×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কোভিড-19 টেস্ট: কিছু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে

    সুস্মিতা ঘোষ | 13-08-2020

    আট মাস হয়ে গেল ভারতে Covid-19 পা রেখেছে। তারও দু’মাস আগে চিনে এর শুরু। এই দশ মাস ধরে WHO আর ভারতের ICMR কত যে বয়ান পাল্টাল, তার ইয়ত্তা নেই। নতুন তথ্য জানা গেলে বয়ান তো পাল্টাতে থাকবেই। কিন্তু একটা জায়গায় বয়ান পাল্টাতে হয়নি, এবং সেটা করতে পারলেই করোনা নিশ্চিত জব্দ হত। সেটা হল: টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট। Covid-19 টেস্ট নিয়ে যা হচ্ছে তা কিন্তু কতটা বিজ্ঞানসম্মত সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছেএকটি অভূতপূর্ব কঠিন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকলকেই কাজ করতে হচ্ছে, এ কথা মেনে নিয়েই বলা যায়, যে পদ্ধতি প্রকরণ মেনে যেভাবে টেস্ট করার কথা, তা সর্বত্র সর্বদা করা সম্ভব হচ্ছে না। ডায়গনোস্টিক্সের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার নিরিখে বলতেই পারি টেস্টের ফলাফল নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে

     

    এখন অন্তত সবাই জেনে গেছেন যে, করোনার জন্য তিন রকমের টেস্ট হয়: RT-PCR, র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট এবং র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ কোনও একরকম টেস্ট আনাই বা হচ্ছে কেন, বা হঠাৎ হঠাৎ তার বদলে অন্য কোনও টেস্ট ব্যবহারই বা করা হচ্ছে কেন?

     

    টেস্ট করে কীভাবে রোগ ধরা হয়

    এই ব্যাপারটা কিছুটা বুঝতে গেলে কতগুলো জিনিস জানা দরকার। যে কোনও মেডিক্যাল টেস্টের দু’ধরনের গুণ যাচাই করতে হয়:

    1. সেনসিটিভিটি, যেটা বলতে বোঝায় যে, কত কম রোগের লক্ষণ বা কত কম পরিমাণ রোগ জীবাণু থাকলেও সেই টেস্ট রোগ নির্ণয় করতে কতটা সক্ষম। কিংবা যে কোনও পরিবেশেই হোক না কেন, সেই টেস্ট রোগ নির্ণয়ে সক্ষম কিনা।
    2. স্পেসিফিসিটি, যেটা বলতে বোঝায়, যদি এটাকে কোভিড-এর টেস্টই বলা হয়, তাহলে কোভিড রোগকেই যেন ধরতে পারে। অন্য কোনও রোগকে কোভিড না বলে।

     

    এই সেনসিটিভিটি ও স্পেসিফিসিটি মাপে দুটি সংখ্যা দিয়ে, যেগুলো দিয়ে কোনও মেডিক্যাল টেস্টের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়। এদের নাম হল যথাক্রমে পজিটিভ প্রেডিক্টিভ ভ্যালু (পিপিভি) এবং নেগেটিভ প্রেডিক্টিভ ভ্যালু (এনপিভি) যখন একটি টেস্ট যে কোনও অবস্থাতেই সত্যিকারের কোভিড-পজিটিভকে যত বেশিরভাগ সময়ে কোভিড-পজিটিভ হিসেবেই নির্ণয় করতে পারে, তখন সেই টেস্টের পিপিভি খুব উঁচুমানের। যে টেস্টের পিপিভি খুব উঁচুমানের, তার ফলস পজিটিভ কম হবে, অর্থাৎ নেগেটিভ-কে পজিটিভ বলে নির্ণয় করবে না। সত্যিকারের নেগেটিভ-কে নেগেটিভ হিসেবে ধরতে পারার ক্ষমতাকে সেই রকম এনপিভি বলে। উঁচুমানের এনপিভি থাকলে সত্যিকারের কোভিড-পজিটিভকে খুব কম ক্ষেত্রে ধরতে পারবে না, নেগেটিভ বলবে না; অর্থাৎ ফলস নেগেটিভ থাকবে খুব কম। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য টেস্ট হবে সেই, যার পিপিভি, এনপিভি দু’টোই উঁচুমানের।

     

    পরিস্থিতির চাপে প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানীর কাজ করতে হচ্ছে কম অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরও

    Covid-19 এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য টেস্ট যে RT-PCR, সেটা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এখানেও না বলা অনেক কথা আছে। এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে এর সেনসিটিভিটি মাত্র 70 শতাংশ। এর কতগুলো কারণ আছে। এই টেস্ট অত্যন্ত জটিল পদ্ধতির। আমাদের দেশে এই টেস্ট পুরোটা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে করা সম্ভব নয়। মানুষ যেহেতু ত্রুটিশীল, তাই ভুল-ত্রুটি রয়েই যায়। এই ত্রুটির মধ্যে কতগুলো খুব মারাত্মক। 1) এই টেস্টে ব্যবহৃত বেশিরভাগ রাসায়নিক সামান্য গরমেই সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই টেস্ট-কিট গুলি চালান আসার সময় বা ল্যাবে রাখার পুরো সময়টাই হিমায়িত না থাকলে টেস্ট ভুল নির্ণয় করবে। পুরো ব্যাচ নষ্ট হয়ে গেলে ধরা সহজ, কিন্তু খুব অন্যায় হয়, যদি কেউ ল্যাবের মধ্যে কিটগুলির কোনও কোনও অংশ সযত্নে ফ্রিজারে তুলে রাখতে ভুলে যায়, এবং সেটা চেপে যায় বা খেয়ালই না করে। 2) পদ্ধতি জটিল, হাতের ব্যাপার আছে। ডিসিপ্লিন মেনে সমস্ত ঠিকঠাক স্টেপ করে যাওয়া, এক ছন্দে সমস্ত টেস্ট নির্ভরযোগ্য ভাবে করে যাওয়ার লোকজন বড় বিরল হয়ে পড়ছে। খুব দোষ দিই বা কীকরে? আগে RT-PCR ডায়গনোস্টিক্স দেশে কমই ব্যবহৃত হত। এর আসল জায়গা ছিল গবেষণাগারে- সেখানে এক টেস্ট অনেক সময়েই মিলিয়ে দেখার জন্যে দু-চারবার পুনরাবৃত্তি করা হত। আবার গবেষণাগারে বেশিরভাগ RT-PCR -ই কোনও মারাত্মক, ছোঁয়াচে এমনকী জীবাণুর উপরেও করা হয় না। বিপুলা এই পৃথিবীতে তখন রোগবালাই বা করোনা ছাড়াও আরও অনেক কিছু গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল! মহামারীর অসংখ্য স্যাম্পল টেস্টের ভার নেওয়ার জন্য RT-PCR -এর সামান্য অভিজ্ঞতা থাকলেই তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এই টেস্টে সামিল করানো হয়েছে। বিকল্প নেই, কাজেই এই ভুল-ত্রুটিগুলো থাকবেই।

     

    ভুল-ত্রুটি শুধু আমাদের দেশে সীমাবদ্ধ নয়, অন্য দেশেও আছে। তার একটা প্রমাণ হল, সম্প্রতি WHO এবং কিছু বিজ্ঞানী বলে চলেছেন, মৃত ভাইরাসের জিন অর্থাৎ আরএনএ-ও নাকি RT-PCR -এ ধরা পড়ছে, তাই নাকি সেরে যাওয়ার পরেও কেউ কেউ পজিটিভ আসছেন। এই গল্পটা একেবারেই সত্যি হতে পারে না। কোভিড নির্ণয়ে যে দেহরসটি নেওয়া হয়, সেটি লালা- সবাই জানে সেটি নানা রকম এনজাইম বা উৎসেচকে ভরপুর। জীব-রাসায়নিকরা জানেন যে, আরএনএ বস্তুটিকে ধরে রাখা রীতিমত চ্যালেঞ্জের বিষয়। ঘামের, লালার, ধুলোতে উড়ে বেড়ানো এনজাইম থেকে তাকে বহু কষ্টে রক্ষা করতে হয়। সেই আরএনএ, ভাইরাস থেকে বেরিয়ে এসে লালারসে অক্ষত থাকবে, এবং RT-PCR টেস্টে ধরা পড়বে, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হল না। গত বিশ বছর নানা ধরনের ল্যাবে ডায়গনোস্টিক্সের জন্য RT-PCR করা এবং নানাধরণের কর্মীকে দিয়ে কাজ করানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটির উৎসও মানবিক ত্রুটি। পিসিআর অর্থাৎ পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশনে যে জিন খণ্ডকে বারবার কপি করে লক্ষাধিক কপি তৈরি হয়, সে কিন্তু একটু অসাবধান হলেই টেস্টটিউব থেকে বেরিয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ল্যাবের টেবিল এবং বাতাসে থেকে যাওয়া এই জিনের কপি পরবর্তী স্যাম্পলের সঙ্গে মিশতে পারে, যাকে বলা হয় ক্যারি ওভার কন্টামিনেশন। এই ঘটনা ঘটলে সেই ল্যাবের তখন সব রেজাল্টই পজিটিভ দেবে, এবং এর মধ্যে অনেকগুলোই ফলস পজিটিভ। এছাড়া আরও একটা ঘটনা ঘটতে পারে। RT-PCR -এ ব্যবহৃত অনেক জৈব-রাসায়নিক মালমশলা গুণ এবং অনুপাতে খুব সূক্ষ্মভাবে প্রস্তুত করতে হয়। সেই সূক্ষ্মতা রাখতে না পারলেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। এরকম ঘটনা হলে স্পেসিফিসিটি কমে যাবেসেইরকম ক্ষেত্রে যে কোনওরকম স্যাম্পলে হঠাৎ হঠাৎ পজিটিভ দেখাতে পারে, এবং সেটি নন-স্পেসিফিক। গবেষণার সময় এরকম ঘটনা ঘটছে সন্দেহ হলে প্রথমে পুরো টেস্টের পুনরাবৃত্তি করা হয়, এবং সন্দেহ থেকেই গেলে পুরো ব্যাচের সমস্ত রাসায়নিক, এমনকী জল পর্যন্ত ফেলে দিয়ে নতুন ব্যাচের জিনিসপত্র দিয়ে আবার টেস্ট করা উচিত। খুব হাই-প্রোফাইল রোগী হলে টেস্টের পুনরাবৃত্তি, সন্দেহজনক জিনিসপত্র ফেলে নতুন ব্যাচের জিনিসপত্র দিয়ে কাজ করা অবশ্যই হয়, কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে? উত্তর আমার জানা নেই। কাজেই আমার পরামর্শ হল, সুযোগ থাকলে সন্দেহজনক রিপোর্ট পেলে সম্পূর্ণ অন্য ল্যাবে গিয়ে আবার টেস্ট করিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।

     

    এতই যখন সমস্যা, তবে RT-PCR করা কেন?

    এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে, যেকোনও জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ইত্যাদি) বাহিত রোগের ক্ষেত্রে মলেকুলার টেস্টের চেয়ে সেনসিটিভ আর স্পেসিফিক কিছু হয় না। যেকোনও নতুন ছোঁয়াচে ভাইরাস বাহিত মহামারী দেখা গেলেই তার জন্য কাজ চালানো নতুন টেস্ট সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বানিয়ে ফেলা যায়। এবং পুরো টেস্টটা শেষ করতে মেরেকেটে চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যার টেস্ট করতে গিয়ে কখনওই তিন চারদিনের আগে রিপোর্ট আসে না। প্রতিদিন আমরা খবর পাই, অনেক রোগীই টেস্টের রিপোর্ট আসার আগেই মারা যাচ্ছেন, এবং রিপোর্ট না আসার কারণে ঠিক চিকিৎসা পান নি। এই ধরণের টেস্ট যাতে প্রতিদিন, প্রতি হাসপাতালে, প্রতি প্যাথল্যাবে প্রতিটা জীবাণুবাহী রোগের জন্য করা যায়, তার জন্য প্রচেষ্টা থাকলেও যথেষ্ট নেই। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হল, ব্যবসায়ী এবং আমলা সবার মাথায়ই ঢুকে আছে, এসব জিনিস তো আমদানি করলেই হল, আবার ভারতে নতুন করে বানানোর দরকার কী! আত্মনির্ভর ভারতের হিড়িক উঠেছে বটে, কিন্তু সেখানে আসল উদ্ভাবনের জায়গায় ব্যবসাকে প্রাধান্য দেওয়ায় ঘুরপথে আমদানিই চলছে। আমদানির বিপক্ষে সবচেয়ে বড় কারণ কিন্তু পরনির্ভরতা নয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত বেশিরভাগ জিনিসপত্র আসে অন্য দেশ থেকে। তারা সেই সব জিনিস নিজেদের দেশের উপযুক্ত করে বানিয়েছে, ভারতের উপযুক্ত নয়। ভারতের নিজের সমস্যা ভারতীয়দের নিজের দেশে বসেই সমাধান করতে হবে।

     

    এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা না বলে পারছি না। ভারতের অনেক বিজ্ঞানী এখন নানারকম অভিনব টেস্ট আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। সাধু প্রচেষ্টা, সন্দেহ নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, মিডিয়াতে প্রচুর শোরগোলের পর আর সে আবিষ্কারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর একটা কারণ হল, গবেষণাগারের পরিবেশে কৃত্রিম অণু দিয়ে যে টেস্টে সাফল্য পাওয়া যায়, সত্যিকারের রোগীর দেহরসের মধ্যের জীবাণুর সঙ্গে সেই টেস্ট একইভাবে কাজ যে করতে নাও পারে, এই ধারণাটা না থাকা। বিজ্ঞানীরা ইঁদুর দৌড়ে না গিয়ে পরস্পরের পরামর্শ নিয়ে কাজ করলে হয়তো করোনার লড়াইটা আয়ত্তের মধ্যে থাকত।

     

    র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টে ফলস পজিটিভ আসতে পারে

    র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট বানানো তুলনামূলক ভাবে সহজ, ব্যবহার করাও সবচেয়ে সহজ। করোনার র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের বলতে পারা উচিত, কারও শরীরের রক্তে করোনার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা। অ্যান্টিবডি তখনই তৈরি হবে, যখন তার শরীরে করোনা ভাইরাস ঢুকেছে, সে রোগ হোক আর নাই হোক। এতে খুব অসুবিধা ছিল না, যদি সব ঠিকঠাক থাকত। সরকার গাদা গাদা টাকা দিয়ে যেটা আমদানি করল, সে টেস্ট-কিটই খারাপ। তারপরে দেখা গেল, এই টেস্ট বানানোর জন্য যেসব জৈব-রাসায়নিক ব্যবহার হয়েছে, তা Covid-19 এর জন্য স্পেসিফিকই না।

     

    যাঁরা নানা ভাবে কোভিড নিয়ে চর্চা করছেন, তাঁরা হয়তো শুনে থাকতে পারেন যে, কোভিডের ভাইরাস SAR –CoV2 আসলে সার্স বা MERS-এর জিনগত রূপান্তর মাত্র। জিনে অল্প কয়েকটা জায়গায় তফাৎ আছে, এবং সেই তফাতের জন্য এই করোনা ভাইরাসগুলির খোলসের কাঁটা সার্স বা MERS-এর খোলসের কাঁটা থেকে একটু মাত্র আলাদা। কাজেই কেউ যদি টেস্ট বানানোর সময় ওই সূক্ষ্ম তফাতের জায়গাটুকুই খালি লক্ষ্যে না রেখে গোটা ভাইরাস বা গোটা কাঁটা ব্যবহার করে থাকে, তাহলে যারা যারা আগে সার্স বা MERS-এর সংস্পর্শে এসেছেন এক যুগ আগে, তাদের পজিটিভ আসা উচিত। এই ব্যাপারের ভেতরের তথ্যগুলো ধোঁয়াশায় পূর্ণ- বিভিন্ন দেশের সরকার র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের পরিসংখ্যান নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করে থাকে।

     

    র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট দেশীয় পরিবেশের মানানসই কি?

    মাস খানেক আগে বাজারে এসেছে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট। এই টেস্ট বানানো সব চেয়ে কঠিন। এই টেস্ট খোঁজে করোনা ভাইরাসের বাইরের খোলার প্রোটিনকে। স্পেসিফিক হলে শুধু মাত্র  SAR –CoV2 খোলসের সম্পূর্ণ নিজস্ব, স্পেসিফিক বৈশিষ্ট্য যেটুকু, শুধুমাত্র ওইটুকুই সে দেখতে পাবে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আর কিচ্ছু না। এর থেকেই বোঝা যায় এর স্পেসিফিক জৈব-রাসায়নিকগুলি উদ্ভাবন এবং প্রস্তুত করা কতটা কঠিন। তারপরেও একটা ভাল টেস্ট তৈরি করতে গেলে দেখতে হয় তার শেলফ লাইফ কতদিন। র‍্যাপিড টেস্টগুলো এমনভাবে বানানো উচিত যে, তাদের পরিবহন এবং সংরক্ষণের জন্যে বিশেষ কোনও ব্যবস্থা যাতে না নিতে হয়। মাসের পর মাস থাকে, কিংবা বড়জোর সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সঞ্চয় করে রাখা যায়। ভারতের মতে দেশে বাইরের প্রচণ্ড গরমে ছুটে চলা ট্রাকের মধ্যে তেমন কোনও ব্যবস্থা না নিয়েই পরিবহন করানো যায়। এইসব কঠোর পরীক্ষা পাশ করলেই সাধারণত র‍্যাপিড টেস্ট-কে বাজারে আসতে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু SAR –CoV2 টেস্টের জন্য সেই সময় দেওয়া হল কই? কাজেই বাজারে যে টেস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তার নির্ভরযোগ্যতা 50 শতাংশও কিনা সন্দেহ। কিন্তু র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে আরটি পিসিআর-এর মতো না যন্ত্রপাতি লাগে, না উচ্চশিক্ষিত কর্মী। দামেও অনেকটাই সস্তা। বহু রাজ্য সরকার এখন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে যে, আর RT-PCR -এর দরকার নেই। সহজ এবং র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট এসে গেছে তো! সরকারের ঘুম কবে ভাঙবে জানি না, কিন্তু পজিটিভের সংখ্যা কম আসার জন্য জনগণ নিশ্চিন্ত হতে শুরু করেছে। কিন্তু অসুস্থ লোকের, আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা রোগীর সংখ্যা কিন্তু বাড়ছেই।

     

    ভ্যাকসিন, না হয় স্বল্পমেয়াদি সুরক্ষারই হল, হয়তো একদিন আসবে। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে, বিজ্ঞানীদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে তাঁদের ইঁদুরদৌড়ে সামিল না করে সুস্থভাবে আবিষ্কারের সুযোগ-সহায়তা দিতে হবে।

     

    ড: সুস্মিতা ঘোষ, ডায়াগনোরাইট-এর প্রতিষ্ঠাত্রী এবং জৈব-রসায়নবিদ, বিটস পিলানির পরামর্শদাত্রী। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো সুস্মিতার ডায়াগনোরাইট একটি সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত স্টার্ট-আপ সংস্থা, যার লক্ষ্য সকলের জন্য সুলভে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক ডায়গনস্টিক্স।

     

     


    সুস্মিতা ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    আজকের করোনা ভাইরাস চিহ্নিত করতে আর তার ভ্যাকসিন বানাতে কাজে লাগছে মাটিতে পা রেখে চলা নোবলজয়ী ভারতীয়

    ভাইরাসের সঙ্গে ক্যান্সারের যোগসুত্র এবং এইডস রোগের কারণ এইচআইভি ভাইরাস এর আবিষ্কর্তা লুচ মন্তেনিয়ে।

    ল্যাবরেটরি বা প্রকৃতিতে করোনা ভাইরাসের ডেল্টাক্রন রূপ বলে কিছু নেই, এটা নিতান্তই মিডিয়ার সৃষ্টি।

    রতন টাটার আশীর্বাদধন্য Goodfellows সত্যিই কি বৃদ্ধদের সমস্যার মানবিক সমাধান?

    পালস এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলেই সাবধান হওয়া জরুরি।

    স্বাধীনতার 75 বছরে অমৃতের সাগর কিনারে বসে বিষপানে মত্ত ভারত

    কোভিড-19 টেস্ট: কিছু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested