×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • উত্তর-কোভিড শিশু স্বাস্থ্য

    সঞ্চিতা সান্যাল | 16-06-2020

    কোভিড 19-এ সরাসরি শিশুরা আক্রান্ত হয় না ঠিকই। কিন্তু মনে রাখতে হবে শিশুরা শারীরিভাবে আক্রান্ত না হলেও সামাজিক বা মানসিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে এবং হবেও। বিশেষত আমাদের মতো দেশের দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিড-পরবর্তী সময়ে এর আশঙ্কা আরও বেশি। UNO এবং UNICEF দুই সংস্থাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের নিয়ে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা ভয়ানক উদ্বেগের কারণ। এ বিষয়ে রাষ্ট্র এবং সমাজ উভয়কেই অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। সমস্যাগুলি ঠিক কী রকমের হতে পারে, তার একটা আন্দাজ ইতিমধ্যেই করা গেছে মূলত ইবোলার পর পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলির শিশুদের সমস্যার প্রেক্ষিত বিচার করে।

     

    দারিদ্র: 

    দীর্ঘ লকডাউনের ফলে আমাদের দেশে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্ম বিশেষত প্রোডাকশন-ইউনিট, কনস্ট্রাকশন বা ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প বন্ধ থাকার জন্য অর্থনীতির সূচক নিম্নমুখী। এই মুহূর্তে দেশে বেকারত্ব ত্রিশ শতাংশ ছাড়াতে চলেছে। দারিদ্রের হার ক্রমশ বাড়ছে, আর তা দিনে দিনে বাড়বেই। রোজগারহীনতা, বেকারত্ব প্রভৃতি অধিকাংশ সংসারেই জীবনযাত্রার মান কমাবে। এতে সেইসব সংসারে শিশুদের অপুষ্টি লক্ষণীয় হারেই বৃদ্ধি পাবে। এই অপুষ্টি শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে চলেছে ভবিষ্যতে। দ্বিতীয়ত, দারিদ্রের কারণে শিশুদেরকে তাদের পরিবার উপার্জনের জন্য ব্যবহার করবে। এতে শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও বাড়বে। 

     

    শিক্ষা:

    এটি বোধহয় সবথেকে বড় সমস্যা হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার জন্য বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটা সমস্যা হল, দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেখাপড়া করার কোনও সুযোগ না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়বেই। দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য অনেকেই পড়া ছাড়বে। ফলে, লকডাউন উঠলেও স্কুলে ‘ড্রপআউট’-এর সংখ্যা বাড়বে। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে মিড ডে মিলের কাঁচা খাবার বাড়িতে পৌঁছালেও তাতে দরিদ্র পরিবারের অন্য সদস্যদের ভাগ পড়েই, তা-ই শিশুটির পরিপূর্ণ আহারেও ছেদ পড়ে। এতে তার পুষ্টির যে ঘাটতি হবে, তা তার বয়ঃবৃদ্ধিকালের বিকাশকে ব্যহত করবেই। তৃতীয়ত, পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার সময় দেখা গিয়েছিল স্কুল বন্ধ থাকাকালীন দরিদ্র পরিবারগুলি শিশুদের বিভিন্ন কাজে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এতে হঠাৎ শিশুশ্রমিকের সংখ্যা সেখানে বেড়ে যায়। চতুর্থত, আরও দু’টো ভয়ঙ্কর সমস্যা সেখানে দেখা দিয়েছিল। পড়াশোনা বন্ধ থাকাকালীন সময়, শিশুকন্যাদের উপরে যৌন নির্যাতন সাংঘাতিকভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে, ছোট ছোট ছেলেদেরকে নিয়োগ করতে থাকে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। আমাদের দেশেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে শিক্ষা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে তার ফলাফলও সাংঘাতিক হতে বাধ্য। বিশেষত, মেয়ে শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মেয়েরা সরকারি স্কুলে পড়ে। তুলনায় ছেলেরা বেসরকারি স্কুলে পড়ে বেশি। সরকারি পরিষেবা যথা মিড ডে মিল বা স্কুল থেকে ন্যাপকিন দেওয়া বন্ধ থাকায় নয় থেকে আঠারো বছর বয়সের মেয়েরা বেশি সমস্যায় পড়েছে। ভারতে মেয়েরা এমনিতেই আ্যনিমিয়ায় বেশি ভোগে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টির অভাব তাদের দুর্বল করবে বেশি। সুনামির পর দেখা গিয়েছিল নাবালিকা বিয়ে বেড়ে গিয়েছিল, এক্ষেত্রেও সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, প্যানডেমিকের প্রভাব মেয়ে শিশুদের উপর সাংঘাতিকভাবে পড়তে চলেছে বলে অনুমান করাই যায়।

     

    স্বাস্থ্য:

    আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারে শিশুদের স্বাস্থ্য এমনিতেই ভয়ানক রকমের খারাপ। তারমধ্যে এই প্যানডেমিক পিরিয়েডে ভ্যাক্সিনেশন বন্ধ থাকার কারণে তাদের নানাবিধ রোগের সম্ভাবনা বাড়বে। ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের ধারাবাহিকতা নষ্ট হওয়ার কারণেও শিশুদের স্বাস্থ্যে তার খারাপ প্রভাব পড়বে। এমনিতেই নিজেদের মধ্যে দীর্ঘদিন খেলাধুলা ও স্বাভাবিক মেলামেশা বন্ধ থাকার জন্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এই রকম চলতে থাকলে শিশুদের মধ্যে হিংসার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।

     

     এই পরিস্থিতে  UNICEF কিছু পরামর্শ দিয়েছে। তারা এটির নামকরণ করেছে Global Agenda for Action. সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি আবেদন তারা রেখেছেন।

     

    1) শিশুদের স্বাস্থ্যবান ও নিরাপদে রাখতে হবে।

    2) বিশেষ ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

    3) শিশুদের শিক্ষা প্রক্রিয়া বন্ধ করলে চলবে না।

    4) শিশুদের পরিবারগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দান করতে হবে যাতে তারা তাদের সন্তানদের উপযুক্ত যত্ন নিতে পারে।

    5) শিশুদের সব ধরনের হিংসা, নির্যাতন ও শোষণ থেকে রক্ষা করতে হবে।

    6) উদ্বাস্তু ও পরিযায়ী শিশুদের বিশেষ ভাবে সহায়তা দিতে হবে।

     

    প্রতিটি আবেদনই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সরকারের উচিত এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে আলোকপাত করা। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ এই ভয়ানক বিপর্যয়ে তাদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনেক বেশি দায়বদ্ধ থাকতে হবে আমাদের শিশুদের আগামী দিনগুলিকে সুন্দর করার প্রশ্নে।

    ..........................................

    লেখিকা আশুতোষ কলেজের অধ্যাপক


    সঞ্চিতা সান্যাল - এর অন্যান্য লেখা


    কোভিড 19-এ শিশুরা শারীরিভাবে আক্রান্ত না হলেও সামাজিক বা মানসিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে এবং হবেও।

    উত্তর-কোভিড শিশু স্বাস্থ্য-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested