বিচারাধীন বন্দী অবস্থায় মৃত্যু হল সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ ধর্মযাজক স্ট্যান স্বামীর। এলগার পরিষদ মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত আরও বহু গণ্যমান্য নাগরিক। দমনমূলক UAPA আইনের ব্যবহারই হচ্ছে বিনা বিচারে সরকার বিরোধীদের আটকে রাখার জন্য। এই বিষয়ে গত 6 জুলাই (মঙ্গলবার) www.4thpillarwethepeople.com একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। সুদীপ্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে আলোচনায় আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ, মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর, শুদ্ধব্রত দেব এবং সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র উপস্থিত ছিলেন।
1) আমাদের সংবিধান সরকারের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা প্রদানের জন্য।
2) সরকার ভালমতোই জানে UAPA-তে যে মামলাগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো অসত্য। কিন্তু তারা তবুও এই আইনটি ব্যবহার করছে বিরোধী কণ্ঠকে কারাগারে বন্দি রাখবার জন্য। সরকার জানে যে এঁদের বিরুদ্ধে কোনও কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। তাই তাদের লক্ষ্য এঁদের যতদিন সম্ভব জেলে আটকে রাখা।
3) আইনজীবীরা UAPA, মাওবাদী ইত্যাদি শুনলে মামলা লড়তে চান না। গুটিয়ে যান। ফলে এসব ক্ষেত্রে উকিল পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ হচ্ছে তাঁদের সেই সাহস, সততা নেই।
4) মানবাধিকার বিরোধী UAPA আইন আগেও ছিল। বর্তমান বিজেপি সরকার সেই আইনে বদল এনে বলল, এখন কেবল গোষ্ঠী বা সংগঠন নয়, ব্যক্তি বিশেষকেও এই আইনে অভিযুক্ত করা যাবে।
5) একজন বৃদ্ধ সমাজকর্মীকে জল খাওয়ার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হচ্ছে। এটা লজ্জার।
6) মহারাষ্ট্র এবং দেশের মানবাধিকার কমিশনের কাছে বারবার আবেদন করা হয়েছে, যাতে তারা বৃদ্ধ স্ট্যান স্বামীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সরকার এবং বিচারবিভাগকে একটা রিপোর্ট দেন। সেই আবেদনে কোনও কাজ হয়নি।
7) জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা তাদের (NIA) তদন্তে স্ট্যান স্বামীকে অভিযুক্ত প্রমাণ করতে পারেনি। শুধু মানুষটাকে রাষ্ট্রের জন্য 'বিপজ্জনক' বলে দেগে বন্দি রাখা হল। তাঁর কাতর আর্জি ছিল, তিনি যেন নিজের বাড়িতে গিয়ে প্রাণত্যাগ করতে পারেন। সেইটুকু অধিকারও তাঁকে দেওয়া হল না।
8) দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত বন্দির বিচারবিভাগীয় মৃত্যুর প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গে। এই রাজ্যেও চারু মজুমদার, সরোজ দত্ত থেকে হালের কিষেণজি— কোনও মৃত্যুর তদন্ত হয়নি। 2009 সাল থেকে এই রাজ্যের রাজনৈতিক বন্দিরা জেলে বন্দি।
9) গণরাজনীতি শাসকের এই স্বৈরাচারী মনোভাবকে রুখতে পারে। বিচারবিভাগও বাধ্য হবে জনগণের হিতার্থে রায়দান করতে— সম্প্রতি শীর্ষ আদালতের বিভিন্ন রায়ে এই পরিবর্তিত মনোভাবের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
10) কী কেন্দ্রে, কী রাজ্যে, মানবাধিকার কমিশনকে কার্যত পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। সরকারের আজ্ঞাবহ কিছু মানুষকে এই কমিশনের মাথায় বসানো হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় মানবাধিকার কমিশন ব্যর্থ— স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এরকম আর কত মৃত্যুর হিসাব রাখতে হবে আমাদের?
11) তবে শুধু গণরাজনীতির ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। ভারতবর্ষের কোনও রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসে UAPA আইন বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সব শাসকদলই এই আইনের অপপ্রয়োগ করে আসছে। তাই রাজনীতি-বিবর্জিত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনই পারবে এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে। স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর প্রতিবাদে নাগরিক সমাজ যেভাবে গর্জে উঠছে, তাতে একটু আশান্বিত হওয়াই যায়।
অবশেষে হাত জোড় করে হার মানতে হল নরেন্দ্র মোদীকে। শাসক হিসেবে প্রথম বার।
রামদেবের জন্য আর কতদূর যাবে এই সরকার?
সুদীপ্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে আলোচনায় রঞ্জন রায়, অনিকেত চট্টোপাধ্যায় ও শুভনীল চৌধুরী।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়া নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা। কীভাবে হবে মূল্যায়ন?
টিকাকরণের উপর মানুষের আস্থার প্রশ্ন জড়িত দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ওপর।
উলঙ্গ রাজাকে সাহস করে কে বলবে যে তার পরনে কাপড় নেই।