×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • টিকা আবিষ্কার জুতা আবিষ্কার নয়

    শুভস্মিতা কাঞ্জী ও বিতান ঘোষ | 06-07-2020

    করোনার প্রতিষেধক তৈরির ব্যাপারে অবাস্তব সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রতিবাদে মুখ খুলতে শুরু করল ভারতীয় বিজ্ঞানী সমাজ। দেশের বিজ্ঞানীদের শীর্ষ সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর (IASc) পক্ষ থেকে জনস্বার্থে প্রচারিত এক বিবৃতিতে সরাসরি এ বিষযে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর (AIIMS) ডিরেক্টরও 15 আগস্টের মধ্যে টিকা আবিষ্কারের ব্যাপারে ঘোরতর সংশয় প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞানীদের অনেকের মতেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) যে সময়সীমা ঘোষণা করেছে তাতে ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণা যা সারা বিশ্বে যথেষ্ট সম্ভ্রম এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে হয় তা নিয়ে হাসাহাসি করবে মানুষ। চাপের মুখে পড়ে ICMR এখন বলছে, তাদের নির্দেশিকা বিশেষ করে আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার ফাঁসে যাতে গবেষণা আটকে না যায় তার জন্য, কোনও বৈধ বেজ্ঞানিক প্রক্রিয়া শর্টকাট করার কথা বলা হয়নি। অথচ 2 জুলাই ICMR-এর বিবৃতিতে প্রায় হুমকির সুরে বলা হয়েছিল, সর্বশেষ 15 আগস্টের মধ্যে সাধারণের ব্যবহারের মতো টিকা তৈরি করতে হবে, এবং সেই নির্দেশ পালনে গাফিলতি খুব কঠোর নজরে দেখা হবে। 

     

     

    1934 সালে সদ্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী সি ভি রামন IASc-এর প্রতিষ্ঠাতা। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সহস্রাধিক শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী এর সদস্য। বর্তমানে IASc-এর সভাপতি হলেন ভারতে জিনসংক্রান্ত বিজ্ঞান চর্চার গুরু বলে পরিচিত পার্থপ্রতিম মজুমদার। কল্যাণীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্স-এর অধ্যাপক তাঁর নিজের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে সুপরিচিত এবং অত্যন্ত সম্মানিত একজন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান বিষয়ক মত প্রকাশকে বর্তমান রাজনৈতিক আবহে কোনও না কোনও ভাবে আমরা-ওরা বিভাজনে এনে ফেলার চেষ্টা অসম্ভব নয়। তাই জেনে রাখা ভাল, স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সময় থেকেই পার্থপ্রতিমবাবু গবেষণায় রত। গত 45 বছরে তাঁর প্রকাশিত গবেষণা পত্রের সংখ্যা 429, বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি দেশ বিদেশের অন্তত 25টি সম্মানে ভূষিত।

     

    পার্থপ্রতিমবাবুর স্বাক্ষরিত IASc-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সময়সীমা বেঁধে টিকা আবিষ্কার অযৌক্তিক এবং নজিরবিহীন। এ কাজ করা হলে ভারতীয় নাগরিকদের উপর তার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপ।

     

     

     

    বিবৃতির পূর্ণাঙ্গ বয়ান:

     

    সংবাদ মাধ্যম এবং অন্য মাধ্যমে প্রচারিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর একটি চিঠি ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (IASc)-এর নজরে এসেছে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ভারত বায়োটেক নামক একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা মিলে নভেল করোনা ভাইরাসের (SARS-CoV-2) প্রতিষেধক বের করতে চলেছে। সেই চিঠিতে আরও বলা হয়েছিল, জনসাধারণের জন্য 15ই আগস্টের মধ্যেই এই ওষুধটি সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর বাজারে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

     

    IASc পরীক্ষামূলক করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারে এই আশাপ্রদ অগ্রগতিকে স্বাগত জানায়। তারা আশাবাদী যে, এই টিকা জনসাধারণের সেবার্থে শীঘ্রই ব্যবহার করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন হিসাবে IASc কাজ করে এবং এর অনেক বিজ্ঞানী টিকা আবিষ্কারের কাজের সঙ্গেই যুক্ত। IASc দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, করোনার প্রতিষেধক বাজারে আনার জন্য যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা অবাস্তব। এই সময়সীমা জনসাধারণের মনে অলীক আশা ও প্রত্যাশার জন্ম দেবে।

     

    এই মুহূর্তে করোনার প্রতিষেধকের তীব্র প্রয়োজন তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কিন্তু তা মানবদেহে ব্যবহার করার যোগ্য কিনা সেটা দেখার জন্য পর্যায়ক্রমে বহু গবেষণামূলক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এই পর্যায়ক্রম পরীক্ষাগুলোর প্রথম ধাপ হল, ওষুধের গুণগত মান বিচার এবং সুরক্ষার মূল্যায়ন করা। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতিষেধকের কার্যক্ষমতা এবং সেই ওষুধ বিভিন্ন মাত্রায় ব্যবহারের ফলে কোনও রকম সাইড এফেক্ট হচ্ছে কিনা তা দেখা হয়। এবং শেষ ও তৃতীয় পর্যায় সহস্রাধিক সুস্থ মানুষের দেহে তা ব্যবহার করে ওষুধের কার্যক্ষমতা এবং কোনও সাইড এফেক্ট আছে কিনা দেখা হয় জনসাধারণের উপর প্রয়োগ করার আগে। কোনও টিকার গুণগত মান এবং তার কার্যক্ষমতা যাচাই করার জন্য বহু সুস্থ সেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন হয় যাদের শরীরে এই প্রতিষেধক পরীক্ষা করা হয়। অতএব যে কোনও নতুন আবিষ্কৃত ওষুধের পর্যায়ক্রম পরীক্ষাগুলো শুরু করার আগে বহু নৈতিক এবং বিধিসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন। তবে, প্রশাসনিক অনুমোদন ত্বরান্বিত করা গেলেও, তথ্য সংগ্রহ করা কিংবা গবেষণার কাজ ত্বরান্বিত করা যায় না গবেষণার গুণগত মানের সঙ্গে আপস করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মানবদেহে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি হতে বেশ কিছু সপ্তাহ সময় লাগে এবং সেই সময়ের আগে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। পরবর্তী পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করার আগে গত পরীক্ষার যাবতীয় তথ্য খুঁটিয়ে বিচার করে দেখা এবং বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।  যদি কোনও একটি পর্যায়ের তথ্য গ্রহণযোগ্য না হয় তবে তৎক্ষণাৎ সেই পরীক্ষাকে বাতিল করে দেওয়া আবশ্যিক। যেমন, প্রাথমিক পরীক্ষার পর যদি দেখা যায় যে সেই ব্যবহৃত ওষুধ মানবদেহের জন্য সুরক্ষিত নয় তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণামূলক পরীক্ষা স্থগিত রেখে সেই পরীক্ষামূলক প্রতিষেধককে অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।

     

    উল্লিখিত এই সমস্ত কারণের জন্যই ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস জনস্বার্থে এই বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করছে যে টিকা কবে থেকে চালু করা যাবে সে সময় আগে থেকে বলা অযৌক্তিক এবং নজিরবিহীন। অ্যাকাডেমি মনে করে তাড়াহুড়ো করে, যথাযথ গবেষণা এবং ওষুধের মান নির্ণয় না করে যদি তা ব্যবহার করা হয় ভারতীয় নাগরিকদের উপর তবে তার ফল অভূতপূর্ব রকমের খারাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি হবে।

     

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী ও বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    এ কাজ করা হলে ভারতীয় নাগরিকদের উপর তার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপ।

    ইউজিসি-র এ হেন নির্দেশ সবাইকেই সমস্যায় ফেলেছে যে আধ ঘণ্টায় খাতা জমা দিতে হবে।

    টিকা আবিষ্কার জুতা আবিষ্কার নয়-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested