বেবী সাউ
মূলত কবিতা এবং প্রবন্ধ লেখেন বেবী সাউ। জন্ম ঝাড়গ্রাম জেলায়। বর্তমান নিবাস- জামশেদপুর। প্রথম কাব্যগ্রন্থ বনঘাঘরা (২০১৫)। তার পর একে একে বেরিয়েছে ইউথেনেশিয়া (২০১৬), গান লেখে লালনদুহিতা ( ২০১৮), ছয় মহলা বাড়ি ( ২০১৮), একান্ন শরীরে ভাঙো ( ২০১৯) এবং হেমন্তের অন্নপূর্ণা (২০১৯)। কবিতার লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট কাগজ এবং দৈনিকে প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং গবেষণামূলক রচনা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁদনাগীত সংগ্রহ, তাঁদের সঙ্গে থেকে তাঁদের জীবনযন্ত্রণার সঙ্গে পরিচিতির পাশাপাশি, এই সব গানের কাব্যগুণ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি নিয়ে নিরন্তর চর্চার ফলশ্রুতিতে ২০১৯-এই প্রকাশ পায় গবেষণামূলক গ্রন্থ – "কাঁদনাগীত: সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত''। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন ভাষার কবিতার অনুবাদ, বাংলার অনুবাদ সাহিত্যের ইতিহাস রচনা এবং মন্দির-মসজিদের স্থাপত্য ও অলংকরণ নিয়ে কাজের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের আকাশবাণীতে কর্মরত। বাংলা একাদেমি পুরস্কার(তাপসীবসুস্মারকসম্মান) এবং কৃত্তিবাস মাসিক(দীপক মজুমদার পুরস্কার) পুরস্কারে পুরস্কৃত।
চারটি কবিতা
অভিশাপ
গহন এক করুণ ভ্রমণে বেরিয়েছি...
কিলবিল করে উঠছে কেন্নো, বিছে, জন্মজন্মান্তরের পোষা সাপ...
আঁশটে গন্ধ ছড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছেন চাঁদ
তার চিকন কালো চুলে উছলে পড়ছে আলো!
এ আলো, সামান্য পেলেও আমাদের দুর্দশা ঘোচে
আমাদের ফসলের মাঠে ফসল
আমাদের গাভীর বুকে দুধ
এবং জলাশয়ে ভরে যাবে কালবোস মাছ
চাঁদ সব বোঝেন
মুচকি হেসে, হাতের মুদ্রায় পলকে খোঁপায় খাঁজে লুকিয়ে ফেলেন পিছলে যাওয়া নরম আলো...
তীর্যক সেই ব্যঙ্গকে আঁকতে না পেরে কবিতা লেখে আমাদের বখাটে ছেলেরা
গান্ধর্ব
কখনও চাঁদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি আমার
যখন খুব কষ্ট, ভালো লাগে না ভাল্লাগে না কিছু...
ব্যালকনির রেলিং এ ঝুলে পড়ি...
চারপাশে মায়ার সংসার
চারপাশে ছলনার সংসার ঝোলে...
আর আনন্দে হাততালি দিতে দিতে স্নিগ্ধসুনিবিড় চাঁদ উঠে যায় রান্নাঘরে...
হ্যালুসিনেশন
খোলা চুল, গাঢ় সিঁথি চাঁদ
অর্ধেক শরীর বাঁকিয়ে দেখছে আত্মহত্যা...
খিলখিল হাসছে
কুচকুচে কালো বেড়ালের প্রতি কী এত মায়া তোমার! অপত্যসম্ভাবনা?
তার দুমড়ানো শরীর জাপটে আছে আমার হাত!
স্নেহ
বেদনা কি উপাসনা নয়?
দীর্ঘ রাস্তা পেরিয়ে, মৃত জনপদ পেরিয়ে আমাদের একাকীত্ব সেও কী কম বড় প্রার্থনা!
লকলকে জিভের ভয় দেখিয়ে যারা একমাত্র বিরহ-ই দিয়ে গেল
যারা সমস্ত স্বপ্নাদেশের মধ্যে বসিয়ে দিল কঠোর যতিচিহ্ন
তাদেরকে একদিন শিকারে নিয়ে যাবো!
ধূসর প্রান্তের দিকে উড়ে যাওয়া সেইসব দিকচক্রবাল,
ডানাহীন উটপাখি এবং মুণ্ডুকাটা কোনও ভাস্কর্য
যদি সমাপতনের শব্দে হেঁটে যায় আরও গাঢ়তর কোনও হতাশার দিকে
শেষমুহূর্ত, তুমি কি বসাবে না শাকান্নে, পিছুডাকে?
কেন লিখি
এমন একটি টিকিটঘর, যার কাছে সমস্ত মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর ট্রেনের পর ট্রেন চলে যাচ্ছে স্টেশন ছেড়ে। সারা দিনের পর ফাঁকা সেই টিকিটঘরে স্টেশন মাস্টার ঘুমিয়ে পড়েছে। ক্রমাগত টেলিফোন বাজছে কোথাও। এলোমেলো কাগজগুলো পড়ে আছে টেবিলের নীচে। থমথমে একটা বাল্ব জ্বলে আছে। জীবনে আর কিছু নেই। আর কিছু থাকার কথা নেই। আমার কবিতার পাশে আমি শুয়ে থাকি। আমার পাশে আমার কবিতা। আমার কবিতা এই-ই।
বাংলায় এসে কৃষক নেতাদের ডাক 'বিজেপিকে একটাও ভোট নয়'।
গরিবের দায় ঝেড়ে ফেলে কোন সংস্কারের পথে সরকার?
কেউ প্রশ্ন তুললেই তাকে রাজনীতির ধ্বজাধারী ঠাহর করে আমরা গণতন্ত্রের পরিসরকে ছোট করে ফেলছি না কি?
কলকাতার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের চোখে কেমন লকডাউন চিত্র, আজ দেখুন তৃতীয় পর্ব।
এখন লোক দেখানো বদলি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চরম গাফিলতির জন্যই লকডাউনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বসেছে।
আজকের ভারতে চরম দক্ষিণপন্থী শাসনে যেন সেই ইউটোপিয়া বাস্তবায়িত হচ্ছে!