×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হাত ধোয়ার জল কোথায়

    সৌমিক কান্তি ঘোষ ও শুভস্মিতা কাঞ্জী | 30-05-2020

    করোনা ঠেকাতে দেশ জুড়ে লক ডাউন চলছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মনে করা হচ্ছে, এই ভাবেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ডিসেম্বরের শেষে ভারতের 50 শতাংশ মানুষই করোনায় আক্রান্ত হবেন। ‘WHO’-এর মতে এই সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখার অন্যতম উপায় বারবার হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার থাকা। কিন্তু যে দেশের একাংশের খাওয়ার জলটুকু জোটে না, সেখানে দিনে দশ বার হাত ধোয়ার জল কোথায় মিলবে?
     
    ‘হু’-এর গাইডলাইন অনুযায়ী 20 সেকেন্ড ধরে দিনে দশ বার হাত ধোয়া উচিত। স্যানিটাইজার না পাওয়া গেলে সাবান জল দিয়েই হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। এই উপায়ে করোনাকে দূরে রাখা সম্ভব বলেই তাদের মত। হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, কুড়ি সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে 2 লিটার জলের প্রয়োজন। মানে, দিনে 20 লিটার জল একজন মানুষের হাত ধুতে প্রয়োজন। অথচ, পশ্চিম, মধ্য এবং উত্তর ভারতের, এমনকী মালভূম অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায়ও জল অপ্রতুল। বরং, গ্রীষ্মের দাবদাহে শুকিয়ে যায় খাল বিল, বাড়তে থাকে জল সঙ্কট। খাওয়ার জল পেতেই নাকাল হতে হয় স্থানীয়দের। ‘হু’-এর মতে, বিশেষ অবস্থাতেও দৈনিক 15 লিটার জল অন্তত একজন মানুষের প্রয়োজন হয়। সেখানে পশ্চিম ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে মাথা পিছু দৈনিক 10 লিটার বা তারও কম জল পাওয়া যায়। এমন অবস্থায়, দিনে দশ বার হাত ধুয়ে জল অপচয় করা নেহাতই বিলাসিতা। মানুষ জল খাবে, ব্যবহার করবে নাকি অপচয় করবে?


    National Institute of Mental Health and Neuro Sciences (NIMHANS)-এর একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে প্রায় 50 শতাংশ মানুষ পরিষ্কার পানীয় জল পায় না। রাসায়নিক মিশ্রিত জল খেয়ে থাকে অনেকেই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত ধোয়ার জল কোথায় পাবে তারা? বিত্তবান মানুষেরা কিনে জল খেতে পারেন, কিন্তু যে দেশের 21.9 শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকেন, দু’মুঠো খাবার জোটে না ঠিক করে, সেখানে তারা জল কীভাবে কিনে খাবেন? 


    কিন্তু, যে জায়গায় জলের সমস্যা নেই, বা যারা জল কিনতে সক্ষম, সেই সব জায়গায় দৈনিক একজন 135-150 লিটার জল ব্যবহার করেন। অসামঞ্জস্যটা ভয়ঙ্কর ভাবে প্রকট এই ক্ষেত্রে।


    ভারতের মতো দেশে, যেখানে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ বস্তি, বা ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকে, যারা খাবার জল সংগ্রহ করতে বিশাল লাইনে দাঁড়ায়, সেখানে দিনে দশ বার হাত ধোয়া তাদের কাছে কল্পনাতীত। যে শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরছেন, পথ হেঁটে তারাও বা কীকরে মানবে পরিষ্কার থাকার বিধি? খাবার জলটুকু যাদের কাছে নেই, তারা কী দিয়ে হাত ধোবে? রাষ্ট্রের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, হাত ধুতে না পারলে টিস্যু ব্যবহার করতে। তার অর্থই বা কোথায় মিলবে? মিললেও টিস্যু ব্যবহার করে ফেলবে কোথায়? সব বাড়িতে বা পথে ঢাকা দেওয়া আবর্জনা ফেলার পাত্র মজুত নেই। ফলে ব্যবহৃত টিস্যু যত্রতত্র ফেলে দিলে সংক্রমণ আরও বাড়বে বই কমবে না। তাই, ‘হু’-এর নির্দেশিকা মানা সম্ভব হচ্ছে না অনেক জায়গাতেই। অনাহারে অর্ধাহারে কাজ হারিয়ে যে মানুষগুলো মাইলের পর মাইল হাঁটতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, তারা করোনার বিধি না মানার ফলে নয়, অনাহারে মারা যাচ্ছে। আর যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকছে, বিধিনিষেধ মানছে না কিছুই, তারা আক্রান্ত হচ্ছে করোনায়। ফলে তারা একদিকে করোনা, আর এক দিকে অনাহারের সাঁড়াশির চাপে পিষ্ট দেশের এক বৃহৎ অংশ। 
     
    দারিদ্রের তীব্রতা ও অপুষ্টিতে ভোগা একটা বিশাল জনজাতির অনেক মানুষের কাছেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার যে বার্তা রাষ্ট্রশক্তি সবসময় তার বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সম্প্রচার করে চলেছে, কিংবা স্মার্ট ফোনের কলার টিউনে ভাসিয়ে দিচ্ছে, তা আসলে কাদের জন্য? রাষ্ট্রশক্তির তো এ তথ্য অজানা নয় যে, দেশের অনেক রাজ্যেই জল সঙ্কট প্রকট, পরিষ্কার রাসায়নিক মুক্ত জলের অভাব কতটা। তার মানে, রাষ্ট্র তার বিশাল জনগোষ্ঠীর এক ক্ষুদ্র অংশকে সচেতন থাকার নির্দেশ দিচ্ছে মাত্র। তাদের নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা। বেঁচে থাকার অধিকার তাদেরই যাদের হাতে বেঁচে থাকার যথেষ্ট রসদ আছে। আর বাকিরা? জানা নেই। যেখানে পানীয় জলের হাহাকার, সেখানে হাত ধোয়া বিলাসিতা। আর যাকে বলে তার কাছে বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়, তা স্পষ্ট। তাই, লকডাউন-এর প্রায় দু’মাস পরেও বেড়ে চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। লকডাউন করোনা ঠেকানোর পথ হলে, সঠিক পরিকল্পনা বা ব্যবস্থাপনা সমাজের প্রতিটা স্তরের মানুষের জন্য সেই পথের ঠিকানা। 

     

     


    সৌমিক কান্তি ঘোষ ও শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    যে দেশে খাবার জলটুকু জোটে না সেখানে দিনে দশ বার হাত ধোয়ার জল মিলবে কোথায়?

    হাত ধোয়ার জল কোথায়-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested