×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধন্দ

    শ্রবসী বসু | 09-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন একটি রিপোর্ট পেশ করেছে, যেখানে বলা হচ্ছে যে গত দু'বছরের, অর্থাৎ 1 জানুয়ারি 2020 থেকে 31 ডিসেম্বর 2021 পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে কোভিড-জনিত কারণে প্রায় দেড় কোটি (1 crore 49 lakhs) মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোভিড- জনিত মৃত্যু আর কোভিডে মৃত্যু কিন্তু এক নয়। একটি উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে। হাসপাতালে যে রোগীর মৃত্যুর পর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোভিড লেখা হচ্ছে এবং কোভিড প্রটোকল মেনে যাঁর দেহ পরিজনদের হাতে দেওয়া হচ্ছে না, সেই মৃত্যুকে ডিরেক্ট কোভিড ডেথ বলা হয়। কিন্তু যিনি হয়তো কোভিডের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, আপাতত ভাবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন কিন্তু এক মাস পরে কোভিড- জনিত হার্ট ফেলিওরে মারা গেলেন, তাঁর মৃত্যু হল ইনডিরেক্ট কোভিড ডেথ। যদিও তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে কোভিডের উল্লেখ থাকবে না, তবুও এ কথা তো ঠিক যে কোভিডে আক্রান্ত না হলে তিনি সম্ভবত আরও অনেকদিন বাঁচতেন। হু এই পরোক্ষ মৃত্যুর হিসেব তৈরি করেছে। প্রত্যক্ষ মৃত্যুর হিসেব করা সহজ। গঙ্গায় ভাসিয়ে দিলেও মৃতদেহ গণনা করা অসম্ভব নয়। সরকারি হিসেব যাই বলুক, শ্মশান, কবরখানা, প্রকৃতি নানা জায়গা থেকে আসল হিসেব বার করাও সম্ভব। কিন্তু একটা মডেল না থাকলে পরোক্ষ মৃত্যু গণনা করা সম্ভব নয়।

     

    হু পরোক্ষ মৃত্যুর মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব জনিত মৃত্যুও ধরেছে। অতিমারির সময়ে যদি কোনও ডায়ালিসিসের রোগীর মৃত্যু হয় তাঁকে ঠিক সময় সময় ডায়ালিসিসের করানো গেল না বলে, সেটিও পরোক্ষ মৃত্যু। যদি এমন কোনও কেস থাকে যেখানে লকডাউন বা বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে কোনও বৃদ্ধ তাঁর চেকাপ উপেক্ষা করেছেন এবং সেই কারণে কোনও প্রাণঘাতী অসুখের আভাস পাওয়া যায়নি, সেই মৃত্যুও পরোক্ষ কোভিড-জনিত মৃত্যু বলে পরিগণিত হয়েছে। প্রত্যক্ষ মৃত্যু সংখ্যা যেখানে 54 লাখ সেখানে পরোক্ষ মৃত্যু তার দ্বিগুণ, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা 1.5 কোটি। 2020-21 যদি সারা পৃথিবী অতিমারিতে ক্ষতবিক্ষত না হয়ে যেত, তাহলে এই দেড় কোটি মানুষ বেঁচে থাকতেন।

     

    পরোক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা হিসেব করা হয়েছে এই শর্তে যে, যদি করোনার প্রকোপ না পড়ত, তাহলে 2020 সালের আগে পর্যন্ত প্রতিটি দেশের প্রত্যেক মাসে যে রকম মৃত্যু হার ছিল, সেই প্রবণতাই (trend) নিশ্চয় বজায় থাকত। 2015 জানুয়ারি থেকে 2019 ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসিক মৃত্যুহারের ডেটা ব্যবহার করে কোভিড না থাকলে পরের 24 মাসের প্রত্যেক মাসে আনুমানিক মৃত্যু সংখ্যা কী হওয়া সম্ভব, তা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, ওই 24 মাসের প্রত্যেক মাসে ওই দেশে কত সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে সেই সংখ্যাও WHO তে রিপোর্ট করা হয়। এই দুই সংখ্যার পার্থক্য হল কোভিডে মৃত্যুর পরোক্ষ সংখ্যা।

     

    ব্যাপারটা শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, আসলে ততটা সহজ মোটেই নয়। অনেক দেশেই মৃত্যু সংখ্যা রিপোর্ট করতে দেরি হয়। সব দেশে প্রতি মাসে মৃত্যুহার পাওয়া যায় না। শুধু বাৎসরিক সংখ্যা পাওয়া যায়। সেই সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়েছে।

     

    প্রতিটি দেশের পরোক্ষ মৃত্যু সংখ্যা হিসেব করার সময় সেই দেশের কোভিড পজিটিভ হার লকডাউনের সফলতা, অর্থনৈতিক অবস্থা, গড় আয়ু, জলবায়ু, কোভিড মৃত্যুহার, বিভিন্ন রোগের অবস্থা, ইত্যাদি নানান কোভ্যারিয়েন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে তা পাওয়া যায়নি, সেখানে অঙ্কের নিয়ম মেনে সেগুলোর মান নির্ধারণ করতে হয়েছে।

     

    কোভিড একাধিক ওয়েভে পৃথিবীকে ধাক্কা দিয়েছে। প্রত্যেকটি ওয়েভের প্রকৃতি বিভিন্ন, এবং বিভিন্ন দেশকে তা বিভিন্ন ভাবে ধাক্কা দিয়েছে। কুড়িটি দেশ যা মোটামুটি ভাবে পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেক, সেগুলোতেই পরোক্ষ মৃত্যুর আশি শতাংশ ঘটেছে। এই দেশগুলোর মধ্যে যেমন আছে ভারত, পাকিস্তান, ইরান, মেক্সিকো, তেমনই আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন।

     

    আরও পড়ুন: লুকিয়ে স্কুল, সাবধান সরকার টের না পায়!

     

    ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকৃত হিসেবের থেকে বিভিন্ন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কম করে দেখানোর চেষ্টা করেছে - এমন অভিযোগ গোড়া থেকেই ছিল। তিনটি বাস্তব সংখ্যা সূত্র থেকে এর প্রমাণ মেলে:


    1. কোভিডে মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিদার দেখা যাচ্ছে পূর্বে ঘোষিত মৃতের সংখ্যার থেকে বেশি।


    2. সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট দিনে শ্মশান এবং গোরস্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছেন যে কোভিড প্রটোকল মেনে দাহ হওয়া দেহের সংখ্যা সেই দিনের সরকারি খতিয়ানের কোভিডে মৃত্যু সংখ্যার থেকে বেশি।


    3. খবরের কাগজে ছাপা মৃত্যু সংবাদের (অবিচুয়ারি) সংখ্যা দেখা গিয়েছে কোভিডের সময় আগের বছর একই সময়ের তুলনায় বহুগুণ বেশি পরোক্ষ মৃত্যুর যে তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা দিয়েছে তা থেকে কোভিডে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মৃত্যুর খবর কতটা কম দেখানো হয়েছে তা নিরূপণ করা কিন্তু সম্ভব নয়। 

     


    শ্রবসী বসু - এর অন্যান্য লেখা


    দেশ স্বাধীনতার 75 বছরে পা দিলেও দেশের মহিলাদের একাংশ এখনও স্বাধীনতা হীনতায়ই বাঁচতে চায়।

    ভাববিলাসী জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝব আমরা? বাংলা ছড়ার সঙ্গেই বা তার কী সম্পর্ক?

    মানুষের ও দেশের সেবাকেই ধর্ম হিসেবে বরণ করেছিলেন সিএফ এন্ড্রুজ।

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা স্নাতক চন্দ্রমুখী বসুর শেষ জীবন কেটেছিল দেরাদুনে, সকলের অন্তরালে।

    উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতায় একবিংশ শতাব্দীর কাবুলের মতোই নারী শিক্ষার পথে ছিল বিপুল বাধা।

    চালের অঙ্কে জল মেশানো, লবণের হিসেব থেকে জনসংখ্যার পরিমাপ করলেন প্রশান্তচন্দ্র

    কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধন্দ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested