×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • ঈশ্বরের হাতে হলে আর কারও দায় নেই!

    শ্রেয়সী ব্যানার্জ্জী ও বিতান ঘোষ | 01-09-2020

    প্রতীকী ছবি।

    'ভগবান কত ভাল, অপরের চোখ অন্ধ করেও আমাকে দিলেন আলো...

     

    মাঝেমধ্যে ঈশ্বর ধরামাঝে অবতীর্ণ হয়ে চমকদার কিছু কাণ্ড ঘটিয়ে যান। এই কাণ্ডগুলোয় স্বয়ং ঈশ্বরের ভূমিকা কতখানি আর তাঁর ভক্তদের ভূমিকাই বা কত, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে ঈশ্বরের হাত খুব লম্বা। হ্যাঁ, আইনের হাতের চেয়েও লম্বা। দৈবশক্তিকে দুষে কখনও বা শিখণ্ডী খাড়া করে কত জটিল কাজ সহজে হাসিল হয়েছে। 1934 সালে বিহারের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের জন্য দৈব দুর্বিপাককে দায়ী করে রবীন্দ্রনাথের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন স্বয়ং গান্ধী। ইদানীং প্রধানমন্ত্রীর মুখে ঘনঘন কবিগুরু'র কথা শোনা যাচ্ছে বটে, তবে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাদর্শের কোনও প্রভাব তাঁর বা তাঁর সরকারের উপর আছে, এমন বদনাম কোনও নিন্দুকে করতে পারবে না। তাই করোনাকালেও সংক্রমণের ঊর্দ্ধগতির সমানুপাতে কাঁসর-থালা বেজেছে, কল্পিত করোনা দেবতার পুজো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রদীপ জ্বালিয়ে করোনাকে জব্দ করার ব্যবস্থা করেছেন। এই দিশাহীন সময়ে ঈশ্বর ছাড়া আর কাকেই বা আশ্রয় করা যাবে! তা বলে অর্থনীতির মতো একটা বিমূর্ত বিষয়েও যে ঈশ্বরের ভূমিকা থাকবে এটা প্রথমে বোঝা যায়নি। গত 27 আগস্ট জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে নির্মলা সীতারামন কবুল করলেন, দেশ এক অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। কেননা, ‘ঈশ্বরের কোপে' পড়েছে দেশের অর্থনীতি!



    একজন মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য। এর মধ্যে প্রথম তিনটে মানুষের অতি প্রয়োজনীয়, অর্থনীতির পরিভাষায় যাকে প্রাথমিক চাহিদা' বলা হয়। করোনা আবহে সরকারের তরফে বিভিন্ন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু, বিগত কয়েক মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম যে আকাশছোঁয়া, সেটা সবারই জানা। ভোক্তার দামসূচক (Consumers' Price Index)বলছে, 2019-20 অর্থবর্ষে খাদ্যদ্রব্যের দাম 16 শতাংশ থেকে 18 শতাংশ বেড়েছে। তাহলে সবাই খাবে কী? হরিমটর? না না, এই দুর্মূল্যের বাজারে সরকার রেশন দিচ্ছে তো! তাও আবার বিনামূল্যে। কিন্তু এই রেশন নিয়ে সন্তুষ্ট নন 76 শতাংশ ভারতীয়। এটা মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কানে পৌঁছলে তিনি হয়তো বলবেন, ‘মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি'তার মানে এখানেও দায়ভার ন্যস্ত হচ্ছে সেই ঈশ্বরের উপরেই— যাকে বলে Act of God



    'Stay at Home'- করোনা আবহে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান। ফোন, টেলিভিশন সর্বত্র সরকারের তরফে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘কেউ বাড়ির বাইরে বেরোবেন না'কিন্তু এই অবস্থাতেও দেশে ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় 60,000 পরিবার, অঙ্কের হিসাবে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য সরকারের নির্দেশেই তাদের ঘর ভাঙা হয়েছে এবং এদের পুনর্বাসন এখনও দেওয়া হয়নি। এবার এটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে অর্থমন্ত্রী বলতেই পারেন,

    মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান 
    রাখিবে না মোহগর্তে
    তাই লিখি দিল বিশ্ব-নিখিল
    দু'বিঘার পরিবর্তে।'

    উপসংহারে সবই ভগবানের লীলা!



    যেকোনও দেশের জিডিপি সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবংবৃদ্ধিকে নির্দেশ করে। বর্তমান অর্থবর্ষ 2020-21-এ প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন) জিডিপি গ্রোথ সংক্রান্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতির ঋণাত্মক বৃদ্ধি ঘটেছে, অর্থাৎ অর্থনীতি আসলে সঙ্কুচিত হয়েছে 23.9 শতাংশজিডিপির এমন ভয়াবহ অবস্থা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই প্রথম। রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা আরও সঙ্গীন। তাদের জিএসটি বাবদ বকেয়া টাকা রাজ্যগুলো দাবি করায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের তরফে বলা হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিতে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের নিদান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সহায়তায় প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি করে বিশেষ উইন্ডো দেওয়া হবে, যেখান থেকে তারা ন্যায্য সুদের হারে ঋণ নিতে পারবে। কেন্দ্র যে রাজ্যগুলির জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণ মেটাতে অক্ষম তার কারণ হিসাবে রাজস্ব খাতে ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই ঘাটতি কি পিএম কেয়ার ফান্ডের টাকা দিয়ে অন্তত আংশিকভাবে মেটানো যেত না? বা রাজ্যগুলির জিএসটি বাবদ বকেয়া এই তহবিল দিয়ে মিটিয়ে দেওয়া যেত না? এই বিশেষ তহবিলের টাকা আপৎকালীন প্রয়োজনেই খরচ করা হবে, এমনটাই তো দাবি করা হয়েছিল। পিএম কেয়ার ফান্ড কেন তৈরি হল এবং কোন কাজে তার টাকা ব্যবহৃত হবে, দেবা না জানন্তি। হয়তো ঈশ্বর যখন মনে করবেন, ঠিক তখনই সরকারের তরফে সেই টাকা খরচ করা হবে। সকলই তোমারই ইচ্ছা' মানে এখানেও সেই Act of God!



    দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির হাল ফেরানোর জন্য অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ নোট ছাপানোকেই দাওয়াই বলে মনে করেছেন। কিন্তু অর্থনীতির পড়াশোনার শুরুর দিকেই শেখানো হয় নোট ছাপালে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। নোট ছাপালে সাময়িক মুক্তি মেলে ঠিকই, এবং এতে অর্থনীতির চাকাও সাময়িকভাবে ঘোরে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়, যা নিয়ন্ত্রণ করা ভীষণ কঠিন। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি এর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়া কি আর মানুষের হাতে আছে? সবই তো পরওয়ালার ইচ্ছা!



    দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, সরকারের বাজেটে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই সবকিছুই অর্থনৈতিক সঙ্কোচনকে নির্দেশ করে। কিন্তু এমন বেহাল অর্থনীতির কারণ কী? ঈশ্বর বিশ্বাসীরা অনেকেই এর জন্য একজনকেই দায়ী করছিল বটে, কিন্তু ঠিক সাহস পাচ্ছিল না। শেষে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীই তাদের সকল দ্বিধা কাটিয়ে বলিষ্ঠভাবে বললেন,  সবই ঈশ্বরের হাত- Act of God! ব্যাস ঝক্কি শেষ, এবার পাওনাগণ্ডার হিসাব বুঝে নিতে ঈশ্বরকে পাকড়াও!


    শ্রেয়সী ব্যানার্জ্জী ও বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    তবে ঈশ্বরের হাত খুব লম্বা। হ্যাঁ, আইনের হাতের চেয়েও লম্বা।

    ঈশ্বরের হাতে হলে আর কারও দায় নেই! -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested