×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বিরোধী কণ্ঠ রুদ্ধ করতেই মাদক আইনের অপব্যবহার

    4thPillars ব্যুরো | 08-10-2020

    সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় আইনজীবী অরুণাংশু চক্রবর্তী এবং সাংবাদিক রজত রায়।

    রিয়া চক্রবর্তীকে জামিন দিয়ে হাইকোর্ট বলল, গ্রেফতারির কোনও কারণই দেখাতে পারেনি মাদক দমন সংস্থা এনসিবি (NCB)এদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে বলিউডে চলছে বিজেপি বিরোধী সামান্যতম স্বরও বন্ধ করার ছক। শাসকের কথায় ওঠবোস করছে মিডিয়া। এই নিয়ে www.4thpillars.com 8 অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। এই আলোচনায় সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্তের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবী অরুণাংশু চক্রবর্তী এবং সাংবাদিক রজত রায়।


    1) মাদক রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মাদক পাচার কিংবা মাদক বিক্রির কোনও তথ্যপ্রমাণই দিতে পারেনি মাদক দমন সংস্থা (এনসিবি)। বিশেষ উদ্দেশ্যে বিচারালয়ের কাছে কাউকে বেশি শাস্তি দেওয়ার আবেদন করা যায় না। অভিযুক্ত সাধারণ মানুষ হোন বা সেলিব্রিটি, বিচারালয়ের কাজ সমদৃষ্টি নিয়ে চলা। ট্রায়াল হয়ে যাওয়ার পর সাজা কতটা কী হবে, তা বলা যায়। কিন্তু একটা অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদনের ক্ষেত্রে সেটা বলা যায় না।

    2) বিচারালয়কে এড়িয়ে নিজেরাই কাউকে শাস্তি দিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে আইনজীবীদেরও একাংশ কানহাইয়া কুমারকে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকে মারধর করছেন। আইনজীবীরা যদি বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা না রেখে নিজেরাই হাতে আইন তুলে নেন, তাহলে সার্বিক পরিস্থিতি কী, তা সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়।

    3) সমাজের নানা স্তরেই একটা ভয় পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চলছে। এর লক্ষ্য যে শুধু বলিউড এমন নয়। সমাজের সব পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষকেই সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে, মুখ খুলবে না। দু'-একজনকে শাস্তি দিয়ে অন্যদেরও ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমানে জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়ঙ্কর অবস্থা চলছে। জরুরি অবস্থার সময় কিছু সংবাদমাধ্যমের সোচ্চার প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল। এখন সেটাও দেখা যাচ্ছে না।

    4) একশ্রেণীর সংবাদমাধ্যম সংঘবদ্ধভাবে একজনকে অপরাধী বানাতে লেগে পড়ল। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট দেখে জনৈক সাংবাদিক বলে দিলেন, ওমুক জন গ্রেপ্তার হবেন। আর সত্যিই সাংবাদিকের বলে দেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল।

    5) স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের জন্য এই সুশান্ত সিং রাজপুত ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। মূলত আসন্ন বিহার ভোটে রাজপুত ভোটকে নিজেদের দিকে আনার জন্যই এই উদ্যোগ। আবার বাংলার ভোটের সময় সম্পূর্ণ ভোল বদলে দেশের শাসক পক্ষ অন্য কথা শোনাবে, বাঙালি প্রেম দেখাবে। এসব চমকদারির খেলা ভবিষ্যতে আমরা আরও দেখতে থাকব।

    6) এখন দেখা যাচ্ছে মিডিয়া কাউকে অভিযুক্ত বানাচ্ছে। তারপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি তাকে গিয়ে গ্রেপ্তার করছে। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই নিরপরাধ লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু যখন প্রমাণের অভাবে কোর্ট তাদের জামিন দিতে বাধ্য হচ্ছে, তখন তাদের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের সামাজিক সম্মানও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

    7) আমাদের দেশে একটা বড় আইনি ফাঁক হচ্ছে এখানে টর্ট (Tort)-এর কোনও আইনি সংস্থান নেই। অর্থাৎ
    রাষ্ট্র, শাসকদল কাউকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে বন্দি করল, কিন্তু পরে দেখা গেল সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিটি কিন্তু রাষ্ট্র কিংবা শাসকদলের বিরুদ্ধে কোনও উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে না। দেশে এখন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই তাকে অপরাধী বলে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

    8) সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ এখন "হিজ মাস্টার্স ভয়েস'। তারা প্রতিষ্ঠান কিংবা শাসকের বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন তুলছে না। বরং শাসকের অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী নিজেরা পরিচালিত হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের মালিকরা নিজেদের স্বার্থে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন।

    9) 50 গ্রাম মাদক রাখার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। তাছাড়া সুশান্ত সিং রাজপুত সেই মাদক সেবন করেছেন এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। মাদক রাখার জন্য গ্রেপ্তার করতে হলে তো খোদ শাসক দলের বহু নেতাকর্মীকেই, পুরোহিত, সন্ন্যাসীদের গ্রেপ্তার করতে হয়। আসলে মাদক দমন সংস্থার শীর্ষ পদাধিকারী আস্থানা প্রধানমন্ত্রীর অনুগত একজন অফিসার। তাই শাসকের নির্দেশেই NCB পরিচালিত হচ্ছে।

    10) যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শুধুই "মন কি বাত' বলেন, জনগণের "মন কি বাত' শোনেন না, সেই দেশে শাসককে প্রশ্ন করা যায় না। শাসকদল তো বটেই, বিরোধী রাজনীতিকরাও চান না এমন কেউ সংসদে যান, যিনি সরকারপক্ষকে প্রশ্ন করতে পারবেন।
     


    4thpillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    এখনকার রাজনীতিকরা পাড়াতে যে ভাষায় কথা বলেন, সেই একই ভাষা রাজনীতিতেও ব্যবহার করছেন।

    কলকাতার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের চোখে কেমন লকডাউন চিত্র, আজ দেখুন চতুর্থ পর্ব।

    এ বছর ভোটে ধর্মীয় বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গেই ভাষাভিত্তিক এবং লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনেরও সাক্ষী থাকছে বাংলা।

    অভূতপূর্ব উন্মাদনা তৈরি হয়েছে এবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে।

    রাজনীতিতে বিরোধীর জায়গা থাকবে না? পুরো পরিসর জুড়ে থাকবে শুধুই শাসক?

    উৎসবের সময়ে রোগের সংক্রমণ কমাতেই বা সরকার কী করছে? অনেক প্রশ্ন। উত্তর অজানা।

    বিরোধী কণ্ঠ রুদ্ধ করতেই মাদক আইনের অপব্যবহার -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested