সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে "বেআইনি অনুপ্রবেশকারী' ইস্যুতে অনমনীয় অবস্থান নিতে দেখা গেছে। কিন্তু দেশের উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্য মিজোরামে গত কয়েকমাস ধরে "বেআইনি অনুপ্রবেশ' ঘটলেও মুখে রা কাড়েনি সাউথ ব্লক। অনুপ্রবেশকারীরা প্রায় প্রত্যেকেই মায়নমারের বর্তমান রাজনৈতিক ডামাডোলের শিকার। এমনই কয়েক হাজার অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে রয়েছেন সে দেশের চিন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সালাই লিয়ান লুই— যিনি গত 14 জুন মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে 185 কিমি দূরে অবস্থিত, সীমান্ত শহর চাম্পাই দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন।
মায়নমারের সেনা অভ্যুত্থানে সে দেশের নোবেলজয়ী রাজনীতিক আউং আন সু-চি এবং তাঁর দল "ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি' (NLD) রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। সে দেশের সামরিক জুন্টা সরকারের শাসনে সুকি নিজে গৃহবন্দি রয়েছেন। আর তাঁর দলীয় সমর্থকরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভারতে প্রবেশ করছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষের অনুপ্রবেশের পরেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রকের হিরন্ময় নীরবতা অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। অথচ, এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়েছিল, "ভারত বিশ্বের অনুপ্রবেশকারীদের রাজধানী নয়'। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছিলেন, "রোহিঙ্গারা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। মায়নমার তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে নেওয়ার পরেও তারা দেশান্তরী হয়েছে। অতএব এটাকে বেআইনি অনুপ্রবেশই বলতে হয়।'
অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে ভারতের এই অবস্থান বদল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের স্বাগত জানিয়ে তাদের দেখভালের বন্দোবস্ত করেছেন। এই প্রসঙ্গে স্মরণে রাখতে হবে, জোরামথাঙ্গার আঞ্চলিক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (MNF) বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA-র অন্যতম সহযোগী দল। এই প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কোর্টে বল ঠেলে দেন; যেহেতু অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকই দেখে থাকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর পাওয়া গেল, তারা একটা রুটিন নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, কোনও অনুপ্রবেশকারীকেই যেন স্বাগত জানানো না হয়। কিন্তু মিজোরাম প্রশাসন এই নির্দেশিকাকেই অগ্রাহ্য করছে।
বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানালেন, কৌশলগত কারণে ভারত মায়নমারের সামরিক জুন্টা সরকারকে ক্ষুব্ধ করতে চায় না। মন্ত্রকের এই মুখপাত্র পরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বললেন। তাঁর কথায়, আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো মায়নমারে শান্তিস্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, ভারত তাকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছে। এর পাশাপাশি সরকারি তরফে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী সহ NLD-র 23 জন জনপ্রতিনিধি মিজোরামের বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত গত মাসের আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতৃত্ব ব্যাঙ্ককে মায়নমারের জুন্টা প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসে। সেই আলোচনায় মায়নমারের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে পাঁচটি উপায়ের কথা উঠে আসে। কিন্তু ভারতের কূটনীতিকরা বৈঠক পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই বিষয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলেই উগ্র প্যালেস্টাইন বিরোধিতার বিরোধী স্বর
"উত্তর-পূর্ব ভারতে মায়নমার সংকটের প্রভাব' শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় মায়নমারে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ভিএস শেষাদ্রি বলেন, 'জুন্টা সরকার নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, মায়নমারে এখনই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়।' এই ইস্যুতে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যেও মতপার্থক্য আছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জুন্টা সরকারের প্রতি চিনের নমনীয় মনোভাব বিষয়টিকে জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষত জি-7 বৈঠকে সদস্য দেশগুলি যেভাবে এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, তাতে এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
রোহিঙ্গাদের উপর খড়্গহস্ত হলেও সু-চির দলের নেতাদের মিজোরামে অনুপ্রবেশ নিয়ে নীরব কেন্দ্রীয় সরকার।
সংকট ঘরে বাইরে, নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দ্বিধায় বিজেপি।