মানবসভ্যতার সৃষ্টি, ব্যপ্তি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গবেষণামূলক বই "সেপিয়েন্স'। লিখেছেন ইউভাল নোয়া হারারি। বইটি পড়লেন স্বাগতা দাশগুপ্ত।
আমরা কেন এবং কী
ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে যদি ভাবি, "What games did our Stone Age ancestors play in the arena of history?' "What did they do when they woke up in the morning? What did they eat for breakfast – and lunch? What were their societies like? Did they have monogamous relationship and nuclear families? Did they have ceremonies, moral codes, sports contests and religious rituals? Did they fight wars?...' মাত্র তিরিশ হাজার বছর আগের মানুষের কথা। মানব জাতির বয়সের নিরিখে মাত্র-ই বটে। মানব(Human) কথার অর্থ এখানে ব্যাপক— আমাদের সমস্ত আদিম ভাইবোনদের কথাই বলা হচ্ছে— নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরেক্টাস, হোমো সোলেন্সিস সবাই। কী বিরাট পরিবার আমাদের! যার নাম "great apes'।
আমাদের সবচেয়ে নিকট আত্মীয়রা হলেন শিম্পাঞ্জি, গরিলা আর ওরাংওটাং। এর মধ্যে সবচেয়ে নিকট শিম্পাঞ্জিরা। ষাট লক্ষ বছর আগে, এই পরিবারের একজন মায়ের দুটি কন্যা ছিল। এক কন্যা জন্ম দিলেন শিম্পাঞ্জিদের। আরেকজন আমাদের(humans) সব্বার জননী। আমাদের সবারই একটা মিল-– বিরাট ব্রেন(brain)। অন্য প্রাণীদের চেয়ে অনেকটাই বড়। কিন্তু বিষয় হল "a jumbo brain is a jumbo drain on the body' । অর্থাৎ বড় ব্রেনের খরচও বেশি। হোমো সেপিয়েন্সের ব্রেনের ওজন শরীরের ২-৩ শতাংশ। কিন্তু তার এনার্জি দরকার ২৫ শতাংশ, শরীর যখন বিশ্রামে আছে তখনও । আদিম মানুষদের এই বড় ব্রেন বেশ বিপদে ফেলেছিল তাদের। কারণ এত এনার্জি দরকার যে সারাদিন তারা খাবারের খোঁজে কাটাতেন। আর তাদের পেশি শিথিল হয়ে পড়ছিল। নিয়ান্ডারথালদের নাকি আরও বড় ব্রেন ছিল। যাই হোক, সে অনেক আগের কথা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নানা রকম অভিযোজন হয়ে হয়ে কীকরে যে আমরা, হোমো সেপিয়েন্সরা সব্বাইকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠ জীব(!) হয়ে উঠলাম সে এক রহস্য। হাজার দশেক বছর ধরে আমরা শ্রেষ্ঠ। মাত্র হাজার দশেক। তার আগে লাখ লাখ বছর বড় ব্রেন নিয়েও কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে আমরা পালিয়ে বেঁচেছি। ফুড চেনের(food chain) মাঝামাঝি ছিল আমাদের অবস্থান। মাত্র একলক্ষ বছর হল, হোমো সেপিয়েন্সের উদ্ভবের পরে আমরা ফুড চেনের একেবারে ওপরে লাফ দিয়ে উঠেছি। এখানে লক্ষণীয় যে আমরা এক লাফে ফুড চেনের মাথায় উঠেছি, ধাপে ধাপে নয়। এই ঘটনা আমাদের নিজেদেরকে জানার বোঝার জন্য খুব জরুরি। অন্যান্য যেসব প্রাণী ফুড চেনের মাথায় আছেন, যেমন সিংহ, হাঙ্গর, হায়না এরা একদিনে সেই অবস্থানে আসেননি, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে অভিযোজন হয়ে এসেছেন। তুলনায় আমরা এত তাড়াতাড়ি ওপরে উঠলাম যে ইকোসিস্টেমের(ecosystem) মানিয়ে নেওয়ার সময় খুব কম ছিল। আমরাও তেমন মানিয়ে নিতে পারিনি। ফুড চেনের ওপরে থাকা অন্য প্রাণীদের দীর্ঘ বছরের প্রভুত্ব তাদের আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। অন্যদিকে আমরা হয়ে দাঁড়িয়েছি অনেকটা "banana-republic dictator'-এর মতো। মাত্র কয়েক হাজার বছর আগেও গৌণ প্রাণী হয়ে থাকার অভিজ্ঞতা আমাদের মনকে নিজেদের অবস্থান বিষয়ে ভয় আর উদ্বেগে ভরিয়ে দিয়েছে এমনই যে আমরা হয়ে উঠেছি নিষ্ঠুর আর ভয়ংকর। পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ, হত্যা, শোষণের উৎস আমাদের এই অলৌকিক লাফ।
• লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নানা রকম অভিযোজন হয়ে হয়ে কী করে যে আমরা, হোমো সেপিয়েন্সরা সব্বাইকে হারিয়ে শ্রেষ্ঠ জীব(!) হয়ে উঠলাম সে এক রহস্য। • হাজার দশেক বছর ধরে আমরা শ্রেষ্ঠ। মাত্র হাজার দশেক। • পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ, হত্যা, শোষণের উৎস আমাদের এই অলৌকিক লাফ। • বিগত সত্তর হাজার থেকে তিরিশ হাজার বছরের মধ্যে হোমো সেপিয়েন্সের চিন্তাভাবনার নতুন জগৎ তৈরি হল, যাকে আমরা বলছি "cognitive revolution'। |
বিগত সত্তর হাজার থেকে তিরিশ হাজার বছরের মধ্যে হোমো সেপিয়েন্সের চিন্তাভাবনার নতুন জগৎ তৈরি হল, যাকে আমরা বলছি "cognitive revolution'। জিনের কিছু আকস্মিক পরিবর্তনকে এর কারণ হিসেবে ধরা হয়। কেন যে সেপিয়েন্সেরই এমনটা হল, আমাদের অন্য ভাইবোনেদের, ধরা যাক নিয়ান্ডারথালদের না হয়ে! আমাদের ভাগ্য, আর কী? ঘটনাটা নাকি সম্পূর্ণ আকস্মিক। কিন্তু এর ফলে যা হল, তা মারাত্মক। আমরা তৈরি করতে সক্ষম হলাম আমাদের সম্পূর্ণ কাল্পনিক সত্যের জগৎ, যা সবার চেয়ে আলাদা। আমাদের নিকট আত্মীয়দের থেকেও। সে-জগতে স্থান পেল সম্পূর্ণ অস্তিত্ববিহীন জিনিসপত্র, শরীরী অস্তিত্বহীন। কিন্তু আমরা তাতেই বিশ্বাস করলাম। সে-বিশ্বাস এমনি মজবুত যে তা লক্ষ লক্ষ মানুষকে একত্রিত করল। একটা বাঁদরের থেকে কখনোই একটা কলা ছিনিয়ে নেওয়া যাবে না, এর বিনিময়ে সে মৃত্যুর পরে স্বর্গে গিয়ে অনেক কলা পাবে এই আশ্বাস দিয়ে। কিন্তু মানুষের থেকে নেওয়া যায়। এই কল্পিত সত্যে বিশ্বাস করার ক্ষমতাই মানুষকে জোট বাঁধতে শেখাল। নানা মিথ তারা বিশ্বাস করলেন। সবাই মিলে, একসাথে। বাইবেলে বর্নিত মানুষের সৃষ্টির গল্প, বা নেটিভ অস্ট্রেলিয়ানদের স্বপ্নের নানা মিথ থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী মিথ। একইরকম বিশ্বাস থেকে একসাথে কাজ করল মানুষ, বিরাট সংখ্যক মানুষ। ধর্মবিশ্বাস, সংস্কারে বিশ্বাস, মানুষের তৈরি আইন-কানুনে বিশ্বাস ইত্যাদি ইত্যাদি। গোষ্ঠী, সমাজ, রাষ্ট্র সব তৈরি হল। যা অন্য কোনো প্রাণীর হল না। হোমো সেপিয়েন্স শ্রেষ্ঠ জীব হল। এরপর কী? এই জাতির ভবিষ্যত কী?
এই সমস্ত নিয়ে যিনি ভেবেছেন, গবেষণা করেছেন আর চমৎকারভাবে লিখেছেন, তাঁর নাম ইউভাল নোয়া হারারি(Yuval Noah Harari)। বইয়ের নাম সেপিয়েন্স(Sapiens)। এই সিরিজে তাঁর আরও দুটো বই আছে। কালের গর্ভে আমরা কোথায় কেমন ছিলাম, আছি আর থাকব তা জানতে-বুঝতে এ-বই মহা দরকারি। আমার পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ বই – "সেপিয়েন্স'।
সব মিলিয়ে বর্ষবরণের চেয়ে বর্ষবিদায়ের আনন্দ বোধহয় এবার একটু বেশি।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন 2021 এর নায়ক এক এবং একমাত্র বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
বাংলায় ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই নয়া নাগরিকত্ব আইন CAA চালু করার কথা বললেন অমিত শাহ
মানবাধিকারও কি দলীয় রাজনীতির কুক্ষিগত আজ?
বিজেপি বিরোধী ভোট মানেই তৃণমূলের শাসনের প্রতি নিরঙ্কুশ অন্ধ সমর্থন নয়।
অর্থনীতির গতি ক্রমশ নিম্নগামী।