28 অক্টোবর বিহার বিধানসভার ভোট শুরু। বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যে দেশে এই প্রথম বিধানসভা ভোট। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ হারানোর পর এবং কৃষিক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের লক্ষে আইন পরিবর্তনের পরেও এই প্রথম দেশে ভোট হচ্ছে। কী বার্তা দেবে বিহার? এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই www.4thpillars.com 27 অক্টোবর (মঙ্গলবার) একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। এই আলোচনায় সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক রজত রায় এবং গৌতম লাহিড়ী।
1) করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের মূল্যায়ন হতে পারে বিহারের বিধানসভা ভোটে। সেক্ষেত্রে বিহারের নির্বাচন একটা গণভোটের আকার নিতে পারে।
2) এবার বিহারের নির্বাচন নানা দিক থেকে বেশ চমকপ্রদ। দীর্ঘ 15 বছর ক্ষমতায় থাকা নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বেশ জোরালো। অন্যদিকে মহাজোটে লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে বাম দলগুলির (সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই-এমএল) অন্তর্ভুক্তি বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করেছে। কেননা, বর্তমান বিহার রাজনীতিতে বামেরা ক্ষয়িষ্ণু একটা শক্তি হলেও, তাদের 7-10% স্থায়ী ভোটদাতা আছে। তাছাড়া, দু'টি বড় দল সঙ্গে থাকায় উচ্চবর্ণ অধ্যুষিত এলাকায় বাম ভোটাররা ভোট না দেওয়ার ফতোয়া উপেক্ষা করেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
3) ইভিএম ভোটের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করবে, এমনটা মনে হয় না। তেমন হলে তো কোনওদিনই এদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হত না। ইভিএম আসার পরেও তো শাসক দল পরাজিত হয়েছে। এই নির্বাচনে আসল ভূমিকা পালন করবে নির্বাচন কমিশন। গত লোকসভায় বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বারবার নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করলেও, কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিহারেও বিরোধীদের নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনকে পক্ষপাতহীন হতে হবে।
4) এই দেশে লোকসভা ভোট এবং বিধানসভা ভোট সম্পূর্ণ ভিন্ন ইস্যু নিয়ে হয়। একই সময়ে হওয়া দু'টি ভোটে সম্পূর্ণ বিপরীত ফলাফল হয়েছে, এমন বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই পরিযায়ী শ্রমিক সংকট ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন বলা মুশকিল। তবে, দেশজুড়ে চলা অর্থনৈতিক সংকট বিহার ভোটে বড় ছাপ ফেলতে পারে।
5) নীতীশ কুমারকে কোণঠাসা করে এনডিএ ভোটযুদ্ধে নেমেছে। নীতীশ বিরোধী ক্ষোভের আঁচ থেকে বিজেপি সচেতন দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ফলে এনডিএ-র অভ্যন্তরে ফাটলটা ক্রমশ চওড়া হচ্ছে।
6) মন্ডল কমিশন গঠিত হওয়ার পর লালু প্রসাদ বিহার এবং মুলায়ম উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু মন্ডল রাজনীতির শীর্ষ নেতারা একত্রিত থাকতে পারেননি। কুর্মি নীতীশ, যাদব লালু স্বতন্ত্র ভোটব্যাঙ্ককে টার্গেট করে রাজনীতি করতে থাকেন। এতে মন্ডল রাজনীতি আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে।
7) বিরোধীদের একটা বড় কৃতিত্ব এই যে, তারা লড়াইটাকে প্রধানমন্ত্রী বনাম বিরোধীদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী, এমন একটা চেহারায় নিয়ে যেতে সফল হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে কিছুটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন রাজ্যের তিন দফার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
8) প্রয়াত রামবিলাস পাসওয়ানের পুত্র, লোক জনশক্তি দলের প্রধান চিরাগ পাসওয়ান কিন্তু এই ভোটে বড় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। এমনিতেই তাদের দলের একটা দলিত জনভিত্তি আছে। তার ওপর বেশ কিছু আসনে উচ্চবর্ণের প্রার্থী দিয়ে তারা বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটের একটা বড় অংশ নিজেদের অনুকূলে আনতে চাইছে। এটা বিজেপির পক্ষে যথেষ্ট বিড়ম্বনার।
9) নীতীশ বিরোধিতাকে উচ্চগ্রামে নিয়ে গেলেও চিরাগ পাসওয়ান তাঁর মোদী-স্তুতি অব্যাহত রাখছেন। লোক জনশক্তি দলের নীল নক্সাটা স্পষ্ট; নীতীশকে সরিয়ে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকারে আসা।
10) মায়াবতী, উপেন্দ্র কুশওয়ারা যদি উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেতে পারে, তাহলে তারা কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে এনডিএ শিবিরে ঝাঁপ দিতে পারেন।
11) লালু প্রসাদ যাদবের 15 বছরের শাসনকালকে 'জঙ্গলরাজ' বলে আক্রমণ শানাচ্ছে বিরোধী শিবির। কিন্তু বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী মুখ নীতিশও লালু প্রসাদের সঙ্গে জোট গড়ে নির্বাচনে জিতেছেন। তাছাড়া লালু প্রসাদ আমলের বাহুবলী রাজনীতিও এখনকার বিহার রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক।
12) বেশ কিছু তরুণ রাজনীতিক বিহার ভোটের অন্যতম কুশীলব হলেও, তাদের অধিকাংশই কোনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরী। কানহাইয়া কুমারের মতো বাম যুব নেতাদের সভায় অবশ্য লক্ষ্যনীয় ভিড় দেখা যাচ্ছে।
13) বিহার নির্বাচনে কৃষি বিলের প্রভাব খুব একটা পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। বিরোধীরাও সরাসরি এটাকে প্রচারের হাতিয়ার করেননি। এখন লড়াইটা মূলত নীতীশের সুশাসন বনাম কুশাসনের। বিহারের মানুষ কিন্তু সাক্ষরতার হারে পিছিয়ে থাকলেও, রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত সচেতন। তাই অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটই বিহারের পরবর্তী শাসক কে হবেন, তা নির্ধারণ করবে।
কেন্দ্রের শাসকের এজেন্ট উপাচার্য বিশ্বভারতীকে হিন্দুত্ববাদী করার এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছেন।
গরিবের দায় ঝেড়ে ফেলে কোন সংস্কারের পথে সরকার?
অবৈধ তাড়াহুড়োর ফল হতে পারে অভূতপূর্ব মাত্রার মারাত্মক! এবার কি বোধোদয় হবে কর্তাদের?
কী চলছে রাজ্য় রাজনীতিতে, কী অবস্থা বাংলার?
ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসাকে সাম্প্রদায়িক রঙে রাঙিয়ে বাজার গরম করছে বিজেপি।
এক্সিট পোল বলছে বাংলায় এগিয়ে তৃণমূল। বাস্তবে ফল কী হবে?