×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কর্তাদের খামখেয়ালে আতান্তরে পরীক্ষার্থীরা

    শুভস্মিতা কাঞ্জী ও বিতান ঘোষ | 25-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা গ্র্যাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা, আর তার প্রস্তুতির জন্য জরুরি কী? নিবিড় পড়াশোনা তো বটেই, তার সঙ্গে দরকার মানসিক প্রস্তুতি। শুধু গ্র্যাজুয়েশনের পরীক্ষাই নয়, সব পরীক্ষার ক্ষেত্রেই মানসিক প্রস্তুতিটা ভীষণ জরুরি। কিন্তু যদি পরীক্ষার মাত্র দিন ছয়েক আগে সেটাই ঘেঁটে থাকে তবে? হ্যাঁ, এমনই কিছুর সম্মুখীন হচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালযয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা। একেই করোনা আবহে নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের, তার উপর লিখিত পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন আগে তাদের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে রয়েছে অজস্র ধোঁয়াশা। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এই বিষয়ে। রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পড়ুয়াড়াও তাদের স্নাতকস্তরের অন্তিম বর্ষের পরীক্ষা কবে এবং কীভাবে হবে, তাই নিয়ে অন্ধকারে।

     
    ইউজিসি-র নির্দেশ মোতাবেক 1 অক্টোবর, 2020 থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। প্রথমে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তরফে পড়ুয়াদের প্রশ্নপত্র ডাউনলোড, পরীক্ষা দেওয়া এবং উত্তরপত্র আপলোড করার জন্য 24 ঘণ্টা সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে ইউজিসি তাদের নয়া নির্দেশিকায় আধঘণ্টার মধ্যে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড এবং উত্তরপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি শেষ করতে বলে। কিন্তু এখনও ছাত্র ছাত্রীরা জানে না তাদের কতক্ষণের পরীক্ষা হবে, কতক্ষণের মধ্যেই বা উত্তরপত্র জমা দিতে হবে। ঘোষিত ওপেন বুক টেস্টের সূত্রে প্রশ্নের ধরন বদলেছে কিনা, যাদের কাছে স্মার্টফোন নেই তারা কীভাবে উত্তরপত্র জমা দেবে, এই সমস্ত জরুরি প্রশ্নগুলোও হাতড়াতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। তার উপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘনঘন সিদ্ধান্ত বদলেও বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে পড়ুয়ারা। এই অবস্থায় কোনও পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া সম্ভব, সেটা তারা বুঝতে পারছে না।

     

    এই প্রসঙ্গে বেথুন কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী শালিনী মাজি 4thPillars-কে তাঁদের এই অসুবিধার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখনও অবধি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও ফাইনাল নোটিস আমরা পাইনি। তাই পরীক্ষার কিছুদিন আগেও বুঝতে পারছি না পরীক্ষা পদ্ধতি কিংবা প্রশ্নের ধরন কেমন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বারবার নোটিস দিয়ে তা আধ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়া হচ্ছে, এতে তো ভীষণ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের মধ্যে। গোটা বিষয়টা নিয়েই ধোঁয়াশা আছে। কত ঘণ্টা পরীক্ষা হবে এখনও সঠিক জানি না। যদি 2 ঘণ্টার পরীক্ষা হয়, তবে কীভাবে 4 ঘণ্টার পরীক্ষা 2 ঘণ্টায় দেব জানি না। খাতা জমা কতক্ষণে দেব সঠিক ভাবে তাও জানি না আমরা। ইউজিসির নির্দেশ মতো যদি আধ ঘণ্টাতেই খাতা জমা দিতে হয় তা কী করে সম্ভব হবে?’ একই সুর ধরা পড়ে স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র ঋক্ ধর্মপাল ব্যানার্জির গলায়। তাঁর কথায়, ‘নানা সময় নানা ভুয়ো খবর আসছে, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল বোঝা যাচ্ছে না যতক্ষণ না বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও নোটিস বেরোচ্ছে। আমাদের মানসিক পরিস্থিতি একদমই বিধ্বস্ত, কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। 4 ঘণ্টার পরীক্ষা যদি 2 ঘণ্টায় দিতে হয় তবে কি প্রশ্নের ধরন বদলাবে? কীভাবে পড়ব আমরা? ইউজিসি থেকে পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী আমাদের পরীক্ষা শেষের আধ ঘণ্টার মধ্যে খাতা জমা দিতে হবে। কী করে সম্ভব সেটা? কখনও নেটওয়ার্ক ভাল থাকে না, তো কখনও সার্ভার প্রবলেম থাকে। তারপর ইউজিসি-র সমস্ত নিয়ম মেনে যদি আপলোড করে আধ ঘণ্টার মধ্যে মেল পাঠাতে হয়, তা এক প্রকার অসম্ভব। আর কত প্রান্তিক কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা আছে, বা এমন অনেকে আছে যারা এখানকার কোনও কলেজে পড়ে কিন্তু বাড়ি এখানে নয়। তারাও এখন বাড়িতে রয়েছে, সেখানে হয়তো ঠিকঠাক নেটওয়ার্ক কানেকশন পাওয়া যায় না বা যাদের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই তাদের কী হবে? একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানতে পারলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয় নাকি সেই সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ি লোক পাঠাবে। সেটা সম্ভব? তাদের কাছে সেই তথ্য আছে? আর যদি থেকে থাকে, বা এমনটাই হয় তবে সেটা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল সাইট থেকে কেন জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে না? আমাদের মনে যে এত প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এগুলো নিয়ে কীভাবে পরীক্ষা দেব?’

     

    একে এতদিন পিছিয়ে গিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে, তার উপর নানা টালবাহানার পর স্থির হল ওপেন বুক পরীক্ষা হবে কিন্তু তাতেও এত প্রশ্ন ছাত্র ছাত্রীদের মনে, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চুপ। তাদের তরফে কোনও নোটিস বা কিছুই নেই। এতে অবশ্য চুপ নেই কলেজগুলো। ছাত্র ছাত্রীদের কথা ভেবে তারাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তাই তারা তাদের মতো করে ছাত্র ছাত্রীদের সাহায্য করছে। কিন্তু সব কলেজ তো করছে না, কারণ তাদের মনেও যে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ কলকাতার একটি বিখ্যাত কলেজের অধ্যাপিকা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ‘আমরা বুঝতে পারছি ওদের (ছাত্রছাত্রীদের) মনের অবস্থাটা। তাই আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি যাতে ওদের সুবিধা হয় সেই ভেবেই কাজ করার। একই সঙ্গে যথাসম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ মানার চেষ্টা চলছে। ইউজিসি-র এ হেন নির্দেশ সবাইকেই সমস্যায় ফেলেছে যে আধ ঘণ্টায় খাতা জমা দিতে হবে। তবে আমাদের কলেজের যে ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে জমা দিতে পারবে না তারা কলেজে এসেও জমা দিতে পারবে, সেই ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। তবে এটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। এত উদ্বেগ নিয়ে কীভাবে সুষ্ঠ ভাবে পরীক্ষা দেওয়া যায় জানি না।‘ বাসন্তী দেবী কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা চিল্কা ঘোষ অবশ্য এই বিষয়ে তাঁর ক্ষোভ গোপন রাখলেন না। তাঁর কথায়, ‘শিক্ষার নাম করে প্রহসন চলছে। ইউজিসি-র নয়া ফরমানে প্রকারান্তরে বলা হচ্ছে, শহরের সম্পন্ন ঘরের পড়ুয়া ছাড়া আর কেউ লেখাপড়া করার সুযাগ পাবে না।' তাঁর আরও সংযোজন, "এই যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ডিজিটাল ডিভিশন গড়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত, তা এককভাবে কেন্দ্রই নিচ্ছে। রাজ্য এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হচ্ছে।‘

     

    সবার মনেই প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার, কিন্তু পরীক্ষার মাত্র ক’দিন আগে এত চিন্তা বা এত প্রশ্ন মনে নিয়ে কতটা ভাল পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে কমবেশি সবাই চিন্তিত।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী ও বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    এ কাজ করা হলে ভারতীয় নাগরিকদের উপর তার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপ।

    ইউজিসি-র এ হেন নির্দেশ সবাইকেই সমস্যায় ফেলেছে যে আধ ঘণ্টায় খাতা জমা দিতে হবে।

    কর্তাদের খামখেয়ালে আতান্তরে পরীক্ষার্থীরা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested