×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • একলা আবার পয়লা হবে

    বিতান ঘোষ | 18-04-2020

    পয়লা বৈশাখ, প্রতীকী ছবি

    তখন সবে সবে সংখ্যা ও শব্দ পড়ে চিনতে শিখেছি। বাংলা ক্যালেন্ডারের খোপ টানা পাতায় দেখলাম বৈশাখ মাসের ১ তারিখ। পাশে আবার ছোট্ট করে লা' শব্দটি লেখা। নতুন জিনিস বোঝা ও পড়ে ফেলার আনন্দে গড়গড়িয়ে পড়ে ফেললাম একলা বৈশাখ। কেউ একজন রে রে করে বলে উঠলো, ‘ওরে ওটা একলা নয়, পয়লা বৈশাখ'স্পষ্ট মনে আছে, অবাক হয়ে ভেবেছিলাম লেখা যখন ১ আর লা', তখন সেটা পয়লা হয় কী করে? কিমাশ্চর্যম, প্রায় দু-দশক পরে সেই পয়লা বৈশাখ আক্ষরিক অর্থেই একলা বৈশাখে পর্যবসিত হল। 

    প্রথম পর্বের লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য অনেক বিষয়ের মতোই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, বাঙালির সাধের নববর্ষ এবারের মতো মুলতুবি হতে চলেছে। সেই মতোই আম্রপল্লব-কদম্বের জুটি কিংবা নতুন ক্যালেন্ডারের সুবাস থেকে বাঙালি এবার বঞ্চিতই থাকল। বইপাড়ায় নতুন লেখকদের বই প্রকাশ হল না, পাড়ার বৈঠকী আড্ডা কিংবা কলেজ স্কোয়ারের বই বাজারও বন্ধ থাকল। অথচ এই একটা দিনে বাঙালির কতশত রেজোলিউশন, পুরোনো গ্লানি, জরা মুছে দিয়ে নতুনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আকাঙ্খা থাকেকিন্তু করোনা প্রভাবে সেই নতুনের জয়গান গাওয়ার ফুসরত পাওয়া গেল কোথায়? শিয়রে যখন মৃত্যুভয়, অবসন্নতা সেখানে অদূর ভবিষ্যতে সব প্রতিকূলতা জয় করার প্রত্যয় আর স্বপ্নটুকুই পুঁজি।

    ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটি ঘরবন্দি হয়ে থাকার দরুন অনেককেই আক্ষেপ করতে দেখলাম। স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন বিপণির মিষ্টির বাক্স থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য আমারও একটু দুঃখ হচ্ছিল বৈকী। কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা ঘোরতর আস্তিক, দেব-দ্বিজে যাদের যথেষ্ট ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে, তারা এর মধ্যে বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের আশঙ্কা করছেন। তবে, ১২ মাসে ১৩ পার্বনে অভ্যস্ত বাঙালির অন্যতম একটি প্রধান উৎসব উদযাপিত না হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হয় না। এখন ভয়াল মহামারীর মধ্যে সচেতন ভাবে জীবন যাপন করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

    বাঙালির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা কি আগে দেখা যায়নি? দু-দু'বার ছিন্নমূল হওয়া, দেশভাগের ক্ষত বহন করা বাঙালি এর আগেও জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একটা ম্রিয়মাণ নববর্ষ নতুন করে বাঙালির আর কী ভাগ্যলিপিই বা লিখবে? রাষ্ট্রের চোখে বাঙালির অভিধা কখনও ঘুষপেটিয়া' কখনও বা উইপোকা'ডাকসাইটে বাঙালির পরিচয় বাংলাদেশি'-ও বটে। যেদিন আসামের গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে উনিশ লক্ষ বাঙালিকে বন্দি করা হল, সেইদিনই তো বাঙালির সামনে দুর্যোগ ঘনিয়ে এসেছিল। করোনা মহামারীর শক্তি ও প্রভাবকে বিন্দুমাত্র খাটো না করেই বলা যায়, এই সবকিছুর সঙ্গেও বাঙালি লড়েছে, এখনও লড়ছে।

    আকবরের ভূমিরাজস্ব নীতির হাত ধরে এবং ইসলামিক হিজরি সনের সংশোধিত রূপ হিসাবে যে বঙ্গাব্দের শুরু, তার ১৪২৬-টা বছর ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত। এর মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা দুই দেশের দুই ভিন্ন খাতে বয়েছে, বাঙালি পরিচয়ের আগে প্রাধান্য পেয়েছে তার হিন্দু-মুসলিম পরিচয়। তবু ছাইভস্মের স্তূপ থেকে বাঙালি ফিনিক্স হয়ে উড়েছে, বিশ্ব জয় করেছে। সেই বিজয়রথ কখনও থেমে যায়নি। তাই আশা রাখি, করোনা মহামারীর প্রাবল্যের বিরুদ্ধেও এই দেশ জিতবে, সারা বিশ্ব জিতবে। অবশ্যই বাঙালিও এই জয়ের ভাগীদার হবে। মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে জরা। ঢাকা আর কলকাতার রাজপথে মঙ্গলঘট এঁকে শুভারম্ভ হবে, বিপর্যয় মুক্ত এক নতুন দিনের।

     


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে জরা

    নো বল আর ওয়াইড বলের আধিক্যে বিরোধীরা শেষ বল করার আগেই না ক্লিনবোল্ড হয়ে যান ইমরান!

    একলা আবার পয়লা হবে-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested