"কী বলছিস রে? মসজিদে নামাজ পড়তেও যাব না?’ নাসিমদা চোখ টিপে হাসে।
এই হাসার পিছনে অনেক গল্প আছে। নাসিমদা ঘোরতর নাস্তিক - মানে দেবদ্বিজে ভক্তি নেই। আমার সঙ্গে প্রায়ই লাগত - আমি বলতাম "শুক্রবারটা অন্তত মিস করো না’। নাসিমদা বলতো "বড় আমার মৌলবী এসেছে রে...’।
COVID 19 এসে ব্যক্তিকে সমষ্টি থেকে আলাদা করে দিয়েছে। এখন ভাবার সুযোগ...ফিরে দেখার সুযোগ।
এক সময় কিছু পড়াশোনার সুযোগ হয়েছিল "Emerging and re-emerging diseases' নিয়ে। সেটা ছিল SARS-এর মরশুম, তারপর MERS এল, E Bola এল। এরা যে সবাই নতুন তা না - কেউ ছিল বৃহন্নলা হয়ে - বছর ঘুরলে গাণ্ডীব ধারণ করেছে।
‘সব এই হতচ্ছাড়া সময়ের দোষ', এটা মনে হয় অতি সরলীকরণ। যুগ যুগ ধরে মহামারী এসেছে আমরা মনে রাখিনি। সেই মধ্যযুগের ইউরোপে প্লেগের সময় বোকাচ্চিও লিখে গেছেন মহামারী পীড়িত মানুষেরা "বন্ধুদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন এবং রাতের খাবার খাচ্ছিলেন পূর্বপুরুষদের সঙ্গে, স্বর্গে বসে।’
স্থান-কাল পাত্র মনে নেই, বোধ হয় বোকাচ্চিওর সময়ের ইউরোপে কোথাও, বহুদিন ধরে অলঙ্ঘ্য প্রাচীর আবিষ্ট শত্রু শহর ঘিরে বসে ছিল সৈন্যবাহিনী। কোনও ভাবেই ঢুকতে পারছিল না। এরমধ্যে সৈন্যবাহিনীর একজনের প্লেগ দেখা দিলো। সেই প্লেগ রোগীকে (বা তার মৃতদেহকে) গুলতির মত কিছুর সাহায্যে প্রাচীর ডিঙিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হল শত্রু শহরের মাঝখানে। ব্যাস, শত্রু শহরে হাহাকার। লৌহ কপাট খুলে পাগলের মত সবাই বেরিয়ে আসতে লাগল। সুযোগ পেয়ে নীল বাঁদর সোনার লঙ্কা ছারখার করে দিল। হয়তো এটি ইতিহাসে প্রথম Biological weapon।
বেশি লেখার অবকাশ নেই - চিকিৎসক হিসেবে এইটুকু বলতে পারি - সতর্ক হোন কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে নিজের লৌহকপাট খুলে দেবেন না। ভীত মানুষ, সহজ জানা কাজটিও করে উঠতে পারেনা। আমরা কিন্তু সেদিকেই এগোচ্ছি।
হ্যাঁ, অবশ্যই জমায়েত এড়িয়ে চলুন। নাসিমদার মত লোক টিপ্পনি কাটবে,"কী রে? জামাত যাই?’ আপনাকে স্মিতহাস্যে তাকে প্রতিহত করে বলতে হবে
"উমর তো সারি কাটি ইশক- এ-বুতা মে মোমিন,
আখরী ওয়াক্ত মে কেয়া খাক মুসলমান হোগে।’
(জীবন তো কেটে গেল কত মূর্তির প্রেমে, শেষ মুহূর্তে গিয়ে কি আর মুসলমান হব?)
জীবন তো কেটে গেল কত মূর্তির প্রেমে, শেষ মুহূর্তে গিয়ে কি আর মুসলমান হব?