নতুন বছরের গোড়ায় এসে একটা ‘নিউ’ জীবন চালু করার কথা ভাবা যাক। ঘাড় মটকে এলিয়ে থাকা ইহকালকে এক ঝটকায় তুলে ঝাঁকিয়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে। নিজের বেঁচে থাকার নিয়মে হালকা বদল আনা যেতেই পারে। যদিও 2020-এর নববর্ষ অন্য বছরের থেকে আলাদা। কিন্তু এই করোনা আতঙ্ক কাটলে, লকডাউন উঠলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ফিরতে এই বদলগুলোর কথা ভেবে দেখতেই পারেন। কিছু ‘না’ অথবা ‘হ্যাঁ’-এর ঠিকঠাক প্লেসমেন্ট জীবনটা জমিয়ে দিতে পারে, ‘রিনিউ’ করে দিতে পারে। সেই বদলের একটা তালিকা করার চেষ্টা করেছি।
কী খাবেন: ল্যাদ
মনে রাখবেন, বিছানা আপনার চিরসঙ্গী। বিশ্বস্ত সহচর। পৃথিবীতে যখন এসেছিলেন, নার্স আপনাকে বিছানায় নামিয়ে রেখেছিলেন। পৃথিবী থেকে যখন যাবেন, সেই বিছানাতে শুয়েই যেতে হবে। অর্থাৎ কাহিনির ‘শুরুয়াত’ এবং ‘দি এন্ড’ বিছানাতেই লেখা আছে। বেকার কেন মাঝের জীবনটা বিছানার বাইরে কাটাবেন? জম্পেশ নিদ্রা দিন, মাঝে মাঝে আড়মোড়া ভেঙে জীবনকে ধন্য করুন। কখনও কখনও, for a change, বিছানার পাশে রাখা alarm clock-টার দিকে তাকিয়ে চোখ মারতে পারেন, কিন্তু সময়টা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামানোর কোনও দরকার নেই।
কী খাবেন না: কেস
অন্যকে খাওয়াতে পারলে খাওয়ান, কিন্তু নিজে খাবেন না। এটা সাংঘাতিক একটা জিনিস, লাইফ পুরো ‘হেল’ করে দেবে। ডার্টি পিকচার থেকে পার্টি লেকচার, কেস খাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় সর্বত্র। কথাবলা-হাঁটাচলা-খাওয়াদাওয়া-আবহাওয়া-প্রেমপিরীতি-অর্থনীতি গোটা ব্যাপারটা সামলে চলুন। এমনিতেই জীবন খুব ভায়োলেন্ট। বেকার কেস খেয়ে আর ভায়োলেন্স বাড়াবেন না। বরং চুপচাপ আড়ালে থাকুন, সুযোগ বুঝে নিজের পাওনা কেস অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সরে পড়ুন। মজাটাই আলাদা!
কী নেবেন: ভাও
প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি আপনার বাড়িতে কাকভোরে খবরের কাগজ দিতে আসেন, বাড়ির রাঁধুনির নাম প্যামেলা অ্যান্ডারসন, বিকেলে ছেলেকে অর্থনীতি পড়াতে আসেন অমর্ত্য সেন, দাবা খেলতে গিয়ে আপনি বলে বলে গ্যারি ক্যাসপারোভকে বোকা বানান, রাতে ঘুম না হলে হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বাঁশি হাতে আপনাকে ঘুম পাড়ান। তিনদিন এই গোটা ব্যাপারটা ভাবুন, চতুর্থ দিন থেকে এটা বিশ্বাস করতে শুরু করুন এবং পঞ্চম দিন থেকে মনে বল এবং বিশ্বাস নিয়ে রাস্তায় নামুন। ‘ভাও’ খাওয়ার কোর্স কমপ্লিট। এবার বাকিদের ভিরমি খাওয়ার পালা।
কী নেবেন না: চাপ
কবি বলে গেছেন, ‘জীবনে কোনও কিছুই ফেলা যায় না।’ গিটারের কর্ড ভুল হচ্ছে? ফাইনাল কপি লিখতে বসে নিহতের সংখ্যা 32-এর বদলে 320 লিখে দিয়েছেন? চাপ নেবেন না। মূলমন্ত্র: ‘Cool’ থাকুন। চাপ নিলেই গন্ডগোল।
কী দেবেন: অন্যের পাকা ধানে মই
অন্যের পাকা ধানে মই দিয়ে দেখুন। হেব্বি লাগবে! আশ্চর্য পরিতৃপ্তি। প্রথমেই এমন কাউকে খুঁজে বের করুন যিনি আপনার কোনও দিন কোনও ক্ষতি করেননি। নরেন্দ্র মোদী বা ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে চলবে না, কারণ এঁরা ধান পাকলে বাড়ির বাইরে ফেলে রাখেন না। সেরা ক্যান্ডিডেট খুঁজে বের করুন। সুযোগ বুঝে তাঁর দু-মুঠো ধান পকেটে পুরে মই নিয়ে চুপচাপ বসে থাকুন।
কী দেবেন না: পাত্তা
পৃথিবী আজ ঘুরছে, কাল লক-আউট হয়ে যেতে পারে (আদতে গোটা বিশ্বের মানুষের এখন যা অবস্থা)। আপনি আজ আছেন, কাল ফ্রেমবন্দি হতে পারেন। তাই ‘পাত্তা’-এর মতো দামি জিনিস কখনও যাকে-তাকে, কোনও কিছুকে দিয়ে দেবেন না। মনে করুন আপনার স্ট্রাগলিং পিরিয়ডটা, যখন আপনাকে চার আনার পাত্তাও কেউ দেয়নি। তাই আপনিও সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চুপচাপ বসে থাকুন।
কী বানাবেন: ছবি
মনে করে দেখুন তো, শেষ কবে কার সঙ্গে দেখা হয়েছে যিনি ছবি বানাচ্ছেন না? সাহিত্যের আগামাথা না বোঝা মেয়েটা থেকে সেজ-কাকিমার বোকাসোকা ছেলেটা, ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনি ছাড়া সকলেই ছবি বানাচ্ছেন, ছবি তুলছেন। এই বছরে হাতা গুটিয়ে আপনিও ছবিটা বানিয়ে ফেলুন। স্ক্রিপ্ট-রাইটার, কম্পোজার, এডিটর, ডিওপি পাওয়া কঠিন কারণ, ওই যে, সকলেই ছবি বানাচ্ছেন। ফলে সবকিছু নিজেকেই করতে হবে। পাড়ায় ঘুরে প্রোমোটারকে প্রোডিউসর হতে রাজি করিয়ে ফেলুন, ছবি হিট হবেই।
কী বানাবেন না: বোকা
ছবি যদি বানান, আলাদা করে বোকা বানানোর আর দরকার নেই।
কী দেখবেন: সিরিয়াল
রাত থেকে ভালো করে খেতে পারছেন না? ঘুম আসছে না? সকালে উঠেই মেজাজ খারাপ? কীসের সিম্পটম বলুন তো? তুলিকা কি নিজের মায়ের কাছে ফিরবে? দেখতে হলে চোখ রাখুন ঠিক রাত আটটায়, দেখুন ‘সুখের চাবিকাঠি’। তারপর পরের চ্যানেলেই ন’টা থেকে ‘ভালোবাসার ডাইনি’। সেটা শেষ হলে ন্যাশনাল চ্যানেলে, ‘তেরি মেরি হেটস্টোরি’। সবকিছু গিলতে হবে। শুধু প্রার্থনা করুন কোনও কারণে দুটো সিরিয়ালের টাইম যেন মার্জ না হয়ে যায়। তাহলে তো আর হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদা ছাড়া উপায় থাকবে না।
কী করবেন: পোস্ট
পোস্ট 1- একটা আধভরা বালতির সামনে হাতে মগ ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে দিন আপনার চোখের মণি খোকাকে।
ক্যাপশন: ‘Our little shonamoni, taking bath.’
987 লাইকস আপনার বাঁধা।
পোস্ট 2- দু’জন বাইক আরোহী রাস্তার ধারে পড়ে আছে। বাইকটা দুমড়ে-মুচড়ে মুড়ির টিন হয়ে গেছে, হেলমেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্যাপশন: ‘This took place in front of me. How sad!’
নিচে 61 লাইকস।
উপরেরগুলো ঠিকঠাক করলে আপনি ফেমাস হবেনই হবেন। বিবেক-শালীনতা পরের ব্যাপার। জীবনকে ‘লাইক’ দিয়ে ধন্য করুন, তবে দেখবেন যেন সেই চক্করে ‘ট্রোলড’ না হয়ে যান।
সবশেষে কী পরবেন না: মুখোশ
এমনিই তো ওটা পরে আছেন, আর নতুন করে কী দরকার!
অতএব ল্যাদ খান, কেস নয়। ভাও নিন, চাপ নয়।