হানাহানি, বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তের দাগ ধুয়ে মুছে ফেলতেও বোধহয় এত কালঘাম ছোটেনি। যা ছুটছে এক ভয়ের নামে। জীবাণুনাশক দিয়ে যতবারই হাত সাফ করুন না কেন; অজানা আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়তে নারাজ। বিশ্বজুড়ে প্রায় মহামারীর রূপ ধারণ করা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে আতঙ্কের উদ্বেগের পরিবেশ সর্বত্র। বারবার হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার লিস্টে আম-আদমি থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের তাবড় ব্যক্তিত্ব।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিশ্বের সীমারেখা নয়, উদ্বেগের থার্মোমিটারে সব মিলেমিশে একাকার। এ মুহূর্তে দেশ ও দশের স্বার্থে বাড়িতে থাকাটা যতটা জরুরি, একই ভাবে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা। আজকের ব্যস্ত জীবন যাত্রায় হঠাৎ এই ‘একান্ত যাপন’-এ দিশেহারা অনেকেই। হঠাৎ ছুটিতে খুশির আমেজ যেমন আছে, তেমনি ঘরবন্দি হয়ে থাকায় মন-খারাপের কালো মেঘ ঘিরে রয়েছে অনেককে। এ অবস্থায় ঠিক কী করবেন আপনি? করোনা ত্রাসে মানসিক অস্থিরতা যাতে আপনার উপর চেপে না বসে, তার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বেশ কিছু মূল্যবান নিদান দিয়েছে:
- এমন অস্থির দ্বিধাগ্রস্থ সময়ে প্রবল মানসিক চাপ অনুভূত হতে পারে। চারপাশ দেখে ভয়, রাগ, ক্ষোভ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর থেকে বেরোতে নিজের ভরসার মানুষের সঙ্গে কথা বলুন (যদি সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে থাকেন তবেও মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নেই, প্রমাণ সদ্য কোয়ারেন্টাইন ফেরত অসংখ্য রোগীর বক্তব্য)। প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বললে মন হালকা হবে।
- বাড়িতে থাকা মানেই যে পার্টি মুডে খাওয়া-দাওয়া শুরু করবেন এমনটা না ভাবাই ভাল। নিজের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরমার্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
- মানসিক অস্থিরতায় অধিকাংশ সময়েই মদ্যপান, ধূমপানের মতো নেশার প্রবণতা থাকে। বিশেষ করে যেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠিক কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে তা অজানা। তাই আসক্তি থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমত্তার কাজ।
- হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের বিনা-ডিগ্রিধারী প্রভূত বিদ্যাধারী চিকিৎসকদের পরামর্শ নয়, বরং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে সে নির্দেশ পালন করন।
-
- বাড়ির খুদে সদস্যদের সামনে আতঙ্কিত মুখে না ঘুরে, তাদের করনো ভাইরাস সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে সাহায্য করুন। মানসিক জোর বাড়াতে তাদের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটান। একই কথা প্রযোজ্য বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের ক্ষেত্রেও।
- আসন্ন মহামারীর আশঙ্কায় অনেকেই খাদ্য সামগ্রী মজুত করা শুরু করেছেন। অনেকে আগাম ওষুধপত্রও মজুত করছেন। তাতে ক্ষতি না থাকলেও, অনুমতি ছাড়া কোনও ওষুধ সেবন করতে নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
- মুম্বইয়ের মনোবিদদের একটি গোষ্ঠী করোনা আতঙ্কে ভোগা মানুষদের জন্য বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে। মনোবিদদের একাংশ বিশ্বজুড়ে চলা এই অস্থির সময়ে মেডিটেশনের উপকারিতা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।
- বাড়িতে হালকা এক্সসারসাইজ করুন। যোগে ভরসা বাড়ছে গোটা বিশ্বের। নিরালায় বসে ছুটির মাঝে অথবা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’–এর ফাঁকে যোগ ব্যায়াম করুন।
- সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টি তা হল, নিজের সামাজিক জীবনযাত্রায় রাশ টানুন। স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকুন, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোবেন না।
অযথা আতঙ্কিত না হয়ে, বরং সতর্ক থাকুন। দেশ-দশ-নিজ স্বার্থে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন।