউ পিউ পাপিহার ডাকে ভরে উঠল চরাচর, যখন অসম্ভব আলোড়ন উঠল গাছে গাছে। ঘুঘুর ডাকে ভরে গেল দুপুর। 

     

    অবরোধের অর্থ বোধগম্য হতে সময় লাগবে আরো কয়েক দিন। অনেক দিন।

     

     

    অথচ এর এক দেড় মাস আগে থেকেই ত করোনাসংবাদে  প্রতিটি সকাল অনিশ্চয়তা আর তীব্র তম অ্যাংজাইটির ভেতর থাকার অভ্যাস হচ্ছে। আমি ভুবনেশ্বরের সরকারি আপিসে কাজ করি। সপ্তাহান্তে যাতায়াত করি। আমাকে বাড়ি থেকে বারণ করে দিল যাতায়াত করতে। আমি ঘরবন্দি হলাম ১১ মার্চেই। শুধু আপিস বাড়ি যাতায়াত চলছে। আপিসে রাজ্যের কাজ। চাপ। তার ভেতরেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনলাম, তোয়ালে নামক একটি সরকারি অফিসের সঙ্গে প্রায় সমার্থক জিনিস আছে, পদাধিকারীর চেয়ারে পাতা হয় , চেয়ারের হাতলের সঙ্গেও ঝোলে, সেই বিলাসিতাও বর্জন করলাম। হাত মুছছি টিসুতে। প্রতি ফাইল দেখার পর হাত মুছছি স্যানিটাইজার দিয়ে। জানা ত নেই কে হেঁচেকেশে রেখেছে কোন ফাইলে। এর ভেতরেই জানা গেছে কে যেন তার কুয়েত ফেরত ছেলেকে বাড়িতে রেখে চড়তে বেরিয়েছে। আমার কলিগ বিদেশ ভ্রমণ আধখানা রেখে ফিরে এসেছে। রোম ও মিলান যাওয়া আর হয়নি তার। সেখানে তখন মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গেছে।

     

    আমার অবরোধ তাই আরো দু সপ্তাহ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে আমি বহুদিন গৃহবন্দী। শপিং মলে যাওয়া, সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করেছিলাম আগেই। সব কিছু সত্যি করে বন্ধ হল পরে। প্রাইভেট সেক্টরে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হল। আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হল সত্যি করে দেখলে ২৩ থেকেই। আর সেটা মাথার ওপর এতটাই চাপ সৃষ্টি করে যে কহতব্য নয়। আসলে এই কাজগুলো ওভাবে করাটা সহজ নয়। ইমেইল ও নেট, ওয়াটস্যাপের ভেতর দিয়ে তথ্যের আদানপ্রদান করার ফলে চাপ বাড়ল বই কমল না।

     

    বাস্তববুদ্ধি কাকে বলে?

    পড়েছিলাম, হয়ত যিনি অবসাদে আছেন তিনি আসলে বাস্তব কে বেশি বেশি করে সঠিক দেখতে পান। তবু অবসাদ ভাল নয় আমরা জানি।

    চূড়ান্ত অনিশ্চিতির ভেতরে এভার হোপফুল থাকতে পারাটাই পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের ধর্ম। ভেবে দেখলে সবচেয়ে দুঃখী মানুষটিও ভাবতে চায়, কাল সব ঠিকঠাক হবে। বা, কালকের দিনটা আজকের থেকে ভাল হবে।

    এই ভাবনাটাকে যতই বোকা ভাবনা বল, এটাই আমাদের চালিকাশক্তি কিন্তু।

     

    আমাদের অফিস জরুরি পরিষেবাদেয় কি দেয়না, নিজেরা বোঝা ও পুলিশকে সেই কথা বোঝানো, দুইই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। একের পর এক নতুন নতুন অর্ডার, নতুন নতুন ক্ল্যারিফিকেশন, এর ভেতর দিয়ে এই সব পথ পার হতে হচ্ছে। আপাতত সামনে এক দীর্ঘ সাম্যাবস্থা অন্তত আমার জন্যে। চারিদিকে নীরবতা, বাগানে পাখির ডাক। শুধু আমার মন একবার বিষাদের অতলে ত পরের বার আশার চূড়ায় । একবার আমি শান্তভাবে লেখা লিখছি বই পড়ছি সেলাই করছি, রান্নাও, পরমুহূর্তে দেখছি , টিভির খবর, ওয়াটস্যাপের কলকাকলি, আমেরিকাবাসী বান্ধবীর নৈরাশ্য, ব্রিটেনের আত্মীয়ের কষ্টের খবরে নিঝুম হয়ে পড়ছি। বিষাদের ভেতর থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে আমার বুদ্ধি লোপ হয়ে যাচ্ছে তখন কেবল ঘুমোচ্ছি

     

    বাস্তববুদ্ধি কাকে বলে?

    পড়েছিলাম, হয়ত যিনি অবসাদে আছেন তিনি আসলে বাস্তব কে বেশি বেশি করে সঠিক দেখতে পান। তবু অবসাদ ভাল নয় আমরা জানি।

    চূড়ান্ত অনিশ্চিতির ভেতরে এভার হোপফুল থাকতে পারাটাই পৃথিবীর যাবতীয় মানুষের ধর্ম। ভেবে দেখলে সবচেয়ে দুঃখী মানুষটিও ভাবতে চায়, কাল সব ঠিকঠাক হবে। বা, কালকের দিনটা আজকের থেকে ভাল হবে।

    এই ভাবনাটাকে যতই বোকা ভাবনা বল, এটাই আমাদের চালিকাশক্তি কিন্তু।

    দেশনায়ক থেকে যোদ্ধা, আমাদের মাসি পিসি, জীবনের অনেক রোল মডেল এই অদম্য আশাবাদ আমাদের চোখের সামনে রেখে শিখিয়ে গেছেন এটাই করতে।

    আজকে আমি আর বাস্তবকে ঠিকঠাক স্বীকার করে নেবার মত মানসিক অবস্থায় না- থাকতে পারি। আজকে, স্বপ্নের হাতে আমি তাই, নিজেরে তুলিয়া দিতে চাই।

    নৈরাশ্যকে জাসট একটা মেন্টাল স্টেট বলে উড়িয়ে দিতে চাই। হয়ত, অস্বীকারে, ডিনায়ালে থেকে, অবাস্তববাদী হয়েই, স্পষ্ট সুন্দর কোন কাজ শুরু করে দিতে চাই।

     

     

    অথচ আমার সুখের জীবন আমার ঘর আছে, মাথার ওপর ছাত আছে প্রয়োজন হলে এখনো মুদি দোকানে যেতে পারছি, চাল ডাল কিনে আনতে পারছি এখনো সব্জি পাচ্ছি তাজা গা বাঁচিয়ে চলা মানুষের জীবন আমার

    যারা ফ্রন্টিয়ারে লড়ছে তাদের কথা ভাবছি সেইসব ডাক্তার বা নার্স, যারা ঘন্টা ওই পি পি ( পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) আচ্ছাদনে, প্লাস্টিকে তৈরি পোষাকের ভেতর থাকছেন সেই সময়ে বাথরুমেও যাওয়া মানা সেই পোষাক পরে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীকে দেখছেন, সেবা করছেন তাঁদের খাওয়া নেই ঘুম নেই কিছু নেই তাও এখনো আমাদের রোগীর সংখ্যা গগনচুম্বী হয়নি

    যাঁরা দিনপাত করছেন এই ব্যবস্থাপনায় যদি রোগির সংখ্যা বাড়ে তাহলে কোথায় ব্যবস্থা হবে তাদের নির্দিষ্ট করা হচ্ছে স্থান বড় বড় এলাকা আলাদা করছেন তাঁরা বার বার বলছেন, আপনারা দয়া করে ছড়াবেন না ঘরে থাকুন

    যারা সবচেয়ে আহত এই লকডাউনের ফলে তাদের কথা ভাবছি মাইলের পর মাইল হেঁটে গ্রামের শ্রমিক বাড়ি চলেছেন, গুজরাত থেকে রাজস্থান, দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশ কেননা তাঁদের জন্য আর বাস ট্রেন নেই অবরোধের দিনগুলিতে দিল্লির নাইট শেলটারের লঙ্গরখানায় তিন দিন না খেয়ে থাকার পর চতুর্থ দিন তাঁরা খেতে পাচ্ছেন কিন্তু সে খাওয়াও যথেষ্ট নয় এভাবে কতদিন থাকা যায় মানুষ রওনা দিচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথে পুলিশের লাঠি জুটছে লাথিঝাঁটা সহ্য করেও কী এক প্রচন্ড আশায় ভর করে তাঁরা চলেছেন, কেবল একটাই আশা নিয়ে কোন একদিন নিজের ছায়াসুনিবিড় গ্রামের নীড়ে ফিরবেন

    সেখানে তাঁদের জন্য কোন সামাজিক বৈষম্য অপেক্ষা করে আছে কে জানে, হয়ত গ্রামবাসী তাঁদের এক ঘরে করে দেবেন আজকের করোনা এক কালের কুষ্ঠের মত সর্বথা বিষবৎ পরিত্যাজ্য এই অবস্থাতেও মানুষ মানুষই গ্রাম থেকে দলে দলে শহরে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকেরা ফিরবেন যেভাবে বিমুদ্রাকরণের সময়ে ফিরতে হয়েছিল উত্তর থেকে দক্ষিণে, পুব থেকে পশ্চিমে এক্সোডাস মানুষের

    আমরা মধ্যবিত্ত আমাদের নেট আছে নেটের কল্যাণে এক ফোন থেকে আরেক ফোনে ছুটে যাচ্ছে বন্যার মত করোনা উদ্ভুত মেসেজেরা তথ্য অর্ধসত্য মিথ্যা সত্য কত না ষড়যন্ত্রের কথা কত না থিওরি কত না রহস্য রোমাঞ্চ গল্প কীভাবে এসেছে ভাইরাস কীভাবে তোইরি করা হয়েছে ল্যাবে , কীভাবে ছড়িএ দেওয়া হয়েছে বায়ো ওয়ারফেয়ার চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ

     

    আমরা মধ্যবিত্ত আমাদের বিজলি বাতি আছে, নেট আছে আমাদের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস আছে আমাদের কত কিছু আছে নারায়ণ দেবনাথ সমগ্র ফেলুদা সমগ্র এক জন আরেকজনকে পাঠাচ্ছি লকডাউনে পড়ে ফেল এত অবসর পাবে না টিনটিন অ্যাস্টারিক্স আছে

     

    আমাদের আছে মুদির দোকানে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সব চিনি নুন ময়দা চাল তেলের প্যাকেট তুলে নেবার তারপর আছে শ্রমিকদের জন্য অশ্রুপাতের সময় অথবা কেন পুলিশ লাঠিপেটা করে সব ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা মানুষদের সরিয়ে দিচ্ছে না, বাজারের ভিড় থেকে পাড়ার মোড়ের চুল্লুর ঠেক অব্দি, তা নিয়ে রাগ প্রকাশের সময়ও দুইদিকেই আমরা আছি

    আমরা তো অন্যের কথা ভাবতে শিখিনি। যেন তেন প্রকারেণ নিজের কথা ভেবেছি। আমাদের সমাজবদ্ধ জীব বলাই যায় না। আমরা শুধু সমাজ থেকে নিতে শিখেছি, সমাজকে দিতে না। তাই আমার ছেলে সর্ব রোগের ঊর্ধ্বে। সে বিদেশ থেকে এলে আমি শপিং মলে ঘুরি তাকে নিয়ে। রেস্তরাঁয় খাই। সবাইকে লুকোই। আমি যখন প্লেন থেকে নামি, প্যারাসিটামল খেয়ে নামি। যাতে বিমানবন্দরের স্ক্রিনিংয়ে আমার জ্বরটা ধরা না পড়ে, আমাকে কোয়রান্টিন না হতে হয়। আমার যে হাসপাতালে বড় ভয়। তা, লাগুক না আমার পাশের যাত্রীদের অসুখের ছোঁয়াচ। তাতে আমার কী।

    আমি আমি আমি। এই আত্মকেন্দ্রিক, নিয়মকানুন বেঁকিয়েচুরিয়ে বেঁচে থাকা ভারতীয়ের আজ শিয়রে শমন। আজ তার পরীক্ষা। সে যদি অন্যকে না বাঁচায় তো নিজেও বাঁচবে না।

     

    আজকে জবরদস্তিপূর্বক লকডাউন। বাড়িতে বাড়িতে মেয়েপুরুষেরা , যাঁরা এক গেলাস জল গড়িয়ে খান নি কখনো, তাঁরাও সবাই কিন্তু বাসন মাজছেন ঘর মুছছেন, পরস্পরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। না করলে বলব এখনো তাঁদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হয়নি। যে পরিবারের পুরুষেরা এখনো স্ত্রীর ওপরে চোটপাট করে দুপদ রাঁধাচ্ছেন অচিরেই তাঁদের সমূহ ধ্বংস নামবে। কেননা ওই নারীটির শরীরের শেষ বিন্দু শ্রম ও ধৈর্য ফুরিয়ে গেলে অসুখ অপেক্ষা করছে তাঁদেরও দোরগোড়ায়। যৌথভাবে এই লকডাউন সাগর পারি দিতেই হবে।

    আরও পড়ুন

    গুল: স্বপ্নময় চক্রবর্তী

     

    আমরা সবাই কি শুধুই স্বার্থপর? শুধুই অন্ধ? না , তা ত নয় । ভাল উদাহরণ ও আছে অনেক।

     

    তখনো এই লকডাউন শুরু হয়নি, ইতালিতে প্রচন্ড সংক্রমণ ছড়িয়েছে ততদিনে। আমার এক প্রিয় বান্ধবী, যারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই বৈজ্ঞানিক, বছরে তিন চার বার বাইরে যায়। তার স্বামী যখন ইতালিতে তখন করোনা আউটব্রেক হয়। স্বামী ফেরার আগে ১৪ দিন স্বামীকে কোয়ারান্টাইন করার জন্য আমার বান্ধবী নিপুণভাবে সব বন্দোবস্ত করে, নিজে মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র শিফট হয়, স্বামীর খাবার রাখার জন্য দরজার বাইরে টেবিল পাতে, স্যানিটাইজার রাখে... বন্ধু বান্ধব, সে নিজে, খাবার নিয়ে বাইরের টেবিলে রেখে দিত।

    সে নেট থেকেই পড়ে সব জেনেছিল, কিন্তু মানসিকতাটাই আসল। তখনো এত ভীতির পরিবেশ হয়নি, স্বামী কিন্তু ফিরে ইশতক বাড়িতে একাই আছেন।

    এটাই আশা করা যায় যে কোন শিক্ষিত মানুষের কাছে? নাহলে যে সমূহ বিপদ। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকাটাও শিক্ষিতের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নয়। আর পথেঘাটে ঘোরা, গৃহহীন, পেশাহীন, শ্যাওলার মত ভেসে ভেসে বেড়ান অশিক্ষিত লোকের সংখ্যাটা ত আরো অনেক বিসদৃশরকমের বড়। আমাদের দেশ যে আমরা সবাই রাজার দেশআমরা যে গণতন্ত্র বলতে বুঝি অধিকার। দায়িত্ব নয়।

     

    আমরা তো অন্যের কথা ভাবতে শিখিনি। যেন তেন প্রকারেণ নিজের কথা ভেবেছি। আমাদের সমাজবদ্ধ জীব বলাই যায় না। আমরা শুধু সমাজ থেকে নিতে শিখেছি, সমাজকে দিতে না। তাই আমার ছেলে সর্ব রোগের ঊর্ধ্বে। সে বিদেশ থেকে এলে আমি শপিং মলে ঘুরি তাকে নিয়ে। রেস্তরাঁয় খাই। সবাইকে লুকোই। আমি যখন প্লেন থেকে নামি, প্যারাসিটামল খেয়ে নামি। যাতে বিমানবন্দরের স্ক্রিনিংয়ে আমার জ্বরটা ধরা না পড়ে, আমাকে কোয়রান্টিন না হতে হয়। আমার যে হাসপাতালে বড় ভয়। তা, লাগুক না আমার পাশের যাত্রীদের অসুখের ছোঁয়াচ। তাতে আমার কী।

     

    আমাদের দেশের মডেল চিনের মতন নয় চিন আইসোলেট করতে পেরেছিল লোকেদের ঘরে ভরে রেখেছিল দেড় মাস রেশন বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিতে পেরেছিল আমাদের দেশে কি তা সম্ভব?

     

    আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সদর্থক চেষ্টা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মানুষের পাশে থাকার এনার্জি সদিচ্ছা নিয়ে কোন সংশয় নেই কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ মানুষ, বিশেষত কলকাতা আর শহরতলির দিন আনি দিন খাই মানুষ, যাদের ঘরের বাইরে না বেরুলে একদিনের আহার জোটেনা, তাদের কীভাবে সোস্যাল ডিসট্যান্সিং করাবেন তিনি

     

    ভারতে, বাংলায়, কলকাতায়, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ত আমার কাছে একটা  ভৌতিক জিনিস একটা বস্তির ঘরে ছজন ঘুমায় সেখানে। অথচ এটাই করতে হবে ভারতে, সংক্রমণের স্টেজ টু থেকে স্টেজ থ্রিতে যাতে না যায়। কাতারে কাতারে লোক যাতে না মরে।

     

    সামনে আরো অনেক প্রশ্ন, সংশয়, বাত্যাসংকুল পথ। আমাদের শক্ত থাকতে হবে। নিজেকে নিজের কাজে লিপ্ত থাকতে হবে। মনোবল আরো দৃঢ় করতেই হবে। দুবেলা মরার আগে মরব না ভাই মরব না।

     

    ফোনের কনট্যাক্ট লিস্ট দেখে দেখে যেসব মাসি, পিসি, মামার সঙ্গে যুগ যুগ কথা হয়না তাঁদের ফোন করে খবর নিচ্ছি। হঠাৎ কেমন মনে হচ্ছে, বয়স্ক মানুষেরা অনেকেই এই অবরোধের জীবনই কাটিয়ে এসেছেন এ যাবৎ। হঠাৎ করে ওষুধ বা খাবার না পাওয়া যাওয়ার অনিশ্চয়তাটুকু বাদ দিলে, ওদের রুটিনে বিঘ্ন নেই তেমন। ওঁরা জানেন কাকে বলে নীরবতা আর কাকে উপেক্ষা।

     

    ভুলে যাওয়া আত্মীয়দের আজ একবার একে একে  ফোন করে ফেললেও ত সময় কাটে। ফোনের গেমে মুরগি ধরার বদলে?

     


    4thpillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    সরকারের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা স্বীকার না করে প্রধানমন্ত্রী বল ঠেলে দিলেন রাজ্যগুলির কোর্টে।

    আব্বাস সিদ্দিকির কথায় বাংলার মুসলমানরা হঠাৎ তাঁর দলকে ভোট দেবেন, এমনটা মনে হয় না।

    সর্বজনীন ভ্যাকসিনের নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য কালো বাজারের পথ খুলে দিল সরকার।

    অবৈধ তাড়াহুড়োর ফল হতে পারে অভূতপূর্ব মাত্রার মারাত্মক! এবার কি বোধোদয় হবে কর্তাদের?

    আজ নবম পর্বে গায়ক দুর্নিবার সাহা-র মুখেই শুনুন তাঁর গৃহবন্দি জীবনের কথা।

    Journalists Gautam Lahiri and Sudipta Sengupta discuss Departed Congress Leader Somen Mitra

    অবরোধের ডায়েরি-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested