×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হিট গানের নেপথ্যচারী বাপ্পি লাহিড়ী

    জয়ন্ত মিত্র | 16-02-2022

    অপরেশ লাহিড়ীর সুযোগ্য সন্তান বাপ্পি লাহিড়ী।

    বাপ্পি লাহিড়ী'কে (Bappi Lahiri) আটের দশকের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় সুরকার বললে এতটুকুও অত্যুক্তি হবে না বলে মনে হয়। 

     

    1988, যাঁরা যাঁরা ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল দেখেছেন তাঁরা কেউ খুলিট আর বাস্তেনের অবিশ্বাস্য খেলা ভুলতে পারবেন না। আমরা সবাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম ওইরকম প্রায় শূন্য ডিগ্রি থেকে গোল করতে দেখে। কী আনন্দ! মনে আছে। আর মনে আছে ঠিক ওই সময়েই ওয়াক্ত কী আওয়াজ সিনেমার কথা। মিঠুন আর শ্রীদেবীর কেমিস্ট্রি, সঙ্গে বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে সেই সব গান- লেড়কি একেলি!

     

    1986, সরস্বতী পুজো, তখনকার ফাঁকা এয়ারপোর্ট অঞ্চলে তিন বন্ধুতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। দূর থেকে ভেসে আসছে টারজন সিনেমার গান। "জ্বিলে লে জ্বিলে লে...' কাছের কোনও পুজো প্যান্ডেল থেকে। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করলাম সামনের রাধাশ্রীতে যেতে হবে "টারজান' দেখতে। কুড়িয়ে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা মতো জোগাড় হল তিন জনের পকেট থেকে। তাই যথেষ্ট। 90 পয়সা করে তো সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ছিল তখন। গিয়ে দেখি হাউজফুল। তিরিশ-চল্লিশ টাকা করে ব্ল্যাকে টিকিট বিকোচ্ছে। ফিরে আসতে হল। ওই টারজানের গানগুলো ছিল বাপ্পির সুরারোপিত। সেই সময় টারজানের গান অবিশ্বাস্য জনপ্রিয় হয়।

     

    1987, ষষ্ঠীর দিন, আমাদের রমা সিনেমার সন্ধ্যার শো-তে গেলাম "অমরসঙ্গী' দেখতে। মোটামুটি ফাঁকা। কারণ, সেই সময় প্রসেনজিৎ আজকের প্রসেনজিৎ হয়ে ওঠেননি। সেই সিনেমার পর থেকে হলেন। এখনও প্রসেনজিৎ স্বীকার করেন যে, ওই সিনেমার গান "চিরদিনই তুমি যে আমার’ জীবনে তাঁকে সবচেয়ে বেশি বার বিভিন্ন মঞ্চে গাইতে হয়েছিল। আমি পরপর দুই দিন "অমরসঙ্গী' দেখেছিলাম রমাতে। দ্বিতীয় দিন থেকেই হাউজফুল। 

     

    ওই যে অমরসঙ্গীর বিখ্যাত গানটা, বাপ্পি সেটা আগেও ব্যবহার করেন বিনোদ খন্নার ‘সত্যমেব জয়তে’ সিনেমায়। এস জানকির গলায়। দিল মে হো তুম। বাংলাতে আশা ভোঁসলের ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। 

     

    1987- শেষ দিকে বাপ্পির আর এক কীর্তি গুরুদক্ষিণা। তখন বেশ চল ছিল বাসে করে দীঘাতে পিকনিকে যাবার। তো এরকম, সারারাত বাসে করে গিয়ে দীঘাতে নেমে শুনছি, ‘পৃথিবী হারিয়ে গেছে মরু সাহারায়...’। ঝাউবনের ফাঁক থেকে গান ভেসে আসছে। আর আমি দাঁত মাজতে মাজতে যাচ্ছি। এখনও ভাবলে গা শিউরে ওঠে। 

     

    আরও পড়ুন: হেমন্ত মান্না প্রতিমা শ্যামল নেই, সন্ধ্যাও অনিশ্চিত

     

    মিঠুন আর বাপ্পি লাহিড়ী যেন একে অপরের পরিপূরক। কত হিট গান দুইজনে একসঙ্গে উপহার দিয়েছে আমাদের। 1990 সাল। মিঠুনের বাজার তখন বেশ খারাপ। ওই সময় বেরোল ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’। তাতে একটা রোমান্টিক গান ছিল, ‘প্যার কাভি কম নেহি করনা’, আশা ভোঁসলে আর বাপ্পির গলায়। এই রকম সুন্দর-স্নিগ্ধ-পরিচ্ছন্ন গান আর তার অভিনয় মিঠুন আর মাধুরী দীক্ষিত কখনও বোধহয় করেননি।

     

    শেষ করতে হবে। সব কিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে গলার কাছটায় এসে থেমে গেছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়েছি প্রতিদান সিনেমা দেখতে, রমাতে। শর্মিলা ও নাসিরুদ্দিন শাহের জুটি। তাতে একটা গান ছিল, ‘মঙ্গল দীপ জ্বেলে’- লতার গাওয়া- বেশ ছোটবেলায় শোনা। তারপর অনেক দিন ধরে ওই গানটিকে প্রার্থনা সঙ্গীতের মতো ভেবে এসেছি। সেই গানের নেপথ্যেও তো বোম্বের ডিস্কো কিং বাপ্পি লাহিড়ী, যিনি তাঁর পরিধেয় স্বর্ণালঙ্কার গুলির মতোই ভারতীয় সঙ্গীতে, বিবিধ সুরারোপের মাধ্যমে দ্যুতি ছড়িয়েছেন।

     

    ছোট ও কিশোরবেলার ওইসব সিনেমা হলগুলো আর নেই। বন্ধুরাও নেই। মানুষগুলোও সব এক এক করে চলে যাচ্ছেন। ফেলে আসা অতীতের অস্তরাগ স্তিমিত হয়ে এলে স্মৃতির রজনীগুলো প্রতীক্ষায় থাকে।

     


    জয়ন্ত মিত্র - এর অন্যান্য লেখা


    ডিস্কো ড্যান্স থেকে মঙ্গলদীপ জ্বেলে, গলায় ঝোলানো সোনার চেনের মতোই গানের জগতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন বাপ্পি

    হিট গানের নেপথ্যচারী বাপ্পি লাহিড়ী-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested