লুকিয়ে স্কুল পালানোর দিন শেষ। আজকের এই বাংলায় এখন লুকিয়ে স্কুল যেতে হচ্ছে। পাছে সরকার জেনে ফেলে লেখাপড়া চলছে, তাই এই লুকোচুরি!
কলকাতার একেবারেই লাগোয়া শহরতলির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে শুক্রবার সকালে শোনা ব্যাপারটা। সরকারি নির্দেশে স্কুল বন্ধ করতেই হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রীদের থিওরি ক্লাস যদি বা নমো নমো করে হচ্ছে অনলাইনে, প্র্যাক্টিক্যালের কী হবে? সেটা অনলাইনে সম্ভব নয়। প্রাইভেট টিউশন সেন্টারে প্র্যাক্টিক্যালে বিস্তর পয়সা লাগে, সাধারণ ঘরের মেয়েদের তা আয়ত্তের বাইরে। অথচ মেয়েদের প্রবল আগ্রহ শেখার, শিক্ষকরাও প্রস্তুত। সর্বসম্মতিক্রমে তাই বিকল্প ব্যবস্থা: ছাত্রীরা স্কুলের পোশাক পরে আসবে না, স্কুলের ব্যাগ আনবে না, আর দলবদ্ধভাবে স্কুলে ঢুকবে না। মধ্যযুগে যেই রকম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নজর এড়াতে লুকিয়ে বিজ্ঞান চর্চা করতে হত, প্রায় সেই রকমই রাষ্ট্রের (মানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের) নজর এড়িয়ে গোপনে লেখাপড়া করতে হচ্ছে এখন এই রাজ্যে!
বুধবার 27 এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাপপ্রবাহের জন্য সারা রাজ্যে তার চার দিন পর সোমবার 2 মে থেকে গরমের ছুটি ঘোষণা করলেন। ছাত্র বা অভিভাবককুল তো দূরস্থান, কোনও শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গেও কোনও আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়নি। বুধবার 27 এপ্রিল ও তার আগের দিন কলকাতার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল 38 ও 31ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে 5ডিগ্রি বেশি হলে সেটাকে আবহবিজ্ঞানে তাপপ্রবাহ বলে। তখনও সেই অবস্থা ছিল না। তবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেশি হলে এবং একই সঙ্গে আর্দ্রতাও বেশি থাকলে সারা দিনই মানুষ গরমে তীব্র কষ্ট পায়। সেই তীব্র কষ্ট থেকে ছাত্রদের বাঁচাতে সেই সময়ে ছুটি অবাঞ্ছিত ছিল না।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বুধবারের ঘোষণায় বৃহস্পতিবার থেকে অল্প কয়েক দিনের ছুটির কথা কেন বলা হল না? 45 দিনের টানা ছুটি কেন? বিশেষ করে রবিবার 1 বা সোমবার 2 মে থেকেই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার তুলনামূলক উন্নতির পূর্বাভাস যখন ছিলই।
কার্যক্ষেত্রে শনিবার 30 এপ্রিলই সন্ধ্যায় কলকাতা ও সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকায় কালবৈশাখীর পর দীর্ঘ বৃষ্টি হল। পরের তিন দিনও আবহাওয়া একই রকম রইল, বৈশাখের বাংলার নিরিখে যাকে মনোরম আবহাওয়া বলা যায়। শুক্রবার 6 মে থেকে শুরু করে পরবর্তী 10 দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে কলকাতার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ 31 থেকে 35 এবং সর্বনিম্ন 26 থেকে 28ডিগ্রির মধ্যে থাকবে, যা স্বাভাবিকের মধ্যেই, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার চেয়ে বরং কমই। এই 10 দিনের এক দিন বাদে প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে 40 থেকে 80 শতাংশ। লক্ষণীয়, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের সপ্তাহের থেকে প্রায় 5ডিগ্রি কমেছে। সুতরাং গরমের অস্বস্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।
খুব যুক্তিসঙ্গত ভাবেই তাই কিছু বেসরকারি স্কুল, যারা সরকারি অর্থের উপর নির্ভরশীল নয়, তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্লাস শুরু করেছিল এই সপ্তাহে।
তবে লেখাপড়ার প্রয়োজন নিশ্চয়ই রাজ্যের প্রধান শাসকের মুখনিঃসৃত বাণীর চেয়ে বড় হতে পারে না!
আরও পড়ুন: আল্লাহ্ আর্মি আর আমেরিকা সকলেই বিরূপ ইমরানের প্রতি?
তাই কলকাতার বড় কয়েকটি স্কুল আবহাওয়ার উন্নতি দেখে নিজেদের মতো খোলা রেখেছে – এই খবর জানাজানি হতেই শিক্ষা দফতর লেখাপড়া বন্ধ করতে উদ্যোগী হল। ডিআই (ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস) অফিস থেকে স্কুলে স্কুলে ফোন করে বলা হয়, কেন স্কুল খোলা রাখা হয়েছে? তাতেও কাজ না হওয়ায় স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে বলা হয়, স্কুল বন্ধ করতেই হবে। এর মধ্যে এমন স্কুলও আছে যাদের ক্লাসঘর সবই বাতানুকূল, গরমে যা বন্ধ রাখার কোনও কারণ নেই। কলকাতার বড় স্কুলগুলো এভাবেই বাধ্য হয়েছে আবার ক্লাস বন্ধ করে অনলাইনে ফিরে যেতে।
আর প্রথমে যে সরকার পোষিত স্কুলের কথা বলা হয়েছে তারা ওই রকম গোপনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে!
এই প্রতিবেদনে সমস্ত স্কুলের পরিচয়ই গোপন রাখা হল। গোপনেই না হয় একটু লেখাপড়া চলুক!
স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে রাজ্যে নিয়োগের ব্যাপারে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে
যে কোনও স্থাপত্য বা এমনকি নান্দনিক নির্মাণকে কতটা দূর থেকে দেখতে হবে তার একটা আন্দাজ শিল্পীর থাকে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে বিরোধীদের যশবন্ত সিনহা কোনও প্রার্থীই নন
ফেসবুক পোস্টে তপতী দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন যে হরির কোনও ক্রনিক অসুখ ছিল না।
সদ্যপ্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আবেগের সুনামিতে একবারও আমাদের মনে পড়ল না অন্য কৃতীদের।
অবশেষে নিষ্পত্তি অযোধ্যায় বিতর্কিত জমি মামলার। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মিলল সমাধান সূত্র।