বড় ভাইয়ের মন আজকাল বেজায় খারাপ। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন, বাইরে চলে যাচ্ছেন, নয়তো মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। অথচ একটা সময় কতই না হিন্দি দিল্লি করেছেন ইনি। একা লড়াই করে পাড়ার সবচেয়ে বড় হনুমান মন্দিরটা তৈরি করিয়েছিলেন। ক্যামেরা নিয়ে চলে গেছেন পাহাড়ে, বনে, জঙ্গলে। যখনই সময় খারাপ গেছে, বারবার আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘চিন্তা করো না। ভাল দিন আসবে। একবার শুধু চেয়ারটা গুছিয়ে নিই'।
এত হাসিখুশি মানুষটা আজকাল বসে থাকে চুপচাপ। অত জম্পেশ করে কাটা দাড়িটাও কেমন মিয়ানো মুড়ির মত হয়ে গেছে। কিন্তু হয়েছেটা কী? অতঃপর, শুরু হল তদন্ত। ঘরের দরজা একটুখানি ফাঁক করে বড় ভাই দেখে নিলেন আমাদের। আলাদা করে আর দেখার কি আছে বোঝাই গেল না। উনি তো সবসময়ই সবকিছু দেখছেন! যাই হোক, খানিক ধাতস্থ হয়ে বড় ভাই বললেন তাঁর মনের অবস্থা।
জীবনের এই এক ঝামেলা। যতই কাজ করো, কেউ পাত্তাই দেয় না! এই যে এত করে, খেটেখুটে মন্দিরগুলো তৈরি করছেন পাড়ায়, যাতে লোকের একটু ধম্মে কম্মে মতি আসে, কিন্তু কোথায় কি! সেই কুৎসা করে যাচ্ছে পিছনে। এই যে এতবার বাইরে যাচ্ছেন যাতে নতুন কিছু আইডিয়া নিয়ে আসা যায়। কিন্তু মূর্খগুলো সেসব কিছুই বুঝছে না। ঘোর কলি ঘোর কলি! এইজন্যই বলে, লোকের ভাল করতে নেই। ভাল করতে গেলেই বলে, জিনিসপত্র এধার ওধার করছে, তোলা তুলছে। ভগবানের এ কেমন বিচার! রাম রাম!
এতদিন তো তাও এসব ছিল। এখন গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে শিবুর দল। কি সুন্দর এতদিন একসঙ্গে, হাতে হাত রেখে কাজ করে গেল। আর এখন সেই দেবপ্রতিম বড় ভাইয়ের সঙ্গে বেইমানি করে বসল! বলে কিনা, ক্লাবের চেয়ার ওদের দিতে হবে! মামাবাড়ির আবদার নাকি! এতদিন, এত কষ্ট করে, সাম্রাজ্য দাঁড় করালেন বড় ভাই। কত মুক্তো, কত খই ছড়ালেন বাজারে। কত পাখি নিয়ে গেল সেসব। আর সেগুলো কিনা নিয়ে নেবে ওই শিবু! ধম্মে সইবে না এদের, কোনও ধম্মেই সইবে না। একদিন ভগবান এর বিচার করবেন। যাই হয়ে যাক, চেয়ার ছাড়ব না!
অগত্যা, ক্লাবঘর এখন বন্ধ। চেয়ারগুলোও নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিচ্ছে এর ফাঁকে। পাড়ার হনুমান মন্দিরে রাতদিন হত্যে দিয়ে পড়ে আছে ছেলেরা। মেয়েরা তুলসিতলায় বসে আছে সমানে। বড় ভাই অবশ্য সবই দেখছেন। সাক্ষাৎ ভগবান কলি বলে কথা! বিচার হবেই!
এত হাসিখুশি মানুষটা আজকাল বসে থাকে চুপচাপ। অত জম্পেশ করে কাটা দাড়িটাও কেমন মিয়ানো মুড়ি হয়ে গেছে
নিজেদের পরিচয় আমরা কপালে তিলক কাটার মতোই শুরুতে লিখে রেখেছি। প্রশ্ন করে সকলকে।