২০১৭–র পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি। ২০১৯–র লোকসভা নির্বাচনেও তৃতীয় স্থানে দৌড় শেষ করার আক্ষেপ। এগুলি সবই এখন অতীত দিল্লির মসনদ দখল করা বিপুল ভোটে জয়ী কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টির। ২০১৫-এর ঐতিহাসিক জয়ের পর তৃতীয় বারের মতো ফের দিল্লির বিধানসভার দখল এই মুহূর্তে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টির হাতে। জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার শিরোনামে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ‘মহল্লা ক্লিনিক’, ‘অত্যাধুনিক স্তরের সরকারি স্কুল’, ‘প্রায় বিনামূল্যে জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা’ এবং সর্বোপরি মহিলা ভোটারদের জন্য বিনামূল্যে পরিবহণ পরিষেবা, সব মিলিয়ে আপের উন্নয়ন মডেল যে দিল্লিবাসীর আস্থার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। স্থানীয় সমস্যার সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেওয়াই যে আপ মডেলের প্রধান ফোকাস ছিল, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভিন্ন মত নেই বিরোধী শিবিরেও।
এই যুদ্ধ জয়ের পর আপের সামনের রাস্তাটা কিন্তু খুব একটা মসৃণ ভাবলে ভুল বিশ্লেষণ করা হবে। বরং, বলা ভাল ঊর্ধ্বমুখী প্রত্যাশার কারণে আপের সামনের দিনগুলি বড়ই কঠিন। ভুলে গেলে চলবে না, দিল্লির তিনটি পুরসভা কিন্তু এখনও বিজেপির দখলে। মহল্লা ক্লিনিক, সরকারি স্কুলের মানোন্নয়নের পাশাপাশি রাস্তার পরিকাঠামো উন্নয়ন এই মুহূর্তে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের সামনে। কমনওয়েলথ গেমসের সময়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের দূরদর্শিতায় ‘গ্লোবাল সিটি’–র তকমা জুটেছিল দিল্লির কপালে। বিগত কয়েক বছরে দিল্লিতে খানাখন্দযুক্ত রাস্তার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একটা সময় দিল্লির সুবিস্তৃত রাস্তাঘাট ও তার সংলগ্ন এলাকায় সবুজায়ন ও সৌন্দর্যায়নের প্রশংসা করতেন দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা। তবে তার কৌলীন্য হারিয়েছে বছর দুয়েক ধরেই। দিল্লি নয়ডার মধ্যে অক্সিজেন জোগানো ডিএনডি ফ্লাইওভারই বলুন বা পঞ্জাবি বাগ, অযত্নের ছাপ স্পষ্ট সর্বত্র। কমনওয়েলথ গেমসের সময়ে তৈরি সরাই-কালে খাঁয়ের সূর্যঘড়ির উপর আগাছার স্তূপ। তার ব্যাপ্তি বাড়লেও কোথাও যেন ‘নজর-আন্দাজ’ এর মনোভাব সরকারি পূর্ত দপ্তরে।
এই যুদ্ধ জয়ের পর আপের সামনের রাস্তাটা কিন্তু খুব একটা মসৃণ ভাবলে ভুল বিশ্লেষণ করা হবে। বরং, বলা ভাল ঊর্ধ্বমুখী প্রত্যাশার কারণে আপের সামনের দিনগুলি বড়ই কঠিন। ভুলে গেলে চলবে না, দিল্লির তিনটি পুরসভা কিন্তু এখনও বিজেপির দখলে... |
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সময়ে বৈধতা পাওয়া অবৈধ কলোনিগুলিতে আপ সরকারের জমানায় জল ও বিদ্যুতের মিটার বসার কাজ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি হলেও, রাস্তাঘাটের পরিকাঠামো উন্নয়নে খুব বেশি জোর দেওয়া হয়নি। ঠিক একই চ্যালেঞ্জ দিল্লির পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিষেবার ক্ষেত্রেও। অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার গণপরিষেবা ব্যবহারের উপযোগিতা নিয়ে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালালেও, বিগত কয়েক বছরে সরকারি বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়নি। জোর দেওয়া হয়নি দিল্লি মেট্রো ও রাজ্য সরকারের বহুল প্রচারিত ‘মাল্টি মোডাল ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’ –এও। বিগত শীলা দীক্ষিত সরকারের আমলে মেট্রো ও সরকারি বাস পরিষেবার মেলবন্ধনের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত আপ সরকারের। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে এ নিয়ে উৎসাহী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল স্বয়ং।
প্রায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে ডিসকমের খাতায় যে বিপুল বকেয়া অর্থ প্রদেয় সরকারের, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধীরা সুর চড়া করতে শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত গণপরিষেবার মান উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া। গণপরিষেবা বাড়লে, তার থেকে সরকারি খাতে আয়ও বাড়বে। জোর দেওয়া উচিত দিল্লি মেট্রোর ‘লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি’(মেট্রো থেকে গন্তব্য পর্যন্ত সরকারি ফিডার বাস বা ই-রিক্সা পরিষেবা)-র উপরেও। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে এই একটি বিষয়ের উল্লেখ থাকত মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সাংবাদিক সম্মেলনে। এ দেশে ভোটারদের স্মৃতিশক্তি যে খুব ক্ষণস্থায়ী নয়, তা এবার বুঝতে হবে কেজরিওয়াল-সিসোদিয়াদের।
রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তা ছেড়ে নিজেদের রাজনৈতিক পন্থা বদলে আম-জনতার একজন হিসেবে মাঠে নেমে কাজ করে বেশ কিছু অসাধ্য সাধন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কেজরিওয়াল সহ মণীশ সিসোদিয়া, অতসীদের মতো নেতা-নেত্রীরা। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আপের ‘পারফরমেন্স’-এ এবার যুক্ত হবে চুলচেরা বিশ্লেষণও। মনে রাখা দরকার, আপ আমলে দিল্লির জন-সাধারণের উপর বিদ্যুৎ ও জলের খরচার চাপ কমলেও, নতুন করে কোনও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি রাজ্য সরকার। দক্ষ-অদক্ষ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য নতুন কোনও ঘোষণাও হয়নি দীর্ঘদিন। নচেৎ, এ নিয়ে দলের তৃণমূল স্তরে চাপা অসন্তোষ প্রকাশ্যে আসার জন্য কোনও দিনক্ষণের ঘোষণার দরকার পড়বে না।
এবারের সরকারের কাজের তালিকায় সর্বাগ্রে থাকা উচিত দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার ফি বছরের ভয়াবহ বায়ুদূষণের বিষয়টি। পঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ পাশের রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য সমঝোতার মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি আপ সরকারকে। কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক দোষারোপ এবং শুধুমাত্র ‘জোড়-বিজোড়’ গাড়ি চলার সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়ার রুটিন যে আর মেনে নিতে চাইছেন না ভোটাররা, তা অনুধাবন করা খুব জরুরি আপ শীর্ষ নেতৃত্বের। একই কথা খাটে যমুনা দূষণ নিয়ে। কাগজে-কলমে তত্ত্ব কথার কচকচানি নয়, এবার হাতেনাতে ‘রেজাল্ট’ চাইবে জনগণ। নিজেদের দেওয়া করের টাকার হিসেব নেওয়ার তালিকায় সমর্থক ও বিরোধী শিবির গুরুত্ব দিতে হবে উভয়-পক্ষকেই। তবে এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত জোর ‘অ্যাডভান্টেজ’ আপ শিবিরের দিকেই। সরকার গঠনের পরে পাড়া থেকে কর্পোরেট জগৎ আপের বিপুল-জয়ের কারণ বিশ্লেষণ অব্যাহত। আবেগের পারদও স্থিথাবস্থায় বিরাজমান।
আসলে, সকলেই বুঝেছেন নাগরিকত্ব নয়া আইন ঘিরে শাহিনবাগের কালজয়ী লড়াই-ধর্মভেদের রাজনীতি-পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা-রাম মন্দির নির্মাণের মতো জাতীয় বিষয় ঘিরে বিজেপির প্রচার ধোপে টেকেনি দিল্লির আম-জনতার সামনে। বরং, তা কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আপ সরকারের জেতার রাস্তা আরও মজবুত করেছিল। অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ আপের শীর্ষ নেতা মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত আক্রমণের ফল ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে শাহ-মোদীর কাছে। প্রশান্ত কিশোরের ক্ষুরধার নির্বাচনী প্রচারের প্রতিটি নির্দেশ মাথা ঠান্ডা রেখে পালন করে গিয়েছেন কেজরিওয়াল, সিসোদিয়া, অতসী, রাঘবেরা। এবার তাই শুধুই দায়িত্ব পালন নয়, প্রত্যাশার বৈতরণী পারের জন্য মাঠে নেমে কাজ করার সময়। নইলে, বদলে যাওয়া রাজনীতির ট্রেন্ডেও বদল ঘটিয়ে দেবেন ভাগ্যনির্ধারণকারী জনতা-জনার্দনই। ভুললে চলবে না, চন্দ্রবাবু নাইডু, মায়াবতী, জয়ললিতা, মায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জয়রথও থমকে গেছিল প্রত্যাশা পূরণের ব্যর্থতার কারণেই।
২০১৫-এর ঐতিহাসিক জয়ের পর তৃতীয় বারের মতো ফের দিল্লির বিধানসভার দখল এই মুহূর্তে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও ত
শুধুমাত্র বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উস্কানিমূলক বক্তৃতাই এত বড় দাঙ্গার একমাত্র কারণ?
করোনা ত্রাসে মানসিক অস্থিরতা যাতে আপনার উপর চেপে না বসে, তার জন্য WHO বেশ কিছু মূল্যবান নিদান দিয়েছে