ভারতবর্ষে তাঁর সম পদাধিকারী বহুবার বলেছেন, তিনি ফকির, তাই ঝোলা কাঁধে হিমালয়ে চলে যাওয়াতেই তাঁর মুক্তি! ইমরান খানের দেশ থুড়ি সে দেশের সেনাবাহিনী কি এবার ইমরানকে হিন্দুকুশে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে ফেলল?
খেলোয়াড় জীবনে অলরাউন্ডার ছিলেন।ব্যক্তিগত জীবনেও ইমরান অলরাউন্ডার। একাধিক প্রেমের গুঞ্জন, বারংবার বিবাহ ও বিচ্ছেদ ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়কের পাশাপাশি ইমরান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রধানমন্ত্রীও বটে। লঙ্কার রণতুঙ্গা কিংবা জয়সূর্যর মতো ঠুকঠুক করে নয়, 22 গজ থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেও চালিয়ে ব্যাট করেছেন ইমরান। কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনে সচরাচর যা করেননি, ইদানীং তা-ই করে ফেলছেন রাজনৈতিক জীবনে। এই সেদিনকেই বললেন, বিরোধীরা নাকি আমেরিকার মদতে তাঁর সরকারকে ফেলতে চাইছে। পরে আমতা আমতা করে ঢোঁক গিলে জানালেন, আমেরিকা নয়, অন্যান্য দেশ এই কাজে লিপ্ত। এই অভিযোগের সপক্ষে নথিপত্রও নাকি তাঁর কাছে আছে। কিন্তু দেশ বা দেশগুলির নাম ইমরান প্রকাশ্যে আনেননি।
বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার বাতিল করে দিলেন। এই বুড়ো বয়সে হোম ম্যাচে ফলো অন খাবেন নাকি! তাই, নিজের পরিচিত রাজনৈতিক পিচে অপরিচিত সুইং দেখেই সত্ত্বর ইমরান পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভির কাছে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানালেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে 'ন্যায়বিচার' চাইতে বিরোধীরা দল বেঁধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। বল এখন শীর্ষ আদালতের কোর্টে।
ইমরানের খেলোয়াড় জীবনে ডিআরএস প্রথা চালু হয়নি, যেখানে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে বিপক্ষ দলের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারেন। রাজনৈতিক জীবনেরও প্রায় উপান্তে এসে ইমরান বুঝছেন পলিটিকাল ডিআরএস প্রথাতেও সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে কেমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে হয়। ক্রিকেটিয় লব্জ ব্যবহার করে ইমরান যতই বলুন, শেষ বল অবধি লড়াই করব; আরে মশাই, এত ফ্রি হিট দিলে বিপক্ষ তো মুফতে ছক্কা হাঁকাবেই। ইসলামাবাদে এসব রঙ্গ তামাশা দেশে কাঁটাতারের এপারে সাউথ ব্লক মুচকি হাসছে। হাসবে না তো কী! এমনিও দুই দিকেই হাইকমিশনে দুয়ার আঁটা বেশ কিছুকাল হল, এরপর সেখানে ইমরান আসুন বা মিঁয়াদাদ, কপিলদেবের দেশের কীই বা যায় আসে? বরং খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেনাপ্রধান বাজওয়া ইমরানের থেকেও ভারতের এক কূটনীতিককেবেশি ভরসা করছেন! বিবদমান ক্ষীরপুত্তুলদের নিয়ে ভেবে কাজ নেই, ভারত বুঝেছে, ওই দেশে ক্ষমতার চাবিকাঠি আদতে সেনাপ্রধানের আস্তিনের ভেতরেই লুকনো থাকে।
আরও পড়ুন:আপুন লিখেগা নেহি শালা
তবে দুঃখ কী জানেন? ইমরানকে সরানোর প্রধান দুই চক্রী হচ্ছেন, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর সভাপতি তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই, শাহবাজ শরিফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো। এই বিলাওয়াল হচ্ছেন দেশের আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র। পাকিস্তানে একটি চালু গুঞ্জন রয়েছে যে, অক্সফোর্ডে পড়াকালীন ফ্ল্যামবয়েন্ট, সুদর্শন ইমরান বেনজিরের সঙ্গে প্রেম করতেন। আর সেই বেনজিরের ছেলে কিনা আজ ইমরানকে...। এই বে-নজির পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই ইমরানের এখন হৃদয়ের একূলওকূল দুকূল ভেসে যাওয়ার জোগাড়।
তবে ভরসা এখন সুপ্রিম কোর্ট। ইমরানের ব্যাট-প্যাডে বিরোধীদের ছুঁড়ে দেওয়া বল এবং তৎসহ 'আউউউটট' বলে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আম্পায়ার থুড়ি সুপ্রিম কোর্টের কাছে সুতীব্র আবেদন। ইমরান পারবেন ক্রিজ আঁকড়ে শেষ বল অবধি খেলতে? নাকি তাঁর ভূতপূর্বদের মতো তিনিও 5 দিন (রাজনৈতিক দীর্ঘসূত্রতায় দিন নয়, বছর!) হওয়ার আগেই ম্যাচ এবং ইনিংস দুই-ই হারাবেন? পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের সুপ্রিমো ইমরান এখন পাকিস্তানের জনগণের কাছে 'ইনসাফ' চাইছেন।
নো বল আর ওয়াইড বলের আধিক্যে বিরোধীরা শেষ বল করার আগেই না ক্লিনবোল্ড হয়ে যান ইমরান!
মুছে যাবে গ্লানি, ঘুচে যাবে জরা