×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • রাজধানীতে নিরাপত্তা নেই নাগরিকের

    দোলনচাঁপা ভট্টাচার্য | 26-02-2020

    জ্বলছে দিল্লি।

    ‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়।’

    লেখক নবারুণ ভট্টাচার্যের এই লাইনটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে এই মুহূর্তে দেশের সংবেদনশীল কোনও মানুষের মনে প্রশ্ন নেই। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে অন্যত্র। ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দাবানলে জ্বলছে দেশের রাজধানী। প্রতি নিয়ত বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। তাতে রাশ টানার কোনও জোরাল প্রশাসনিক পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যতই মাঠে নামানো হোক না কেন, বিগত দু’ দশক ধরে দিল্লি-সহ দেশের সর্বত্র জাতের নামে ঘৃণার যে বীজ বপন করা হয়েছিল, তা এখন শাখা প্রশাখা বিস্তার করে দু’ হাত রক্তে রাঙাতে ব্যস্ত।

    দিন তিনেক আগে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জফরাবাদে দুই গোষ্ঠীর বচসার জের রাজধানীর বড় অংশে দাঙ্গার রূপ নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে এর মধ্যেই ব্রিজপুরি, ভজনপুরা, গোকুলপুরী, কারওয়াল নগরের নাম অনেকেই জেনেছেন। কিন্তু দাঙ্গার আগুনে ধিকিধিকি জ্বলছে রাজধানীর প্রায় সর্বত্রই। শুধুমাত্র বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উস্কানিমূলক বক্তৃতাই এত বড় দাঙ্গার একমাত্র কারণ? না, এ সন্ত্রাসের বীজ বপন হয়েছে বিগত দু’ দশক ধরে সুপরিকল্পিতভাবে, ধীরে ধীরে। বিগত একটি দশকে দিল্লির বেশিরভাগ পার্কের দখল চলে গিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) এবং বজরং দলের শাখার হাতে। প্রায়শই সকালে আম-জনতার চোখে পড়ে থাকবে কী ভাবে হিন্দুত্বের প্রচার ও ধর্মান্তকরণের পাঠ পড়ানো হত সেই সব জমায়েতে। উপস্থিত ব্যক্তিদের আর্থ-সামাজিক মাপ নির্ধারণ করতে গেলে দেখা যাবে, অত্যন্ত শিক্ষিত আপাতভাবে পরিশীলিত চেহারার সঙ্গেই মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজের বড় অংশের প্রধান্য রয়েছে সেই ভিড়ে। পিছিয়ে পড়া নিম্ন বর্গীয় শ্রেণির দেখা যে মেলেনি এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। হঠাৎ করেই যেন ‘মাতা কি চৌকি’, ‘মাতা কি জাগরণ’-এর উদ্‌যাপনে আড়ম্বর বেড়েছে কয়েক গুণ।

    বাজারে নতুন করে ছড়িয়ে দেওয়া ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ তকমার সঙ্গে দাঙ্গার কার্যকারণের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। বিগত কয়েক বছর জামিয়া বা জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় অংশকে দেশ-বিরোধী তকমা দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের মারধরের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তা যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অংশ তা নিয়ে আজকাল আর সন্দেহ প্রকাশ করেন না চরম কট্টরপন্থীও। বরং, পুলিশকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করার অহংকার শোনা যায় এদের গলায়। এবারের দাঙ্গায় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আর কী-ই বা বলার আছে। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মতোই দাঙ্গায় ইন্ধন জোগানো, দাঙ্গার প্রেক্ষাপট তৈরির কাজ করেছে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন দিল্লি পুলিশ। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দাঙ্গার বিভিন্ন দৃশ্যই তার সাক্ষ্য বহন করছে।

    এসব দেখে মনে হচ্ছে, দাঙ্গার প্রস্তুতিতে পুলিশি ভূমিকার মাস্টার প্ল্যান ছকা হয়েছিল অনেক আগে। এর আগে ২০১৪ সালে পূর্ব দিল্লির ত্রিলোকপুরীতে এক জাগরণ ঘিরে দুই সম্প্রদায়ের তীব্র লড়াইকে বাগে আনতে পেরেছিল এই দিল্লি পুলিশই। সে সময় এলাকায় প্রচুর গাড়ি, বাড়ি জ্বললেও, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বরং, আহতদের হাসপাতালে ঠিক সময়ে পৌঁছে দিয়েছিল পুলিশ। এবার তার উলটপুরাণ ঘটছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। বিভেদের রাজনীতির দেওয়ালটা শাসকদল সুচারু ভাবে বাহিনীর মাথায়, মনে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। এ যেন গুজরাট মডেলের পুনরাবৃত্তির চেষ্টা হচ্ছে দিল্লিতে। ভয় দেখিয়ে যে ভাবে হোক দাঙ্গার আতঙ্কে পিষে মেরে ফেলতে হবে সংখ্যালঘুদের। ঘৃণার বাষ্পে ভরিয়ে দিতে হবে চারপাশ। আর একথা সকলেই জানেন, দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রের আওতাভুক্ত। পুলিশ তাই এখন ত্রাতা নয়, ‘ত্রাহি ত্রাহি’ পরিস্থিতি তৈরির ধারক-বাহক।

    আর এই গোটা ঘটনায়, গতকাল থেকে জনরোষ বাড়ছে সদ্য মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উপর। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ঠিক কী-ই বা করতে পারে আপ সরকার? দিল্লির আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ রাশ তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এবং দিল্লির গর্ভনরের হাতে। দিল্লি পুলিশের চরম নিস্ক্রিয়তা নিয়ে একবারও সরব হননি লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বাইজাল। প্রাক্তন এই আইএএস অফিসার পুলিশি নিস্ক্রিয়তা নিয়ে টু শব্দটি করেননি। সদিচ্ছা থাকলে পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারতেন। কোন চাপে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন তিনি, সে প্রশ্ন উঠছে বারবার। তাঁর সদর্থক ভূমিকা থাকলে রাত দেড়টায় বেঞ্চ বসিয়ে দিল্লি পুলিশের ব্যর্থতার জন্য দায়ের করা অভিযোগ শুনতে হত না দিল্লি হাইকোর্টকে। তবে কি উপর মহলের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বদ্ধপরিকর তিনি? সবই ওই ‘বাধ্য ছাত্রের ব্রাউনি পয়েন্ট’ অর্জনের লক্ষ্যে?

    সোশাল মিডিয়ায় বিদেশে বসে (ফেসবুক খুললেই প্রবাসীদের আস্ফালন দেখার মতো) যতই দাঙ্গার ঘটনায় কেজরিওয়ালের মুণ্ডুপাত করুন না কেন, এই দাঙ্গায় বিজেপির নোংরা রাজনীতির চক্রে অজান্তেই জড়িয়ে পড়ল আপ। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, কেজরিওয়ালের উচিত ছিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় দাঙ্গা কবলিত এলাকায় পরিদর্শনে যাওয়া।

    ঘরে-বাইরে খানিক চাপে পড়েই হয়তো শান্তির বার্তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নিজের হাতও দাঙ্গার রক্তে রাঙানো। সময়টা খুব অস্থির। এখন ধর্ম নয়, মানবিকতার স্বার্থেই পাশের মানুষের হাত ধরা আমাদের সকলরে কর্তব্য। নতুন এক যুদ্ধে নামতে হবে আমাদের সকলকেই। এ যুদ্ধ মানুষকে রক্ষা করার যুদ্ধ। দাঙ্গা থামানোর যুদ্ধ। নইলে বিভেদের রাজনীতিতে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাবে সবকিছু। গোটা দেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হবে।

     

     


    দোলনচাঁপা ভট্টাচার্য - এর অন্যান্য লেখা


    শুধুমাত্র বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উস্কানিমূলক বক্তৃতাই এত বড় দাঙ্গার একমাত্র কারণ?

    করোনা ত্রাসে মানসিক অস্থিরতা যাতে আপনার উপর চেপে না বসে, তার জন্য WHO বেশ কিছু মূল্যবান নিদান দিয়েছে

    ২০১৫-এর ঐতিহাসিক জয়ের পর তৃতীয় বারের মতো ফের দিল্লির বিধানসভার দখল এই মুহূর্তে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও ত

    রাজধানীতে নিরাপত্তা নেই নাগরিকের-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested