×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • করোনা ভাইরাস আর নিউটন

    পারঙ্গমা সেন | 14-03-2020

    করোনা ভাইরাস আর নিউটন, প্রতীকী ছবি

    প্রায় সাতশো বছর আগে পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপ এই রকম আতঙ্কের কবলে পড়েছিল। তখন বিমানযাত্রাও ছিল না, হোয়াটসঅ্যাপও নয়। তাই চতুর্দশ শতকের ভয়াবহ ‘ব্ল্যাক ডেথ’ (black death)-এ বহু মানুষের প্রাণহানি হলেও ইউরোপের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে তার প্রভাব পৌঁছতে সময় লেগেছিল চার বছর।ইউরোপের ওই মহামারীতে সেই মহাদেশের জনসংখ্যার অন্তত ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয়। সংখ্যাটা ১০ থেকে ১২ কোটি। ইউরোপের জনমানসে এবং সংস্কৃতিতে ওই মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ প্রায় ২০০বছর পরে উইলিয়াম শেকসপিয়ারের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এ তার উল্লেখ।

     

    আজকের পৃথিবীটা সেই তুলনায় অনেক ছোট হয়ে এসেছে। এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশে মানুষের অবাধ যাতায়াত। সংক্রামক রোগও তাই সহজেই এক দেশ থেকে আর এক দেশে পৌঁছে যায়। Novel Corona Virus ঘটিত রোগের প্রকোপে তাই অল্প দিনেই প্রায় ১২০টি দেশ। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এটিকে বিশ্বব্যাপী মহামারী (pandemic) বলে স্বীকারও করে নিয়েছে।

     

    কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধক নেই, তাই এই রোগের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র সামাজিক জীবন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত হাত ধোওয়া ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা কী করছেন? রোগবিশেষজ্ঞরা অবশ্যই নজর রাখছেন ভাইরাসটির প্রতিটি গতিপ্রকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের উপর আর এক ধরনের গবেষণা হতে পারে পরিসংখ্যান বিষয়ক। কীভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে? কতদূর ছড়াচ্ছে? করোনা ভাইরাস সংক্রমণ একবারের বেশি হয় না। এই ধরনের রোগে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বদলাচ্ছে তার একটা রেখাচিত্র আঁকা যেতে পারে। মানে এক একটা দিন ধরে সেই দিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাটা গ্রাফে আঁকলে সেটাকে একটা ঘণ্টার মত (bell shaped) দেখতে হয়। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা প্রথমে ধীরে ধীরে বাড়ে, পরে দ্রুত বেগে বাড়তে বাড়তে একটা সর্বোচ্চ মানে পৌঁছয় এবং তারপর তা একইরকম ভাবে প্রথমে দ্রুত, পরে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চীন থেকে এই রোগের শুরু। সেখানে সামাজিক জীবন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে এখন রোগীর দৈনিক সংখ্যা ক্রমশ কমার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। হংকং এবং দক্ষিণ কোরিয়াও রোগ নিয়ন্ত্রণে সফল।  অপরদিকে বিশ্বের আর যে সব দেশে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে সেখানে এটি বাড়তির দিকে। এটাই আশঙ্কার বিষয়। তবে একটাই ভরসা: যে গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে (গণিতের ভাষায় exponential ধরনে, মানে আজ দুই, তো কাল দুই দুগুণে চার, পরশু চার দুগুণে আট হারে) মৃত্যুর হার সেই তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম।

     

    এ কথা আজ সকলেরই জানা যে চিনের উহান শহর থেকে এই রোগের উৎপত্তি। ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে যেমন epicenter বা উৎসস্থল থাকে, তেমনই উহানকে বলা যেতে পারে Novel Corona Virus-এর উৎসস্থল। আমরা (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের পিএইচডি ছাত্রী কথাকলি বিশ্বাস আর আমি) চেষ্টা করলাম দেখতে যে উহান থেকে ‘d’ দূরত্বে থাকা কোনও স্থানে মোট রোগাক্রান্তের সংখ্যা কত। দেখা গেল এই সংখ্যাটি মোটামুটি 1/d^2 অনুপাতে (বর্গের ব্যস্তানুপাতে) কমে। অর্থাৎ যখন উহানে এক লক্ষ (১০০০০০) মানুষ অসুস্থ তখন সেইখান থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কোনও জায়গায় মোট রোগীর সংখ্যা হচ্ছে কম-বেশি দশ। এবার ইতালির পরিসংখ্যান নিয়ে দেখা গেল, কী আশ্চর্য! সেখানেও হিসেবটা ওরকম 1/d^2 নিয়মে যাচ্ছে। ইতালির ক্ষেত্রে এপিসেন্টার ধরা হল বেরগামো শহর, রোগাক্রান্তের সংখ্যা সেখানেই সর্বাধিক।

     

    এই দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও কিছুর প্রভাব তার বর্গের ব্যস্তানুপাতে (মানে একটা যত বাড়বে আরেকটা তত কমবে, সেভাবে) কমে যাওয়াই হল এই 1/d^2 নিয়মটি। পদার্থবিজ্ঞানে এই নিয়মটি প্রায়শই দেখা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত অবশ্যই gravitational force বা মহাকর্ষ বল বিজ্ঞানে এটি আইজ্যাক নিউটনের বিরাট অবদান। এখন প্রশ্ন হল করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এই 1/d^2 নিয়ম কি নিছকই সমাপতন? এই বিষয়ে আরও ভাবনাচিন্তার দরকার আছে।

     


    লেখক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক


    মূল বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্রটি পড়তে হলে: https://arxiv.org/abs/2003.03149

     

     


    পারঙ্গমা সেন - এর অন্যান্য লেখা


    করোনার কোনও প্রতিষেধক নেই, এই রোগের বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র সামাজিক জীবন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা।

    করোনা ভাইরাস আর নিউটন-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested