×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মাথা উঁচু করে সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েই প্রশান্ত ভূষণ হিরো

    4thPillars ব্যুরো | 26-08-2020

    সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অরুণাভ ঘোষ।

    প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের মাত্র দু'টি টুইটেই নাকি নড়ে গিয়েছিল দেশের বিচার ব্যবস্থার ভিত। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রশান্ত ভূষণকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। 25 আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের প্রশান্তের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার কথা থাকলেও, তাঁকে তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে অনুরোধ করা আর আদালত অবমাননা নিয়ে বিচারপতির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। গোটা দেশের কৌতূহল, বিতর্কিত দু'টি টুইটের "মালিক' প্রশান্তকে সুপ্রিম কোর্ট কী শাস্তি দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে  www.4thPillars.com -এর "আদালত ও দু'টি টুইট' নামক লাইভ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অরুণাভ ঘোষ।

     

     

    1) অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে প্রবীণ আইনজীবীরা আবেদন করেছিলেন যাতে প্রশান্ত ভূষণকে কোনও শাস্তি না দেওয়া হয়। তাঁরা বলেছেন প্রশান্ত ভূষণকে সতর্ক এবং নিন্দা করে ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র্রর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এখনও তা মানতে নারাজ

     

    2) বিচারপতি মিশ্রের বক্তব্য রামজন্মভূমি মামলার রায়দানের সঙ্গে যেসব বিচারক যুক্ত ছিলেন, তাঁদের একজন বাদে বাকিরা এখনও কর্মরতসুতরাং, এক্ষেত্রে প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্য আদালতের উপর অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ

     

    3) একটা বহু পুরনো মামলা আছে প্রশান্ত ভূষণের নামে, দু'টো মামলা নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা হবে। এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতা এবং আদালত অবমাননার পার্থক্য কোথায় তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে। কতদূর অবধি একটা মানুষ যেতে পারে এই বিষয়ে আলোচনা দরকার, বৃহত্তর বেঞ্চ তার বিচার করবে

     

    4) এর আগেও অনেক আইনজীবী আদালতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কিন্তু পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। প্রশান্ত ভূষণ কিন্তু তা করেননি। উল্টে নিজের মন্তব্যে অবিচল থেকেছেন আইনজীবীরা তো পেশাগতভাবে স্বাধীন। তাঁদের কর্তব্য নিজেদের বিবেকের ডাকে সাড়া দেওয়া

     

    5) বর্তমানে ভাল আইনজীবীরা বিচারকের পদ গ্রহণ করতে চাইছেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অধিকাংশই কিন্তু হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে বিশেষ সুনাম অর্জন করতে পারেননি। শুনতে খারাপ লাগলেও, এটাই বাস্তব (অরুণাভ ঘোষের বক্তব্য)

     

    6) সংবিধান হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টকে আদালত অবমাননার বিচার করার অধিকার দিয়েছে। আদালতের সুয়ো মোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) মামলা গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে। তবে তার মানে এই নয় যে নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট সকলের (যেমন অ্যাটর্নি জেনারেল) বক্তব্য না শুনলেও চলবে

     

    7) আমিই অভিযোগকারী আবার আমিই বিচারক, এটা হতে পারে না। এই ক্ষেত্রে মামলাটা যে বেঞ্চ গ্রহণ করেছে, তাদের নিজেদের না শুনে অন্য বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।

     

    8) গোটা দেশেই স্বাধীন কণ্ঠকে রোধ করার চেষ্টা চলছে। শাসক যদি মনে করেন, যা খুশি তাই করতে পারব আর আদালত আমাদের পক্ষে থাকবে তবে সমূহ বিপদ

     

    9) বিচারপতি কারনানের সঙ্গে অন্যায় হয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়। গোটা সুপ্রিম কোর্টের বসে এটা বিচার করা দরকার যে, একটা মানুষের অপরাধের জন্য শাস্তি হচ্ছে অথচ তার কোথাও আপিল করার জায়গা নেই, তাহলে সে যাবে কোথায়

     

    10) প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে যখন মহিলা কর্মীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল, তখন অভিযোগকারিণীকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া হল। সুপ্রিম কোর্টের কোনও সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর অধিকার নেই বলে বিচারপতিরা স্বৈরাচারী আচরণ করতে পারেন না রঞ্জনবাবুর অবসরের পর ওই মহিলাকে আবার চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। তিনি মিথ্যা অভিযোগ করে থাকলে এটা কেন করা হল?

     

    11) সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যে থেকে মানুষের অধিকারকে সুনিশ্চিত করাই সুপ্রিম কোর্টের কাজ। তাদের মৌলিক কর্তব্য মানুষের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু এই কর্তব্য পালনে বড় বিচ্যুতি রয়ে যাচ্ছে

     

    12) জরুরি অবস্থার সময়ে বিচারপতি এইচ আর খান্না ছাড়া বাকি সব বিচারপতি রায় দিয়েছিলেন, জরুরি অবস্থায় মানুষের মৌলিক অধিকার থাকবে না। পরে অবশ্য তাঁরা তাঁদের পূর্বের রায় নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। আসলে শাসক শক্তিশালী হলে আর তার পিছনে বিপুল জনসমর্থন থাকলে বিচার বিভাগও শাসকের অনুগামী হয়ে যায়। মানুষ কিন্তু শাসকের স্তাবককূলকে মনে রাখেনি, বিচারপতি খান্নাকে এখনও মনে রেখেছে

     

    13) নাম্বুদিরিপাদ বলেছিলেন বিচারপতিরা পক্ষপাতদুষ্টবিচার ব্যবস্থায় গরিব অসহায় মানুষ সুবিচার পাচ্ছে না। নাম্বুদিরিপাদের এই বক্তব্যের জন্য তাঁর এক টাকা জরিমানা হয়েছিল। বিচারপতি নাম্বুদিরিপাদকে মার্কসবাদ বুঝিয়েছিলেন। নাম্বুদিরিপাদ বলেছিলেন, একটা মামলার রায়ে মার্কসবাদ বোঝানো যায়, এ আমার জানা ছিল না

     

    14) সব হাইকোর্ট উপরমহলের চাপের সামনে মাথা নত করছে না। তাই সামগ্রিকভাবে হতাশ হওয়ার মতো কিছু নেই। সাম্প্রতিক সময়েই বোম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চ তবলিঘি জামাত ইস্যুতে বলিষ্ঠ রায় দিয়েছে করোনা ছড়ানোর অভিযোগে ছয় মাস আটক বিদেশীদের শুধু মুক্তিই দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজ করে দিয়েছে।

     

    15) বিচারকরা যখন শপথ নেন, তখন তাঁদের সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার কথা বলতে হয়। জনগণের মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই ন্যায়দণ্ডকে ব্যবহার করা উচিত। আদালতের চোখে সরকার ও নাগরিক সমান, রায় সকলেরই পক্ষে বা বিরুদ্ধে যেতে পারে

     

    16) সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিচারপতি রায় দান করতে গিয়ে বারবার ধর্মীয় অনুষঙ্গকে টেনে আনছেন। দেশে হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান আর বিচারপতিদের মানসিকতার প্রতিফলন এই সব রায়গুলোয় প্রতিফলিত হচ্ছে। ধর্মাচারণ মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না

     

    17) সমালোচনা যেটা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা না হলে বিচার ব্যবস্থার ভ্রান্তিগুলোর সংশোধন হবে না। কোনও প্রতিষ্ঠান যদি সমালোচনার ঊর্ধ্বে হয়, তবে সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না

     

    18) রাজনৈতিক আনুগত্য না থাকলে এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়া যাচ্ছে না। যেসব আইনজীবী বিজেপি মনস্ক নন, ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে

     

    19) বিচারপতিরা যখন বলছেন তাঁদের দায়বদ্ধতা সংবিধানের প্রতি, তখন তাঁদের আচার আচরণটাও কিন্তু সংবিধানের মৌলিক চিন্তা অনুযায়ী হতে হবে

     

    20) কলকাতা হাইকোর্টে 72 জন বিচারপতি থাকা দরকার, সেখানে এখন 36 জন বিচারপতি রয়েছেন, কর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং অনেক মামলায় রায় পেতে বহু বিলম্ব হচ্ছে। এই দীর্ঘসূত্রিতা দেশের বিচার ব্যবস্থার একটা বড় ত্রুটি। পরিকাঠামোর তীব্র অভাব রয়েছে, সব বিচারপতি নিয়োগ হলে তাঁদের বসার জায়গা থাকবে না।

     

     


    4thpillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    দায়িত্ববান নাগরিকের মতো এবার কি বাজিমুক্ত কালীপুজো পালন করবে জনগণ?

    গোটা দেশের কৌতূহল, বিতর্কিত দু'টি টুইটের "মালিক' প্রশান্তকে সুপ্রিম কোর্ট কী শাস্তি দেয়।

    এ বছর ভোটে ধর্মীয় বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গেই ভাষাভিত্তিক এবং লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনেরও সাক্ষী থাকছে বাংলা।

    এখন লোক দেখানো বদলি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা। চরম গাফিলতির জন্যই লকডাউনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বসেছে।

    কৃষি আইন প্রণয়নের সময়ে সংসদে জনপ্রতিনিধিদের কথা শোনেনি সরকার। এবার কি সরাসরি জনতার কথা শুনতে হবে? 

    ভোটের পর হিংসা দমনের অছিলায় দিল্লির শাসকের এজেন্ট হিসেবে কর্তব্য পালন করছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

    মাথা উঁচু করে সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েই প্রশান্ত ভূষণ হিরো-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested