×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • এক দার্শনিক চাষি যখন বাজারে ধান বেচতে গেছিল

    বিজয় মুখোপাধ্যায় | 14-12-2020

    কৃষিজীবী বিজয় মুখোপাধ্যায় তাঁর সেই সব অভিজ্ঞতার কথাই জানালেন www.4thPillars.com-কে।

    বিজয় মুখোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা। বিশ্বভারতীর দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকঅবসরের পর শান্তিনিকেতন থেকে প্রায় 20 কিলোমিটার দূরে নিজের ১৪ বিঘা জমিতে চাষবাস করছেন তিনি। ধান, সর্ষে, ডাল। সচেতন ভাবেই ধানের দেশজ বীজ ও প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে হাতেকলমে চাষ করছেন। ফলনও হচ্ছে ভালকিন্তু সমস্যায় পড়ছেন ফসল বিক্রি করতে গিয়ে। কৃষিজীবী বিজয় মুখোপাধ্যায় তাঁর সেই সব অভিজ্ঞতার কথাই জানালেন www.4thPillars.com-কে

     

    কী আর বলতে পারি! কৃষি আইন চালু হয়ে গিয়েছে। সরকার তারস্বরে তার গুণকীর্তন করে বলে চলেছে, নতুন কৃষি আইনে চাষিদের ভাল হবে। সরকারের বক্তব্য, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ইচ্ছে করে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে। সরকারের আরও দাবি, কৃষিক্ষেত্রে সরকারের আনা সংস্কার কৃষকদের দীর্ঘদিনের আর্থিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দেবে। চাষিরা আর্থিক দিক থেকে মুক্ত, স্বাধীন হয়ে উঠবে। গত শতাব্দীর পুরনো কৃষি আইন ছুড়ে ফেলে দিয়ে কৃষকরা এ বার সত্যিই নতুন ভারত গড়তে পারবে। কিন্তু সরকারের এমন সদিচ্ছার কথাটাই বুঝতে চাইছেন না চাষিরা।

     

    এই সব বড় বড় কথা বলা হলেও তূণমূল স্তরে মানুষের অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন? আমার বর্তমান পরিচয়, আমি পশ্চিমবঙ্গের একজন চাষি। রাজধানী দিল্লিকে ঘিরে ফেলে পঞ্জাব হরিয়ানা-সহ বহু রাজ্যের কৃষকদের যে আন্দোলন চলছে, সে সম্পর্কে আমার কিছু সংশয়, কিছু প্রশ্ন রয়েছে। প্রথমত, আমাদের রাজ্যে কোনও Agricultural Produce Market Committee (APMC) নেই। যা আছে, তা সরকার নিয়ন্ত্রিত মান্ডি। Agriculture Extension Office এর অধীনে পরিচালিত হয়। গত বছর পর্যম্ত চাষিদের নিজেদের জমির রেকর্ড ও মালিকানা সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে এই সব মান্ডিতে যেতে হত। সেখানে নাম নথিভুক্ত করে এসে অপেক্ষা করতে হত ডাক আসার জন্য। নিয়মটা ছিল, নাম নথিভুক্ত করার পরে তাকে ফোন করে ডেকে পাঠালে তবে সে ধান নিয়ে মান্ডিতে যেতে পারবে। তারপর ধান বিক্রি, বিক্রির টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকা ইত্যাদি মোটামুটি নিয়ম মাফিক হয়ে থাকে।

     

    আমি নিজে 2018 সালের ফেব্রুয়ারিতে মান্ডিতে এ ভাবে 32 কুইন্টাল ধান বিক্রি করে টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল গত বছর থেকেই । গত বছরেও ডিসেম্বরের গোড়ায় আমি নিয়মমাফিক নাম নথিভুক্ত করেছিলাম, কিন্তু ডাক এল এ বছরের মার্চের শেষে। মনে রাখতে হবে, চলতি বছরের 24 মার্চ সরকার করোনা সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে প্রথম দফার লকডাউন জারি করে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না পেরে আমি আগেই খোলা বাজারে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হই। অবশ্যই সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের চাইতে অনেক কম দরে। এ বছর ৩ ডিসেম্বর আমি ওদের অফিসে নাম নথিভুক্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, নিয়ম বদলে গেছে। এখন থেকে নাম নথিভুক্ত করতে হলে একমাত্র ‘খাদ্যসাথী’ অ্যাপ দিয়েই তা করা যাবে। এই অ্যাপটা আবার কেবলমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ফোনে রয়েছে। আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই, বাধ্য হয়ে সেটা কিনতে হল। নাম নথিভুক্ত করলাম। অ্যাপ জানিয়ে দিল, নাম নথিভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ফোন নম্বর পাল্টাতে নিয়ম মেনে ফর্ম ভরে জমা দিলাম। একটা বার্তা এল যে ফর্ম জমা পড়েছে। কোনও ক্রমিক সংখ্যা কিন্তু দেওয়া হল না। খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম, মেশিন খারাপ। 11 ডিসেম্বরেও তা সারানো হয়নি বলে খবর পেলাম। ফলে, কতজনের পরে আমার ডাক আসবে, সে ব্যাপারে আমি অন্ধকারেই।

     

    সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন মান্ডিতে এই ভাবে 3 ডিসেম্বর নাম লেখানোর পরে মার্চ পর্যন্ত ধান ঘরে রেখে বসে থাকতে হয় আমার মতো অনেককেই। কারণ, গোটা ব্লকে একটি করে মান্ডি, দিনে 20 জনের বেশি চাষির কাছ থেকে ধান কিনতে সরকার অপারগ, বা কিনবে না। ফলে, মান্ডিতে সরকারের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (Minimum Support Price, বা MSP) ধান বেচার বিষয়টা অনেকটা লটারির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। মান্ডি থেকে কবে ডাক আসবে তার জন্য ফসল আগলে রেখে বসে থাকতে হলে পকেটে বাড়তি টাকা থাকা দরকার। ইঁদুর ও পোকামাকড় থেকে ধান ঠিকমতো বাঁচিয়ে রাখতে গোলা তৈরি করা দরকার, সে জন্য কয়েক হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়। ডাক আসতে আসতে পরের চাষের সময় এসে যাবে, এই ধান বিক্রি না করেই আবারও মাটি চষা, বীজ বোনা, রোয়া ইত্যাদির জন্য খরচ করার সঙ্গতি থাকে না বলেই অধিকাংশ চাষি অপেক্ষা করতে পারে না, তারা খোলা বাজারে অনেক কম দামে ফসল বেচে দিতে বাধ্য হয়।

     

    এ বছর আমি ধান কাটার জন্য বিঘে প্রতি চারজন মজুর, কাটার পরে ধানের আঁটি বাঁধার জন্য তিনজন এবং ঝাড়াইয়ের জন্য দু’জনকে নিয়োগ করেছিলাম। সব মিলিয়ে 250 x 9= 2250 টাকা তার সঙ্গে আরও 250 টাকা খরচ হয়েছে ওই ধান মাঠ থেকে খামার পর্যন্ত পৌঁছতে। সব মিলিয়ে ফসল খেত থেকে ঘরে তুলতে খরচ 2500 টাকা। চাষ শুরুর আগে বীজতলা তৈরি করা, চারা বেরনোর পরে তুলে নিয়ে খেতে রোয়ার কাজ, জমি তৈরির জন্য ট্র্যাক্টর ভাড়া করা ইত্যাদির খরচ দাঁড়ায় 3700 টাকা। এ সবই বিঘা প্রতি খরচের হিসাব। এর মধ্যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের খরচ ধরিনি, কারণ আমি ও সব ব্যবহার করি না (যদি করতাম, তাহলে বিঘা প্রতি কম করে আরও 800 টাকা লাগত)। অর্থাৎ, বিঘা প্রতি একবার (খারিফ ফসল) চাষের খরচ পড়ত 7000 টাকা।

     

    কিন্তু ফসল বিক্রি করে আমি কত টাকা পাই? আমার প্রতি বিঘায় গড়ে সর্বোচ্চ ছয় কুইন্টাল ধান হয়। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে সাত কুইন্টাল হতে পারে। মনে রাখতে হবে, একজন চাষির কাছ থেকে সরকার কতটা ধান কিনবে, সেটা আগেই জানিয়ে দেয়। 2018 সালে সর্বোচ্চ 32 কুইন্টাল ছিল, এ বছর তা কমে 30 কুইন্টাল হয়েছে। তাও যে কোনও বীজের ধান নয়, প্রধানত স্বর্ণ ধান। সরকার চাষিকে স্বর্ণ ধান চাষ করার জন্য নানাভাবে চাপ দেয়। স্বর্ণ চাষ করলে বিঘা প্রতি রাসায়নিক সারে সরকার 100 টাকা করে ভর্তুকি দেয়। অন্য ধানবীজের ক্ষেত্রে দেয় না। সে যাই হোক, সমস্যা হল, সরকারি মান্ডিতে কুইন্টাল প্রতি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য 1868 টাকা দরে ধান বিক্রি করতে হলে ধান মাঠ থেকে বাড়িতে তুলে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই, আমার মতো জৈবচাষি, যারা মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে না, তারা স্থানীয় ধানচালের ব্যাপারির কাছে কুইন্টাল প্রতি সর্বোচ্চ 1300 টাকা দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়, যা কিনা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য 1868 টাকর চাইতে অনেকটাই কম। এর অর্থ, আমাদের মতো জৈবচাষি ধান চাষ করে বিঘা প্রতি 7800 টাকা আয় করতে পারি, আর যে চাষিরা সার, কীটনাশক দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করে, তারা বিঘা প্রতি 9100 টাকা আয় করতে পারে। আমার লাভের পরিমাণ দাঁড়ায় বিঘা প্রতি 800 টাকা। আর  প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করে অন্যরা লাভ করে বিঘে প্রতি 2100 টাকা। অর্থাৎ, আমার মতো কোনও জৈবচাষি যদি 10 বিঘা জমিতে চাষ করে, তা হলে প্রধান ফসল খরিফের মরসুমে ধান বেচে মোট 8000 টাকা লাভ করতে পারে, আর একই পরিমাণ জমিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করে অন্যরা লাভ করতে পারে 21000 টাকা। বোরোর সময় এই হিসাবটা দাঁড়ায় এই রকম — প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষের জন্য খরচ আগের মতোই থাকলেও বিঘা প্রতি জল (পাম্প ভাড়া) বাবদ বাড়তি 2000 টাকা খরচ হয়। কিন্তু সেটা পুষিয়ে যায় বেশি উৎপাদনের কারণে। এই খরিফ ও বোরোর ধান বিক্রি করে সব মিলিয়ে 10 বিঘে জমির মালিক বছরে লাভ করতে পারে 42000 টাকা। অর্থাৎ, মাসে 3500 টাকা।

     

    এ তো গেল খোলা বাজারে ধান বিক্রির হিসেব। এ বার আসি সরকার নির্ধারিত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রসঙ্গে। এই বছর তা কুইন্টাল প্রতি 1868 টাকা পশ্চিমবঙ্গে।  সে ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতির চাষিরা বিঘেতে পাবে 7 x 1868 = 11802 টাকা (এই 7 এর অর্থ, সার কীটনাশক প্রয়োগে তাদের ফলন বিঘে প্রতি 7 কুইন্টাল)।  চাষের খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ দাঁড়ায় বিঘে প্রতি 4082 টাকা। যদি ধরে নেওয়া হয় যে সে তার 10 বিঘে জমিতেই বোরো ধান করবে, তা হলে তার মোট লাভের পরিমাণ বছরে 81640 টাকায় (এর মধ্যে খরিফ ও বোরো, দুটো ফসলই ধরা হয়েছে)। অর্থাৎ, মাসে প্রকৃত আয় আনুমানিক 7000 টাকা মাত্র।

     

    পাশাপাশি, এটাও মনে রাখতে হবে যে এই বোরো ধান চাষ করতে গিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। কারণ, ধান চাষে প্রচুর জল ব্যবহার করা হয়।  সেই সঙ্গে পেট্রল বা ডিজেলের জন্য শক্তি ব্যয় হয়। তার সঙ্গে বিঘা প্রতি অন্তত 15 কিলো ইউরিয়ার খরচ ধরতে হবে। এটা মনে করা হয় যে এই ইউরিয়ার 70 শতাংশই (অর্থাৎ 10 কিলো) নাইট্রেট বা অ্যামোনিয়ার আকারে জলে ও বাতাসে মিশে যাবে। এটাও পরীক্ষিত সত্য যে এই নাইট্রেট থেকে ক্যান্সার হতে পারে। তার সঙ্গে নির্বিচারে যে সব কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, সেগুলিও মারাত্মক ক্ষতিকারক, অধিকাংশই ক্যান্সার রোগের কারণ হতে পারে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, দুটোই মাটির জৈবচরিত্র দারুণভাবে নষ্ট করে, এবং তার জন্য ফসলের উৎপাদনশীলতা কমতে থাকে। তখন উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের আরও বেশি বেশি করে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। যার অর্থ, চাষের খরচ ঊর্ধ্বমুখী হওয়া এবং চাষিদের ক্রমশই ঋণের জালে জড়িয়ে পড়া।

     

    ফেরা যাক চাষিদের স্ট্র্যাটেজির বিষয়ে। তারা সারে ও সেচের বিদ্যুতের জন্য সরকার থেকে ভর্তুকি পায়। ফলে অল্প হলেও লাভ করতে পারে। যে কোনও সাধারণ মানুষের মতো চাষিও লাভের পরিমাণ বাড়াতে আগ্রহী। এখন আর আগের মতো চাষিদের ঘরে ঘরে গরু থাকে না। লক্ষণীয়, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে এখন আর আগের মতো খড়ের চাল তেমন দেখতে পাওয়া যায় না, বেশির ভাগই টিন বা টালির হয়ে গেছে। তাই ফসল উঠে গেলে খড় সঞ্চয় করার তেমন দরকার হয় না। সে এখন চাষের যন্ত্র ব্যবহার করে বিঘে প্রতি 1200 টাকা ব্যয় কমায়। এ ভাবে সে 10 বিঘে জমিতে ফসল পিছু 12000 টাকা খরচ কমাতে পারে, বা 12000 টাকা বেশি আয় করতে পারে। কিন্তু ফসল কেটে নেওয়ার পরে জমিতে পড়ে থাকা ধান গাছের গোড়া কাটতে লোক নিয়োগ না করে চাষিরা আরও খরচ কমাবে। পরের চাষের জন্য জমি তৈরি করার আগে ওই ধান গাছের গোড়া পুড়িয়ে দিয়ে পরিবেশ দূষণ বহু গুণ বাড়িয়ে দেবে। চাষের কাজে এখন ক্রমশই শ্রমিক নিয়োগের হার কমছে। ফলে গ্রামাঞ্চলে চাষের কাজে ব্যাপক হারে শ্রমিক নিয়োগ কমছে। আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানে ফসল কাটার সময় বিঘা প্রতি চার জন করে কম মজুর কাজ পাচ্ছে। তিন বছর আগেও ফসল কাটার সময় মজুর পাওয়া একটা কঠিন সমস্যা ছিল। এ বছর মানুষ ফসল কাটার সময় কাজ চেয়ে হাহাকার করে বেড়াচ্ছে। কারণ, 90% চাষি হারভেস্টার কম্বাইন যন্ত্র দিয়ে ফসল কাটাচ্ছে।

     

    এ অবস্থায় সরকারের ভূমিকার দিকে তাকানো দরকার। সরকার তো মনে করছে, 100 দিনের কাজের আওতায় গ্রামের গরিবদের মধ্যে টাকা বিলিয়ে জনকল্যাণ করছে। অন্যদিকে, ফসলের দাম বাড়ার বদলে কমতে থাকায় চাষির আয় দ্বিগুণ হওয়ার বদলে কমছে। গত বছরেই আমাদের এলাকায় ফসল বিক্রির ধানচালের ব্যাপারিদের সুর একটু নরম ছিল। এ বছর তাদের সুর বেশ চড়াতারা জোর গলায় দাবি করছে, তারা সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের তোয়াক্কা না করে অনেক কম দামে ফসল কেনার কাজটা আইন মেনেই করছে। আসলে দেশে প্রতি বছর অন্তত আড়াই কোটি টন চাল-গম বাড়তি উৎপাদন হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয় মজুত খাদ্যভাণ্ডার সবসময় উপচে পড়ছে। ফলে, চাষিদের ফসলের ন্যায্য দাম দিতে স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ কার্যকর করতে এত টালবাহানা।

     

    আর একটি কথা। এখন কৃষকদের আন্দোলনে কৃষি মান্ডি ও APMC কে শক্তিশালী করা ও ফসলের এমএসপি দেওয়া আইনত বাধ্যতামূলক করার উপর জোর দেওয়া হলেও, আরও কয়েকটি বিষয়ে এখনই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। প্রথমত, শুধুমাত্র ধান, গম ও ডালের মতো ফসল চাষের মধ্যে আটকে না রেখে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখে চাষিদের অন্যান্য ধরনের ফসল চাষে উৎসাহ দেওয়া দরকার। তা হলে চাল-গমের বিশাল উদ্বৃত্ত হওয়া কমবে, সরকারও তখন ফসলের দাম বেশি করে দিতে বাধ্য হবে। এটা ঠিক যে, APMC দেশের বহু রাজ্যেই নেই। শান্তাকুমার কমিটির রিপোর্টে তো বলাই হয়েছে যে মাত্র 6 শতাংশ চাষি MSP পায়, তাই তারা সুপারিশ করে যে MSP তুলে দাও, APMC তুলে দাও, তাহলেই বড় বড় বিনিয়োগকারীরা (আম্বানি, আদানিরা ?) কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে। চাষি ফসলের দাম পাবে। ফড়েরা থাকবে না। সাংবাদিক পি সাইনাথ মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, আম্বানি আদানিরা তো মাঠে নেমে ফসল কিনবে না, এখনকার স্থানীয় ব্যাপারিরাই তখন শিল্পপতিদের এজেন্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের বিক্ষোভ এই সব আশঙ্কা থেকেই জন্ম নিয়েছে। এটা ঠিক, বর্তমান ব্যবস্থায় দেশের অধিকাংশ কৃষকই চাষ করে কোনও রকমে জীবন ধারণ করে। প্রতিটি চাষের জন্য বেশিরভাগ কৃষকই মহাজনের কাছ থেকে চড়া হারে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ফসলের দাম একটু এদিক ওদিক হলে, বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নষ্ট হলেই তার আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ঋণের জালে কৃষকের আত্মহত্যার কারণও সেটাই। এই অবস্থায় দেশের কৃষিকে বাঁচাতে MSP বাধ্যতামূলক করা ও শুধু ধান গমের উপর জোর না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে অন্য ফসলের চাষে নজর দেওয়া আশু প্রয়োজন।

     

     


    বিজয় মুখোপাধ্যায় - এর অন্যান্য লেখা


    ধান-গম ছাড়া অন্য ফসলের দিকে গেলেই চাষি ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন

    এক দার্শনিক চাষি যখন বাজারে ধান বেচতে গেছিল-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested