×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • অপরিকল্পিত লকডাউনের ফল অস্থায়ী: বিজ্ঞানীরা আগেই বলেছিলেন

    নীতিন শেঠি এবং কুমার সম্ভব শ্রীবাস্তব | 23-04-2020

    প্রতীকী ছবি

    মোদ্দা কথা হল, বিজ্ঞানীদের উপদেশ অনুযায়ী COVID-19-এর মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনও করে উঠতে পারেনি সরকার যেই ব্যবস্থার জন্য সময় বের করাই এই লকডাউনের আসল উদ্দেশ্য।

     

    24 মার্চ 2020 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম লকডাউন শুরু করার প্রায় এক সপ্তাহ পর, ভারতের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা সরকারকে জানায় যে COVID-19 মহামারীর উপর এই শাটডাউনের প্রভাব অতি সামান্য এবং অস্থায়ী। এর ফলে সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যত সংখ্যক সংক্রমণ হবে তার কেবলমাত্র 20-25 শতাংশই আটকানো যাবে। সরকারকে জানানো হয় যে, এই প্রভাব নেহাতই অস্থায়ী যদি না সরকার এই মহামারীকে দমানোর জন্য অন্যান্য বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করে

     

    চিকিৎসক, এপিডেমিওলজিস্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি সরকারের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকাল রিসার্চকে (ICMR) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি হয় এক রিপোর্ট, যা এ যাবৎ প্রকাশ্যে আনা হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারী ও যাবৎ (22 এপ্রিল, 2020) প্রাণ নিয়েছে 652 জনের, মোট আক্রান্ত 19818 জন।

     

    আরও পড়ুন: নিজেদের বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট উপেক্ষা করে সরকার এক মাস হাত গুটিয়ে বসেছিল

     

    এই মহামারী বিষয়ে সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন, বিনোদ কে পাল ICMR-এর মূল্যায়নের ভিত্তিতে সরকারের কাছে এক প্রেসেন্টেশনে বলেন, আগামী দিনে সাধারণ সংক্রমণ আরও প্রকট হবে সেই প্রেসেন্টেশন খতিয়ে দেখেছে Article14.

     

    নীতি আয়োগের একজন সদস্য পাল সাধারণ সংক্রমণ বলে যাকে সরকারের কাছে উল্লেখ করেছেন, জনগণের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে সেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াটাকেই সরকার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতকে নস্যাৎ করে দিয়ে (এখানে এবং এখানে) সরকার কিন্তু তা অস্বীকার করছে।

     

    প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বলেছেন, এই লকডাউনের ফলে দেশের, বিশেষত গরিব মানুষের, আর্থিক দুরবস্থা”, “যন্ত্রণা এবং দুর্ভোগ বেড়েছে কিন্তু পালের প্রেসেন্টেশন অনুযায়ী, এই লকডাউনই কোনও একদিনের সংক্রমণের সর্বোচ্চ মাত্রাকে 40% পর্যন্ত কমাতে পারে মাত্র, যাতে সরকার মহামারীর মোকাবিলায় যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তা করার সময় পায়। এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় ভাগে দেখানো হবে যে সরকার কিন্তু সেই সমস্ত ব্যবস্থা বহুলাংশে উপেক্ষা করেছে।

     

    এই ব্যবস্থাগুলো কী কী? বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করা এবং যাঁদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তাঁদের জন্য আলাদা কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করাবিনোদ পাল জানাচ্ছেন, এই ব্যবস্থাগুলো নিলে সংক্রমণের চূড়ান্ত সময়ে এবং মহামারী ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ার সময়ে সংক্রমণের পরিমাণ কমত।

     

    এই ব্যবস্থাগুলোর প্রস্তুতি নেওয়াই এই লকডাউনের সেরা উপযোগিতা হবে, প্রেসেন্টেশন চলাকালীন জানান পাল। তিনি বলেন, লকডাউন শেষ হওয়ার আগে জাতীয় এবং জেলাভিত্তিক সংখ্যার ফলাফলদেওয়ার জন্য, সরকার সম্মতি দেওয়ার পর থেকে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে, পরিকল্পনা এবং তথ্য সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে

     

    আরও পড়ুন: নিজেদের বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট উপেক্ষা করে সরকার এক মাস হাত গুটিয়ে বসেছিল

     

    গোটা দেশের বিশাল সংখ্যক জনগণের জ্বর এবং কাশি পরীক্ষা করার জন্য, পালের প্রেসেন্টেশন অনুযায়ী সরকারকে নিম্নলিখিত প্রয়োজন মেটাতে হবে:

    • গরিবদের দরজায় দরজায় গিয়ে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে।
    • প্রতিটা জেলায় COVID-19-এর উপস্থিতি পরীক্ষা করতে হবে এবং সংক্রমণের ধারা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
    • দ্রুত রিপোর্টিং করতে হবে যাতে শনাক্ত করে সঙ্গে সঙ্গে সংক্রামিত স্থানগুলিকে কোয়ারান্টাইন করা যায়।
    • যাঁরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেমন বস্তিতে বসবাস করেন তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় কোয়ারান্টাইন ব্যবস্থা এবং বাকিদের বাড়িতে গৃহবন্দি থাকতে হবে।
    • সংক্রমণের মাত্রা শিখরে পৌঁছলে খুব দ্রুত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট এবং হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

     

    লকডাউন ছাড়াও COVID-19-এর জন্য যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, এপ্রিলের গোড়ার দিকে তা করতে গিয়ে, ভেন্টিলেটর এবং হাসাপাতালে বেডের যে প্রয়োজনীয়তার আন্দাজ পাল দেন, তা স্পষ্ট করে যে ভারত এই যুদ্ধে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়

     

    পাল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ক্রমবর্ধমানসংখ্যক সংক্রমণের সঙ্গে মোকাবিলা করতে নতুন মেডিকাল সুবিধা গড়ে তুলতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তিনি হিসেব কষে দেখান যে যদি, কোনও একটি স্থানে দিনে 500 জন সংক্রামিত হন, তাহলে ওই একটি স্থানের জন্য সরকারের 150 ভেন্টিলেটর, 300 ইনটেনসিভ কেয়ার বেড এবং 1,200 থেক 6,000 বেড প্রয়োজন।
     

    তবুও, পালের এই প্রেসেন্টেশনটি একটি আংশিক চিত্র মাত্র, কারণ এটি ICMR-এর গবেষণা থেকে তৈরি করা তাদের নিজস্ব একটি প্রেসেন্টেশনের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছিল। কাউন্সিলের গবেষণা এক সাংঘাতিক অবস্থার পূর্বাভাস দিয়েছে।

     

    বিপুল সংখ্যক সংক্রমণ

     

    সময় এবং স্থানের ব্যবধানের ফলে বিপুল পরিমাণে সাধারণ এবং বড় আকারের সংক্রমণ ঘটা স্বাভাবিক।

     

    যে ড্রাফ্ট প্রেসেন্টেশন ICMR তৈরি করেছিল তাতে তারা এই পূর্বাভাস স্পষ্ট উল্লেখ করেছিল যা পরবর্তীকালে পাল সরকারকে উপদেশ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেন। ICMR-এর এই ড্রাফ্ট প্রেসেন্টেশন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই পালের কাছে পাঠানো হয়।

     

    ICMR-এর বিশ্লেষণ বলছে, লকডাউনের ফলে COVID-19 সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে সংক্রমণের মাত্রা 40 শতাংশ হ্রাস পাবে কেবলমাত্র খাতায়-কলমে। বাস্তবে, লকডাউনের ফলে সংক্রমণের কেস মাত্র 20-25শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে, মত ICMR বিশেষজ্ঞদের।


    লকডাউনের প্রভাব সাময়িক মাত্র (আই সি এম আর-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকারের কাছে পেশ করা,
    দিল্লির উদাহরণ)। অনুভূমিক অক্ষে দিনের সংখ্যা আর উল্লম্ব অক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা।
    দেখা যাচ্ছে লকডাউনে সংক্রমণ কমলেও নিশ্চিহ্ন হবে না।

     

    সরকারের তরফে একুশ দিনব্যাপী লকডাউনের যে সাফল্যের কথা বলা হয়েছে, যা এখন 3 মে 2020 অবধি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার একেবারে বিপরীত কথা বলছে এই বিশ্লেষণগুলি। 14 এপ্রিল, মোদী বলেন: “যখন আমাদের হাতে মাত্র 550টি করোনা কেস ছিল তখনই একুশ দিনব্যাপী সম্পূর্ণ লকডাউনের মত বড় পদক্ষেপ নেয় ভারত। ভারত এই সমস্যা বড় আকার ধারণ করা অবধি অপেক্ষা করেনি। বরং সমস্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা সেটা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছি

     

    আরও পড়ুন: নিজেদের বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট উপেক্ষা করে সরকার এক মাস হাত গুটিয়ে বসেছিল

     

    এই প্রতিবেদনের জন্য বিনোদ পাল, স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং ICMR-কে বিস্তারিত প্রশ্নাবলী পাঠায় Article14, এবং বারবার মনে করিয়ে দেয় এবং মেসেজ করে উত্তর চাওয়া হয়। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। যখনই তাদের তরফ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যাবে, এই স্টোরিটা সেই অনুযায়ী আপডেট করা হবে।

     

    11 এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক মিডিয়ার কাছে একটা গ্রাফ প্রকাশ করে যার দ্বারা লকডাউনের সাফল্য প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করে যে, লকডাউন এবং আবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে 10 এপ্রিল অবধি COVID-19 কেস 208,000 হওয়ার বদলে 7,477-এ আটকে গেছে। অথবা বলা যেতে পারে, যা হওয়ার কথা ছিল তার মাত্র 3.60% হয়েছে।


    কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত গ্রাফ, যাতে দাবি করা হচ্ছে লকডাউনের সাফল্য।
    এই তথ্যের উৎস কী, সরকার জানায়নি। কম পরীক্ষার ফলেই কী কম কেস ধরা পড়ছে, এই প্রশ্নেরও উত্তর নেই।

     

    এই গ্রাফের তথ্যগুলি কোথা থেকে এল? তার কোনও সূত্র সরকার দেয়নি। এই গ্রাফ দেখিয়ে সাফল্য দাবি করার সময়ে এটাও বলা হয়নি যে বিশেষজ্ঞদের মতে COVID-19 পরীক্ষা জনসংখ্যার কত শতাংশের মধ্যে হচ্ছে সেই বিচারে ভারতের স্থান দুনিয়ার মধ্যে একেবারে নীচের সারিতে

     

    সরকারের তরফ থেকে যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে তার তেমন মূল্য নেই কারণ আমাদের দেশে পরীক্ষার হার খুবই কম ছিল এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত, যে সকল রুগীর কোনও কন্ট্যাক্ট হিস্ট্রি পাওয়া যায়নি অথচ উপসর্গ ছিল, তাদের টেস্টিং করাই হয়নি, বলছেন টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশাল সাইন্সেসের স্কুল অফ হেল্থ সিস্টেম স্টাডিজের প্রাক্তন ডিন টি সুন্দরারামন। তিনি ন্যাশনাল হেল্থ সিস্টেমস রিসোর্স সেন্টারের প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরও।

     

    ঠিক তাই, দেরিতে হলেও যেই সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা উন্নত করতে শুরু করল, তখনই দেশের মহানগরগুলিতে হটস্পট এবং কনটেনমেন্ট জোন বাড়তে শুরু করল। যেমন, দিল্লি এবং মুম্বই, যা একসঙ্গে গোটা দেশের মোট সংক্রমণের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী

     

    আরও পড়ুন: নিজেদের বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট উপেক্ষা করে সরকার এক মাস হাত গুটিয়ে বসেছিল

     

    লকডাউন শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে, 31 মার্চে, সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে দাবি করে: “সম্পূর্ণভাবে সোশাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখার জন্য এবং ভাইরাস সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা চিকিৎসাগতভাবে কাঙ্ক্ষিত এবং যুক্তিযুক্ত মনে করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে এবং সমস্ত সম্ভাব্য বিষয় ও বিকল্প বিশদে বিবেচনা করে নেওয়া হয়।

     

    সম্ভাব্য সংক্রামিত মানুষদের সীমিত সংখ্যক পরীক্ষা করে, সম্ভাব্য হটস্পটগুলিতে সর্বনিম্নমানের নজরদারি করে, সরকার এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে ব্যাধি ছড়িয়েছে কিছু সীমিত স্থানীয় সংক্রমণ-এর মাধ্যমে, এবং এটা এখনও খুবই কম পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে সমস্ত সংক্রামিত রুগীদের শণাক্ত করা সম্ভব এবং তাঁদের সংক্রমণের সূত্র মূলত বিদেশ।

     

    ICMR কী সুপারিশ করেছিল?

     

    অন্য কোনও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে, লকডাউন তুলে নিলে পুনরায় সংক্রমণের রাস্তা পরিষ্কার হবে, ICMR-এর অভ্যন্তরীণ প্রেসেন্টেশনের ড্রাফ্টে বলা আছে। এই অন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে, গোটা দেশ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য, প্রতিটা বাড়িতে দ্বি-সাপ্তাহিক নজরদারি, এবং যাদের মধ্যে COVID-19 জাতীয় উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তাদের সকলকে কোয়ারান্টাইনে রাখা।

     

    দিল্লির সংক্রমণের তথ্যের উপর বিচার করে, গোটা দেশে COVID-19 মোকাবিলায় লকডাউনের প্রভাব জানতে চাওয়া হলে, ICMR বলে টানা একুশ দিন লকডাউন চললেও 13 লক্ষ মানুষ সংক্রামিত হতে পারেন।

     

    ICMR-এর মতে, লকডাউনের ফলে সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে সময় নেবে মাত্র। লকডাউন না হলে, দৈনিক সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয় প্রথম রিপোর্টেড কেসের 100-200 দিনের মধ্যে; লকডাউন চলার ফলে, সেই চূড়ান্ত সীমা আসতে 150-200 দিন লাগবেগোটা দেশে সংক্রমণের সংখ্যা কিন্তু শেষপর্যন্ত একই হবে, লকডাউনের কোনও প্রভাব তার উপর পড়বে না

     

    মোদী 14 এপ্রিল লকডাউনের সীমা বাড়িয়ে দেন। লকডাউনের দীর্ঘায়িত সময়সীমার ঢেউ সংক্রমণের চূড়ায় খুবই দুর্বল প্রভাব ফেলবে এবং এটা বাস্তবায়িত করা চ্যালেঞ্জিং, ICMR-এর বিশ্লেষণের মতে।

     

    এখনও অবধি সংক্রমণ রোখার যে রাস্তা আমাদের জানা আছে তা হল, দ্রুত কোয়ারান্টাইনে পাঠানো, বলছে বিশ্লেষণ, কেবলমাত্র যাঁরা COVID-19 পজিটিভ তাঁরাই নন, যাঁদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে সকলের ক্ষেত্রেই কোয়ারান্টাইন প্রযোজ্য – যা সরকারও বলছে

     

    আরও পড়ুন: নিজেদের বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট উপেক্ষা করে সরকার এক মাস হাত গুটিয়ে বসেছিল

     

    ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ICMR-এর বিজ্ঞানীরা সুপারিশ করেছেন সামাজিক পরীক্ষা এবং পৃথকীকরণ কৌশল তাঁরা বলেছেন, উপসর্গ দেখা যাওয়ার 48 ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেক দ্বিতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং উপসর্গ দেখা যাওয়ার চার দিনের মধ্যেই প্রত্যেক চার জনের মধ্যে তিনজনের কোয়ারান্টাইন বা পৃথকীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

     

    এতদিন অবধি সরকার শুধু তাঁদেরই কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করেছে যাঁদের টেস্টে COVID-19 পজিটিভ এসেছে বা যাঁরা নিজেদের দেহে উপসর্গ পেয়ে নিজেরাই হাসপাতালে গেছেন। খুব বড় আকারে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ, এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাঁদের মধ্যে উপসর্গ পাওয়া যাবে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে, এমনটাই পরামর্শ দিচ্ছেন ICMR-এর বিজ্ঞানীরা

     

    অন্যভাবে বললে, তাঁদের বক্তব্য, সরকার থেকে 24 মার্চ দাবি করা হলেও, লকডাউন শৃঙ্খল ভাঙা-র কোনও উপায় নয়

     

    ICMR-এর বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে বিনোদ পালের পরামর্শ ছিল, লকডাউনের ফলে সরকার হাতে খানিক সময় পেয়েছেসরকারের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে টেস্টিং এবং হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করা উচিত যাতে, তাঁর কথায় এই স্বাস্থ্য পরিষেবার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। তাঁর প্রেসেন্টেশন অনুযায়ী তাঁর এই কাজের বৃহত্তর লক্ষ্য হচ্ছে উপসর্গ দেখা যাওয়ার 48 ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেক দ্বিতীয় ব্যক্তিকে কোয়ারান্টাইন করা।


    ধারাবাহিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে গেলে কী করণীয়? একজন রোগী একজনের কম
    নতুন সংক্রমণ ঘটাচ্ছে - এই অবস্থায় যেতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে সপ্তাহে
    দুই দিন নজরদারিই সমাধানের পথ। কোয়ারান্টাইন করতে হবে দুই দিনের মধ্যে।

     

    এখনও পর্যন্ত, লকডাউন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, প্রায়শই শক্ত হাতে, পুলিশের সাহায্যে চার ঘণ্টার নোটিসের লকডাউনে হাজার-হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়িছাড়া হতে হয়েছে, যাঁদের হঠাৎই কাজ এবং খাবার দুইই চলে গেছে।

     

    উপসর্গ ধরা পড়ার 48 ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেক দ্বিতীয় মানুষকে কোয়ারান্টাইন করার স্ট্র্যাটেজিতে বদল প্রয়োজন হতে পারে। বিনোদ পালের মতে বাছাই, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা এবং পৃথকীকরণ খুব দ্রুত মাত্রায় করতে হবে যা আগে হয়নি কখনও

     

    আরও পড়ুন: নিজেদের বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট উপেক্ষা করে সরকার এক মাস হাত গুটিয়ে বসেছিল

     

    সর্বসম্মক্ষে খোদ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে, সরকারের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ তিনি 14 এপ্রিল লকডাউনের সময়সীমা বাড়াতে গিয়ে বলেন, ভারত যদি সামগ্রিক এবং সংহত পদ্ধতি গ্রহণ না করত এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করত, তাহলে দেশের অবস্থা কী হত ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়। আগের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝাই যাচ্ছে, আজকের পরিস্থিতিতে যে রাস্তা আমরা নিয়েছি সেটা একদম সঠিক। লকডাউন এবং সোশাল ডিস্ট্যানসিং-এর ফলে দেশের খুবই সুবিধে হয়েছে ভারতে এক লক্ষাধিক বেড রয়েছে। 600-এর বেশি হাসপাতালও তৈরি।

     

    কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই দাবি কি ঠিক? আগামীকাল এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে তথ্য এবং নথি দিয়ে আমরা সেটাই বিচার করব।

     

    (পরের অংশ আগামীকাল)

     

    মূল ইংরেজি  প্রতিবেদনটি রয়েছে এখানে www.Article-14.com

     

     


    নীতিন শেঠি এবং কুমার সম্ভব শ্রীবাস্তব - এর অন্যান্য লেখা


    বিজ্ঞানীদের উপদেশ অনুযায়ী COVID-19-এর মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনও করে উঠতে পারেনি সরকার।

    বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞদের যথেষ্ট সতর্কতা সত্ত্বেও ভারত সরকার COVID-19 মহামারীর মোকাবিলার প্রস্তুতি নি

    অপরিকল্পিত লকডাউনের ফল অস্থায়ী: বিজ্ঞানীরা আগেই বলেছিলেন-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested